আনুমানিক পঠনকাল: < 1 মিনিটভ্রমণসঙ্গী
লিখে দাও, চটজলদি যা হোক বিষয়।
তুলে নাও, চোখে শুধু রং আর রং।
মেখে ফেলো, আলো,গোটা শরীরে তোমার।
মুছে চলো, স্মৃতি আর ময়লা মানুষ।
খোঁজো হাসি, কান্নার বাহানা সাজিয়ে
ভালোবাসো, খেয়ে নিতে ভালোবাসাকেই
অন্ধকার, তোমাকে পড়ব আমি পথে যেতে যেতে
কবি ও শিল্পীর মধ্যে কথাবার্তা
–বৃষ্টি হচ্ছে। একটা ছাতা এঁকে দি’।
–না,না।ভিজব!ভিজব!
–যদি ঠাণ্ডা লাগে,যদি জ্বর হয়!
ছাতা, আঁকব রঙিন। মস্ত আকাশের মতো।
–অসুখ,ওষুধ আমি টানতে পারি না।
–তবে ঘর আঁকি? লাল নীল চারটে দেয়াল।
–জানো না, অনিশ্চয় বড় ভালোবাসি!
–পথ আঁকিনি তোমার জন্য কোনোদিন,
আজ চাও?
–পথে খাঁ-খাঁ দুপুর,কখনো-বা
পথে নতুন নতুন ছন্দ বাজে।
–বেশ তো, তাহলে…
–আগে নদী এঁকে দেবে?প্লিজ!
ঢেউয়ের মাথায় কত মরে যাওয়া আলো…
কথা শেষ হয়নি ওদের।
নদী আঁকা মাত্র দুজনেই জলে ভেসে গেল
কবিতার মতো
আগুন যেভাবে ছিটকে এসে, লেগেছে কপালে,
প্রথমে তুলতুলে ফোস্কা হয়, তারপর,
কষকষে ঘা,হাড় পর্যন্ত পৌঁছোয়।
আগুনের সঙ্গে ওর পুরনোবেলার প্রেম,
এত প্রেম,শেষ অবধি বিয়েই হল না মেয়েটার।
ঘেন্না হল,রাগ হল, লজ্জা হল খুব,
তারপর নিকষ অন্ধকার দৃষ্টি লোপাট করে দিল।
গরিব ঘরের গল্প,অল্প ফুটেজ,
স্টেশন রোডের পথে যেতে যেতে
এসব দেখেছি আর টুকে রেখে দিয়েছি খাতায়,
হয়তো শিল্প হবে বলে
চোখের ডাক্তারবাবুটিকে
চোখের মধ্যে টর্চলাইট নামিয়ে শিরাউপশিরা খোঁজা হয়।
অশ্রুর নাব্যতা মাপা হয়।
কতগুলো মীড় ও গমক পার হয়ে,
লজ্জা ঘেন্নার পুরভরা অনন্ত রাজনীতির মাথা খেয়ে,
উড়ে-আসা গোলাবারুদের কুচি মণিতে নিয়ে,
চোখ আস্তে আস্তে লালবর্ণ ধারণ করল।
ওহ্! শোনো,এইসব দেখাশোনা বাঁচিয়ে চলার জন্য আইড্রপ নেয়ার চেয়ে
অন্ধ হওয়াও ঢের ভালো

রাগরাগিণীর ঘরে জন্ম চৈতালী চট্টোপাধ্যায়ের। মা শচীনকর্তার ভাগ্নি বিভাস কুমারী দেববর্মণ। ত্রিপুরা রাজপরিবারের মেয়ে। বাবা তীব্রভাবে সৎ, কল্পনাপ্রবণ হরিপদ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। চৈতালী বর্ণপরিচয়ের দ্বিতীয়ভাগ না পড়ে, নিজেই যুক্তাক্ষর শিখে নিয়েছিলেন। বইয়ের সরবরাহ যোগাতে যোগাতে ক্লান্ত বাবা-মাকে ক্ষান্ত করতে ছোট মেয়েটি উল্টোভাবে ধরে বই পড়ত, সময় বেশি লাগবে বলে। যাপনে ছিল, আজও আছে কবিতা আর তীব্র অনিশ্চয়। উত্তর কলকাতার সরু গলি, উঠোন, ময়ূরের খাঁচা, রুপোলি মাছ ছিটকে-আসা গঙ্গাজলের কল, রোমান ক্যাথলিক স্কুলের চ্যাপেল ও অর্গানের অনুষঙ্গ, এসবই ভাসতে ভাসতে তাঁর কবিতার অভিমুখী হয়। বিষয় পদার্থবিদ্যা হলেও বিষয়ান্তর, সাহিত্য। আর, পেশা ছিল প্রখ্যাত বিজ্ঞাপন সংস্থায় কপিরাইটিং। বহুল প্রচারিত সব সংবাদপত্রে একের পর এক লিখে চলেছেন নানাকিছু। কবিতা,গল্প ও প্রবন্ধবই প্রকাশ পেয়েছে অভিজাত প্রকাশনা থেকে। পেয়েছেন সরকারি (কেন্দ্রীয় ও পশ্চিমবঙ্গের), বেসরকারি বিভিন্ন সম্মাননা। ২০২০ সালে ১১ জানুয়ারি চৈতালী চট্টোপাধ্যায়কে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রবর্তিত বিভা চট্টোপাধ্যায় স্মারক সম্মান অর্পণ করা হয়েছিল বাংলা কবিতায় তাঁর সামগ্রিক অবদান স্মরণে রেখে।
Related