| 6 অক্টোবর 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত গল্প

অসমিয়া অনুবাদ উপন্যাস: অর্থ (পর্ব-১৮) । ধ্রুবজ্যোতি বরা

আনুমানিক পঠনকাল: 10 মিনিট

ডক্টর ধ্রুবজ্যোতি বরা পেশায় চিকিৎসক,অসমিয়া সাহিত্যের একজন স্বনামধন্য লেখক ২৭ নভেম্বর ১৯৫৫ সনে শিলংয়ে জন্মগ্রহণ করেন ।শ্রীবরা ছাত্র জীবনে অসম্ভব মেধাবী ছাত্র ছিলেন ।’কালান্তরর গদ্য’ ,’তেজর এন্ধার‘আরু’অর্থ’এই ত্রয়ী উপন্যাসের লেখক হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত। ২০০৯ সনে ‘ কথা রত্নাকর’ উপন্যাসের জন্য সাহিত্য আকাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। বাকি উপন্যাসগুলি ‘ভোক’,’লোহা’,’যাত্রিক আরু অন্যান্য’ ইত্যাদি।ইতিহাস বিষয়ক মূল‍্যবান বই ‘রুশমহাবিপ্লব’দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ’,’ফরাসি বিপ্লব’,’মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ’।শ্রীবরার গল্প উপন্যাস হিন্দি, ইংরেজি, বাংলা, মালয়ালাম এবং বড়ো ভাষায় অনূদিত হয়েছে।আকাডেমিক রিসার্চ জার্নাল’যাত্রা’র সম্পাদনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ।’ কালান্তরর গদ্য’ উপন্যাসের জন্য ২০০১ সনে অসম সাহিত্য সভার ‘ আম্বিকাগিরি রায়চৌধুরি’ পুরস্কার লাভ করেন।শ্রীবরা অসম সাহিত্য সভার প্রাক্তন সভাপতি।


অনুবাদকের কথা

কালান্তর ট্রিলজির তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস হল’অর্থ’। সশস্ত্র হিংসার পটভূমি এবং ফলশ্রুতিতে সমাজ জীবনের দ্রুত অবক্ষয়ের মধ্যে বেঁচে থাকার তাড়না এবং বেঁচে থাকার পথ অন্বেষণেই আলোচ্য উপন্যাসের কাহিনী ভাগ গড়ে তুলেছে। সম্পূর্ণ পৃথক একটি দৃষ্টিকোণ থেকে এখানে অসমের মানুষ কাটিয়ে আসা এক অস্থির সময়ের ছবি আঁকার চেষ্টা করা হয়েছে। মানুষের অন্বেষণ চিরন্তন এবং সেই জন্যই লেখক মানুষ– কেবল মানুষের উপর আস্থা স্থাপন করতে পারে।

এবার উপন্যাসটির বাংলা অনুবাদ নিয়ে এলাম।আশা করি ইরাবতীর পাঠকেরা এই ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত অসাধারণ উপন্যাসটিকে সাদরে বরণ করে নেবে ।নমস্কার।

বাসুদেব দাস,কলকাতা।


 

‘আণ্ডারগ্রাউণ্ডে থাকার সময় সে আমাকে অনেক সাহায্য করেছিল,অঞ্জুদাধীরে ধীরে কথাটা বলল।

কয়েকদিন পরে অঞ্জুদাশ্রীমানকে ঘরের কাজের বিষয়ে কথা বলার জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল।ব্রহ্মপুত্রের পারে অঞ্জুদা নতুন একটা ঘর নিয়েছে।সেখানে সে শ্রীমানকে ডেকে ছিল।সেখানে কথা বলার সময়েই শ্রীমান সম্পাদকের কথাটা উত্থাপন করেছিল।

‘কী ধরনের সাহায্য?’

‘এই মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেওয়া,বিবৃতি আদি লিখে দেওয়া,সে রকম

ধরনের কাজ আর কি!কিন্তু তিনি খুব নিষ্ঠার সঙ্গে করতেন,ভালোভাবেকরতেন।এদিক ওদিক পাঠালেও যেতেন।মাঝখানে চাকরি নিয়েও টানাটানিপড়েছিল।পুলিশও ঝামেলাকরছিল।বড়ো ছেলেটি ড্রাগ এডিক্টহয়েছিল।আমরা তাকে চিকিৎ্সা করিয়ে এখন কাঠমাণ্ডুতে রেখেছি।’

