সা’দাত হাসান মান্টো (১৯১২-১৯৫৫)নিজে তখন তাঁর প্রাণের বোম্বে আর বন্ধুদের হারিয়ে লাহোরের একজন পাড় এলকোহোলিক। বিকেলে গিয়ে হানা দেন পত্রিকার অফিসে – টাকা দাও। পত্রিকার লোকজন কাগজ কলম এগিয়ে দেয়। মান্টো কখনো এক লাইন কখনো দেড় পৃষ্ঠার গল্প লিখে পাঁচ টাকা নিয়ে যান। সেই গল্প তীব্র, নির্মম গা শিউরানো রসিকতায় দেশভাগের দাঙ্গার গল্প। সেইগুলো এক করে বের হয় – সিয়াহ হাশিয়ে(১৯৪৮)নামে, মানে কালো সীমানা। তারই কয়েকটি এখানে দেয়া হল।
মিষ্টি খাওয়া
খবর পাওয়া গেল যে মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুতে আনন্দ প্রকাশ করার জন্য অমৃতসর, গোয়ালিয়র আর বোম্বাইয়ের কয়েক জায়গায় লোকেদের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।
কেরামতি
লুট করা মাল উদ্ধার করতে পুলিশ তল্লাশি শুরু করলো।
লোকজন ভয় পেয়ে লুট করা মাল বাইরে ফেলে আসতে লাগলো। কেউ কেউ তো পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য নিজেদের মালপত্রও বাইরে ফেলে দিলো ।
এর মধ্যে একজন খুব ঝামেলায় পড়ে গেল। তার কাছে মুদি দোকান থেকে লুট করে আনা দুই বস্তা চিনি ছিল। এর মধ্যে এক বস্তা সে রাতের অন্ধকারে কোন রকমে পাশের কুয়ায় ফেলে দিলো কিন্তু দ্বিতীয় বস্তা ফেলতে গিয়ে নিজেও বস্তার সঙ্গে কুয়ায় পড়লো।
শব্দ শুনে লোকজন ঘুম থেকে উঠে এলো। কুয়ায় দড়ি ফেলা হল। দুই জন জোয়ান ছেলে কুয়ায় নামল। লোকটাকে তুলে আনা হল। কিন্তু কয়েক ঘন্টা পরে সে মরে গেল।
এর পর দিন যখন লোকজন কুয়া থেকে জল তুলল, দেখলো কুয়ার পানি মিষ্টি!
সেই রাতেই ঐ লোকের কবরে বাতি দেয়া শুরু হল।
আরো পড়ুন: সাদাত হাসান মান্টোর গল্প শরীফন
জেলি
ভোর ছয়টার সময় পেট্রোল পাম্পের কাছে ঠেলা গাড়িতে বরফ ফেরিওয়ালার পেটে ছুরি ঠুকিয়ে দেয়া হলো। বেলা সাতটা পর্যন্ত লাশ রাস্তায় পড়ে রইল। ঠেলা থেকে বরফ গলে গলে পানি হয়ে পড়তে থাকল।
সোয়া সাতটা বাজলে পর পুলিশ লাশ উঠিয়ে নিয়ে গেল। বরফ আর রক্ত সেই রাস্তাতেই পড়ে থাকল।
পাশ দিয়ে একটা টাঙ্গা চলে গেল। তাতে বসা ছোট একটা বাচ্চা রাস্তায় জমে থাকা উজ্বল থকথকে রক্তের দিকে তাকাল। ওর জিভে জল এসে পড়ল। সে তার মায়ের হাত টেনে আঙ্গুল দিয়ে সে দিকে দেখিয়ে বলল – “দেখ মা, দেখ জেলি!”
