অবিশ্বাস্য একটা চলে যাওয়া!
কবি সমর চক্রবর্তীর প্রতি ইরাবতী পরিবারের বিনম্র শ্রদ্ধা…
“কী যেন জানার ছিল রাত নিয়ে
বৃষ্টি আর রাত নিয়ে আরও কী জানাবে বলেছিলে
আমি তো দাঁড়িয়ে আছি এখনও গভীর ভাবে একা”
অবিশ্বাস্য একটা চলে যাওয়া! মেনে নিতে না পারা একটা চলে যাওয়া! চলে গেলেন কবি সমর চক্রবর্তী। একেবারেই আচমকা!প্রখর মেধার এই কবি আমাদের বাংলা কবিতার অহংকার। কবিতা লিখতে আসবার শুরুর দিনগুলিতে কবি সমর চক্রবর্তী স্নেহের হাত রেখেছিলেন পিঠে। চমৎকার হাতের লেখায় আমার দেবীবাড়ির বাসার ঠিকানায় তার চিঠি আসতো। আমার জমিয়ে থাকা জিজ্ঞাসাগুলি কি আন্তরিকতায় ধরে ধরে লিখতেন তিনি।তারপর থেকে তিনি শু্ধু সমর দা। আমার অভিভাবক। উত্তরের তরুণ কবিদের দায়িত্বশীল অভিভাবক। বন্ধু। গত এক বছরে প্রায় ১০ বার সমর দার সঙ্গে অনেকটা আড্ডার সুযোগ হয়েছিল।কবিতা নিয়ে,আমার বই ও কবিতা নিয়ে কত মূল্যবান কথা বলেছিলেন তিনি। পরামর্শ দিয়েছিলেন। কি তীব্র স্মৃতিশক্তি ছিল সমর দার!একবার কোন বই পড়লে,কাউকে দেখলে কিছুতেই ভুলতেন না।
বেপরোয়া ও বোহেমিয়ান এক যাপন ছিল তার। ব্যাকরণ না মানা আর ব্যকরণ ভাঙবার এক প্রবল পরম্পরা ছিল তার। শেষের দিকে বাইরের বোহেমিয়ান স্বভাব নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছিল, কিন্তু ভেতরের উদ্দামতাকে সযত্নে লালন করেই গেছেন তিনি। আর একের পর এক লিখে গেছেন জীবন নিংড়ানো সব কবিতা। আলোচক হিসেবে সমর দার তো কোন জুড়িই নেই। তার আলোচনা শোনা মানে প্রতিপল কেবল শেখা আর শেখা। মন্ত্রমুগ্ধের মতোন বসে থাকা তার শব্দ চালচিত্রের সামনে। ট্রিগারে আঙ্গুল রেখে তিনি বাংলা কবিতার দিকে বুক ফুলিয়ে দাঁড়াতেন এবং দাঁড় করিয়ে দিতেন আমাদেরকেও। আজ আবার পড়ে ফেললাম সমর দার অনেক আগের কবিতার বইটি_ ‘শিলা কিংবা শৈলী বিষয়ক’।এই পাঠ আবার নুতন হয়ে ফিরে এলো আমার কাছে।
নিজের কথা কোনদিন ভাবেননি তিনি। নিজের লেখা ও বই প্রকাশ নিয়ে ছিলেন তীব্র উদাসীন। বিখ্যাত হতে চাননি আপাত অর্থে!কেবল দাউদাউ এক হাহাকার নিয়ে কবিতা আর কবিতায় নিজেকে ভাসিয়ে দিতে চেয়েছেন। ঝকঝকে দু’চোখে কেবল মায়া আর মায়া।গমগমে কন্ঠস্বর কেবল গুহা পেরিয়েছে।অজস্র টানেল পেরিয়েছে। সমর দা ছিলেন তরুণ কবিদের স্বজন।তীব্র বন্ধু।এমন আপনজন হয়ে ওঠা অগ্রজ আজকের দিনে বিরল!
সমর দা লিখেছিলেন_
“কোথাও কবিতা হচ্ছে আমি তার পিপাসা পেয়েছি
আমার শরীর জুড়ে আমার শরীর হীনতায়”
সমর দা নেই। আমরা অভিভাবক হারালাম। এই উত্তর নিঃসংঙ্গ হয়ে গেল।
সমর দা নেই। আজ আকাশে ঝাঁক ঝাঁক কান্না। আজ মেঘেদের গানস্যালুট।
অন্তিম প্রণাম। শ্রদ্ধা। প্রিয় কবি সমর চক্রবর্তী।


জন্ম ১৯৭০, ০৩ জানুয়ারি. নয়ের দশকে লিখতে আসা এ কবি উত্তরের লোকজীবনের সাথে জড়িয়ে আছেন তীব্র ভাবে. ত্রিশ বছরের বেশী সময় ধরে কবিতা, গদ্য সহ বিভিন্ন ধারায় অনায়াস যাতায়াত করেছেন. বাংলা ভাষার প্রায় সব কাগজে নিয়মিত লেখালিখি করেছেন, করছেন. ১৯৯৬ সালে তাঁর প্রথম কবিতাবই প্রকাশিত হয় কবিতা পাক্ষিক থেকে. গুরুত্বপূর্ণ কবিতা ও গদ্যের বইগুলো- ধানবাড়ি গানবাড়ি, মাহুত বন্ধু রে, নির্বাচিত কবিতা, বিবাহ বাজনা, নাচঘর, উত্তরজনপদবৃত্তান্ত, মাতব্বর বৃত্তান্ত, ভাঙা সেতুর গান. পেশায় শিক্ষক এ কবি ভালোবাসেন রবিশস্যের খামার বাড়ি, সাদা ঘোড়া আর যৌথ যাপনে চাঁদের আলোয় কবিতা আড্ডা, লোকগানের আমেজ।