শ্রীমান মাথা নাড়ল।সে অবাক হল না।অবাক হওয়াটা সে কবেই ছেড়ে দিয়েছে।

ওরা অঞ্জুদা নেওয়া নতুন ঘরের পেছনের বারান্দায় বসেছিল।দীর্ঘ প্রশস্তপেছনের বারান্দা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদীটা দেখা যায়।গলফস্কেপ পরে,পাইপ টেনেপায়চারি করতে থাকা কবির বাড়ি থেকে পূর্বে একেবারে নদীর গায়ে লেগে থাকা পাহাড়েরনিচে অঞ্জুদা একটা বাড়ি নিয়েছে।আগে কোনো বিহারি মাছের মহলদার বানানো একটাদোতলা পাকা বাড়ি –অনেকটা জায়গা,গাছ-পালায় পরিপূর্ণ।বাড়িরপেছন দিকেইব্রহ্মপুত্র।বাড়িটার ওপরে চারটি ,নিচে চারটি বেশ বড়োসড়োঘর।প্রশস্তবারান্দা।পুরো বাড়িটা পুনরায় মেরামত করে নতুন করে বানিয়ে নেওয়ার মতোদেখাচ্ছে।আগের দরজা-জানালাগুলিও বদলে দেওয়া হয়েছে।মেঝেতে লাগানো হয়েছেসুদৃশ্য মার্বেল।ওপরের মহলের পেছন দিকের বারান্দাটাতে বসে সে অঞ্জুদার সঙ্গেকথা বলছিল।

অঞ্জুদা চকচকে পয়েন্ট টু টু একটা রাইফেলে ধীরে ধীরে গুলিভরছিল।ব্রহ্মপুত্রের বাতাস সামনে ঢেলে রাখা বিয়ারের গ্লাসের ফেনায় ঢেউতুলেছিল।বন্দুকটা টিপতে টিপতেঅঞ্জুদাঅলসভাবে কথাগুলি বলছিল,মানুষটাকেকাগজটা নিয়ে দিতে পারলে খারাপ হবে না।কাগজ একটা থাকলে ভালো,কিন্তু অনেকটাকা লাগে।’

‘প্রাত্যহিক কেনার কথা ভাবছ নাকি?’

‘প্রপোজালএসেছে।দৈনিকের অনেক ঝামেলা।সাপ্তাহিক হলে মন্দ হবে না নাকি।’

‘সাপ্তাহিকে বাজার ভর্তি হয়ে আছে।

‘সেটাও একটি কথা।’

অঞ্জুদা বন্দুকটা কাঁধে নিল। সামনের গাছটা দিয়ে একটা কাঠবিড়ালি ধীরে ধীরেওপরের দিকে বেয়ে উঠছে। সেদিকে নিশানা করে সে বন্দুক চালাল। লাগল না। কাঠবিড়ালির গায়ে লাগল না। গুলিটা গাছের গা থেকে রস ছিটকিয়ে কাঠের ভেতর ঢুকে গেল। কাঠবিড়ালিটা লাফ মেরে কোথায় পালাল শ্রীমান বুঝতেই পারল না।

‘ছেঃ, নিশানা খারাপ হয়ে গেছে।’ অঞ্জুদা বলল। ‘আগে সাইকেলে করে চলে যাওয়া, গ্লাসের মধ্য দিয়েড্রাইভার বা পিছনের সিটে বসে যাওয়া মানুষের মাথায় গুলি করে দিতে পারতাম। বাজি রেখে জিতেছি আমি।’

শ্রীমান ঢোক গিলল। শুকিয়ে যাওয়া মুখটা সে এক ঢোক বিয়ারেভিজিয়েনিল।

‘ আমি যা জানি, এক দুই কোটি টাকা না হলে দৈনিক কাগজ একটা আরম্ভ করা যায় না।’

‘ টাকাটা বড়ো কথা নয়,’ অঞ্জুদা বলল।’ টাকা যোগাড় হয়ে যাবে। কিন্তু সময় এবং ইচ্ছা আছে কিনা সেটাই বড়ো কথা। আমি যা দেখছি কাগজ বের করার চেয়ে সম্পাদক এবং সাংবাদিককে টাকা খাইয়ে নিজের কাজটুকু করিয়ে নেওয়াই ভালো। ঝামেলা নেই। আমরা নিজে কাগজ বের করলে এখন থেকে আর কি বদলে যাবে! আমাদের কথা ভালোভাবে লিখবে নাকি? কীভাবে লিখবে? একই তো থাকবে সবকিছু। মাঝখান থেকে মিছামিছি মাথাব্যথার কিছু কারণকে ডেকে আনা হবে নাকি!’

শ্রীমান চুপ করে থাকল।

‘ বেশিরভাগ সাংবাদিককেই তো কেনা যায়, টাকা দিলেই সমস্ত কাজ হয়ে যায়।’

কথাটা শ্রীমানেরগায়ে লাগল। তারপরে সে ভাবল গায়ে লাগার কী আছে। সে তো জার্নালিজম আরম্ভই করতে পারল না। কাগজের সঙ্গে একটা জার্নালিস্টের জীবনেরও অ্যবরশন হল। কথাটায় তার গায়ে লাগার কী আছে। সে সশব্দে  নিজের ওপরেই হেসে উঠল।

‘ হাসছ যে?’ অঞ্জুদাজিজ্ঞেস করল।

‘ ঠিকই বলেছে, অঞ্জুদা। বেশিরভাগ সাংবাদিককেই পয়সা দিলে কিনতে পাওয়াযায়।’

‘ কাগজ বের করতে গিয়ে মন্ত্রীর শত্রু নাকি অনেক বেশিহয়েছে। সংগেরমন্ত্রিতন্ত্রীরা খারাপ পেতে লাগল। তাই এখন কাগজ বের করার চিন্তা বাদ দিয়েছে। তোমার কাগজ বের হবে না।’ অঞ্জুদা ধীরে ধীরে বলে রাইফেলটা শ্রীমানের দিকে এগিয়ে দিল।

বন্দুকটা হাত পেতে নিয়ে শ্রীমান প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাল।

‘ বন্দুক চালিয়েছ কখনও?’ অঞ্জুদাজিজ্ঞেস করল।

না চালাইনি।

‘ শিখিয়ে দিচ্ছি। ধর। কুন্দাটা ডান হাতে শক্ত করে লাগিয়ে ধর,’ অঞ্জুদাশ্রীমানকে এবার রাইফেল চালাতে শেখাতে লাগল। কীভাবে ধরবে, কীভাবে এইম করবে, কীভাবে ঘোড়া টিপবে– এক এক করে দেখাতে লাগল।

‘কী হল ঘামছ কেন?’

শ্রীমানের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে ছিল। সে মুখটা হাত দিয়ে মুছে নিল। বন্দুকটা দুই হাতেশক্ত করে ধরআতে

‘ উপরের দিকে মার। নদীর দিকে।

শ্রীমান সেদিকেই বন্দুকের নলটা ঘুরিয়ে দিল।

সামনে দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদী বয়ে চলেছে। তীরের বালি গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ঐ যে দূরে বালির খাদান । একটা ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে দেখা যাচ্ছে । সেখানে এখন বেশি কাজ হচ্ছে না । বালির খাদান প্রায় শূন্য। পুলিশ যেখানে সেখানে নোএন্ট্রিলাগিয়ে রাখার ফলে রবিবার ছাড়া দিনের বেলাতেও আজকাল বালির ট্রাক চলে না। না, না খাদানের গর্তগুলি এখান থেকে দেখা যাচ্ছে না।


আরো পড়ুন: অর্থ (পর্ব-১৭) । ধ্রুবজ্যোতি বরা


‘ সবচেয়ে খারাপ পাওয়ামানুষটির মুখ কল্পনা করে নাও,’ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অঞ্জুদা তাকে বলে গেল।’ তারপরেমানুষটার কপালের ঠিক মাঝখানটা লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দাও।’ 

শ্রীমানের হাত পা কেঁপে উঠল বলে মনে হল।

তার মনে সত্যি মানুষের মুখ ভেসে উঠল এডিটর সাহেব, কৌশিক, রমেন, ভাড়াটিয়ামানুষটি…  … ভেসে উঠল একের পরে এক মুখ। একের পরে এক। ঐযে– ওটা কার মুখ? বেগুনি রঙের– দাঁতগুলি বিকট ভাবে মুখটা হাঁ করে আছে! পরিচিত পরিচিত!ইস। এটা সেই বালির খাদানে মৃত মানুষটির মুখ। হ্যাঁ হ্যাঁ সেই মানুষটির মুখটা ক্রমান্বয়ে বড় হয়ে আসছে। শ্রীমান অধৈর্য হয়ে উঠল। তার পা  ক্রমশ কাঁপতে লাগল। এক চোখ বুজে অন্য চোখটি ছোটো করে বন্দুকের নিশানে চোখ রাখা শ্রীমানের এবার চোখ জোড়া খুলতে ভয় করতে লাগল। এবার দুটো চোখ বন্ধ করে বন্দুকের ট্রিগারটা টিপে দিল।

সরে যাক, সরে যাক, সেই ভয়াবহ মুখটা সরে যাক।

বন্দুকের গুলি পুনরায় একবার চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলুক তার করোটি।

