| 7 অক্টোবর 2024
Categories
সময়ের ডায়েরি

ভরসা নেই হাসপাতালে, আস্থা আছে শেখ হাসিনায়

আনুমানিক পঠনকাল: 4 মিনিট

দু’বছর আগে ভারতের ভেলরে অবস্থিত খ্রিষ্টান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল(সিএমসি, ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত) দেখতে গিয়েছিলাম।সেখানে বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক রোগী চিকিৎসার জন্য কেন গিয়ে থাকেন, তার কারণ অনুসন্ধান ও নিজের কৌতূহল মেটানো ছিল মূল উদ্দেশ্য।সেখানকার চার্চের চ্যাপলিন ড. অতুল দাসের সঙ্গে পরিচয় হয় মিয়ানমারে এশিয়া খ্রিষ্টান কনফারেন্সে। তাঁর বদৌলতে ভেলর শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরে অবস্থিত মেডিকেল কলেজ গেস্ট হাউজে থাকার জায়গা পেয়েছিলাম আমি ও পিএইচডি গবেষক শফিকুল ইসলাম।কলেজ ক্যাম্পাস বেশ গোছানো এবং নিরাপদে অধ্যয়ন ও গবেষণার একটি উৎকৃষ্ট স্থান।সেখান থেকে প্রতি ঘণ্টায় বাস আছে শহরস্থ হাসপাতালে যাবার।সকালে যখন হাসপাতালে পৌঁছালাম তখন বিপুল সংখ্যক মানুষের ভিড়।বাংলা ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যাই বেশি। এরপর আবিষ্কার করলাম বাংলাদেশি টাকাও ভেলরে বেশ পরিচিত।কেবল বাংলাদেশ নয়, মানুষ গেছেন শিলিগুড়ি-দার্জিলিং থেকে, কলকাতা থেকে তো আছেই।কেউ কেউ ২/৩ দিনের ট্রেন জার্নি শেষ করে হাসপাতালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কেউ বা এসেছেন দীর্ঘ সময় নিয়ে, অপারেশনের রোগী সঙ্গে করে।এজন্য হাসপাতালের পাশে ছোট রুম ভাড়া করে নিজেরা রান্নার যোগাড় করে নিজেদের বসতি গেড়েছেন।জিজ্ঞাসা করছিলাম কলকাতায় ভাল হাসপাতাল ফেলে কেন পশ্চিমবঙ্গের লোক সেখানে যায়? উত্তর পাবার পরিবর্তে রোগীদের তাকানো দেখে মনে হলো সিএমসি’র প্রতি তাদের আস্থা এতো দৃঢ় যে সেই প্রশ্ন করাই যেন আমার ভুল হয়েছে।

প্রতি সকালে কয়েক’শ লোকের ব্লাড কালেকশন করা হয়। ডাক্তার নির্দিষ্ট করা থাকলে সেই রিপোর্ট চলে যায় বিশেষজ্ঞের কাছে। রক্ত থেকে শুরু করে প্রতিটি পরীক্ষার কাজ নিয়ে কোনো রোগীর অভিযোগ শুনলাম না।ভিড় সামলাতে গিয়ে কারো সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খারাপ আচরণ করেছেন এরকমটিও শুনতে পেলাম না। বুঝলাম সিএমসি’র চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থার জায়গাটি অনেক শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। স্বল্প খরচে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের সব ধরনের চিকিৎসার একটি অন্যতম সেবা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।প্রায় ৯ হাজার স্বাস্থ্য কর্মী, ষোল’শ ডাক্তার আর আড়াই হাজার সেবিকা নিয়ে সেবা কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। জানলাম ১৪৩টি বিভাগের মধ্যে কেবল ক্লিনিক্যাল ইমিউনোলজি নামে একটি বিভাগে বছরে পঞ্চাশ হাজার রোগীকে সেবা দিতে হয়।এছাড়া সিএমসি’র সামাজিক কর্মকাণ্ডও রয়েছে।একটি অখ্যাত গ্রামে গড়ে ওঠা হাসপাতাল যদি সেবা দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন  করতে পারে তাহলে একুশ শতকের আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে সেই সেবা কেন মুনাফার লোভে ধ্বংস হওয়ার পর্যায়ে যাবে? আর আমাদের দেশে মানুষ কেন হাসপাতালগুলোর ওপর ভরসাহীনতায় ভাগ্যের কাছে নিজেকে সমর্পণ করবে।তবে আস্থাহীনতার কারণগুলো স্পষ্ট।

৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী সনাক্তের পর চিকিৎসক ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয়ঙ্কর সব সংকট পেরোতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নিজে নির্দেশ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন।মহামারির দুর্যোগে জনগণের কাছে তিনিই একমাত্র আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন।  

প্রকৃতপক্ষে কয়েকটি হাসপাতাল ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের করোনা চিকিৎসায় প্রতারণা গত কয়েক বছরে আফ্রিকার কোনো দরিদ্র দেশে ঘটেনি; যেখানে এদেশে চিকিৎসা সেবার নামে মুনাফা লোটার ব্যবসায়ী অপতৎপরতা নির্মম।দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতি অন্বেষণে গোয়েন্দা অনুসন্ধান বিশেষত রিজেন্ট হাসপাতাল, ডা. সাবরিনার হেলথ কেয়ার(জেকেজি), সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভয়াবহ সব অভিযোগ মানুষকে ভরসাহীন করে তুলেছে চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর।এরা করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পেয়েও সুযোগের সঠিক ব্যবহার করতে পারেনি। সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অনুমতি ছাড়াই করোনা এন্টিবডি টেস্ট করছিল।অন্যদিকে বিদেশ গমনেচ্ছুক ব্যক্তিদের করোনার নেগেটিভ সনদ জালিয়াতি করার ফলে কয়েকটি দেশে আমাদের বিমান ও যাত্রী চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।

চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর মানুষের ভরসা করতে না পারার বাস্তবতা এখন দিবালোকের মতো সত্য।দেশের স্বাস্থ্য খাতে গত ১০ বছরে দুর্নীতি কীভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে তার অনুপুঙ্খ বিবরণ এসেছে বেশ কিছু পত্রিকায়।সরকারি হাসপাতালের টেন্ডার দিয়ে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা এবং অতিরিক্ত বিল প্রদান থেকে শুরু করে সরকারি টাকার অপচয় করা যেমন সত্য তেমনি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের গলাগাটা চিকিৎসা বিলের অযৌক্তিক পীড়া আমাদের জনগোষ্ঠীকে ঠেলে দিয়েছে বিদেশের হাসপাতাল ও ডাক্তারদের দিকে।তবু মানুষ চেয়ে আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে।কারণ করোনা মোকাবেলায় তিনি দেশ-বিদেশের মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

২০২০ সালের প্রথম থেকে সারা পৃথিবী যখন মহামারি করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে ক্লান্ত, তখন আমেরিকার ফোর্বস ম্যাগাজিন তুলে ধরেছে শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বের বিষয়টি।ম্যাগাজিনের ২২ এপ্রিল সংখ্যায় করোনাভাইরাস মোকাবেলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।তবে তিনি মিডিয়ায় প্রশংসা পাবার জন্য নয় বরং তাঁর কাজ-জনগণের মঙ্গলের জন্য, নিঃস্বার্থ কাজ। আর এজন্যই টাইম ম্যাগাজিনে ২০১১ সালের আগস্ট সংখ্যায় জানানো হয়, শীর্ষে থাকা ১২ নারী নেতৃত্বের মধ্যে সপ্তম শেখ হাসিনা। এর আগে ২০০৬ সালে তিনি অর্জন করেন মাদার তেরেসা আজীবন সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড।২০১৬ সালের জুন সংখ্যায় ফোর্বস ম্যাগাজিন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাসম্পন্নদের মধ্যে ৩৬তম স্থানে রাখে শেখ হাসিনাকে। তাঁর নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ গত ৩৯ বছর ধরে অদ্যম গতিতে এগিয়ে চলেছে।দলের মধ্যে নেতাকর্মীরা উৎসাহ পান তাঁর নির্দেশনা পেলে।তৃণমূলের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ এখন।দলে তাঁর মতো একজন ক্যারিসমেটিক নেতা থাকায় করোনা সংকটে নেতা-কর্মীরা কাজ করে চলেছেন।সংকট-মুহূর্তে সারা দেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।তাঁর ওপর জনগণের আস্থার কারণ পূর্বের ভূমিকা।অতীতে দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের তালিকায় দশম স্থানে ঠাঁই পেয়েছেন শেখ হাসিনা। কঠোর ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন হয়েছে।২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে মানবিক কারণে পার্শ্ববর্তী দেশের ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এখন ‘বিশ্ব মানবতার জননী।’

২০১৮ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমাদের জীবন থেকে ২৮ বছর হারিয়ে গেছে। আর যেন একটা দিনও হারাতে না পারে।’ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি এ কথা বলেছিলেন। এ ছাড়া যারা আলবদর ও যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে চলে তারা ক্ষমতায় এলে দেশের জনগণের কল্যাণ হবে না বলে তিনি মনে করেছিলেন। আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় সেই জনকল্যাণমুখী প্রত্যয় অক্ষুণ্ন রয়েছে।

শেখ হাসিনা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন ও সংগ্রাম, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাহসী যোদ্ধা, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার প্রবক্তা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে তাকে বিশেষভাবে শান্তি পুরস্কার ও সম্মানীয় ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। যে কোনো সংকট মুহূর্তে কিংবা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

প্রতিকূল পরিবেশ, বিরোধীদের শত বাধা এবং সুশীল সমাজ কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চিন্তাচেতনা সম্পূর্ণরূপে তার বিপক্ষে থাকার পরও তিনি এগিয়ে গেছেন।‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ গ্রন্থে লিখেছেন- ‘বাংলাদেশের জনগণের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করে উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।তাদের ভালোবাসার প্রতিদান আমাকে দিতেই হবে।জনগণের জন্য একটা সুন্দর, উন্নত জীবন উপহার দেব, এই আমার প্রতিজ্ঞা।’

এভাবে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে জনগণের পক্ষে কাজ করার যে অঙ্গীকার প্রকাশ করেছিলেন তাঁর সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কৃতিত্বে আজ আমরা আনন্দিত।স্বাস্থ্যখাতের সকল অনিয়ম দূর করে ক্ষমতার ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল অপশক্তির পরাজয় ঘটাবেন এই বিশ্বাস আমাদের সকলের।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত