তুমি যেখানে যাও
তুমি যেখানেই যাও, যেখানেই যাও,
আমি আছি, পিছে, পিছে,
পা যেভাবে যায়, পায়ে, পায়ে,
পায়ের পেছনে।
অশ্রুরা যেভাবে থাকে মিশে, মিশে
চোখের ছায়ায়,
মুক্তা যেভাবে পায় সুক্তির আশ্রয়
আমি তো আছি তোমাতে, আছি।
চাঁদের উঠোনে বসা রোদ, জল আর
জ্যোৎস্নার জলরঙ ছবি
জলের শরীরে গুলা গোপন আলোর
অভিসার, তার সোনা-রঙ প্রতিচ্ছবি,
তোমার ভাঙা কাঁচের আয়নার পটে
পাটভাঙা ছবি হয়ে আছি, আছি।
এই জমি – জিরেৎ, অহল্যা প্রান্তর
তিলের নিখিল,
ভোরের নরোম জ্যোৎস্না – জুঁইফুল
জুড়ে আমি আছি, আছি।
এই আকাশগঙার আলোর ফোয়ারা, সন্ধ্যার
নিরুদ্দেশ নদী হয়ে ভেসে
যতদূর যেতে চাও, যাও,
আমি আছি, পিছে, পিছে,
পায়ে, পায়ে,
পায়ের সারথি।
অরুণিমা
অরুণিমা! কোথায় লুকালি বল!
কথা ছিলো কোন এক কাক – ডাকা
ভোরে জ্যোৎস্নার জলে পা ভিজিয়ে
দুজনে একাকি পথের ফেরারি হবো।
কিংবা ধরো, যাবো না কোথাও,
ঝরা পাতাদের মতো ঝরে, গেঁথে
রই দুজনে পা-লগ্ন মাটিতে
অনন্ত জীবনে।
ফেলে আসা শৈশবের ধূসর জমিনে
অচিন বৃক্ষের নিচে শেকড় গভীরে
খুঁড়ে স্বপ্ন কুড়াবো দুজনে।
পথের পাশের নিশিন্দা ফুলের
নিষিদ্ধ ঘ্রাণের মতো,
আমার ঘুলঘুলির চড়ুই পাখির মতো,
প্রাঙ্গণে বেড়ে ওঠা ভূঁইচাঁপার মতো
দোয়েলের হৃদয়ের কোণে জমে
থাকা গভীর শিশ- ধ্বনির মতো
তুমি তো ছিলে একান্ত আপন, বলো!
কোথায় লুকালে বলো, অরুণিমা!
আমরা কী আজ এক অভিন্ন মানুষ?
আমার স্বপ্ন আজ স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে
উঠে গেছে দূরের আকাশে,
আকাশগঙায় নেয়ে, পাথরে পরান
বেঁধে, কণা কণা জলের শরীরে নীল
দহন কুড়িয়ে তোমায় আহুতি দেবো,
অরুণিমা, কোথায় লুকালে!
আলতাপরী
তোমার পায়ের পাতার পরশ
পেলে পাথরেও নামবে প্রপাত
নূপুরের শব্দে কলকলিয়ে উঠবে
ঘুমন্ত ঝর্ণারা,
কল্লোলিত হবে নদী
রাজহাঁসেরা অবাধে কাটবে সাঁতার
খুনশুটিতে মেলাবে ঠোঁট জলের গোপনে।
তোমার আঙুলের টোকায় গোলাবী
উপত্যকা নেচে উঠবে তা – ধেই,
দ্রাক্ষালতারা তোমার ওষ্ঠের ছোঁয়ায়
পল্লবিত হবে, মদিরায় মাতাবে আসর,
তোমার চুলের প্রপাত অরণ্যে নামাবে মেঘ।
বনবাসী বৃক্ষেরা প্রিয় পাখিরা
নির্বাসন ছেড়ে ফিরে আসবে নিজস্ব আবাসে।
তোমার হৃদয়ের উষ্ণতা পেলে
ভালোবাসা সর্বনাশে যাবে
ইস্তক, সঞ্চয় ভু্লে
মানুষেরা পুনর্বার ফিরে যাবে
আদিম সাম্য – সমাজে।
তোমার বিরহ পেলে, দ্যাখো,
মেঘেরা দেবে না জল, ফিরে যাবে অভিমানে
নদী যাবে উল্টোমুখী স্রোতে ,
মিলবে না সাগরে সঙ্গমে
ফেরানো যাবে না কিছুতেই,
যাবে না, যাবে না।
তোমার বিরহ পেলে, দ্যাখো,
অমানিশা রাত আর কিশোরী আলোর
ভোর অভিসারে যাবে না কখনো।
তুমি কি অপ্সরা! আলতাপরী? না-কি
তুমি হরপ্পার হৃদয় থেকে জেগে ওঠা
অবাক রমনী এক।
তোমার অসুখে
তোমার হৃদয়ের ক্ষতে বিশল্যকরণী
হয়ে আমি হতে চাই তোমার শুশ্রূষা।
অবগাহন
যাবে? চলো যাই।
যাই।
সেরে আসি শুদ্ধ সিনান, অবগাহন ।
কংশ যেখানে নামে মহারশি স্রোতে
ফল্গু মিলেছে সরস্বতী ধারায় কিংবা
মন্দাকিনী মিশে আছে ভাগিরথী জলে।
আকাশ যেখানে নামে মাটিতে, সিংহের কেশরের মতো
আবিরে আগুন ছড়িয়ে, যেখানে
শান্ত শান্ত শান্ত পায়ে সন্ধ্যা নামে
ঝুপ
হলুদ পাতারা নীল বেদনায়
দুখে ঝরে পড়ে
টুপ।
চলো না সেখানে যাই।
যাই।
স্বপ্নরা যেখানে যায়, থামে
তারও ওপারে,
কপিলা গাভীরা যেখানে নামে
সংগোপনে খুব
কালো মেঘে বৃষ্টি ঝরিয়ে
নালীঘাসে, হীরেরঙ ভোরে।
চলো যাই।
যাই।
বানপ্রস্খ! যাবে তুমি অরণ্য – আবাসে!
বনতুলসী ছায়া দেবে, দুধিলতারা
ঢেকে দেবে আদিম শরীর, শ্যামা
জাগাবে ভোর ব্রাহ্ম – সংগীতে,
দোয়েল শোনাবে আবাহনে নিস্তরঙ্গ
পদাবলী গান।
যাবে , যাই।
শান্তিতে সাম্যে যাই, স্বাধীনতা
অপার আকাশ, যাই , মুক্তি মৈত্রীতে যাই
হাতে হাত গভীর বিশ্বাসে , যাই।
আছো, নেই – তো!
কল্পনা পড়ে থাকে নিধুই পাথার
পরী দেয় আকাশে উড়াল ;
অবিশ্বাস আদিপাপ ফনা তুলে
বেহুলা বাসর পুড়ে খার।
![রঞ্জিত সরকার](https://irabotee.com/wp-content/uploads/2019/08/received_401424053821956-150x150.jpeg)
কবি