তা হলে, কী দাঁড়াল? একবস্তা বালির দামে আপনি আস্ত একটা বাড়ি পেয়ে যাবেন। ফলে, বিশ্বাস যে-কারওরই হওয়ার কথা নয়। যিনি মাত্র ৮৫ টাকায় বাড়ি কেনার কথা বলছেন, তাঁর মস্তিষ্কের সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু, আজও এমন অনেক কিছুই ঘটে, হিসেব দিয়ে যা মেলাতে পারবেন না! পাঁচ টাকা, ১০ টাকায় লটারি কেটে কোটিপতি, লাখপতি হওয়ার ঘটনাও তো ঘটে। ধরে নিন না, এটা তেমনই। কিন্তু, লটারি লাগার মধ্যে ভাগ্যের একটা ব্যাপার থাকে। মানে, অনিশ্চয়তা। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে কোনও অনিশ্চয়তা নেই। আপনি পাবেনই। কিন্তু, তার জন্য আপনাকে নিজের দেশ ছাড়তে হবে। সেই মায়া যদি কাটিয়ে ফেলতে পারেন, তা হলে আপনিও হতে পারেন এমনই একটি বাড়ির মালিক।
তবে, আর একটু ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ, আর কিছু নয়। করোনা লকডাউনের জেরে আন্তর্জাতিক উড়ান অনেক দেশেই এখন বন্ধ। বহু দেশেই কোভিড বিষয়ক বিধিনিষেধ বলবত্ রয়েছে। এই করোনা সংকটের মধ্যেই কিন্তু বিজ্ঞাপন দিয়ে লোক ডাকছে শহরটি। আর একটি ভেঙে বললে, ইতালীয় এক শহর।
ইতালি শুনলেই যাঁদের মনে মনে বলছেন, সাধ করে ‘করোনার মৃত্যুপরী’তে যাব কেন? তাঁদের জন্য আর একটি তথ্য– ইতালীর যে শহরটি আপনাকে বাড়ি কেনার জন্য সেখানে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে, সেখানে করোনাভাইরাসে মৃত্যু তো দূর অস্ত, একজনেরও সংক্রমণ ধরা পড়েনি। তাই করোনামুক্ত শহর হিসেবে জারি করেই তারা লোক ডাকছে।
ইতালির ক্যালাব্রিয়ার দক্ষিণ অঞ্চলের এই শহরে মূলত সিনকেফ্রন্দি সম্প্রদায়ের বাস। ইতালীয়দের কাছে এই শহরটির নাম চিনকেফ্রন্দি। সাহেবরা বলেন সিংকফ্রন্দি। যে নামেই ডাকুন গাছগাছালি, সবুজে সাজানো সুন্দর এক শহর। এখানেই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে মনোরম একটি বাড়ি। হ্যাঁ, মাত্র ১ ইউরোয়। ভারতীয় মুদ্রায় যার দাম পড়ছে ₹৮৫.৭৯। না, বিজ্ঞাপনী চমক নয়। ৮৫ টাকায় বাড়ি বুক করে, পরে বাকি দাম দেওয়ার গল্পও নেই। এই এক ইউরোই দাম একটি বাড়ির।
আসুন, এই শহরের যিনি মেয়র, সেই মিশেল কনিয়া কী বলছেন, শুনি। এই যে প্রকল্প, এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন বিউটি’ (Operation Beauty)। নামেই বুঝতে পারছেন, শহর সাজানোই লক্ষ্য। কোলাহল জনমানবহীন নির্জন শহর তো প্রাণহীন। প্রকৃতি যত রূপ উজাড় করে দিক, লোকই যদি না-থাকে, শহর কী আর শহর বলে মানায়। লোক নেই, সে কথা ভুল। আছে, কিন্তু অনেক কম। তাই নামমাত্র মূল্যে বাড়ি দিয়ে, লোকজন টেনে আনতে চান মেয়র।
বরাবরই যে এই শহর এমন জনমানবহীন ছিল, তা কিন্তু নয়। এককালে অনেক লোকের বাস ছিলচিনকেফ্রন্দি শহরে। বহু পুরনো দিনের কথা নয়। কিন্তু, কর্মসত্রে, রুটিরুজির প্রয়োজন অনেকেই শহর ছেড়ে গিয়েছেন। কেউ ভিন দেশেও চলে গিয়েছেন। তাঁদের বাড়িগুলি দাবিদারহীন, পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ৮৫ টাকায় তেমনই এক-একটি বাড়ি তুলে দিতে চান মেয়র।
মেয়েরের কথায়, ‘পরিত্যক্ত বাড়িগুলি নতুন মালিকের হাতে তুলে দেওয়াই অপারেশন বিউটির লক্ষ্য।’ মেয়েরের নিজের কথাই ধরুন না। জন্ম জার্মানিতে। মা-বাবা একটা সময় এই শহর ছেড়ে চলে যান জার্মানি। পিতৃভূমির কথা শুনে ইতালির এই শহরে ফিরে আসেন মিশেল। ‘আমাদের মতো অনেক পরিবারই দশেকের পর দশক ধরে এই শহর ছেড়ে গিয়েছেন। আমি আবার শহরের প্রাণস্পন্দন ফিরিয়ে আনতে চাই।’
‘চিনকেফ্রন্দি’র অর্থ পাঁচ গ্রাম। কী নেই। মনকাড়া একাধিক পাহাড়। নদী। দুটো সমুদ্র…। বাড়ি থেকে গাড়িতে চেপে মাত্র পনেরো মিনিটে আপনি পৌঁছে যাবে সমুদ্রসৈকতে। মেয়েরের আক্ষেপ, এত কিছু থাকতেও গোটা শহরের যেন পরিত্যক্ত অবস্থা! ৪০ থেকে ৫০ বর্গ মিটারের এক-একটা বাড়ি, এ ভাবে পড়ে থাকতে দেখে মেয়রের মন কাঁদে।
যাবেন নাকি? উষ্ণ অভ্যর্থনা পাবেন।