| 5 ফেব্রুয়ারি 2025
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত গল্প

অনুবাদ: এ্যালকেমিস্ট । পাওলো কোয়েলহো (পর্ব-৪)। সায়মা মনি

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

পৃষ্ঠা ৩১

বালকটি অপেক্ষা করল, আর তখন বৃদ্ধ লোকটিকে মাঝপথে বাধা দিল ঠিক যেমন সে নিজে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। ‘তুমি কেন আমাকে এসব বলছ?’

‘কারন তুমি তোমার গন্তব্য বোঝার চেষ্টা করছিলে।আর তুমি এখন এমন একটা অবস্থায় আছো, যেখানে তুমি সবকিছু প্রায় ছেড়ে দেয়ার পথে।’

‘আর সবসময় তুমি তখন দৃশ্যে উপস্থিত হও?’

‘এভাবেই সবসময় নয়, তবে আমি সবসময় এক রূপে অথবা, অন্য রূপে আবির্ভুত হই।মাঝে মাঝে আমি সমাধান রূপে আবির্ভুত হই, অথবা একটি ভালো কোন ধারনার মত।অন্য সময়ে, একটি সংকটময় মুহুর্তে, আমি এমনটি (তোমার মন মত) ঘটার জন্য সহজ করে দেই।আরো কিছু জিনিস আছে যা আমি করে থাকি, কিন্তু বেশিরভাগ সময়ে মানুষেরা বুঝতে পারেনা যে আমি ওগুলো করেছি।’

বৃদ্ধ লোকটি আরো বলল, এক সপ্তাহ আগে, তাকে জোরপূর্বক একটি খনির সামনে দাঁড় করানো হল, আর সে একটি পাথরের আকৃতি ধারণ করল।খনিশ্রমিক সবকিছু পরিত্যাগ করেছিল পান্না আরোহন করবে বলে।পাঁচ বছর যাবত সে একটি নির্দিষ্ট নদীতে কাজ করেছে, আর লক্ষ লক্ষ পাথর পরীক্ষা করেছেন একটি পান্না খোঁজার জন্য। খনি শ্রমিক সব কিছু প্রায় ছেড়ে দিচ্ছিল, ঠিক তখন যখন, তাকে শুধুমাত্র আরো একটি পাথর পরিক্ষা করতে হত- শুধু আর একটি পাথর- সে তার পান্না খুঁজে পাবে।

 

পৃষ্ঠা ৩২

যেহেতু খনি শ্রমিক তাদের সবকিছু ত্যাগ করেছে তাদের ভবিষ্যত ভাগ্যের জন্য, বৃদ্ধ লোকটি এতে নিজেকে জড়িয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিল। সে নিজেকে একটি পাথরে রুপান্তরিত করল যা ঘুরে ঘুরে খনি শ্রমিকের পায়ের কাছে পড়ল।খনি শ্রমিক, তাদের নিষ্ফল পাঁচ বছরের রাগ আর হতাশা নিয়ে পাথরটি তুলল আর এক পাশে ছুঁড়ে মারল।কিন্তু সে এটি এত জোরে ছুঁড়ে মারল যে এটি যার উপরে পড়ল, তা ভেঙে গেল, আর সেখানে, ভাঙা পাথরে খচিত হল, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পান্না ছিল সেটি।

‘মানুষ তাদের ছোট বেলায় শেখে, কি তাদের অস্তিত্বের কারন, বৃদ্ধ লোকটি বলল, এক ধরনের তিক্ততা নিয়ে।হয়ত এ কারনে তারা এত দ্রুত শেখাও বন্ধ করে দেয়।কিন্তু এটা এভাবেই হয়।

বালকটি বৃদ্ধ লোকটিকে মনে করিয়ে দিল যে সে গুপ্তধন সম্পর্কে কিছু বলেছিল।

‘সম্পদ জল প্রবাহের শক্তিতে উন্মুক্ত হয়, আর এটি সমাধিস্থ হয় একই প্রবাহে,’ বৃদ্ধ লোকটি বলল। ‘যদি তুমি তোমার নিজের সম্পদ সম্পর্কে জানতে চাও, তোমার আমাকে তোমার মেষপালের দশ ভগের এক ভাগ দিতে হবে।’

 

পৃষ্ঠা ৩৩

‘আমার সম্পদের দশ ভাগের এক ভাগ হলে কেমন হয়?’

বৃদ্ধ লোকটিকে মন:ক্ষুন্ন হতে দেখা গেল। ‘যদি তুমি তোমার প্রতিজ্ঞা করতে শুরু কর এমন কিছু দিয়ে যা তুমি নিজে এখনওপর্যন্ত পাওনি, তুমি এটা পাওয়ার জন্য পরিশ্রম করার ইচ্ছাশক্তি হারিয়ে ফেলবে।’

বালকটি বলল, সে ইতিমধ্যে তার সম্পদের দশ ভাগের এক ভাগ দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে একজন বেদুঈনের কাছে।

‘বেদেরা মানুষের সাথে অমন করায় অভিজ্ঞ,’ বৃদ্ধ লোকটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল। ‘যা হোক, এটা ভাল যে তুমি শিখে গেছো যে জীবনে প্রতিটা জিনিসের মুল্য আছে।এটাই আলোর যোদ্ধারা শেখানোর চেষ্টা করে থাকে।’

বৃদ্ধ লোকটি বালকটিকে বইটি ফেরত দিল।

‘আগামীকাল, ঠিক এই সময়ে তোমার মেষপালের দশ ভাগের এক ভাগ নিয়ে আসবে আমার কাছে।আর আমি তোমাকে কি করে গুপ্তধন খুঁজে পাবে তা বলে দিব।শুভ বিকাল।’

আর সে প্লাজার কোনা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।

বালকটি আবার তার বই পড়তে শুরু করল, তবে তার মনোযোগ দেয়ার মত সামর্থ্য ছিলনা আর। সে চিন্তিত আর দু:খিত হয়ে ছিল, কারন সে জানত যে বৃদ্ধ লোকটি ঠিক বলেছে। সে রুটির দোকানে গেল আর একটা গোটা পাউরুটি কিনল, ভাবছিল যে তার বলা উচিত কিনা রুটিওয়ালাকে যা বৃদ্ধ লোকটি তার সম্পর্কে বলেছিল।

 

 

পৃষ্ঠা ৩৪

কখনও কখনও কিছু বিষয়কে যেমন আছে তেমন করেই ছেড়ে দিতে হয়, সে নিজে নিজে ভাবল, আর কিছু না বলার সিদ্ধান্ত নিল।যদি সে কিছু বলত, রুটির দোকানদার তিন দিন ধরে সব কিছু ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবত, যদিও রুটির দোকানদার যেমন আছে তাতে অভ্যস্থ হয়ে গেছে। বালকটি ওই রুটির দোকানদারের সেই রকম উদ্বিগ্ন হওয়া প্রতিরোধ করতে পারল।তাই সে শহরে এলোমেলো ঘুরতে শুরু করল, আর শেষে একটি দরজার সামনে এল।সেখানে একটি ছোট দালান ছিল,একটি জানালা সহ যেখানে লোকজন আফ্রিকার টিকিট কাটে। আর সে জানত যে মিশর আফ্রিকায় অবস্থিত।

‘আমি কি আপনাকে সাহায্য করতে পারি?’ একজন লোক জানালার পেছন থেকে জিজ্ঞেস করল।

‘সম্ভবত কাল,’ বালকটি বলল, চলে গেল।সে যদি তার কেবল মাত্র একটি ভেড়া বিক্রি করে, তার যথেষ্ট হয়ে যেত তাতে সে প্রনালীটির অন্য তীরে যেতে পারত।এই চিন্তাটি তাকে ভীত করে তুলল।

‘আরেকজন স্বপ্নবাজ,’ ছেলেটিকে চলে যেতে দেখে টিকেট বিক্রেতা তার সহকারীকে বলল।’তার ভ্রমণ করার মত যথেষ্ট টাকা নেই’।

 

 

পৃষ্ঠা ৩৫

যখন টিকেট কাটার দরজায় দাঁড়িয়েছিল, বালকটির তার মেষপালের কথা মনে পড়ল, আর ঠিক করল সে ফিরে যাবে কারন তার একজন মেষপালক হয়ে থাকা উচিত।এই দুই বছরে সে মেষপালন সম্পর্কিত সবকিছু  শিখেছে: সে কিসের ভিত্তিতে মেষগুলোকে দলে ভাগ করতে হয়, আর গর্ভবতী ভেড়িগুলোকে কিভাবে যত্ন করতে হয়, আর কিভাবে ভেড়াগুলোকে নেকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হয় সব শিখেছে।সে আন্দালুসিয়ার সব মাঠ আর চারণভূমি সম্পর্কে জানত।আর সে তার প্রত্যেকটা পশুর সঠিক মুল্য জানত।

সে তার বন্ধুর আস্তাকুঁড়ে সম্ভবত দীর্ঘ পথ দিয়ে ফেরত যাবে স্থির করল।যখন সে শহরের দুর্গের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল, সে তার ফিরে যাওয়া থামাল, আর পাথরের ঢাল দিয়ে উপরে উঠল যা তাকে দেয়ালের সর্বাগ্রে নিয়ে গেল, সেখান থেকে, সে দূরে আফ্রিকা দেখতে পেল।কখনও কেউ তাকে বলেছিল যে এটা সেখান থেকে এসেছে যেখান থেকে নিগ্রোরা এসেছিল, পুরোটা স্পেন দখল করতে।

সে প্রায় পুরোটা শহর দেখতে পাচ্ছিল যেখানে সে বসেছিল, সেই প্লাজাটাও যেখানে সে সেই বৃদ্ধ লোকটির সাথে কথা বলেছিল।যেই মুহুর্তে তার সাথে দেখা হয়েছিল, তা অভিশপ্ত,সে ভাবল।সে শহরটায় এসেছিল শুধু সেই নারীর খোঁজে যে তার স্বপ্ন ব্যাখ্যা করতে পারবে। নারী আর বৃদ্ধ লোকটির কেউই একটুও অবাক হলনা এই সত্যটা জেনে যে সে একজন মেষপালক।তারা আলাদা আলাদা লোক ছিল যারা আর কোন জিনিসে বিশ্বাস করত না, আর বুঝতে পারতো না যে একজন মেষপালক তার মেষের সাথে যুক্ত হয়ে উঠতে পারে।


আরো পড়ুন: অনুবাদ: এ্যালকেমিস্ট । পাওলো কোয়েলহো (পর্ব-৩)। সায়মা মনি


পৃষ্ঠা ৩৬

সে তার মেষপালের প্রতিটি মেষ সম্পর্কে সব কিছু জানত: কোনটা খোঁড়া, কোনটা এখন থেকে দুইমাস পরে নবজাতকের জন্ম দেবে, আর কোনটা সবচেয়ে বেশি অলস ছিল সে জানত।কি করে দলে ভাগ করতে হয় ওদের তা সে জানত।যদি সে কখনও ওদের ছেড়ে যাবার কথা ভাবে, ওরা অনেক ভোগান্তিতে পড়বে।

বাতাসের বেগ বাড়তে লাগল।সে এই হাওয়াটা চিনত: লোকজন এটাকে ল্যাভেন্টার ( ভূ মধ্যসাগর থেকে আসা জোর বাতাস)বলে থাকে।এই বাতাসের জোরের উপর নির্ভর করে নিগ্রোরা ল্যাভেন্ট থেকে ভূ মধ্যসাগরের পূর্ব দিকের শেষ প্রান্তের দিকটায় এসেছিল।

ল্যাভেন্টার তীব্রতার দিক দিয়ে বেড়েছে।এখানে আমি, আমার মেষপাল আর সম্পদের মাঝখানে, বালকটি ভাবল।তাকে বেছে নিতে হবে এমন দুটি বিষয়ের মধ্যে যার একটির সাথে তার জানা শোনা আছে আর অন্যটি হল সে আকাঙ্খা করছে পেতে এমন।সেখানে ব্যবসায়ীটির কন্যাও ছিল, কিন্তু সে মেষপালের মত এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, কারন মেয়েটি তার উপর নির্ভরশীল ছিল না।হয়তো তার তাকে মনেও নাই।সে নিশ্চিত ছিল এই ব্যাপারে যে এটা তার তাছে কোন ফারাক তৈরি করবে না যে কবে সে তার সামনে গিয়ে হাজির হবে: মেয়েটির জন্য প্রতিটা দিন একই রকম, আর যখন প্রতিটা দিন পরের দিনের মত একই রকম হয়, এর কারন হল মানুষ ভাল যে বিষয়গুলো তাদের জীবনে ঘটে তা চিনতে পারেনা প্রতিদিনের জীবনে যেমন সূর্যের উদিত হওয়া।

 

পৃষ্ঠা ৩৭

আমি আমার বাবাকে, আমার মাকে, আর আমার শহরের দুর্গটাকে পেছনে ফেলে এসেছি।তারা আমার এই চলে যাওয়ায় অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছে, একইভাবে আমিও।ভেড়াগুলোও আমার না থাকায় অভ্যস্থ হয়ে যাবে, বালকটি ভাবল।

যেখানে সে বসেছিল, সে প্লাজা দেখতে পাচ্ছিল।লোকজন রুটির দোকানে ক্রমাগত ঢুকছিল আর বের হয়ে যাচ্ছিল।একটি তরুণ তরুণীর জোড়া বেঞ্চটিতে বসেছিল যেখানে সে বৃদ্ধ লোকটির সাথে কথা বলেছিল, আর তারা চুমু খাচ্ছিল।

‘সেই রুটির দোকানদার….,’ সে নিজে নিজে বলছিল, ভাবনাটা শেষ না করে।ল্যাভেন্টার হাওয়া তখনও খুব জোরে বইছিল, আর সে এই বাতাসের ঝাপটা তার মুখে অনুভব করছিল।যেই বাতাসটা নিগ্রোদেরকে এনেছিল, হ্যাঁ, তবে এটা একই সাথে মরুভূমির আর ঘোমটা পরা নারীর গন্ধ নিয়ে আসছিল।এটা আরো এনেছিল গন্ধ ঘামের আর স্বপ্নের সেই সব লোকদের যারা অজানার খোঁজে একদা বেরিয়ে পড়েছিল, আর স্বর্ণ আর রহস্যের খোঁজার জন্য- আর পিরামিডের জন্য।বালকটি বাতাসের স্বাধীনতার সাথে হিংসা বোধ করল, আর দেখল যে তার একই রকম স্বাধীনতা থাকতে পারত।এমন কিছু ছিলনা যা তাকে পিছুটান দিতে পারত শুধমাত্র সে নিজে ছাড়া। ভেড়া,ব্যবসায়ীর কন্যা, আর আন্দালুসিয়ার মাঠ একমাত্র সিঁড়ি ছিল তার ভবিষ্যত ভাগ্যের পথে।

 

পৃষ্ঠা ৩৮

পরের দিন, বালকটির বৃদ্ধ লোকটির সাথে দেখা হল দুপুর বেলায়।সে তার সাথে ছয়টি ভেড়া নিয়ে এল।

‘আমি হতবাক,’ বালকটি বলল। ‘আমার বন্ধু তৎক্ষনাৎ অন্য সবগুলো ভেড়া নিয়ে এল। সে বলল যে সে সব সময় একজন মেষপালক হওয়ার স্বপ্ন দেখত, আর সেটা একটা ভাল প্রতীক ছিল।’

‘এটা এভাবেই সব সময় হয়,’ বৃদ্ধ লোকটি বলল। ‘এটাকেই বলা হয় অনুকূলতার নীতি। যখন তুমি প্রথম বারের মত কার্ড খেল, তুমি প্রায় নিশ্চিত থাকতে পার যে তুমি জিতবে। আরম্ভকারীর ভাগ্য।’

‘কেন এটা হয়?’

‘কারন একটা শক্তি আছে যা তোমাকে তোমার ভবিস্যত ভাগ্য বুঝিয়ে দিতে চায়; এটা তোমার সফল হওয়ার অভীপ্সাকে উসকে দেয়।’

তখন বৃদ্ধ লোকটি ভেড়াগুলো পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করল, আর সে দেখল যে একটি হল পঙ্গু।বালকটি ব্যাখ্যা করল যে এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, যেহেতু ওই ভেড়াটি এই মেষপালের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান, আর সবচেয়ে বেশি উল উৎপাদন করে।

‘কোথায় আছে সম্পদ?’ সে জিজ্ঞেস করল।

 

পৃষ্ঠা ৩৯

‘এটা মিশরে, পিরামিডের কাছে।’

ছেলেটি চমকে উঠল।বৃদ্ধ নারীটিও একই কথা বলেছিল। তবে তিনি এর জন্য কোন মুল্য নেন নাই।

‘সম্পদ খুঁজে বের করতে হলে তোমাকে প্রতীক অনুসরণ করতে হবে। ঈশ্বর প্রত্যেকের অনুসরণ করার জন্য পথ তৈরি করে রেখেছেন।তোমাকে শুধু প্রতীকটি পাঠ করতে হবে যা তোমার জন্য ফেলে রাখা হয়েছে। ‘

বালকটির প্রত্যুত্তরের পূর্বে, একটি প্রজাপতি এল আর তার এবং বৃদ্ধ লোকটির মাঝখানে ডানা ঝাপটে গেল।তার মনে পড়ল একটি জিনিস, তার দাদা তাকে বলেছিল একদা: যে প্রজাপতি হল শুভ লক্ষণ, যেমন ক্রিকেট, আর আকাঙ্খাগুলোর মত,যেমন টিকটিকি আর চার পাতার ক্লোভার ( ক্লোভার হল এক রকমের গাছ যা ত্রিফোলি গোত্রের।লাল, বেগুনি, সাদা হলুদ রঙের হতে পারে।এর বৈশিষ্ট্য হল এটি তিন পাতা বিশিষ্ট)।

‘সেটা ঠিক,’ বৃদ্ধ লোকটি বলল, বালকটির ভাবনাটা পড়ে ফেলল। ঠিক তোমার পিতামহ তোমাকে যেভাবে শিখিয়েছেন।এগুলো হল ভাল প্রতীক।’

বৃদ্ধ লোকটি তার হাতাহীন কোটটি খুলল, আর ছেলেটি যা দেখল তাতে আঘাত পেল।বৃদ্ধ লোকটি একটি ভারি স্বর্ণের বর্ম পরেছিল, যা সব দামি পাথর খচিত। বালকটির মনে পড়ল যে সে আগের দিন লক্ষ্য করেছিল অনেক চকচকে কিছু।

 

 

পৃষ্ঠা ৪০

সে আসলেই একজন রাজা ছিল! সে নিশ্চয়ই চোরের সাথে মুখোমুখি না হওয়ার জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করেছে।

‘এগুলো নাও,’ বৃদ্ধ লোকটি বলল, একটি সাদা পাথর ধরে রেখে আর একটি কালো পাথর যা তার বর্মের কেন্দ্রবিন্দুতে খচিত ছিল। এগুলোকে ইউরিম আর থাম্মিম বলা হয়। কালো ”হ্যাঁ” বোঝায় আর সাদা “না” বোঝায়।যখন তুমি প্রতীক পাঠে অক্ষম হবে, এগুলো তোমাকে সাহায্য করবে পাঠ করায়।সবসময় বস্তুনিষ্ঠ প্রশ্ন করবে।

‘কিন্তু, যদি তুমি পার, তোমার সিদ্ধান্ত তুমি নিজে নিবে।সম্পদ আছে পিরামিডের কাছে, সেটা তুমি ইতিমধ্যে জেনেছ।কিন্তু আমি তোমাকে ছয়টি ভেড়ার সমমানের মুল্য দিতে জোর করছি কারন আমি তোমাকে তোমার সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছি।’

বালকটি পাথরগুলো তার বটুয়ায় রেখে দিল।তখন থেকে, সে তার নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়ে থাকে।

‘ভুলে যেওনা যে তুমি যা কিছু নিয়ে কাজ করো না কেন তুমি একটি বিষয় নিয়েই কাজ করছ, আর কিছু নয়।আর প্রতীকের ভাষা ভুলে যেওনা।আর, সবকিছুর উপরে,তুমি তোমার ভবিষ্যত ভাগ্যকে এর শেষ পর্যন্ত অনুসরণ করতে ভুলে যেওনা।’

‘তবে চলে যাওয়ার আগে, আমি তোমাকে একটা ছোট গল্প বলতে চাই।’

‘একজন নির্দিষ্ট দোকানদার তার ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন সবচেয়ে জ্ঞানী একজন ব্যাক্তির কাছে সুখের গোপন সুত্র সম্পর্কে জানতে।ছেলেটি চল্লিশ দিন পর্যন্ত মরুভূমির ভেতরে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাঘুরি করল, আর শেষে একটি সুন্দর দুর্গের পাশে এল, উঁচু পাহাড়ের চূড়ায়। এটা সেই জায়গা যেখানে সেই জ্ঞানী ব্যাক্তিটি বাস করত।’

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত