আনুমানিক পঠনকাল: < 1 মিনিট
তখন ছয়ঘরিয়ার গন্ধভাদালের বনে লক্ষ্মীপুজোর জোছনা মেখে আনমনে ঘুরে বেড়াচ্ছি আমি, অপু। আমার দুর্গা দিদিটি, যে একবার আমাকে কোলে নিয়ে পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙেছিল, তবু আমাকে চোট লাগতে দেয়নি, সে খুঁজে বেড়াচ্ছে আমাকে ইছামতীর পাড়ে। চাঁদ দুধ ঢেলে ভিজিয়ে দিচ্ছে আঁশশেওড়ার ঝোপ আর বনতুলসীর ঝাড়।
ঠিক তখনই বনগাঁ হাই স্কুলের বারান্দার আবক্ষ মূর্তি থেকে এক গেঁয়ো মাস্টার নেমে এলেন। একটু মোটাসোটা। আবার একটু লিখতেন-টিখতেন নাকি! তারপর জোছনার গন্ধ শুঁকে শুঁকে তিনি বোটের পুল পার হয়ে চলে যাচ্ছেন। মতিগঞ্জ নিমতলার মোড় আসতেই দুগগা দিদির সাথে তাঁর দেখা। শুক্রবারের হাটের চম্পা আইসক্রিমের মতো শীতল একটা আঙুল সেই মেয়ের গালে বুলিয়ে দিল কী এক ভরসার স্পর্শ। তারপর মাখনের মতো নরম আলোময় কুয়াশায় দুটি স্বপ্ন ভেসে চল্ল সেই আঁশশেওড়া আর বনতুলসীর জঙ্গলে যেখানে অন্য এক অপু দিশেহারা আনন্দের মধ্যে আনমনা হয়ে আছে।
তখন দুগ্গা দিদি তার সাতজন্মের অপুকে কী আর জড়িয়ে না ধরে থাকতে পারে! আর ওদিকে ধীরে ধীরে গেঁয়ো মানুষটার পা থেকে, হাঁটু থেকে, কোমর থেকে ঝুর ঝুর করে ঝরে পড়ছে বালির মত কুয়াশা। মিলিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের মতো। পড়ে থাকছে যেন একটুখানি আবক্ষমূর্তির মায়া।
কাঁঠাল গাছের ঘন পাতার মধ্য থেকে তক্ষক এক ডেকে উঠছে। বলছে, সত্যি, সত্যি, সত্যি।