শ্রীমান আশা করার মতো শব্দটা হল না। বন্দুকটা ধাক্কাও মারল না। তার গুলিটাও সোজা না গিয়ে একটা আমগাছের পাতার মধ্য দিয়ে শিস বাজিয়ে চলে গেল। কিছু কাক কাকা করে উড়তে লাগল।

‘ গুলি দেখছি কোথায় চলে গেল?’ অঞ্জুদা বলে উঠল।

শ্রীমান চোখ দুটি খুলল। না সেই ভয়াবহ মুখটা অর্ন্তহিতহয়েছে। বেগুনি মুখটা আর নেই। শ্রীমান সেই তখন থেকে বন্ধ করে রাখা নিঃশ্বাসটা ছেড়েদিয়ে আবার সহজভাবে নিঃশ্বাস নিতে আরম্ভ করল ।কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম ।

‘বন্দুক চালাতে হলে এত ভয় করলে চলে?’

 শ্রীমান বোকার মতো হাসল। বন্দুকটা সে পুনরায় কাঁধে তুলে নিল। ম্যাগাজিনে থাকা বাকি চারটি গুলি সে এবার একের পরে এক ব্রহ্মপুত্রের দিকে চালিয়ে দিল। এবার তার হাত কাঁপেনি। ভয় লাগেনি। সামনে নেই সেই ভয় লাগা বেগুনি মুখের প্রতিচ্ছবি…   …।

রামচাপাহাড়ের সেই দোতলা বাড়ি থেকে একটা সময় শ্রীমান বেরিয়ে এল।

নীল হয়ে পড়া পাহাড়ের নিচ দিয়ে একটা সাদা চাদরের মতো ব্রহ্মপুত্র নদীটাবয়ে চলেছে– ধীরে ধীরে। দোতলা বাড়িটার পেছনেই নদীটা। শ্রীমান বাড়িটা থেকে বেরিয়ে এসে অনেকক্ষণ নদীটার দিকে তাকিয়েরইল।

খুব সুন্দর! নদী পাহাড় এবং নীল আকাশের জায়গাটুকুবড়ো সুন্দর।

নদীর ওপারে কুরুয়া চর দেখা যাচ্ছে। তটরেখা বিকেলের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমে অস্পষ্ট  হয়ে পড়তে শুরু করেছে। নদীর বুকে দুই একটি জেলে নৌকাও দেখা যাচ্ছে। অকস্মাৎ বুকের মাঝখান থেকে শ্রীমানের একটা দীর্ঘশ্বাসবেরিয়ে এল। 

সে এসে তার গাড়িতে বসল। রমেন কয়েক দিনের জন্য বাইরে যাওয়ায় তার মারুতি ভ্যানটা শ্রীমান এই কয়েকদিন চালাচ্ছিল। অঞ্জুদা নতুন বাড়িতেডাকায় সেই এই গাড়িটা নিয়ে এসেছিল। গাড়িতেস্টার্টদিয়েই সে বাড়িমুখো হল।

বড়ো দ্রুত গতিতে ঘটে চলেছে ঘটনাগুলি। বাড়ির কাজ তীব্র গতিতে এগিয়ে চলেছে। লোহা- লক্কর,সিমেন্ট- বালি , মিস্ত্রি–ঠিকাদারের দপদপানিতেসারাটা দিন সাইটটা মুখর হয়ে থাকে। অস্থায়ীভাবে টেনে নেওয়াবাল্বজ্বালিয়ে মিস্ত্রিরা রাতেও কাজ করে। একের পর এক ছাদ ঢালাই হয়ে বিল্ডিংটা উঁচু হয়ে চলেছে।

পুলিশ অফিসারটা আর খোঁজ খবর করতে আসছে না।

অঞ্জুদা আজ তাকে জিজ্ঞেস করেছিল,’ পুলিশটা আর এসেছিল নাকি?’

‘ আর আসেনি।’ সে উত্তর দিয়েছিল।

‘ কৌশিকের মামা সে।’ অঞ্জুদা তাকে বলেছিল।’ অসমিয়াভাড়াটিয়ার কিছু একটা হয় । নিকট সম্বন্ধ।’ পুলিশের আসাটা কীভাবে বন্ধ করেছে সে কথা কিন্তু অঞ্জুদা একবারও বলল না। শ্রীমান অবাক হল। হয়তো কৌশিক সেখানে নিয়মিত এসে থাকে। ভাড়াটিয়া ঘরে, লোকগুলি এখনও তার সঙ্গে ভালো করে কথা বলে না। যোগসূত্র গুলি দেখ!

সে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরে আসছিল। বিকেল পার হয়ে গেছে। সন্ধ্যা হতে শুরু করেছে– দূরের পাহাড়ের গাছ পাতা গুলি ধূসর হতে শুরু করেছে। বালির খাদানের কাছে পৌঁছে গেছে সে। এখান থেকেই খাদানে নেমে যাওয়ার রাস্তা শুরু হয়েছে। রাস্তাটা খাড়া  নেমে গেছে নিচ পর্যন্ত– পথে ভারীগাড়ি যাওয়ার চিহ্ন গভীরভাবে বসে গেছে।

হঠাৎ খাদানের রাস্তাটি দিয়ে সশব্দে একটা মোটরসাইকেলবেরিয়ে এল। ঠিক তার গাড়ির পাশ দিয়েইরাস্তায়মোটরসাইকেলটাপেছনদিকে গেল। মোটরসাইকেলে উঠে যাওয়া ছেলে দুটি তারদিকেতীক্ষ্ণভাবেতাকিয়ে গেল। কে? ওরা কে? পরিচিত বলে তো মনে হল না। কৌশিক? না, না কৌশিক নয়।ইস  আমি হয়তোএমনিতেই ভেবে নিয়েছি কথাগুলি। রিয়ারভিউ মীররে সে মোটরসাইকেলটাকে লক্ষ করল। না ওরা জোরে দূরে চলে যাচ্ছে ।

লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাসছেড়ে শ্রীমান সামনের রাস্তার দিকে তাকাল। এখানটায় রাস্তাটা একটু আঁকাবাঁকা এবং উঁচু-নিচু। কিছুটা সামনে গিয়ে সরকারি কোয়ার্টার আছে। ইতিমধ্যে সে বালির খাদান এলাকাটা পার হয়ে এসেছে– কিছুক্ষণের মধ্যেই উজান বাজার পৌঁছে যাবে।

হঠাৎ তার কান সজাগ হয়ে উঠল। পেছন থেকে দ্রুতগতিতে একটা মোটরসাইকেল আসছে। হ্যাঁ আসছে। তখনকার ছেলে দুটিই হবে। সে রিয়ারভিউ মীররে তাকিয়ে দেখল, হ্যাঁ সেই ছেলে দুটিই আসছে।

মোটরসাইকেলটা এসে তার গাড়ির সামনে পৌঁছে গেল। ঠিক তার জানলার সামনে পৌঁছে ওরাগতিবেগকমিয়ে দিল। তার গাড়ির সমান সমান এবার ওরামোটরসাইকেল চালাতে লাগল এবং ছেলে দুটি তীক্ষ্ণ ভাবেতাকে দেখতে লাগল।

ওরা তাকে কেন এভাবে দেখছে? তার বুকটা হঠাৎ দুরুদুরু করে কেঁপে উঠল।

ছেলে দুটির দিকে যাতে তাকাতে না হয়  সে সেই চেষ্টা করল। সামনের রাস্তায় সে চোখ রাখল। কিন্তু ওদের দিকে না তাকালেও সে প্রতি মুহূর্তে ওদের দৃষ্টির তীব্রতা অনুভব করতে লাগল। ওরা তার সঙ্গে তাল মিলিয়েমোটরসাইকেল চালিয়ে চলেছে। ওদের চোখের দৃষ্টি যেন তার শরীরে বিঁধছে, যেন চারটি ফুটো করে চলেছে । সে বুঝতে পারছে ওদের দৃষ্টি তার শরীর ভেদ করে ভেতরে ঢুকে যাওয়ার কথা –ইস।

দেখব না দেখব না বলে ভেবেও সে একবার ছেলে দুটির দিকে তাকাল।

ওদের কঠোর দৃষ্টি তার ওপরে নিবদ্ধ। বিশেষ করে পেছনে বসে থাকা ছেলেটি তার দিকে একদৃষ্টিতেতাকিয়ে রয়েছে ।

হঠাৎ পেছনেরছেলেটি চালিয়ে যাওয়া ছেলেটির কাঁধের ওপরে একটা চাপড় মেরে কিছু একটা বলল  মোটরসাইকেলটাহঠাৎ গতি বাড়িয়েদিয়ে তাকে পেছনে ফেলে রেখে মুহূর্তের মধ্যে অনেক দূরে চলে গেল । খারগুলিররাস্তায় চোখের পলকে ওরা নাই হয়ে গেল।

শ্রীমান হঠাৎ ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ারমতোঘামতে লাগল। কে ওরা? ছেলেগুলির কী পরিচয়? কেন তারা তার দিকে এভাবে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতে  গেল? কোথাকার ছেলে? কী মতলব? শ্রীমানই এবার নিজে জোরে গাড়ি চালিয়ে এগিয়ে গেল। তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে।

আধা রাস্তায় সে কিন্তু অন্য একটি কথা ভাবল। বাড়িতেগিয়ে এখন একা ঘরে ঢুকে এই একই কথাগুলি ভাবতে হবে– মাথায় পুনরায় সেই একই চিন্তা আসবে। না, অন্য কোথাও যাই। অবিনাশ– হ্যাঁ অবিনাশের প্রেছে যাই। অবিনাশ থাকলে তাকে নিয়ে যাই। কোথাও গিয়ে বসে দু পেগ খাওয়া যাবে।

সে অবিনাশের কাগজের অফিসের সামনে গাড়িরাখল।

অবিনাশ ডেস্কে ছিল।

‘ কাজ শেষ হয়েছে?’ সে তাকে জিজ্ঞেস করল।’ চল ,চল কোথাও গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য বসি।’

অবিনাশ বোর হচ্ছিল। সেদিন তার কাজ শেষ হয়েছিল। বের হতে অসুবিধা হবে না।’ আমার কিন্তু আজ গাড়ি নেই। তুই আমাকে বাড়িতে রেখে আসতে হবে।।’

‘ হবে,চল।’

দুজনে বেরিয়ে এল। শ্রীমান গাড়িটাডিসপুরের দিকে চালিয়ে দিল।

‘ তুই এটা কার গাড়ি চালাচ্ছিস?’ তার মারুতি ভ্যানটা দেখে অবিনাশ জিজ্ঞেস করল।’ নতুন নতুনগাড়িনিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস দেখছি। প্রিয়ম্বদারগাড়িটা কী হল?’

‘ ও তো নেই। আজকাল দিল্লিতে মাছ কমিউনিকেশন পড়ছে। শুনিস নি?’

‘ শুনেছি। ওর মাছ কমিউনিকেশন ক্লাস নাকি রাত দশটার পরে আরম্ভ হয়,’ অবিনাশ বলল।’ ‘তুই ভালো রক্ষা পেয়েছিস।’

‘ কেন বললি, এভাবে কেন বললি?’ শ্রীমান প্রশ্ন করল।

‘ বলব বলব, কখনও বলব তোকে।’ অবিনাশ আর কথা বাড়াতে চাইল না।

শ্রীমান একটা সুদৃশ্য হোটেলে গাড়ি রেখে দিল। দুজনে ভেতরে ঢুকল।

শ্রীমান মিহি করে কাটা পেঁয়াজ, আদা, লঙ্কা এবং ধনেপাতা মেশানো ভাজা বাদাম আঙ্গুলের মতো ভাজা মাছের ফিশ ফিঙ্গার,চিকেন টেংরি কাবাব  এসবের অর্ডার দিল ।’ সঙ্গে ফ্রেশস্টারটারসস দেবে,’ অর্ডার নিতে আসা বেয়ারাটাকে সে বলল। অবিনাশ তারদিকে অবাক হয়ে তাকাল।

ওরা হোটেলের একটি খালি ঘর নিয়ে বসেছিল। শ্রীমান একটা সম্পূর্ণ বোতল আনিয়েনিল।’ পেগপেগ করে কত কিনবি’? শ্রীমান বলল,’ একবারে একটা বোতল নিয়েনেওয়া ভালো।’

অভিনাশ মুখ দিয়ে কোনো শব্দ উচ্চারণ না করে গ্লাস দুটিতেবড়োপেগ ঢালল। 

সাধারণ কথাবার্তায় কিছুক্ষণ পার হয়ে গেল। হুইস্কির গ্লাসে চুমুক।

‘ আমার কখনও খুব ভয় লাগে বুঝেছিস?’ শ্রীমান হঠাৎ অবিনাশকে বলল।

অবিনাশ তারদিকেপ্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাল,’ভয়?’

‘ সত্যিই ভয় লাগে বুঝেছিস। সত্যি ভয় লাগে। কোথা থেকে এসে যে কোথায় ঢুকলাম। আগেই ভালো ছিল। ল কলেজে নামটা লেখানো ছিল। আরামে ঘরের খেয়ে আড্ডা মেরে ঘুরে বেড়াতাম। আড্ডা জমিয়ে রাজনীতির কথা বলতাম। প্রত্যেকের শ্রাদ্ধ করতাম। আর্ট কালচার মিউজিক এসবের ওপরে তর্ক করে এক্সপার্টকমেন্ট দিতাম। টোটো করে গোটা গুয়াহাটি শহর ঘুরে বেড়াতাম। তোর সঙ্গে দেখা হয়ে জার্নালিজম করতে আসা পর্যন্ত ঠিকই ছিল….

