২০ ডিসেম্বর কবি সালেহীন শিপ্রার শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
ত্রস্ত সময়
হায়েনার হা-মুখের ভেতর
আটকে পড়ে কী দেখতে পায় ত্রস্ত সময়!
গলার দিকে গাঢ় ছায়া
গুম হয়ে যায় পাখিরা অই লকলকানো অন্ধকারে
জংলাপাশে ব্যক্তিগত রক্তমাখা পালক কিছু
ফের পাওয়া যায়।
আলোও আসে
ধারালো দাঁতের ফাঁক গলে
বাতাস সাথে
মাংশ পঁচা গন্ধমাখা।
ত্রস্ত সময়
দেখতে কি পায় বন্ধ চোখে!
রঙ
বিচূর্ণ হওয়ার রাত
আরো ধীর, নম্র হয়ে আসি।
ঘৃণামেঘ সরে না গেলেই
শহরতলায় ঝড়ে
চোখের উত্তাপসম রৌদ্রভাসিত মুখ
কাঁপে, মুছে যেতে থাকে।
জাহাজ ডুবানো হাওয়া
বাড়ি খায় দালানে দালানে
‘ফিরে আসব’ বলে
না ফেরা সে মৃত নাবিকের আকাঙ্ক্ষাসমেত।
এই ছলোছলো ঘুম
নত অন্ধকারটিকে
যে রঙে ডুবিয়ে দিতে চায়
সে জানে না
মেরুন কি রঙ নাকি রঙের চিৎকার।
বোধগম্যতার বিস্ময়
বোধগম্যতার ভেজা ঘাসে
কত ভুল প্রজাপতি এসে পাখা ফেলে গেল।
সে পাখায় চিত্রিত নুরের মৃত্যঘুম,
রঙধনু পথে পথে—
দেবশিশুর অবোধ্য বাক্যাবলি ওড়ে, ডুবে যায়।
আঁধারের বিভূতি যে পথের আলোক
তার শেষপ্রান্তে নিশিডোবা ভুলের নরক।
নোনা স্বরে মুখরিত প্রান্তরের ঘাস—
পালক কুড়াতে এসে আজ
পাখি ঠোকরায় পাখার ফসিল, বিস্ময়ে।
মড়িঘর
জোড়া দেই প্রলাপের ভাষা
না বোঝার অভিশাপ ঘরে তুলে, হাসি।
মায়াপোঁতা ঢিবির অদূরে
উল্টোহাসির মচ্ছব,
বোঝাপড়ার ফিরিয়ে নেয়া মুখ
ভাবে, দূরত্ব বাড়ুক।
বিষ আর অমৃতের সীমারেখা-মাঝে
পৃথিবীর অজস্র খাদ্যের স্তূপে
কিছু ভাষা খেয়ে নেয়া শেষ
আর কবিতাও—
গিলে খাচ্ছে বুড়োবুড়ি
(আহা, তাদের রোমন্থনের ঝুরঝুরে দাঁত)
কবিতা চিবিয়ে খাচ্ছে মধ্যবয়সীরা
(দ্বিধাগ্রস্ত, থমথমে মুখ)
পান করছে যুবক-যুবতীরা
(নেশাগ্রস্ত, হুডুম দুডুম)
ভিড় ছেড়ে একদিন নৈনিতাল যাব ভাবি
একদিন মাংস পুড়িয়ে খাব জঙ্গলের ধারে।
সবুজ মাড়িয়ে আসা পা
পাথুরে ছড়ার হিম জলদের কাছে
জমা দেবে শিহরন, অনুবাদহীন।
হিমকণা
পৃথিবীর গভীরতর সন্ধ্যার কাছে গোপনে ঝরে পড়ছি,
ভুলে যাওয়া বারান্দার পাশে, যার নাম
কখনোই বিষাদ ছিল না।
যে মুদ্রা ভাঙনের তা যদি শেখাও কেবল
শীতের তীব্রতা বাড়ে, ডাকনাম বদলে বদলে যায়,
পুরোনো সুখের নামে বুনো পাখি পাখনা মেলে।
যে সকল উচ্ছিষ্টের গন্তব্য থাকে না তারা বিভ্রান্ত বিকেল খুঁজে
ফেরে আর সম্পর্কেরা এ রকম সন্ধ্যার কাছে হিমকণা রেখে
যায়, বলে-
‘ঝরে যাও, ঘুমসংক্রান্তির রাত জেগে আছে।’