আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিটফকির চাঁদ অতি সিধে লোক। সাতটি চড়ে একটি রা নেই। ভোর সক্কালে পান্তা পিঁয়াজ খেয়ে সেই যে মাঠে নামবে, তাপ্পর ভর দুপুরে কোমর দুলাতে দুলাতে আসবে সোহাগী বউ শ্যামা। নাকে রুপোর নোলক, আঁচল কষে শাড়ি, কুঁচকানো চুল খোলা, তেল চকচকে কালো মুখে সিঁদুর ফোঁটায় যে রূপ মরি মরি!গরুগুলান পর্যন্ত হাঁ।
সে থাক। ঢলানি বউ নিয়ে ফকির আর ভাবে না। সুন্দর মেয়ে মানুষ আর আকাশের পাখি-আজ খাঁচায় তো কাল উড়াল! ফকিরের কোনো কিছুতেই সমস্যা নেই। লোকে বলে মানুষ তো না য্যান একখান ভেজা গামছা।
অই অই অই খানে ফকির চাঁদের সমস্যা। বাড়িতে দুই খান গামছা। লাল ফকিরের, সবুজ শ্যামার। বউ মাথায় গন্ধতেল দেয়।ফকির কড়া করে বলেছে, খপর্দার, মোর গামছায় হাত দিবা না।
বললে কি হবে! সন্ধ্যেবেলা, সারাদিনের খাটুনির পরে, গায়ে জল দিয়ে দেখে লাল গামছায় ভুর ভুর গন্ধ!
ফকির চেঁচিয়ে মাত করে পাড়া। বউ বলে, তোমার সবুজ গামছা। তুমি লাল নিলা ক্যানে?’ তুমুল ঝগড়ার পরে নিরীহ ফকিরের মনে হয়, ভুল বোধহয় তারই।
এমন দিনের পর দিন। মাটির দাওয়ায় দুটো গামছা পাশাপাশি টান টান। শ্যামা স্নান করার আগে যেটা পায় সেটাই নিয়ে কাজ সারে। ফকির সবুজ গামছা মেনে নিয়ে দ্যাখে, তাতে তেলের গন্ধ। তখন শ্যামা বলবে, তোমার লাল ছিল।
সেদিন রাতে, চাঁদের আলোয় উঠোনে বসে ফকির শ্যামাকে ডেকে বলে, তুই কিরা কাট। কাট কিরা। ভগমানের কিরা। বল। তোর কোনডা?
শ্যামা ভেবে চিন্তে জবাব দেয়, সবুজ।
-অ। এই আমি গিঁট দিলাম লালে। তাইলে মোর হইল লাল। তোর সবুজ। এয়াও শ্যাষ কতা?
-হ।
পরদিন ভোর বেলা খুশি মনে ফকির কাজে বেরোয়। দাওয়ায় তার গিঁট বাধা লাল গামছা দোল খায়। তবু মনের মধ্যি খচখচ। ডবকা ম্যাইয়া মানুষের এত ভুল? মন সংসারে নাই না কি? কোন রঙের গামছা তার নিজের, সেইডা মনে থাকে না? খচখচ মন নিয়ে মাঠের দিকে যেতে যেতে, সামনে নিমের দাঁতন হাতে পাটটির নেতা- অ ফকির? মনে আছে?
-আইগ্গা। লাল। মনে আছে।
-লাল? হুঙ্কার দিয়ে মারতে আসে নেতা, লাল! কয় কি?
-আইগ্গা ভুট না ভুট না। গামছা। লাল গামছা। কত্তা। কি কমু। ঘরে লাল সবুজ লইয়া বড্ড ঝগড়া।’
-গামছা! নেতা অবাক! রাখো তোমার গামছা। আগামীকাল ভোট। মনে থাকে যেন। শ্বাস ফেলে পালায় ফকির। উরে বাবা। মস্ত ফাঁড়া গেল। ভুজুং ভাজুং বিশ্বাস করল কি না কে জানে? গরীবের সব দিকেই বিপদ।
আলের উপর দিয়ে বাড়ির পথ ধরে ফকির। ফসলের ধু ধু ক্ষেত। তার ওপারে সুয্যি ডোবে। ভগমানের দুনিয়ায় শান্তির শেষ নাই। অভাগা মানুষ কুড়ায়ে নিতে জানে না। কেবল ঝগড়া। কেবল লড়াই। চাই চাড্ডি পান্তা আর ডবকা বউ আর একখান গামছা। তবু লোক ঝামেলা ডাকি ডাকি এনে ঘরে বসাবে। তবে একটা হক কথা ফকিরচাঁদ বোঝে, ঝামেলা কিন্তু ওৎ পেতে থাকে। যার বাড়ির দুয়ারে দেখবে এট্টু ফাঁক! সেইখান দিয়ে টুক করে ঢুকে পড়বে। ফৎ করে নাক ঝেড়ে পা চালায় ফকির।
দূর থেকে দেখা যায় ঘর। মাটির দাওয়ায় দুখানি টান টান গামছা। একটি লাল একটা সবুজ। হাওয়ায় দোল খায়। ফকির কাছে এসে দেখে, অবাক কান্ড! কোনো গামছায় গিঁট নাই। বউ শ্যামা এগিয়ে এসে সবুজ গামছা ধরিয়ে দেয় হাতে, ডুব দিয়া আস গ। ডর নাই। আর ভুল হইব না। তুমার গামছায় কুনো বাস পাইবা না।
ডুবে যাওয়া সূর্যের আলোয় ভারি সুন্দর শ্যামার মুখ। ঘোর খাওয়া পুরুষ আবার ভুলে যায় তার গামছার রঙ কি ছিল? ভগমানের দুনিয়ায় কত সুখ! লাল সবুজে দুখী হয়ে হইব কি?
জন্ম কলকাতায় হলেও কাজের সূত্রে ঘুরে বেড়াতে হয় দেশ বিদেশে। কখনো আমেরিকা তো কখনো থাইল্যান্ড কিংবা লন্ডন। আদতে নিজেকে ভ্রামণিক বলতেই ভালবাসেন। মানুষের মনস্তত্ব নিয়ে কাজ করা যদি পেশা হয় তাহলে নেশা হলো নানান বিষয়ে লেখালেখি। গল্প,প্রবন্ধ ও পৌরাণিক চরিত্র কথনের আঙিনায় অবাধে বিচরণ করেন তিনি। রামায়ণ ও মহাভারতের চরিত্র বিশ্লেষণে বিশেষ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন অল্প সময়েই। পেশার চাপ সামলেও কলকাতার বহু নামী পত্রিকায় লেখেন নিয়মিত। এছাড়াও লেখেন নানান ওয়েব পত্রিকায়। প্রকাশিত বই “সুপ্রভাত বন্ধুরা”, “ব্রহ্মকমল”, “দ্রৌপদী” ও “ছয় নারী যুগান্তকারী”। শেষোক্ত বইটি ২০১৯ এর বইমেলায় পত্রভারতীর পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়ে অল্পদিনের মধ্যেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। দেশ পত্রিকার অনুগল্প প্রতিযোগিতায় প্রথম দশজনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। টার্মিনাসের তরফে পেয়েছেন পুরস্কার। আমন্ত্রিত অতিথিরূপে সম্মাননা পেয়েছেন ত্রিপুরায় দুই বাংলার সাহিত্য শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠানে। বিভিন্ন স্কুলে মহাভারত নিয়ে বক্তব্য রাখার ডাক পড়ে মাঝে মাঝেই।
কাজ করেন মূলত মানুষের মন নিয়ে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে জীবনের প্রতি অফুরন্ত ভালবাসা ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি তাকে অনুপ্রেরণা দেয় প্রতিনিয়ত।
Related