| 20 এপ্রিল 2024
Categories
দুই বাংলার গল্প সংখ্যা

পিছুটান

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com“চা দিলাম। খাবারও ঢাকা আছে। আমি বেরোচ্ছি,” কথাগুলো বলে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল রেখা। কপালে এসে পড়া অবাধ্য চুলগুলোকে কানের পেছনে চালান করে দিতে দিয়ে আয়নার ভিতর দিয়ে লিটনের দিকে তাকাল। বিছানার উপর ঘুমিয়ে আছে লিটন, লুঙ্গি হাঁটুর উপর গুটিয়ে আছে। ঠোঁটের কষ দিয়ে লালা গড়িয়ে খরখরে হয়ে শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। খোলা মুখের উপর একটা মাছি ভনভন করছে। বাসী মরা মাছের মত চোখ উল্টে বিছানায় পড়ে আছে লিটন। বুকের খাঁচার ওঠানামা দেখে বোঝা যায়, শ্বাস চলছে। খালি মদের বোতল খাটের পাশে মেঝের উপর উল্টে পড়ে আছে। ঘেন্নায় নাক কুঁচকোয় রেখা। আর কটা দিন, তারপর এই নরক থেকে মুক্তি।

গলিটা পেরোলেই বড় রাস্তা। বাস স্ট্যান্ডে শেডের নীচে দাঁড়াল রেখা। শাড়ির আঁচল দিয়ে গলা ও কপালের ঘাম মুছল। ক’দিন ধরে খুব গরম পড়েছে। সস্তার সিন্থেটিক শাড়িটা গায়ে যেন সেঁটে যাচ্ছে। রেখা ফ্ল্যাট বাড়িতে বাচ্চা দেখার কাজ করে। হাতের পলিথিন প্যাকেটের ভিতর মোবাইল ফোন বাজছে। এই ফোনটা গত মাসে কিনে দিয়েছে বিল্টু। ফোনের শব্দে রেখার ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠল।  বিল্টুটা একেবারে পাগল। নতুন ফোনের বাক্সটা হাতে দিয়ে বলেছিল, ‘তোকে সবসময় দেখতে তো পাই না। তাই যখন তোর জন্য মন কেমন করবে, তোর সাথে কথা তো কইতে পারব।’ কেমন করে ফোন ধরতে হবে, কথা কইতে হবে সব বিল্টুই শিখিয়ে দিয়েছে হাতে ধরে। তার পরিবর্তে অবশ্য আদরটুকু সুদে-আসলে উশুল করে নিয়েছে। আর ক’দিন পরেই বিল্টুর সাথে ঘর বাঁধবে রেখা। বিল্টু কলের মিস্ত্রির কাজ করে, রোজগার পাতি ভালই। লিটনের মত নেশাভাং করে সব উড়িয়ে দেয় না। সংসারী মনের মানুষ, সঞ্চয় করতে জানে।

বাস এসে গেছে। বাসের ভিতর পা রাখতেই দরজার পাশের সীটের বুড়োটা উঠে দাঁড়ালো নামবে বলে। এই বাসে দমবন্ধ ভিড় থাকে সবসময়, বসার সীট পাওয়াই যায় না। রোজ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই যাতায়াত করে রেখা, আজ বসতে পেল। তাও আবার জানলার পাশে। জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল সে। ব্যস্ত মহানগর পেছনে সরে সরে যাচ্ছে। সকাল হতেই যে যার রুজির ধান্দায় পথে নেমে পড়েছে। শুধু রেখার ঘরের লোকটা এখনও দুপুর অব্দি হাত পা ছড়িয়ে ঘুমোবে। তারপর উঠে বাসীমুখে রেখার রেখে আসা ঠান্ডা চা আর ততধিক ঠান্ডা শুকনো খাবারগুলো বিছানায় বসে বসে গিলবে। ঘেন্না ঘেন্না! রেখার মনে পড়ে না, ঠিক কবে থেকে লিটনকে এমন ঘেন্না করতে শুরু করল সে। অথচ এই লিটনের প্রেমেই তো একসময় হাবুডুবু খেত। বাপ-মায়ের অমতে এক কাপড়ে এসে উঠেছিল লিটনের ঘরে। তখন অবশ্য এই ঘরের এমন দুরাবস্থা ছিল না। রেখারও দুই চোখে অনেক স্বপ্ন ছিল। লিটনই কি আর এমন ছিল তখন? বস্তির উঠতি মস্তান তখন সে। কী রোয়াব তখন তার! একে ধমকাচ্ছে, ওকে চমকাচ্ছে। পার্টির দাদারাও তখন লিটনকে হাতে রাখত। এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরত লিটন। গর্বে রেখার চোখ চিকচিক করত।

