ফেরা
মুগ্ধতার সাথে অনেকদিন দেখা হয় না। খোঁজ নেই বিস্ময়ের। অথচ শৈশবে আমরা কত আপন ছিলাম। কৈশোরেও। পাড়ার মোড়ের কাঁচামিঠা আম আর ধান ক্ষেতের আইলের লাল ফড়িং আমাদের একত্র করেছে কতবার। পাগাড়ের পাঁচচৈক্যা মাছ অথবা আঁজলা ভরা জলের সাথে দূরন্ত ঘূর্ণির পানি পোকা ধরায় আমরা একে অপরের সাথে মিশে যেতাম। মুগ্ধতা আর বিস্ময় ছিল আমার দুই জমজ বন্ধু।
কুয়াশার কোমল বিকেলগুলো ছিল আমাদের স্বপ্নে ভাসার ডিঙি। নিকলা বিলের পানাফুলের কোমল গালে মুগ্ধতা রিনরিন সুরে গাইত আর বাতাসে আঁচড় কেটে নীল শ্লেটে সাদা মেঘের ছবি আঁকত বিস্ময়। এভাবে আমরা জমজ বন্ধুরা একে অপরের সাথে মিশে গিয়ে বর্ষার কলকলানো খালের মতো পাথে পাথাড়ে ছুটে বেড়াতাম।
তেমনি এক উথালপাথাল দিনে তেতে ওঠা রোদে মেঘ বুড়ির বাড়ি খুঁজতে আমি মুগ্ধতা আর বিস্ময়ের সঙ্গী হতে চাইলে খড়খড়ে গলার এক রুক্ষবুড়ো খেঁকিয়ে ওঠে, “কোথাও যাওয়ার কাম নাই। বড় হইছ না! বাইত যাও।” তার তামা তামা চেখে মুগ্ধতা পোড়া কাঁসা হয়ে যায়। পালিয়ে বাঁচে বিস্ময়। আমি একা শুধু বড় হয়ে একা হয়ে টিকে থাকি। টিকতে থাকি।
সেই থেকে আমি বড় হতে থাকি। ক্রমাগত বড় হতে থাকি। চশমা পরতে পরতে বড় হই, চুলে কলপ লাগাতে লাগাতে বড় হই। ব্যাংকের ঘষা কার্ড চাটতে চাটতে, শোল মাছের পোনার চচ্চড়ির স্বাদ ভুলে যেতে যেতে বড় হই।
তারপর বড়দের পথে হাঁটতে হাঁটতে পা পিছলে আছাড় খাওয়ার এক বিকেলে চৌরঙ্গী পার হয়ে লেকপাড়ের কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলগুলো টগবগ করে ফুটতে থাকলে আমার বিস্ময় আর মুগ্ধতার কথা মনে পড়ে। হারিয়ে যাওয়া বন্ধু মুগ্ধতা আর বিস্ময়কে একটু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে।অন্তত একবার।
কবি ও লেখক