প্রতারক
কবিতাটি তাঁদের মনে দাগ কেটেছিল কিন্তু তারা হয়েছিল আহত।
তাঁদের দাগ কাটা আর তাদের আহত হওয়ার ভেতরই আমার বেড়ে ওঠা।
পথে ছিল শামুক-শ্যাওলা; ছিল লাল গালিচা।
আমি শুধু হাত বাড়িয়ে নিয়েছি প্রথমাকে।
তাঁরা আমাকে প্রশ্ন করে—তারপর?
তাঁরা আমকে দেখায় আতশবাজি;
এ দুয়ের ব্যবধানে আমি শুধু তাঁদের সমার্থক হই।
আমার থেমে থাকায় তাঁরা দেখে দোয়াতে চুবিয়ে খাওয়া চা—
ঝুল বারান্দায় ঝুলে আকাশ থেকে পেড়ে আনা একটি ধুতুরা ফুল;
আমার সকাল দুপুর তাদের কাছে আরেকটি ঝরে যাওয়া মুহূর্ত।
আমাকে তারা বারবারই মাছের বুকে পেরেক বসাতে বলে
অথচ আমি তাঁদের মুখোমুখি আয়নাকেই দেখি…
আমাকে তাঁরা ফিরিয়ে দিয়েছিল গোধূলির পর
অথচ তাঁরা না ফিরে আমাকে দেয় সহস্র শুভ্র জমিন—
চলে অসঙ্গতির বিরামহীম কর্তন…
আমি তাদের কাছে হন্তারক হতে পারি,
কিন্তু তাঁদের কাছে প্রতারক না।
সন্ন্যাসে পরিচিতি
আরো কিছু থেকে গেলে রাত!
তোমার দু‘চোখে হতো ভোর
আরো কিছু এঁকে গেলে হাসি
খুলে যেতো দিগন্তের দোর।
আমরা যাবার নই, মগ্ন
এবং ছিলাম স্নানে, রথে।
উষ্ণতায় লবণ-লাবণ্য
বিলোড়িত অবারিত পথে…
দেখা ছিলো দুহাত জড়িয়ে;
দেখেছি ঠিকানা হাত জুড়ে-
অসম্ভবে মন্দাকিনী এলো,
ঠোঁটকাঠি রৌদ্র-জলে পোড়ে…
সুরের সমাপ্তি ঝড়ো রীতি
স্বপ্ন ও সন্ন্যাসে পরিচিতি!
মানুষেরা কেনো দেশ ছেড়ে চলে যায়–০১

মানুষেরা কেনো দেশ ছেড়ে চলে যায়–০২
মানুষের পেটে ক্ষুধা,
বুকের ভেতরে অশ্ব খুড়ের তাড়া,
মানুষেরা ভাঙে সিঁড়ির দৈর্ঘ্য; মাছরাঙা ঠোঁটে খাড়া।
মানুষেরা ডলে তালু,
শুকতারা গোনে, হাম্বড়া হয়ে হাঁটে,
টান দেয় পালে, ছেঁড়া জাল তুলে ঘুরঘুর করে ঘাটে।
নোঙরের খোঁজে দিন,
কানামাছি প্রেমে দেশ ছেড়ে চলে যায়,
গম্বুজ ছুঁতে পায়রা পালকে পৃষ্ঠাকে বদলায়।
মানুষেরা কেনো দেশ ছেড়ে চলে যায়–৩
দরকষাকষি করে দলাদলি তারা করে!
ধূলো জমা পড়ে আমাদের আসবাবে,
চৌকাঠে ঠেকে বেয়াড়া নাভিঃশ্বাস।
বহু তকমায় অর্জিত সব কৃষ্ণচূড়ার স্মৃতি
চেয়ে থাকা দুই নদীর কিনারে উপচে উথলে ওঠে ,
চেনামুখগুলো পেঁয়াজ–রসূনে ভাগবাটোয়ারা গ্রাসে—
বুভুক্ষু জিভ সম্ভোগে মাংসাশী।
আমাদের ঝরা ঘাম
সংঘাত সংঘর্ষের মেঘে ভগ্ন স্বপ্নে যায়…
পান্তা লাঙলে মাখামাখি করে গড়ে ওঠা গম্বুজে
অতল দুঃখে মহাজনই ঘর ছাড়া!
ভোকাট্টা প্রায় ঘুড়ি রোদ্দুর খুঁজে
সীমান্ত ছেড়ে সীমান্তে আসে মন–বাড়ি থাকে দূরে!
দ্বৈত দ্বিধায় গোলা ভরা হাসি দিতে
রাত্রি ও দিন মোহনায় হাতড়ায়…
ক্ষরণের পথে তবু
দেশ ছেড়ে গেলে ভাঙা চশমায় পথ ঠিকই চেনা যায়।

কবি, উপস্থাপক, স্বরশিল্পী ও আইনজীবী