কবে থেকে সব বদলাতে শুরু করল? সরকার বদলাল, নতুন দল ক্ষমতায় এল, তখনও তো সব ঠিকই ছিল। রাজা উজীর বদলায়, সেপাই সেই একই থাকে। তারা রামের জন্যেও লড়ে, যদুর জন্যেও অস্তর ধরে। তাই সরকারে মুখ বদলালেও লিটনের রবরবা কমেনি। লিটনের কাছ থেকে খামচে-খুমচে টাকাপয়সাও বেশ কিছুটা জমিয়ে ফেলেছিল রেখা। একটা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনিয়েছিল লিটনকে দিয়ে। রেখা তখন পোয়াতি, লিটনকে দিব্যি-দিলাশা করেছিল, এই সব খুন-খারাপি গুন্ডাগিরি ছেড়ে সৎপথে রোজগার করতে হবে। পরে অনেক ভেবেছে রেখা। গুন্ডাই হোক আর যাই হোক, কোনদিন গায়ে লিটনের একটা আঁচড়ের দাগও পড়েনি। অথচ সৎপথে রোজকার করতে নেমে একমাসের মধ্যে নতুন গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে বিছানায় পড়ল লিটন।  অবশ্য আদৌ কতটা সৎপথে এসেছিল লিটন, সে নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল রেখার। সৎপথই যদি হবে, তবে লিটনের সাথে অস্তর ছিল কেন সেদিন? প্রাণে বেঁচে গেল, কিন্তু শিরদাঁড়াটা গেল জন্মের মত। সেই সঙ্গে গেল তাদের যাবতীয় সঞ্চয়, লিটনের মান, প্রতিপত্তি, রেখার মনের সবটুকু শান্তি, মায় পেটের বাচ্চাটা অব্দি। ভরা মাসের পেট নিয়ে হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে গিয়ে এক দুপুরে রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়েছিল রেখা। রক্তে ভিজে উঠেছিল তার কাপড়চোপড় আর পথের ধুলোমাটি। সেইদিন সেখানেই লিটনের প্রতি রেখার ভালবাসাটুকুও রক্তের স্রোতের সাথে ভেসে গেছিল। কারণটা রেখার নিজেরও জানা নেই।

“দিদি ভাড়াটা!” ভাবনার জালটা ছিড়ে গেল মুহূর্তে,  রেখা আবার ফিরে এল জনাকীর্ণ বাসের বাস্তবে। পলিথিন প্যাকেটের ভিতর থেকে হাতরে ছোট টাকার ব্যাগটা বার করল সে, পুরনো গয়নার দোকানের ছাপ মারা ছোট্ট চেন লাগানো একটা ব্যাগ, কাজের বাড়ির বৌদির থেকে চেয়ে আনা। চেন খুলে টাকাটা দিল কন্ডাক্টরের হাতে। কন্ডাক্টর ভাঙানি ফেরত দিতে খুচরো পয়সাগুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে আবার জানলার বাইরে তাকাল রেখা।

বিল্টু লিটনের দলের ছেলে ছিল। লিটনের চেয়ে বয়সে অনেক ছোট, হয়তো রেখার চেয়েও। কিন্তু সেই অসহায় সময়ে যখন একে একে সবাই লিটনকে ছেড়ে সরে পড়েছিল, বিল্টু পাশে ছিল। কেউ খবর রাখেনি, পার্টির নেতারা ফিরেও তাকায় নি, বিল্টু রেখার পাশ থেকে সরে নি। অসহায় রেখা নির্ভর করতে শুরু করেছিল বিল্টুর উপর। লিটনের প্রতি টান থেকেই রয়ে গেছিল বিল্টু, তারপর ধীরে ধীরে কেমন করে যেন রেখার সাথে মন দেওয়া নেওয়া হয়ে গেল।

প্রথম প্রথম কেমন একটা অপরাধবোধে ভুগত রেখা। তারপর নিজের মনকে বুঝিয়েছে, অন্যায় তো কিছু করছে না সে। ভাল থাকার অধিকার তারও আছে। লিটনের সাথে এক ছাদের তলায় থেকে এতদিনে কী পেয়েছে সে? সারাদিন ওই বিছানার উপর বসে বসে মদ গেলে, মুখ খুললেই নর্দমার জলের মত নোংরা খিস্তি ছোটে। মাঝে মাঝে রেখার গায়ে হাতও তোলে। এক পয়সা রোজকার করার মুরোদ নেই। তার মদের টাকাও উল্টো রেখাকেই দিতে হয়। বিল্টু বোতল কিনে এনে দেয়। এমন নির্লজ্জ, দাঁত বার করে বিল্টুকেই আবার আদেশ করে বিড়িটা, গাঁজাটা এনে দিতে। যেন বিল্টু এখনও তার চ্যালা। প্রথম প্রথম রেখার তবু লজ্জা করত, একটু রাখঢাক ছিল। এখন আর লাজলজ্জা রাখেনি রেখা। কেন রাখবে? যে পুরুষমানুষের মুরোদ নেই মাগকে ভরপেট খেতে দেওয়ার, বিছানায় সুখ দেওয়ার, তাকে কে ডরায়? আজকাল বিল্টুরও সাহস বেড়েছে। লিটনকে মদের বোতল ধরিয়ে দিয়ে পাশের ঘরে ঢুকে রেখাকে জড়িয়ে ধরে। ঠোঁটে ঠোঁট ডোবায়। তার হাত ঘুরে চলে রেখার শরীরের আনাচে-কানাচে। রেখা খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। যুগল শীৎকারের শব্দ কি আর পাশের ঘরে পৌঁছায় না? লিটন টের পায় সব। খিস্তির ফোয়ারা ছোটে মুখ দিয়ে। বিষহীন সাপের কুলোপানা চক্করকে কে ডরায়? তৃপ্ত, সন্তুষ্ট বিল্টু বেরিয়ে যাওয়ার আগে লিটনকে বলে, “আসি দাদা।” লিটন ঘোৎ ঘোৎ করে বলে, “পরের দিন একটা বিড়ির প্যাকেট বেশি আনিস তো। একটাতে এক দিনও চলে না”।

“তেঘরিয়া তেঘরিয়া”, কন্ডাকটরের চিৎকারে ঘোর ভাঙল রেখার। উঠে দাঁড়িয়ে ভিড় ঠেলে দরজার দিকে এগোলো সে। রাস্তায় পা রেখেই ঘামে ভেজা শরীরটা চিড়বিড় করে উঠল রেখার। ব্যাগের ভিতর মোবাইল ফোনটা বাজছে। এই ফোনে একজনই ফোন করে।

“হ্যাঁ বল”, রাস্তা পেরোতে পেরোতে বলল রেখা।

“ঘরটা পেয়ে গেছি রে। যারা থাকত, ওরা মাসের মাঝখানেই ছেড়ে দিল। মালিক বলেছে কাল থেকেই ভাড়া নিতে পারব। কাল তুই কাজের বাড়ি থেকে ছুটি কর। সকালে রেডি হয়ে থাকিস। আমি গিয়ে নিয়ে আসব তোকে।”

হঠাৎ করে রেখার মুখ দিয়ে কোন উত্তর বেরোলো না। কতদিন ধরে অপেক্ষা করে আছে এই দিনটার জন্য সে। কতবার কতভাবে কল্পনা করেছে। কিভাবে সাজবে, কিভাবে নতুন সংসারে পা রাখবে, মনের মত করে সংসার সাজাবে, বিল্টুর আদর-সোহাগে ডুবে থাকবে। সকলের মত রেখারও একটা সুস্থ সুন্দর সংসার হবে। দুইজনে মিলে খেটে সংসারটা গুছিয়ে তুলবে তারা। রেখাও মা হবে। আজ যখন সেই স্বপ্ন সফল হওয়ার মুখে, তখন রেখা মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ল। একটা গাড়ি প্রায় তার গায়ের উপর উঠে পড়তে পড়তে শেষ মুহূর্তে সজোরে ব্রেক কষল। ড্রাইভার জানলা দিয়ে মুখ বার করে কাঁচা খিস্তি দিল দু’চারটা। তাড়াতাড়ি পা চালাল রেখা।

সারাটা দিন কেমন অন্যমনস্কতার মধ্যে কেটে গেল। কত কিছুই তো পাওয়ার ছিল তার। স্বামী, সংসার, সন্তান, একটা সুখী গৃহকোণ, আরও কত কী। অথচ কিছুই পাওয়া হল না আজ অব্দি। রেখার ধূ ধূ মরুভূমির মত জীবনে বিল্টু ভগবানের দূত হয়ে এসেছিল। চাইলেই তো ও কম বয়সী, কুমারী মেয়ে বিয়ে করে সুখী হতে পারত। কিন্তু বিল্টু শুধু রেখাকেই ভালবাসে। ভাবলেই সারা শরীর মনে একটা অদ্ভুত ভালো লাগা চারিয়ে যায়। লিটন তার জীবনটাকে দুর্বিসহ করে দিয়েছে। সারাদিন লোকের বাড়িতে খেটে বাড়ি ফিরে রোজ একই দৃশ্য দেখতে হয়। মদ খেয়ে বমি করে সারা ঘর নরক করে রাখে লিটন। বিছানাতে হেগে-মুতে একশা করে। গন্ধে পেটের ভিতর পাক দিয়ে ওঠে রেখার। অতিরিক্ত পরিশ্রমে রেখার শরীরও ভাঙতে শুরু করেছে। বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। না, আর কিছু ভাববে না সে। হঠাৎ করে খবরটা শুনে একটা ধাক্কা লেগেছিল বই কি। যাওয়ার জন্য সে তো মনে মনে প্রস্তুতই ছিল। শুধু সেই যাওয়াটা এত তাড়াতাড়ি এমন হঠাৎ করে ঘটে যাবে আশা কর‍তে পারেনি রেখা। কিন্তু সারাদিন ভেবে মনস্থির করে নিয়েছে সে। যেতে যখন হবেই, তা আগেই কী আর পরেই কী? রেখা কালই যাবে, বিল্টুর সাথে পা রাখবে নতুন সংসারে। আর কিছু ভাববে না সে, আর পিছু ফিরে চাইবে না।

পরের দিনের জন্য ছুটি চেয়ে নিয়ে আজ একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে এল রেখা। দরজা খুলে ঘরে পা দিতেই ভক করে পরিচিত দুর্গন্ধটা নাকে এসে লাগল। দুয়ারে দাঁড়িয়ে উদ্গত বমিটাকে সামলে নিল রেখা। মেঝের উপর উপুর হয়ে পড়ে আছে লিটন। বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করতে গিয়ে পড়ে গিয়েছে সম্ভবত। এরকম প্রায়ই হয়ে থাকে, নতুন কিছু নয়। কাছ গিয়ে দুই তিনবার জোরে জোরে ধাক্কা দিতে লিটন গো গো করে কিছু বলল, চোখ খুলল না। পাশ কাটিয়ে ভিতরের ঘরে ঢুকে শাড়িটা খুলে ফেলল রেখা। তারপর  বিছানা ঘর সব পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে ঘন্টাখানেক কাটল। লিটনের গায়ের জামাকাপড় খুলিয়ে বালতি করে জল এনে গা মুছিয়ে ধোয়া লুঙ্গি পরিয়ে ধরে বিছানায় শোয়াল। সব সেরে নিজে কলতলায় গিয়ে পাম্পকল থেকে বালতি বালতি জল ঢালল নিজের গায়ে। মাথার তালু থেকে গরম আগুনের হলকা বেরোচ্ছে। জল চাই, আরও জল। ঠিক কতটা জল ঢাললে এই জ্বালা জুড়াবে জানে না রেখা।

