| 1 সেপ্টেম্বর 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত কবিতা

অসমিয়া অনুবাদ কবিতা । তপন বরুয়া

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

Tapan Barua

কবি পরিচিতি: ১৯৬৪ সনে ডিব্রুগড়ের (অসম) টেঙাখাতে কবি তপন বরুয়ার জন্ম হয়। ছাত্র জীবন থেকেই কবিতা চর্চা শুরু। আজ পর্যন্ত অসমিয়া ভাষায় ১৩ টি কাব্য সংকলন প্রকাশিত।ইংরেজি কাব্য সংকলন Man anywhere is a Man( ড;আনন্দ বরমুদৈ এবং হেমচন্দ্র দত্তের দ্বারা অনূদিত) শীর্ষক গ্রন্থের জন্য আলিগড়ের united Spirits of writer’s Academy র দ্বরা Excellence in World poetry award (2014) এ সম্মানিত।ভারতীয় বিমান বাহিনীতে কুড়ি বছর চাকরি করার পরে জুনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।ছাঁর খোঁজ,পার ভাঙ্গি বৈ যাওক,জোনাক-জোয়ার ইত্যাদি অন্যতম কাব্য সঙ্কলন।

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস


 

একদিন তুমিও বৃদ্ধ হবে

তিনি এখন তোমার খোঁজ করছেন।
খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তোমাকে গর্ভে রাখা সেই নয়টি মাস
আর ঠিক পরের
তোমার কোমল হাত-পা-ঠোঁট
এতদিনে নিজের চোখে এঁকে রাখা আস্থার আকাশ।
কী খুঁজছেন বলা কঠিন যদিও
তোমার মধ্যেই কিন্তু অন্তর দিয়ে খুঁজছেন।
এক বুক সুখ, দুচোখ হাসি
আশ্রয়ের জগতটা এবং
জীবন রথ চালিয়ে যাবার মতো যৎকিঞ্চিৎ ইন্ধন।
কেবল অনুভূতি দিয়ে বেশিক্ষণ
ভেসে থাকা যায় না বিকেলের আকাশে;
মৃত্যু নামের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি থেকে যে তিনি
মুক্ত নন ভালোভাবে জানেন।

তিনি এখন আমাদের সবার খোঁজ করছেন।
খুঁজছেন সেই গর্ভমূলের ছায়া
অন্য কোনো গাছের ছায়াও
কোনো কালে যার সমান
সুখ এবং শান্তি দিতে পারেনা।

দিনের পর দিন সংকুচিত হয়ে আসা
পৃথিবীটা থেকে দূরত্ব বজায় রেখে
তিনি কিন্তু বলতে চাননি–
‘তোমরাও একদিন বৃদ্ধ হবে’।

 

মৃত্যুর বাইপাস- ওয়ের খোঁজে

একটা টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষটা;
সভায় সমিতিতে বক্তৃতা প্রদানের মতো
অনর্গল বলে যাচ্ছে কথাগুলি।

বাকিরা তার দিকে মেলে দিয়েছে
নিজের নিজের শ্রবণ তরঙ্গ।

শৈশব থেকে বৃদ্ধাশ্রম পর্যন্ত
আনন্দ- উল্লাস থেকে জরা- যন্ত্রণা পর্যন্ত
জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকেই তিনি
প্রত্যেকের সামনে
বিচারের কাঠগড়ায় বসিয়েছেন।

ভাগ নিয়ে কেউ কথা এগিয়ে নিয়ে না যাওয়ায়
একাই সায় দিয়ে হেসেছেন
আর অবশেষে
কক্ষটা ছেড়ে দরজার অভিমুখে গিয়ে
কয়েকবার বললেন–
‘মৃত্যুকে পার হয়ে যেতে পারা আমার একটা
বাই-পাস- ওয়ে লাগে
বাই-পাস- ওয়ে লাগে।।’

 

 

 


ধর্ম

চোখ দুটো খুলে নিলাম;
এক এক করে
সমস্ত ধর্মগ্রন্থে হাত দুটি রাখলাম।

মানুষ! কেবল মানুষ
মানুষের বাইরে দেখছি অন্য কিছুই
ছুঁতে পারলাম না!

চোখ দুটি নিজের স্থানে পুনরায়
স্থাপন করলাম
পাতা দুটি মেলে দেখতে পেলাম
তাঁর চোখে ময়লা
তাঁর চোখে ময়লা;
ময়লা তাঁর বুকে
তার মস্তিষ্কে।

আমি আমার চোখের আয়নায়
দেখার চেষ্টা করলাম নিজেকে দেখব বলে;
আমি আমাকে
আমার মতো দেখতে পাই কী না পাই!

 

 

 


মানুষের দেউল

সারা দিন যুদ্ধ- বিগ্রহ করে
দেউলের চূড়ায়
কিছুক্ষণ আগে জ্বালিয়ে এলাম
একটা প্রদীপ।

এরকম করলে নাকি
ভেতরটা মরে আসা মানুষের বুক
উজ্জ্বল হয়ে উঠে সোনালি আভায়
আর তিনি,
প্রথমে দেউল এবং তার পরে
উঁচু হওয়ার প্রয়াস করে
আকাশের সমান।

একদিন ধীরে ধীরে
নামিয়ে আনতে পারার মতো হয়
মাথার ওপরের নীল
অতএব: সবাইকে জোড়া লাগাতে পারা
আলোকের সুধা

গড়ার জন্য মানুষের দেউল।

 

 

 


লিটল বয় ,ফ্যাট বয়

ভুলতে না পারা একটা গ্লানি বুকে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি

হে লিটল বয়
হে ফ্যাট বয়
হে পঁয়তাল্লিশের ছয় এবং নয় আগস্ট

রাজনীতির দরবারে
ভূগোল ইতিহাস যে চলেনা
হে হিরোসিমা
হে নাগাসাকি

ভুলতে না পারা একটা গ্লানি বুকে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি
দানবের ক্রূরতা কি বীরত্বের পরিচয়?

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত