দুর্ভর জীবন
ভালোবাসার ঘর ভেঙে গেলে
একটা নিস্তব্ধ গাছতলাও খুঁজে পাওয়া যায় না
তাড়াতাড়ি বিকেল হয়ে যায়
পৃথিবী একটা বলের মতো গড়তে থাকে
কে গড়ায় বল?
গলায় দড়ি দেওয়া গোল ফাঁসের শূন্যের ভেতর দিয়ে সূর্য চলে যায়
সেদিকেই তাকিয়ে দেখতে থাকি অন্ধকারের সঙ্গম
মরণের প্রসব বেদনা বাড়তে থাকে
একটা দেওয়ালও নেই, একটা পাহাড়ও নেই
আড়াল করে রাখার
সময়ের নীল হাঁসেরা উড়ে যেতে থাকে গগন ভেদ করে
নিজেকে লুকিয়ে রাখি
কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না
ভালোবাসা হারিয়ে গেল—
একটি হলুদ রঙের পোশাক ফেলে চলে গেল
স্মৃতির উঠোন খাঁখাঁ করে
পারস্পরিক শূন্যতায়
কিছু জ্বরের উষ্ণতা
ঘুরেফিরে খেলাধূলা করে
দিনশেষের ক্লান্তি উড়ে আসে
সেও অদৃশ্য কোনও পাখি
আমার কাছেই বৈধতা চায়
দু’একটি রাস্তা খুঁজে খুঁজে
নিরর্থ কল্লোলে আমি কান পেতে থাকি
কে নৌকার দাঁড় টানে?
ছোপ ছোপ শব্দ হয়
শব্দের বিস্তারে রাত্রি নামে…
আমি স্তব্ধতার কাছে আমার ব্যাকুলতা রাখি
নিজেকে নিজের ভেতরে লুকাই
বৈশাখ এল
আজ নতুন বৈশাখ এসেছে
সূর্যটা দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির কানাচে
তোমার জন্য নতুন শাড়িও এনেছে
সুসংবাদ পাওনি এখনও?
সমস্ত সংবাদই আজ সুসংবাদ হবে
ওই দ্যাখো কল্পনার পাখায় পাখায় গান
বেদবতী সরস্বতী স্নান করে স্বপ্নের জলে
মানসসরসী জুড়ে ঢেউ
হাওয়ায় তার সাদা শাড়ি পত্ পত্ ওড়ে
ভীরু হয়ে তাকিয়ে আছি
নষ্ট কার্নিশে কাক ডাকে
তোমাকে স্পর্শের ডাকে
হাত এগিয়ে যায়
কবে যে হেসেছ তুমি
এখনও হাসির ঝিলিক পড়ে আছে
মরা দূর্বাঘাসে বিরহ চিহ্ন আঁকা
নিরীহ চোখে তবু আলো জ্বলে
আলোয় আলোয় বৈশাখ নাচে
বাড়ির কানাচে ঘুমভাঙা দিন
জেগে উঠল, জেগে উঠল
তার বন্দনায়….
ধর্ষক
অন্ধকার হয়ে আসছে দেশ
আমাদের কিশোরী ইচ্ছারা আর বাড়ি ফিরতে পারবে না
দলে দলে আসছে সব ধর্ষণের লোক
ধর্ষণের পর খুন করবে ওদের
তারপর অন্ধকারের দিকে গড়িয়ে দেবে লাশ
এদেশে এত ধর্ষক জন্মায়?
ধর্ষকেরা ধর্মের শ্লোগান দেয়
ধর্ষকেরা প্রেমিক হতে চায়
তবুও ধর্ষকরা নিছক ধর্ষক
শেষ পর্যন্ত তারা শুধুই খুনি হয়
উদ্ধত লিঙ্গ গর্জনে কেঁপে কেঁপে উঠি
সম্পর্ক বলয় ভেঙে পড়ে
রক্তে ভিজে যায় এই মানবিক মাটি
আর্ত চিৎকার করে বিধস্ত সংবিধান
সমস্ত অশ্রুর চিহ্নে আতঙ্কিত মুখ ঢাকে
মোচড়ানো দোমড়ানো বোধ
একে একে সহ্য করে তার ব্যর্থ প্রতিরোধ
রক্তাক্ত পবিত্র যোনি কলঙ্কিত হয় নির্বোধের কাছে

জন্ম: ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রামে ।পিতা ও মাতার নাম :জিকির খান ও নওরাতুন । বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনো । প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতায় পি এইচ ডি। বর্তমানে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কোথায় পা রাখি’(১৯৯৪)। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : বৃত্তের ভেতরে জল, জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা, উন্মাদ বিকেলের জংশন, স্তব্ধতার ভেতর এক নিরুত্তর হাসি, নির্ঘুমের হ্রস্ব ধ্বনি, আকাঙ্ক্ষার ঘরের জানালা, সভ্যতা কাঁপে এক বিস্ময়ের জ্বরে, সর্বনাশের ডায়েরি ইত্যাদি ।পুরস্কার পেয়েছেন :কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার, দৌড় সাহিত্য পুরস্কার, নতুনগতি সাহিত্য পুরস্কার ইত্যাদি ।
ঠিকানা :
রামরামপুর (শান্তিপাড়া),
ডাকঘর রামপুরহাট,
জেলা বীরভূম,
পিন কোড ৭৩১২২৪,
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
ফোন ৯৩৩২৯৯১২৫০