লোকটি চুরি করেছিল। দেশের আইন খুব কড়া। ফাঁসীর হুকুম হয়েছিল লোকটির। নিয়ম অনুযায়ী জানতে চাওয়া হল তার শেষ ইচ্ছে। সে রাজা হতে চাইল। এমনটা হয়, না হয় না সে নিয়ে অনেক টানাপোড়েনের পর, ন্যায় ধর্ম মাথায় রেখে তাকে আধবেলার জন্য রাজা করা হল। রাজা হয়ে বলল, যেন ছলের রাজা তাকে না করা হয়। রাজাকে রাজার ক্ষমতা না দিলে ন্যায় হবে না। সঙ্গে সঙ্গে সবাই বলল সে ক্ষমতা তার আছে। শুধু আগের কোন কিছু সে বাতিল করতে পারবে না। ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নিতে পারবে না। বলে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল। ভাবটা হচ্ছে আসল জায়গায় বাঁধ দিয়ে দেওয়া হল। সে হাসল। কেরানিকে ডাকল। বলল ‘আইন লেখ’।
কেরানি লিখল। আইন হল তার রাজাগিরি শেষ হবার পর যেই রাজা হবে তাকে আগে নিজেকে সবচেয়ে বড় ডাকাত প্রমাণ করতে হবে। ভাল খাবার খায়নি, ভাল জায়গায় যেতে চায়নি, ভাল পোষাক পরেনি, রাণীর ঘর বা হারেমের দিকে পা বাড়ায়নি, আইন লেখা শেষ হতেই ফাঁসীর মঞ্চে চলে গেছিল। ফাঁসীর আগে রাজাও তাকে দেখতে আসে। রাজাকে দেখে সে হাসে। ঝুঁকে নমস্কার করে বলে,
-আপনিও আমাকে প্রথম দেখলেন, আমিও আপনাকে। আপনিও শেষবারের মত দেখলেন, আমিও আপনাকে শেষ বারের মত দেখলাম। আপনি আমার শেষ দেখলেন, আমি যা দেখলাম তা সময়ে জেনে যাবেন।
খুব ফূর্তির হাসি নিয়ে ফাঁসীর মঞ্চে ঝুলে গেল চোরটা।
আইন হয়েছে বলে রাজাকে আবার সিংহাসনে বসার জন্য প্রকাশ্যেই ডাকাতি করতে হল দেশের মধ্যে। পাল্লা দিয়ে আরো অনেকেই করতে চাইল ডাকাতি। শ্রেষ্ঠ ডাকাত রাজা হবে যে। দেশে এমন ঝামেলা লাগল এই ডাকাতি নিয়ে যে প্রজারা অতিষ্ঠ হয়ে সব ডাকাতকেই বধ করতে শুরু করল। চোরের করা আইন বাতিল হল। নতুন আইন হল আর কেউ রাজা হবে না কখনো। সকলে আলোচনা করল যে চোরের বুদ্ধিই তাদের সবার চাইতে বেশী। সেই বুঝেছিল রাজারাই আসল ডাকাত। কাজেই চোরেদের নিয়েই নতুন শাসন হতে হবে। অতএব চোর মনোনয়ন পর্ব শুরু হল। এখন নতুন শাসন ব্যবস্থায় চোরেরাই শাসন করে থাকে।