Categories
গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের তিনটি অনুবাদ কবিতা
আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট
গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের বিশ্বব্যাপী পরিচিতি মূলত তার উপন্যাস ও গল্পগুলোর কারণে। কিন্তু এগুলো ছাড়াও তিনি লিখেছেন অসংখ্য প্রতিবেদন, প্রবন্ধ আর কিছু কবিতা। স্প্যনিশে লেখা কবিতাগুলোর কোনো ইংরেজি অনুবাদ এখনও হয়নি। অল্প কিছু কবিতার তিনটি এখানে প্রকাশ করা হলো বাংলাভাষী পাঠকদের জন্য। দুটি কবিতার মূল থেকে অনুবাদ করেছেন অনুবাদক আনিসুজ্জামান।
রোসার মৃত্যু
দুর্গন্ধে ভরা মৃত্যু।
অভিন্ন রোসা, নির্ভুল।
বেঁচে ছিল ওর রূপে,
ওর সুগন্ধে মৃত
নাম ছিল না ওর : দৈবক্রমে
ডাকবো ওকে রোসাউরা,
সূক্ষ্ম রোসা
কিংবা প্রেমের রোসা
অথবা রোসালবা
অথবা শুধুই : রোসা,
যেভাবে রাখে পানির নাম।
আরও অর্থবহন করত
হোত্ যদি চিরন্তন ফুল, দালিয়া
চাঁদের ভাবনা
আকাশিয়ার শাঁখার মত
কিন্তু সে হবে চিরন্তন :
রোসা চলে গেছে আর এটাই যথেষ্ট
প্রভু তাকে রাখবে
নিজের কাছে
ভোরের ছত্রছায়ায়।
গান
বৃষ্টি পড়ে। বিকেল হচ্ছে এক
কুয়াশার চাদর। বৃষ্টি পড়ে।
বিকেলটা ভেজা
তোমার নিজস্ব বিষণ্নতায়।
মাঝে মাঝে বাতাস বয়
তোমার গানের সাথে। মাঝে মাঝে…
হৃদয়ে চাপ ধরে
তোমার স্বরের অনুপস্থিতিতে।
বৃষ্টি পড়ে। ভাবছি তোমার কথা।
আর স্বপ্ন দেখে যাই।
আসবে না কেউ এই বিকেলে
আমার রুদ্ধ বেদনায়।
কেউ না। শুধু তোমার অভাব
আমায় জ্বালায় প্রতিটি ঘণ্টায়।
আগামীকাল তোমার উপস্থিতি
ফিরে আসবে গোলাপ পাপড়িতে।
ভাবছি আমি বৃষ্টি পড়ে-
তোমার কোমল বৃষ্টিতে।
মেয়ে, ফলের মত
উৎসবের মত আনন্দময়,
এখন বিকেল হচ্ছে
তোমার নাম আমার কবিতায়
কাঁচের জানালায়
দেখার সময় মাঝে মধ্যে
বৃষ্টি চলে আসে।
আর তুমি নেই। মাঝে মাঝে
তোমার অনুভব খুব কাছেই।
ফিরে আসে নিরভিমান
তোমার করুণ বিদায়।
অনুদ্ধত আর সবই
নিরহঙ্কার; জুঁই
বা বাগানের গোলাপ
আর আমার অশ্রুধারা
হায় অনুপস্থিত হৃদয় :
কী বিপুল নিঃস্বতা।
আরো পড়ুন: অনুবাদ গল্প: মন্তিয়েলের বিধবা বউ । গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস
নাচের পুতুল
ঈশ্বর যদি ক্ষণিকের জন্য ভুলে যেতেন আমার পুত্তলিকা পরিচয় এবং
আমাকে দিতেন এক খণ্ড জীবন,
যথাসম্ভব আমার ভাবনার সবটুকু থাকতো অব্যক্তই,
তবে যেটুকু বলতাম তার পুরোটা ভাবতাম নিশ্চয়ই।
আমি তো জৌলুসে মজে বস্তুর মূল্য ধার্য করি না
ওগুলো কতটা অর্থবহ, আমার কাছে বিবেচ্য তাই।