‘ তারপরে?’

‘ তারপরে এই ধরনের কিছু ঘটনা ঘটল আর ঘটতে শুরু করল যে আমি ধীরে ধীরে একটি বন্ধ ঘরে আটকা পড়া যেন মনে হল– আর বন্ধ ঘরটিতে, ঘর নয় বুঝেছিস অবিনাশ, গোলোকধাঁধা– গোলোক ধাঁধা! গোলোক ধাঁধা  জানিস? সেই যে ঢুকে গেলে পথ হারানোর খেলাটা…   ….’ শ্রীমান ফুঁপিয়ে উঠল।

অবিনাশ একটা সিগারেট জ্বালাল। সে কিছুটা অসহজ অনুভব করছিল।

‘ তোকে একটা কথা বলিনি আমি।’ দীর্ঘ একটা চুমুক দিয়ে শ্রীমান আরম্ভ করলঃ’ প্রতিদিনই তোকে বলব বলবভাবি, কিন্তু বলা হয়ে উঠে না।’ আমি ঠিক কাগজে, তুই ঠিক করে দেওয়াচাকরিটাতেজয়েন করার কিছুদিন আগের কথা। দুদিন আগের। একদিন সন্ধ্যাবেলা ব্রহ্মপুত্রের পারে পারে বালির ওপর দিয়ে আমি হাঁটতে গিয়েছিলাম। মাঝে মধ্যে যাই। সন্ধ্যা না হওয়া পর্যন্ত বালির ওপরে বসে থাকি। রাতে ফিরে আসি। কখনও সঙ্গে কোনো বন্ধু-বান্ধব থাকে। প্রায়ই একলা যাই। সেদিন একাই গিয়েছিলাম। নদীর তীরে বালু ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। যতদূর মনে পড়ে আবহাওয়া পরিষ্কার ছিল। আকাশের রং ছিল পাতলা গোলাপি, মেঘগুলিআকাশী নীল। যেতে যেতে উজান বাজারের ঘাট ,পানিট্যাংকি পার হয়ে রামচাপাহাড়ের নিচে পৌঁছে গেছিলাম ….     ….’

হোটেলের রুমের ভেতরে ঘন হয়ে পড়া সিগারেটের ধোঁয়াহুইস্কির ভাপ এবং ভাজা বাদামের গন্ধের মধ্যে শ্রীমান অবিনাশের সামনে বালির খাদানের সেই দুঃস্বপ্নেরমতো ঘটনাটা পুনরায় বলতে শুরু করল। বলতে বলতে তার মুখ বাঁকা হয়ে গেল, চোখ দুটি বড়োবড়ো হয়ে গেল– কথাবার্তাগুলি ক্রমে অসংলগ্ন হয়ে এল।

‘ আমার কখনও কখনও কোনো কারন ছাড়াই বিরাট জোরেচিৎকার করে উঠতে ইচ্ছা করে বুঝেছিস অবিনাশ,’ শ্রীমান বলল

অবিনাশের হুইস্কির নেশা কখন কেটে গিয়েছিল।

‘ পরেরটুকু শোন এখন,’ শ্রীমান বলেছিল।’ সেই মৃত মানুষটির সবুজ বেগুনি হয়ে পড়া মুখটা আমাকে স্বপ্নে- বাস্তবে পেছনপেছন অনুসরণ করে বেড়ায়। ঘরের ভেতর ঢুকে থাকে, টেবিলের দেরাজের মধ্যে থাকে– কোথায় না থাকে! কোথায় না থাকে বলতো! যেখানে সেখানে ভেসে বেড়ানো গ্যাস বেলুনের মতো আমার মগজের ভেতরে ,চোখের মধ্যে সেই মানুষটার মাথাটা এবং মুখটা অহরহ ভেসে বেড়াচ্ছে…    ….। এখন আমি একটা কাজ আরম্ভ করেছি– তুই তো জানিস।’

‘ বালির গর্তের কথাটা তুই ভুলে যা,’ অবিনাশ হঠাৎ খুব জোরে বলে উঠল।’সে সব কথা ভুলে যাওয়াই মঙ্গল। তুই কিছুই দেখিস নি, বুঝেছিস, কিছুই দেখতে পাসনি।

শ্রীমান ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল।

‘ তুই কিছু দেখিস নি ,কাউকে দেখিস নি, বুঝেছিস?, হুইস্কিতে একটা দীর্ঘ চুমুক দিয়ে অবিনাশ বলল।’ ওটা একটি খারাপ স্বপ্ন ছিল। এরকম দুঃস্বপ্ন আজকাল অনেকেই দেখে। আমিও দেখি।।’

‘ তুইও দেখিস?’