ঘরে ফিরে দেখল লিটন চোখ খুলেছে, তার দৃষ্টি রেখাকেই অনুসরণ করছে। কোনও কথা না বলে, কুলুঙ্গিতে রাখা লক্ষ্মী গনেশের ছবির সামনে ধূপকাঠি ধরালো রেখা। অন্যদিন সেখানে কিছুক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে প্রণাম করে, আজ যেন দেবতার ছবির দিকে তাকাতে ভয় করছে তার। বিয়ের পর নিজে হাতে এখানে ঠাকুরের আসন পেতেছিল সে। মোটা কাপড়ের উপর রঙিন সুতোর ফুলপাতার নকশা তুলেছিল। তার উপর সযত্নে ঘট পেতেছিল। আজ আর দাঁড়াল না রেখা। তাড়াহুড়ো করে রান্নাঘরে ঢুকল। লিটনের সামনে আজ আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না সে। ওর চোখের দৃষ্টি যেন কাঁটার মত বিঁধছে রেখাকে। রাঁধতে গিয়ে আজ রেখার হাত পোড়ে, তরকারিতে নুন বেশী হয়, ভাতের চাল গলে জাউ হয়ে যায়। খেতে বসে গলা দিয়ে ভাত নামে না। এই ঘর, এই হাড়িকুড়ি থালা বাসনের সংসার, এই তেলচিটে দেওয়ালে ঝোলা ছেঁড়া ক্যালেন্ডার সব আজ যেন হঠাৎ তার বড় আপন মনে হয়। এসবই তো তার সংসার, আর ওই বাইরের ঘরে বিছানায় শুয়ে থাকা ভাঙাচোরা মানুষটা? আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না রেখা। ছুটে গিয়ে ঝাপিয়ে পরে লিটনের বুকের উপর। কান্নার দমকে ফুলে ফুলে উঠতে থাকে তার সারা শরীর। লিটনও চমকে উঠে থতমত খেয়ে যায়। তারপর রেখার পিঠে হাত রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নরম গলায় বলে, “কী হল? যাওয়ার ডাক এসেছে, তাই না? এইই ভাল রে। বিল্টু ভাল ছেলে, তোকে ভাল রাখবে। আমি তো তোকে কিছুই দিতে পারলাম না। “

লিটন শেষ কবে রেখার সাথে এমন নরম গলায় কথা বলেছে? শব্দ করে কেঁদে ওঠে রেখা। লিটনের হাতদুটো ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “কেন তাড়িয়ে দিতে চাইছ আমায়?”

“আমি তাড়াব তোকে?” হাসল লিটন। বলল, “তা নয় রে। তুই তোর জীবনটা আমার জন্য নষ্ট করবি কেন? তুই চলে যা। ভালো ভাবে বাঁচ।”

লিটনের মুখের দিকে চেয়ে আজ রেখার হঠাৎ মনে হল, লিটনের হাসিটা এত সুন্দর? কই আগে তো কখনও চোখে পড়েনি তার! লিটনের বুকে মুখ গুঁজে মৃদুস্বরে বলল রেখা, “কোথাও যাব না আমি, যাব না, যাব না, যাব না। নষ্ট মেয়েমানুষ বলে তাড়িয়ে দিলেও যাব না। বাঁচতে হলে দুজনেই নতুন করে বাঁচব। এই সংসার ছেড়ে যেতে পারব না গো।”

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত