অনুবাদ: এ্যালকেমিস্ট । পাওলো কোয়েলহো (পর্ব-৬)। সায়মা মনি
পৃষ্ঠা ৫১
‘দোকানের মালিককে তলোয়ারের দাম জিজ্ঞেস কর,’ সে তার বন্ধুকে বলল।তখন সে বুঝতে পারল যে সে তলোয়ারের দিকে তাকিয়ে থেকে কয়েক মুহুর্তের জন্য বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিল।সে তার হৃদয়ে চাপ অনুভব করছিল, যেন তার বুক হঠাৎ করে এটাকে চাপ দিচ্ছে।সে চারপাশে তাকাতে ভয় পাচ্ছিল, কারন সে জানত সে কি খুঁজে পাবে।সে মনোহর তলোয়ারের দিকে আরও কিছু দীর্ঘ সময়ের জন্য তাকিয়ে থাকল, যতক্ষন না সে ফিরে তাকানোর সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারছিল।
তার চারপাশে বাজার ছিল, লোকজনের আসা যাওয়া, চিৎকার আর কেনাকাটা, আর অচেনা কোন খাবারের গন্ধ…. কিন্তু কোথাও সে তার নতুন বন্ধুটাকে খুঁজে পেল না।
বালকটি তার বন্ধুকে দুর্ঘটনাবশত আলাদা হয়ে গিয়েছে এমনটা বিশ্বাস করতে চাইল।সে ঠিক সেখানে দাঁড়িয়ে তার ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিল।যখন সে অপেক্ষা করছে, একজন পাদ্রী কাছাকাছি কোন গম্বুজের চূড়ায় উঠল, আর জপ করা শুরু করল; আর বাজারের সবাই তাদের হাঁটু গেঁড়ে বসে পরল, তাদের কপাল মাটিতে ঠুকল, আর মন্ত্র গ্রহণ করল।তখন, শ্রমিক পিঁপড়ার মহল্লার মত, তাদের দোকানগুলো ভেঙে ফেলল আর চলে গেল।
পৃষ্ঠা ৫২
সূর্য ঢলে যেতে লাগল যথারীতি।বালকটি কিছু সময়ের জন্য এর গতিপথের ভেতর দিয়ে তা দেখল, যতক্ষন না পর্যন্ত এটি প্লাজা ঘিরে থাকা সাদা দালানগুলোর পেছনে লুকায় যাচ্ছিল।সে মনে করল যে যখন সূর্য সেই সকালে উদিত হয়েছিল,সে অন্য মহাদেশে ছিল, তখনও সে ষাটটি মেষের পালক ছিল, আর একটি মেয়ের সাথে দেখা করার জন্য উন্মুখ হয়েছিল।সেই সকালে সে জানতে পেরেছিল সবকিছু যা তার সঙ্গে ঘটতে যাচ্ছে, যেহেতু সে চেনাজানা মাঠের ভেতর দিয়ে হাঁটছিল।কিন্তু এখন, যখন সূর্য অস্ত যাবার পথে, সে একটি ভিন্ন দেশে ছিল, একটি অদ্ভুত জমিতে একজন অদ্ভুত মানুষ, যেখানে সে কিনা ওই ভাষায় কথা পর্যন্ত বলতে পারে না।সে আর মেষপালক ছিল না, আর তার কিছুই ছিলনা, এমনকি এতোটা টাকা ছিল না যে সে তা ফেরত দিতে পারে আর নতুন করে শুরু করতে পারে।
এই সব কিছু সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মাঝখানের সময়টাতে ঘটেছে, বালকটি ভাবল।সে তার নিজের জন্য দু:খ অনুভব করল, আর কাঁদল এই কথা ভেবে যে তার জীবন বদলে যেতে পারত খুব আকস্মিকভাবে আর খুব তীব্রভাবে।
সে এত লজ্জা বোধ করল যে তার কান্না করতে ইচ্ছা করল।সে এমনকি কখনও তার নিজের মেষের সামনেও কাঁদেনি।তবে বাজারটা খালি ছিল, আর সে তার বাড়ি থেকে দূরে ছিল, তাই সে কাঁদল।সে কাঁদল কারন ঈশ্বর অন্যায্য ছিল, আর কারন এভাবেই ঈশ্বর তাদের মুল্য পরিশোধ করেন যারা তাদের স্বপ্নে বিশ্বাস করে।
পৃষ্ঠা ৫৩
যখন আমার ভেড়া ছিল, আমি খুশি ছিলাম, আর আমি ওদেরকে আমার চারপাশে খুশি করে রাখতাম।লোকজন আমাকে আসতে দেখত আর আমাকে স্বাগত জানাত, বালকটি ভাবল।কিন্তু এখন আমি বিষাদগ্রস্থ আর একাকী।আমিও লোকজনের সাথে রুক্ষ আর অবিশ্বস্ত হয়ে উঠব কেননা একজন মানুষ আমার সাথে প্রতারণা করেছে।যারা তাদের গুপ্তধন খুঁজে পেয়েছে, আমি তাদেরকে ঘৃণা করব কারন আমি আমারটা কখনও খুঁজে পাইনি।আর আমার অল্প স্বল্প যা আছে তা আমি ধরে রাখব, কেননা আমি খুবই অপ্রতুল পৃথিবী জয় করার জন্য।
সে তার বটুয়া খুলল অবশিষ্ট কি আছে তা দেখার জন্য; সম্ভবত সেখানে অবশিষ্ট স্যান্ডউইচ পড়ে ছিল যেটা সে জাহাজে বসে খেয়েছিল।কিন্তু মোটের উপর যা সে পেল তা হল একটি ভারি বই, তার জ্যাকেট, আর দুইটা পাথর যা বৃদ্ধ লোকটি তাকে দিয়েছিল।
যখন সে পাথরগুলোর দিকে তাকাল, সে কিছু কিছু কারনে স্বাধীন বোধ করল নিজেকে।সে ছয়টি ভেড়ার বদলে দুইটি মুল্যবান পাথর কিনেছে যা একটি স্বর্নের বর্ম থেকে নেয়া হয়েছে। সে পাথর দুটো বিক্রি করে ফেরত টিকেট কিনে নিতে পারত।কিন্তু এবারে আমি আরো স্মার্ট হব, ছেলেটি ভাবল, ওগুলোকে বটুয়া থেকে সরিয়ে রাখল যাতে সে সেগুলো পকেটে পুরে রাখতে পারে।
পৃষ্ঠা ৫৪
এটি একটি বন্দর শহর ছিল, আর একমাত্র বিশ্বস্ত বিষয় হল তার বন্ধু তাকে বলে ছিল যে বন্দর শহরগুলো চোরে ভরা থাকে।
এখন সে বুঝতে পারে যে কেন মদের দোকানের মালিকটি এত দু:খ ভারাক্রান্ত ছিল: তিনি ওকে বলার চেষ্টা করছিলেন যেন সে তাকে বিশ্বাস না করে।’আমিও অন্য সবার মত- আমি পৃথিবীটাকে সেভাবে দেখি যেভাবে আমি দেখতে চাই কোন কিছু ঘটার ক্ষেত্রে, আসলে সেটা যেভাবে ঘটছে সেভাবে দেখতে পাইনা।’
সে তার আঙ্গুলগুলো ধীরে ধীরে পাথরের উপর চালনা করল, ওগুলোর উত্তাপ বোধ করল আর সেগুলোর উপরিতল অনুভব করল।ওগুলো তার সম্পদ ছিল।শুধুমাত্র ওগুলোকে স্পর্শ করাই তাকে বেশ খানিকটা ভাল বোধ করাল।ওগুলো তাকে বৃদ্ধ লোকটির কথা মনে করিয়ে দিল।
‘যখন তুমি কোন কিছু চাও, পুরো ব্রক্ষ্মান্ড তোমাকে তা অর্জন করিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে যায়,’ সে বলেছিল।
বালকটি বোঝার চেষ্টা করছিল সত্যটুকু যা বৃদ্ধ লোকটি বলেছিল। সেখানে একটি শুন্য বাজারে সে ছিল, তার নামের কোন গন্ধ ছাড়া, আর একটিও ভেড়া ছাড়া যাকে তার পাহারা দিতে হত সারারাত ধরে।কিন্তু পাথরটা প্রমান করে দেয় যে তার একজন রাজার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল-একজন রাজা যে বালকটির অতীত সম্পর্কে জানে।
‘ওগুলোকে উরিম আর থাম্মিম নামে ডাকত, ওগুলো তাকে প্রতীক পাঠ করতে সাহায্য করতে পারে।’ বালকটি পাথরগুলোকে আবার রেখে দিল বটুয়ায় আর একটি নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিল।
