উৎসব সংখ্যা: জিললুর রহমান’র কবিতা
রেমাল
এসব দেখছি নিত্য — আশৈশব, শোঁ শোঁ বাতাসের সুতীব্র তাণ্ডবে ম্যাজিক কার্পেট হয়ে উড়ে যায় ঘরের টিনের চালা। মাঝে মাঝে পুরো কুঁড়েঘর ওড়ে সসারের বেশে, এক দেশ থেকে অন্য এক দেশে।
তবু, জনস্রোতে ভেসে চলা মায়ের দুধের বোঁটা মুখে নিদ্রারত থাকে নিওনেট। এসব সবাই দেখে, না দেখা কেবল ওই হৃদয়ের অন্তহীন হাহাকার…
২.
দুদিন প্রচণ্ড তাপে গলদ্ঘর্ম সকলে নগরে। বুড়োর অভিজ্ঞ চোখে কেবল আসন্ন দুর্যোগের শঙ্কা কাঁপিয়ে দিয়েছে বুক। রৌদ্রকরহীন মেঘের দাপট এসে যখন হামলে পড়ে বৃষ্টির বিপন্নতায়, আমাদের অর্থনীতি পৌরনীতি ভূগোল হারিয়ে যায় সব। ঝড়ের ভীষণ তোড়ে আর বৃষ্টির রোদনে শুধু জল ছল ছল ঢেউ আদিগন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
কৌমের বিপন্ন দিনে না নূহ না মুসা। , কিছুই আসে না। আসে কিছু ভেসে যাওয়া মরা হরিণের ঠ্যাং, কিছু বিধ্বস্ত উপড়ে আসা কলাগাছ, ফুলে ঢোল হওয়া গবাদি পশুর সন্তানবিহীন পেট। আঁকড়ে ধরাই দেখি এখানে জীবন। আমাদের মৃত্যু যেন হেঁটে চলে খুব পাশে পাশে…
৩.
যেমন ইউসুফ বলে, ‘দুঃসময়ে বাড়িয়ে ধরা সব হাত সহযোগিতার নয়’, তবু তারা বাড়ায়, এক দুই এমনকি পাঁচ দশ হাতও। সে হাতে খিচুড়ি থাকে, চালডাল শাড়িলুঙ্গি ওষুধপত্তর সব। গভীরে প্রবেশ করে সেইহাত টেনে নেয় জমির দলিল আর পুকুর ভিটের চারপাশ, প্রয়োজন মতো কম্পমান আঙুলের বাধ্য টিপসই। অভাব আমাকে বলে, ঠকে যাও তবু বাঁচো, বাপের নামের জন্য বেঁচে থাকা ভীষণ জরুরী। এসকল ধান্দাযোগিতার হাত অকস্মাৎ করে বাজিমাত…
৪.
এ শব্দ গতির বটে, ধাবমান বায়ুর পাহাড়। অন্তরাত্মা গলায় আটকে যায় যখন শব্দের তেজ বুঝিয়ে দেয়, আঘাত আসবে দৃঢ় নিষ্কম্প তীব্র গতির। বুড়ো আম-জামগাছ ঢলে পড়ে, ইউক্যালিপটাস কি গগন শিশির —সকলেই নতজানু সগর্জন বায়ুর আঘাতে। এগিয়ে আসছে দ্রুত সচল কুণ্ডলী প্রায় সুপ্রশস্ত ঘূর্ণির পিলার, গতি যেন ধূমকেতুর, আঘাত হানছে এসে মুগুর সদৃশ…
সকলে প্রতীক্ষারত সমাসন্ন নিয়তির…
৫.
তুমুল বাতাস ও বৃষ্টির সাথে সঙ্গত দিতে ফুলে ফেঁপে ওঠে নদী। গেরস্থ দালানে বসে চেয়ে দেখে গলগল করে ঢুকছে বানের জল ঘরের ভেতর। কেবল ভেসে যাওয়া মরা হরিণীর বুক আর ভাসমান মৃত মায়ের কোলের ঘুমন্ত শিশুরা জানে ঘূর্ণিঝড় কাকে বলে, কি তার স্বরূপ…
নিবাস: চট্টগ্রাম।
কবিতাই প্রধান বিচরণ।তবে নন্দনতাত্ত্বিক প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ভ্রমণগদ্য এবং অনুবাদকর্মেলিপ্ত।
কবিতার বই:
অন্যমন্ত্র(লিরিক১৯৯৫),
শাদা অন্ধকার(লিরিক২০১০),
ডায়োজিনিসের হারিকেন(ভিন্নচোখ২০১৮)
দীর্ঘ কবিতার পুস্তিকা:
শতখণ্ড(বাঙময়২০১৭)
আত্মজার প্রতি(বাঙময়২০১৭)
প্রবন্ধ/নিবন্ধ:
উত্তর আধুনিকতা: এ সবুজ করুণ ডাঙায়(লিরিক২০০১, পরিবর্ধিত২য়সংস্করণ: খড়িমাটি২০১৯)
অমৃত কথা(লিরিক২০১০)
অনুবাদ:
আধুনিকোত্তরবাদের নন্দনতত্ত্ব: কয়েকটি অনুবাদ(লিরিক২০১০)
নাজিম হিকমতের রুবাইয়াৎ(বাতিঘর২০১৮)
এমিলি ডিকিনসনের কবিতা(চৈতন্য২০১৮)