উৎসব সংখ্যা: রত্নদীপা দে ঘোষ’র কবিতা
সেতারের ঠিকানা
কখনো নদীবেহাগের কুঠিবাড়ি। কখনো শাওনরাতের বঙ্গোপসাগর।একবার তো কোঠাবাড়ির কচ্ছপ! উত্তেজিত স্থলডাহুক।জানতে চাও তাঁর মাতৃপরিচয়? নৃমুণ্ডমালিনীর অহংকার! পিতা? সিগারেটমুখর নাট্যসংসার। হঠাৎবাঁক! কখনো পিউকাঁহা! ছলাকলার বর্ণালী। কোনদিন জাফরাননগর। কখনো মানবনগরী। গানচাষে ভারি ব্যস্ত জমিন। প্রতিটি অনুষ্ঠান শেষে ধূমাবতী অরোরা!মর্ত্যধূলির মুষলধারা আঁচলে বেঁধে!
গীটারের পদবী
নীল প্রদীপে গড়া দর্পণ! আয়নাকে এতকাল নানা ঝড়ঝঞ্ঝা থেকে সে-ই বাঁচিয়ে এসেছে। এমনকি বৃক্ষদেরও শিখিয়েছে সংসার ধরে রাখার উৎকল। সিন্ধুনদীকে দিয়েছে যুগ্ম-ভ্রূ, এক গোছা মহাবলীপুরম।বৃষ্টিকে এমন জ্যোৎস্নার কেতুগড় যে আজকাল চাঁদের পরতে পরতে বিয়েগাছ আর বিয়েফুলের পতাকা। বাতাসকে শব্দছক, গাঁদাফুলকে সপ্তর্ষিবালকের ঘুড়ি আর ওড়ার ঠিকানা।গানদেবীর নামে লিখে দিয়েছে তিনটি আদিবাসী ময়ূরাক্ষী আর একটি কষ্টিপাথরের ধ্রুবতারা! মানুষকে? ঈশ্বরের সম্ভাবনা। এমন দানবীর সচরাচর দেখা যায় না।
ডুগিতবলার সমাজচিত্র
শব্দ নিয়ে খেলা প্রিয় অনুবাদ।তৃষ্ণাকাতর সঙ্গীতভবন প্রানের ব্রজবুলি। আলিঙ্গনটি সহস্রচক্ষু ঘাসফুল, আভা! যে কোন গিরিরথে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।এক খাবলা মাটি দিয়ে তৈরি করতে পারে মল্লারের গানসূত্র।দেখতে প্রসন্ন জলযান।লটবহরের কিরণ গায়ে মেখে যখন জলসায় উপস্থিত হয়, তখন চারদিক টলটল। সম্মোহন লেবুপাতার। বেলোয়ারি ঝর্ণামানুষের শরীর জুড়ে শুক্লপক্ষ! অবারিত দরজা! চৌকাঠে দাঁড়িয়ে আধাবিমূর্ত গানকন্যা!
একতারার আলপনা
মনের মধ্যে বাস।সংসারে নয় শুধু।দিগন্তপ্রসবিনী পাখিস্নান। কদমগন্ধ, ভরাট বুকের পাঞ্চজন্য। উপত্যকা।শ্রেষ্ঠতম আবেগ আর উষ্ণতা।তামাটে মাটির পাত্রে তাজা হাওয়ার খুশীধুলো, বাতাসের ক্রান্তিকালের বাস্প। যখন উড্ডীন বিপ্লবের নেশায় তখন হার মানে ঝড় আর নিয়তি। নিঃশ্বাসের ছাদে বসে রামধনুর বাজনাদৃশ্য। ঘুম থেকে উঠে বরজের পৃষ্ঠায় অই যে সরস্বতীর স্বর। মানুষের দিগন্তে তুলোবোনা মাধ্যাকর্ষণ, সূর্যমুখীতে বাউলের চিত্রকূট! সুখ দুঃখ অন্তরের সাম্রাজ্য – যেদিকে তাকাই স্বর্গীয় খোয়াই, হৃদিবীণা!
শ্রীখোলের বাসস্থান
সবুজ অথচ নীলাভ। ভবিষ্যৎ দেখতে পায় স্পষ্ট। আবার অতীতক্ষণেও শিউলিফুলের মতো রত্নগর্ভ। স্বভাবে শান্ত। দানধ্যানে মতি। বেলাশেষে হেমন্তের মতো গতি। আত্মহারা ফসলের আকার।বত্রিশ সিংহাসন প্রাণের প্রাকার। নিধুবনের জাতীয় সড়কে সারাদিন। জোনাকির মতো উন্মুক্ত। অতিপ্রাকৃতিক ধ্যান। মহাকল্লোল। রঙিন কাঠামো। কৃষ্ণকীর্তনের পুণ্যডালা। তন্ময় এবং সুদূরপ্রসারী।কুলুঙ্গির পোশাকতন্ত্র ভেদ করে গৃহদেবতার তরঙ্গরেখা আমাদের অন্তরে, তাঁরই হাত ধরে।

জন্ম ১৯৭২। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। বর্তমানে বসবাস কর্ণাটকের প্রত্যন্ত এক গ্রামে। ঈষৎ লাবডুব মেশানো তাঁর কবিতার বর্ণালী। হাওয়া এবং বাতাস দখিন কণিকার। স্বপ্নে পাওয়া দুরন্ত টুপটাপ। সেলাইবোনা সাধনার কলস উপচে। কখনো কলম বেদনার অধিক তরতাজা। লিরিকের দূরনিশান পেরিয়ে বৃদ্ধ মন্তাজ, কখনো তরুণ তুফানগ্রাম।এই লেখকের কাছে কবিতা একটি নিঝুমভুল! মাত্র বারো পংক্তির মুহূর্ত!