পৃষ্ঠা ৫৫
বৃদ্ধ লোকটি তাকে খুব পরিষ্কার প্রশ্ন করতে বলেছিল, আর সেটা করে, বালকটি জানতে পারত সে কি চায়।তাই, সে জানতে চাইল বৃদ্ধ লোকটির আশীর্বাদ তার সাথে তখনও ছিল কি না।
সে দুটোর মধ্যে একটি পাথর তুলে নিল।এটা ছিল ‘হ্যাঁ।’
‘আমি আমার গুপ্তধনের খোঁজে যাবো কিনা?’ সে জানতে চাইল। সে তার হাত বটুয়ায় স্থির করে রাখল, আর অনুভব করতে চাইল হাতের আশেপাশে দুটোর মধ্যে একটি পাথর।যেই সে এটা করল,ওগুলোর দুটোই একটি গর্তের ভেতর দিয়ে মাটিতে ফেলে দিল।ছেলটি কখনও লক্ষ্য করেনি যে তার বটুয়ায় একটি ফুঁটা ছিল।সে হাঁটু গেঁড়ে বসল উরিম আর থাম্মিম খুঁজে বের করতে আর সেগুলোকে আবার বটুয়ায় রেখে দিতে।কিন্তু যখন সে দেখল সেগুলো মাটিতে পড়ে আছে, আরেকটি শব্দগুচ্ছ তার মনে এল।
‘প্রতীক চিনতে শেখ আর সেগুলো অনুসরণ করতে শেখ,’ বৃদ্ধ রাজা তাকে বলেছিল।
একটি প্রতীক।বালকটি নিজে নিজেই হাসল।সে দুইটা পাথর তুলে নিল আর সেগুলো আবার বটুয়ায় রেখে দিল।সে ফুঁটো ঠিক না করা বিবেচ্য মনে করল-পাথরগুলো এর ভেতর দিয়ে যে কোন সময় পড়ে যেতে পারত যদি তা চাইত।সে শিখে নিল যে সেখানে কিছু নির্দিষ্ট জিনিস আছে যা কারো জিজ্ঞেস করা উচিত নয়,ঠিক যেমন একজন মানুষের তার নিজের গন্তব্য থেকে পালিয়ে যাওয়া উচিত নয়।
আরো পড়ুন: অনুবাদ: এ্যালকেমিস্ট । পাওলো কোয়েলহো (পর্ব-৫)। সায়মা মনি
পৃষ্ঠা ৫৬
‘আমি প্রতিজ্ঞা করলাম যে আমি আমার সিদ্ধান্ত নিব,’ সে নিজেকে নিজে বলল।
কিন্তু পাথরগুলো তাকে বলেছে যে বৃদ্ধ লোকটি এখনও তার সাথে আছে, আর সেটাই তাকে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলেছে।সে শুন্য প্লাজার চারপাশটা আবার দেখে নিল, আগের চেয়ে কম হতাশ বোধ করছিল। এটা কোন অদ্ভুত জায়গা ছিল না; এটা একটা নতুন জায়গা ছিল।
মোটের উপর, যা সে সবসময় চেয়েছিল, তা ঠিক এমনটাই ছিল: নতুন জায়গা সম্পর্কে জানা।এমনকি যদি সে কখনও পিরামিড পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারে, সে ইতিমধ্যে তার চেনাজানা যে কোন মেষপালকের চেয়ে বেশি ভ্রমন করেছে।ওহ, যদি তারা জানত জাহাজে করে দুই ঘন্টা গেলে তারা যেখানে আছে তার চেয়ে একই বিষয় কত ভিন্ন হতে পারে, সে ভাবল।যদিও এই মুহুর্তে তার নতুন পৃথিবীটা একটি শুধু শুন্য বাজার, সে ইতিমধ্যে তা দেখেছে, যখন এটা নতুন কিছু জন্ম দেয়ার মত ছিল তার জীবনে, আর সে এটা কখনও ভুলে যাবে না।সে তলোয়ারের কথা মনে করল।এটা নিয়ে ভাবতে গিয়ে সে দেখল এটা তাকে একটু কষ্ট দিচ্ছে, কিন্তু সে কখনও এমন একটাও আগে দেখেনি।যখন সে এগুলো নিয়ে মনে মনে ধ্যান করছিল, তার বোধোদয় হল যে তাকে দুইটা ভাবনার মধ্যে যে কোন একটি বেছে নিতে হবে, সে নিজেকে একজন চোরের কাছে সর্বস্ব হারানো অসহায় একজন মনে করতে পারে আবার সে নিজেকে তার সম্পদ খোঁজার জন্য একজন দু:সাহসী অভিযাত্রী মনে করতে পারে।