আমি বরং ঘুমুবো অল্পস্বল্প, স্বপ্ন দেখবো বেশী।
আমি তো জানি প্রতিবার পলক বুঁজলেই
আমরা হারিয়ে ফেলি আলোকের ষাটটি সেকেণ্ড।
যখন অন্যেরা প্রতীক্ষারত, আমি হেঁটে যাবো সেইক্ষণে;
আমি হেঁটে বেড়াবো অন্যেরা যখন অচেতন গভীর ঘুমে।
সবার কথার শ্রোতা হবো আমি,
আর কি করেই বা আমি একটি সুস্বাদু চকলেট আইসক্রিমের আস্বাদ নিতে পারি।
যদি ঈশ্বর এক টুকরো জীবন ছুঁড়ে দিতেন আমার দিকে,
নিতান্তই সাধারণ হতো আমার পরিধেয়,
নিজেকে নিক্ষেপ করতাম সূর্যতলে,
শুধু দেহই তো নয়, উন্মুক্ত করতাম আমার আত্মাকে-ও।
ওহ! আমার ঈশ্বর, যদি হৃদয়াধিকারী হতাম,
তবে লিখে রাখতাম বরফের চাঁইয়ে ঘৃণা যত,
প্রহর যেতাম গুনে কখন সূর্য হবে আবির্ভূত।
আমি ভ্যানগগের স্বপ্নকে লালন করে
তারায় তারায় এঁকে দিতাম বেনেদেত্তি’র কাব্য,
আর সেররাতের সংগীত হতো চাঁদের প্রতি আমার অর্ঘ্য।
আমার অশ্রুজলে গোলাপেরা সিক্ত হতো রোজ,
আমি অনুভব করতাম ওদের কাঁটার যন্ত্রণা,
আর তাদের পাপড়ির শরীরী চুম্বন…
ওহ! ঈশ্বর, যদি পেতাম কেবল এক মুঠো জীবন…
ভালবাসি। প্রিয়জনদের এ কথা না বলে
গত হতে দিতাম না একটিও দিন।
নারী-পুরুষ জনে জনে আমি বোঝাতামই
তারা আমার ভীষণ রকম প্রিয়,
আর আমি বাস করতাম প্রেমে, প্রেমময় সংস্বর্গে।
আমি প্রমাণ করে দিতাম মানুষের কাছে,
কত ভ্রান্তই না তারা ভাবে,
বলে পরিণত বয়সে প্রেমে মজবেনা আদৌ
-ওরা জানেই না প্রেমে না জড়ালেই তো মানুষ বয়সী হয়ে যায়।
আমি শিশুকে দিতাম ডানা, শেখাতাম কী করে উড়তে হয় নিজে নিজে।
বুড়োদের শেখাতাম জরাজীর্ণ বয়সকে সাথী করে মৃত্যু আসে না, আসে বিস্মৃতি থেকে।
মানুষ, আমি শিখেছি অনেক তোমাদের কাছ থেকে।
আমি শিখেছি সবাই যে চায় পর্বত শিখরে নিবাস,
অথচ এতটুকু উপলব্ধি জাগেনি ওদের
ঢাল বেয়ে চড়াতেই সত্যি-সুখের আবাস।
আমি শিখে গেছি, সদ্য ভুমিষ্ঠ শিশুর ছোট্ট বন্ধ মুঠো
পিতার আঙ্গুল নিয়ে যখন প্রথম মন্থনরত,
সে তাকে আটকে ফেলে চিরদিনের মতো ।
আমি শিখেছি, নিচে তাকিয়ে একজন মানুষের অন্য মানুষকে দেখার যে অধিকার
তা কেবল তখনই যখন উঠে দাঁড়াতে সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে অন্য জনার ।
আমি তো শিখেছি অনেক কিছুই তোমাদের কাছ থেকে,
যার অধিকাংশই অকেজো পরিশেষে।
কারণ যখন ওরা আমাকে স্যুটকেসবন্দি করবে,
দুর্ভাগ্যবশত আমি তখন মৃত্যুপথযাত্রী।
[‘লা মারিওনেতা’ বা ‘দ্য পাপেট’ এর ইংরেজি অনুবাদ করেন ম্যাথিউ টেইলর ও রোসা এ্যারেলিস টেইলর (Matthew Taylor and Rosa Arelis Taylor)। ওপরের অনুবাদটি ইংরেজী অনুবাদের ওপর ভিত্তি করেই রচিত।]