Categories
ইরাবতী উৎসব সংখ্যা কবিতা: রহস্যময় বিয়োগফল । মণিকা চক্রবর্তী
আনুমানিক পঠনকাল: < 1 মিনিট
১.
একান্ত নিজেরই ছিলাম আমি।
স্বাধীন। ইচ্ছেমতো।
তবু গত রাতে সমস্ত বিছানা জুড়ে ছিল, এক অন্য মায়া।
সমস্ত শরীর স্থির-তোমার অপেক্ষায়-
এই প্রথম মনে হল-দোকানের সব রংয়ের পাঞ্জাবি
তুমি পরবে বলেই তৈরি-
কথা বলতে বলতে, তুমি যে বুকের পাশে হাত রাখো-
সেই বুকের প্রান্তরে-অদৃশ্যে
বুনে নিচ্ছি-
আমার গভীর- গাঢ় শিকড়।
২.
নিজেকে বড় বেশি উদাস লাগছিল,মধ্যরাতে,ঘুমে-জাগরণে
বিষণ্ণতার সুরগুলি যেন আরও বিষণ্ণ হয়ে উড়িয়ে নিতে চাইল-
এই ব্যর্থ জীবনের ভার।
আকাশ ভর্তি জ্যোৎস্নায়, আমাদের পাথর ভালবাসা
আনন্দ আর মৃত্যুকে সঙ্গে নিয়ে চলছে-
মুনলাইট সোনাটায়।
৩.
পাহাড়ের চূড়াটা যেন গলে যাচ্ছে-
সাদা কুয়াশার গভীরে।
কিন্তু তোমার মনে হতে পারে,
আশ্চর্য এই সন্ধ্যাটি ক্ষণস্থায়ী-
ভোরের রোদ টেনে আনবে ঈর্ষার হলদে-লালরঙ।
বিশ্বাসের চাদরে, গলে যাওয়া সময়কে আগলে রাখি, চুপচাপ
সামান্য মৃত আশায়-
ঈষার উল্টোপিঠে ,শস্যের সবুজ।
৪.
সময়কে যতদূর দেখা যায়- দেখি-
অ্যালবামের গোপন উৎসাহের ভিতর।
দাম্পত্যের ছবিগুলোতে-
এক গাঢ় অতীতের সুঘ্রাণ-
চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে।
একটি স্পষ্ট ছবির মুখোমুখি-দাঁড়ালাম।
আমার মুখটাও ফেলিয়া, হাত-পা বাঁধা-
জলে ডুবে যাচ্ছি।
আর তোমার চোখ দুটি দেখছে সেই দূশ্য-
সুস্থির, কালোবিড়ালের চোখ।
৫.
কবিতা লিখতে গেলে
তুমি দাঁড়াতে শিখবে-
তোমার ছায়ার সঙ্গে একা।
ছায়াকে ও বিশ্বাস নেই, সে পলাতকা।
তোমাকে একা ফেলে, তোমাকেই পৌঁছে দেবে-
তোমার কঙ্কালের কাছে।
সেখানে এক নতুন আরম্ভ আর শবসাধনা-
উঠে আসা তরঙ্গের ভিতর-রহস্যময় বিয়োগফল।
জন্ম কুমিল্লায়, ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর, লেখালেখি করছেন দীর্ঘকাল ধরে। মূলত গল্প ও উপন্যাস লিখে থাকেন। প্রথম উপন্যাস অতঃপর নিজের কাছে প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে, একুশে বইমেলায়। দ্বিতীয় উপন্যাস, দিগন্ত ঢেউয়ের ওপারে প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে । ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয় গল্পগ্রন্থ বর্ণান্ধ রাত ও ডায়েরি। নভেলা যখন ভেসে এসেছিল সমুদ্রঝিনুক ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়। লেখালেখির বাইরে ব্যক্তিগত জীবনে সংগীতচর্চা তাঁর অন্যতম সংরাগ।