‘আমি সম্পদ খুঁজছে এমন একজন দু:সাহসী অভিযাত্রী,’ সে নিজেকে নিজে বলল।
পৃষ্ঠা ৫৭
সে কারো ধাক্কায় ঘুম থেকে উঠল। সে বাজারের মাঝখানে ঘুমিয়ে পড়েছিল, আর প্লাজার প্রানচাঞ্চল্য আবার প্রায় শুরু হতে যাচ্ছিল।চারদিকে দেখে সে তার মেষগুলো খুঁজছিল, আর তখন সে বুঝতে পারল যে সে একটি নতুন পৃথিবীতে ছিল।কিন্তু মন খারাপ করে থাকা সত্ত্বেও সে খুশি ছিল।তাকে আর মেষের জন্য খাবার আর জলের সন্ধান করতে হত না; সে বরং তার সম্পদ খুঁজতে যেতে পারত।তার পকেটে একটি পয়সাও ছিল না, কিন্তু তার বিশ্বাস ছিল। সে গত রাতে স্থির করেছিল যে সে যতোটা সম্ভব ততোটা অভিযাত্রী হয়ে উঠবে যেমনটা সে কোন বইয়ে পড়ে মুগ্ধ হয়েছে।
সে বাজারের ভেতর দিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে যাচ্ছিল।বনিকেরা তাদের দোকান সাজিয়ে তুলছিল, আর বালকটি একটি মিছরির দোকানদারকে তার কাজে সাহায্য করছিল।মিছরি দোকানদারটির মুখে একটা হাসি ছিল: সে সুখী ছিল, তার জীবনের ঘটমান বর্তমান সম্পর্কে সচেতন ছিল, আর একটি দিনের কাজ শুরু করার জন্য তৈরি হচ্ছিল।তার হাসিটি বালকটিকে বৃদ্ধ লোকটির কথা স্মরণ করিয়ে দিল- সেই রহস্যময় বৃদ্ধ রাজা যার সাথে দেখা হয়েছিল।
পৃষ্ঠা ৫৮
‘এই মিছরি দোকানদার মিছরি এই জন্য তৈরি করছেনা যে সে পরে ভ্রমণ করতে পারে অথবা কোন দোকানদারের মেয়েকে বিয়ে করতে পারে। সে এটা করছে কারন সে এটা করতে চায়,’ বালকটি ভাবল।সে বুঝতে পারল যে সে একই জিনিস করতে পারে যেমনটা বৃদ্ধ লোকটি করেছে-একজন মানুষ তার গন্তব্য থেকে কাছে নাকি দূরে আছে তা তাদের দিকে শুধুমাত্র তাকিয়ে থেকে বুঝতে পারা যায়।এটা সহজ, আর আমি এর আগে এখন পর্যন্ত এটা করিনি, সে ভাবল।
যখন দোকানটি সাজানো হল, মিছরি দোকানদার বালকটিকে ওই দিনের জন্য তার তৈরি করা প্রথম মিষ্টিটি খেতে বলল।বালকটি তাকে ধন্যবাদ দিল, খেল ওটা, আর তার পথে চলে গেল।যখন সে অল্প একটু দূরে গেল, সে বুঝতে পারল যে তারা যখন দোকানটি তুলছিল, ওদের মধ্যে একজন আরবি ভাষায় আর আরেকজন স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলছিল।
আর তারা একে অন্যকে পুরোপুরি যথার্থভাবে বুঝতে পারছিল।
অবশ্যই এমন কোন ভাষা আছে যা শব্দের উপর নির্ভরশীল নয়, বালকটি ভাবল। আমার ইতিমধ্যে আমার ভেড়ার সাথে সেই অভিজ্ঞতা আছে, আর এখন এটা মানুষের সাথে ঘটছে।
সে প্রচুর নতুন জিনিস শিখছিল।এর ভেতর কিছু জিনিস ছিল যে ব্যাপারে সে ইতিমধ্যে অভিজ্ঞ, আর আসলে তা নতুন নয়, কিন্তু সেটা সে আগে কখনও বুঝতে পারেনি।
পৃষ্ঠা ৫৯
আর সে সেগুলো বুঝতে পারতোনা কারন সে সেগুলোর সাথে অভ্যস্থ হয়ে ওঠেনি।সে বুঝতে পারল: যদি আমি শব্দবিহীন এই ভাষা উদ্ধার করা শিখে ফেলতে পারি, আমি পৃথিবীর মর্মার্থ শিখতে পারবো।
নিশ্চিন্ত আর শ্লথ হয়ে সে এটা শাব্যস্ত করল যে সে তানজিয়ার সরু গলির ভেতর দিয়ে হেঁটে যাবে।কেবলমাত্র সেই পথে সে প্রতীক পাঠ করতে সক্ষম হবে।সে জানত যে এতে তার প্রচুর ধৈর্য্য ধরতে হবে, কিন্তু মেষপালকেরা ধৈর্য্য ধারন করা সম্পর্কিত সবকিছু জানে। একবার আবার সে সেটা দেখল, ওই অপরিচিত জায়গায়, সে তার ভেড়ার কাছ থেকে যে শিক্ষা শিখেছে সেটাই প্রয়োগ করছিল।
বুড়ো লোকটি বলেছিল, ‘সব কিছুই এক।’
* * *
দিন শুরু হওয়ার সাথে সাথে স্ফটিক বনিক জেগে উঠল, আর একই উদ্বেগ অনুভব করল যা সে প্রত্যেক সকালে অনুভব করে।সে একই জায়গায় তিরিশ বছর যাবত আছে: একটি পাহাড়ি রাস্তার চূড়ায় একটি দোকান যেখানে খুব কম ক্রেতা আসা যাওয়া করে। এখন কোন কিছু বদলানোর খুব দেরি হয়ে গেছে – একমাত্র একটা জিনিসই এখন পর্যন্ত সে শিখেছে, আর তা হল স্ফটিক কাচের জিনিসপত্র কেনা আর বিক্রি করা।
পৃষ্ঠা ৬০
এমন একটা সময় ছিল যখন অনেক লোকজন তার দোকান সম্পর্কে জানত: আরব বনিকেরা, ফ্রেঞ্চ আর ইংরেজ ভূ তাত্ত্বিকেরা, জার্মান সৈনিকেরা যারা সব সময় অবস্থাপন্ন ছিল।ওইসব দিনগুলোতে স্ফটিকসম স্বচ্ছ কাচের জিনিসপত্র বিক্রি করাটা দারুণ ছিল, আর সে ভেবেছিল কিভাবে সে ধনী হয়ে উঠবে,আর সুন্দরী নারীদেরকে তার পাশে রাখবে যখন সে বুড়ো হতে থাকবে।
কিন্তু যতো সময় অতিবাহিত হতে থাকল, তানজিয়ার বদলে গেল।কাছের শহর কিউটা তানজিয়ার চেয়ে দ্রুত বর্ধিত হতে লাগল, আর ব্যবসা পড়ে যেতে লাগল।প্রতিবেশীরা চলে গেল, আর মাত্র কয়েকটা ছোট খাট দোকান পাহাড়ের উপরে রয়ে গেল।আর কেউই পাহাড় চড়ে উঠত না শুধু কয়েকটা ছোট দোকান ঘুরে দেখার জন্য।
কিন্তু ক্রিস্টাল বনিকের কোন উপায় ছিলনা।সে তার জীবনের তিরিশটি বছর ধরে ক্রিস্টাল টুকরোগুলো বিক্রি করে আর কিনে জীবন ধারণ করেছে, আর এখন অন্য কিছু করার জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে।
সে রাস্তায় অনিয়মিত আসা যাওয়া দেখে পুরো সকালটা কাটায়।সে বছরের পর বছর এটাই করছে, আর যারা এই পথ অতিক্রম করে তাদের দিনপঞ্জি জানত।কিন্তু ঠিক দুপুরের খাবার সময়ের আগে একজন বালক দোকানের সামনে এসে থেমে গেল।তার পরনে স্বাভাবিক পোশাক ছিল, কিন্তু ক্রিস্টাল বনিকের অভ্যস্থ চোখ দেখতে পেল যে বালকটির খরচ করার মত কোন টাকা নেই।

তিনি ইংরেজি সাহিত্যের নিয়ে পড়াশুনা করে এখন এম ফিল করছেন টি.এস. এলিয়েটের কবিতা নিয়ে।বর্তমানে শিক্ষকতার সাথে জড়িত আছেন।