৫০-এ পা নকশালবাড়ি আন্দোলনের
অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী
‘তোমার বাড়ি, আমার বাড়ি নকশালবাড়ি!’ ১৯৬৭ এই স্লোগান আজ আর শোনা যায় না আকাশে বাতাসে। শোনা যায় না সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বানও। তবুও, এই ২৫ মে’র তাত্পর্য আমরা অস্বীকার করতে পারি না। কারণ আজকের দিনেই তো ৫০ বছর আগে কৃষকদের অধিকারের দাবিতে গর্জে উঠেছিল একটি ছোট্টো জনপদ, নকশালবাড়ি। ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে যা নিয়ে আসে যুগান্তকারী পরিবর্তন।
আজ নকশালবাড়ি দিবস। ১৯৬৭-র এই আজকের দিনের পুলিসের গুলিতে নকশালবাড়ির প্রসাদুজোতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৮ জন কৃষক পরিবারের গৃহবধূ, এক কৃষক ও দুই শিশু। আর সেখানে থেকেই আন্দোলনের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। এক সময় তা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী।
কিন্তু, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিকে হয়ে গেছে সেই আন্দোলনের ঢেউ। নিভেছে স্ফুলিঙ্গের আগুনও। তবু কতিপয় মানুষ আজও ২৫মে স্লোগান তুলে নতুন করে সংগ্রামের অঙ্গিকার নেয়। জড় হয় নকশালবাড়ির প্রসাদুজোতে।
ইতিহাসের দিকে নজর দিলেই মিলবে নকশালবাড়ি আন্দোলনের নানা তথ্য। বর্তমান অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে কৃষকদের অধিকারের দাবিতে ও জমিদারদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ১৯৪৭-৪৮ সালে শুরু হয় আন্দোলন। জমিতে উত্পাদিত ফসলের ভাগ নিয়ে জমিদারদের বিরুদ্ধেই ছিল তাদের আন্দোলন। নেতৃত্বে ছিলেন দুই স্কুল শিক্ষক ভেমপাটাপু সত্যনারায়ণ ও আদিভাটলা কাইবাসাম। আন্দোলনকারীদের কন্ঠ আরও উজ্জীবিত করতে গান লিখতে শুরু করেন সুব্বারাও পানিগ্রাহী। গঠন করা হয় ‘অল ইন্ডিয়া কোঅর্ডিনেশন কমিটি অফ কমিউনিস্ট রিভোলিউশনারি’। পরবর্তী সময়ে যা CPI(Marxist-Leninist)-এ পরিণত হয়।
সেই আন্দোলনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়িতেও শুরু হয় আন্দোলন। শিলিগুড়ি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে জঙ্গল ও পাড়াহে ঘেরা এই ছোট্টো জনপদটিতে তখন ছিল গুটিকয়েক কৃষকের বাস। আর তারাই নিজেদের স্বাধীন কৃষকে পরিণত করার দাবি নিয়ে শুরু করে আন্দোলন। নেতৃত্বে থাকেন জঙ্গল সাঁওতাল, সৌরিন বসুরা। তাদের সেই আন্দোলন ধীরে ধীরে শক্তি অর্জন করতে থাকে। মিটিং, মিছিল করে কৃষকদের সঙ্গবদ্ধ করা। তাদের অধিকার সম্পর্কে বোঝানো চলতে থাকে জোর কদমে। ১৯৬৭-র ২৪ মে চলছিল তেমনই এক গোপন বৈঠক। সেই সময় হঠাত্ই জমিদারদের লেঠেল ও পুলিসবাহিনী নিয়ে সেখানে হাজির হন পুলিস আধিকারিক সোনম ওয়াংডি। কিন্তু, সেদিন পুলিসের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে সোনাম ওয়াংডিকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ।
এই ঘটনার ঠিক পরদিন, অর্থাত্ ২৫ মে প্রসাদুজোতেও একটি বৈঠক সংগঠিত হচ্ছিল। ঠিক সেই সময় পুলিসের পক্ষ থেকে সেখানে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। প্রাণ হারান ধনেশ্বরী দেবী, সিমাশ্বরী মল্লিক, নয়নেশ্বরী মল্লিক, মুরুবালা বর্মন, সোনামতি সিং, ফুলমতি দেবী, সামসরি সৈবানি, গাউদ্রাউ সৈবানি, খরসিং মল্লিক ও দুই কোলের শিশু। সেখান থেকেই জ্বলে উঠল আন্দোলনের আগুন। এবার আর সেই আন্দোলনের রেশ শুধুমাত্র কৃষক পরিবারেই আবদ্ধ থাকল না, বরং তা ছড়িয়ে পড়ল সেই সময়ের তরুণ ও যুব মননের একাংশের মধ্যে। আন্দোলনের রাশ ধরলেন চারু মজুমদার, কানু স্যান্যাল, খোকন মজুমদারদের মতো নেতারা। শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গই নয়, নকশাল আন্দোলনের আঁচ গিয়ে পড়ল দক্ষিণবঙ্গেও। ৭০-এর শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানিক শক্তির বিরুদ্ধে রস্তায় নেমে আন্দোলন করতে দেখা গেল এই ‘অ্যানার্কিস্ট রিভোলিউশনারিদের’। তবে, আন্দোলন তো শুরু করলেন…কিন্তু তার রূপরেখা কি হতে চলেছে?

বিশ্বের সর্বশেষ খবর, প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, সাক্ষাৎকার, ভিডিও, অডিও এবং ফিচারের জন্যে ইরাবতী নিউজ ডেস্ক। খেলাধুলা, বিনোদন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য সহ নানা বিষয়ে ফিচার ও বিশ্লেষণ।