‘ দেখি তো। সেইসব স্বপ্ন। বাস্তব নয়। আর  তুই যে স্বপ্ন নয়, বাস্তব ঘটনাটা দেখেছিলি তার কি প্রমাণ আছে? আছে কোনো প্রমাণ।’

‘ আমিই প্রমাণ।’

‘ মুখ না খোলা পর্যন্ত তুই কোনো প্রমাননস। বুঝেছিস। কোনো কিছু প্রমাণ হবে না। মুখ না খুললে তোর কোনো চিন্তা নেই। মনের ভেতরে চিন্তা করে করে নিজেকে অসুস্থ করে তুলবি। আজ থেকে চিন্তা করা বাদ দে।’

শ্রীমান সজোরে মাথা নাড়ল। সেও ভুলে যেতে চায়, মন থেকে বের করে দিতে চায় সেই বেগুনি- সবুজ মুখের ছবি।

‘ হ্যাঁ, সেটা একটা স্বপ্ন ছিল ,খারাপ স্বপ্ন ,দুঃস্বপ্ন।’ শ্রীমান বলল।

‘ ঠিক কথা, একটি দুঃস্বপ্ন।ইলিউশন,’ অবিনাশ সমর্থন করল।’ আয় সেলিব্রেট করি। নে নেহুইস্কি নে, গ্লাসে ঢাল।’

দুজনেই হুইস্কি পান করল। চোখের সামনে যেন অনেকগুলি তারা ঝলমল করে উঠল।

‘ তোর অন্য কথাটা আমাকে চিন্তায় ফেলেছে।’ অবিনাশ বলল।

‘কী চিন্তা?’

‘ বাজারে কথাটা ইতিমধ্যে ছড়িয়েপড়েছে। তুই কার সঙ্গে যুক্তভাবে ফ্ল্যাট, মার্কেট কমপ্লেক্স বানাতে শুরু করেছিস। সে কথা বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে। ঠিক তোর কথা নয়, কিন্তু সেই প্রজেক্টের পেছনে কে আছে। সেটা প্রকাশ্যে এসেছে। তাদের শত্রু অনেক। কখনও যদি অ্যাটাক্টট‍্যাটাকহয় সেটাই চিন্তার বিষয়। সাবধানে থাকবি।’

শ্রীমানের নেশা প্রায় ফেটে গেল। সে সোজা হয়ে বসল।

‘তুই সেরকম কোনো কথা শুনেছিস নাকি– অ্যটাকের?’

‘ না শুনিনি। সেটা একটা সম্ভাবনার কথা– তোকে সাবধান করে দেবার জন্য বললাম।’

দুজনেই কিছুক্ষন নীরব হয়ে রইল। শ্রীমানকে চিন্তিত দেখে অবিনাশ বলল– ‘তোকে ভয়পাইয়ে দিলাম। ভয় করিস না, কিন্তু সাবধানে থাকবি। সারাদিন সেখানে গিয়ে ঢুকে থাকার দরকার কি? যতটুকু না গেলে নয় যাবি আর যে কোনো মানুষকে, মানে মার্কা মারা মানুষগুলিকে, খুব বেশি আসা যাওয়া করতে দিবি না। তাড়াতাড়ি কমপ্লিট করে ফেল। অনেক কথা ছড়ায়। আমরা প্রেছের মানুষরা অনেক বেশি শুনি। তুই অযথা ভয় করিস না।’

অবিনাশের প্রবোধ কিন্তু তাকে শান্ত করতে পারল না। সে চুপ করে রইল। কিন্তু তার মনের ভেতরে যেন একটা বিষাক্ত বোলতা বোঁ বোঁ করে উড়তে লাগল– চক্রাকারে– চক্রাকারেকুণ্ডলিপাকিয়ে। গ্লাসে থাকা হুইস্কিটা সে মুখে ঢেলে দিয়ে আরও এক পেগ ঢেলে নিল।

‘ এত খেলে আজ আর বাড়ি যেতে পারবি না।’ অবিনাশ বলল।

‘ আজ যাব না। এখানেই শুয়ে থাকব। তোকেও যেতে হবে না।’

‘ একা থাকবি নাকি?’

অবিনাশের প্রশ্নটা শুনে শ্রীমান তার দিকে তাকাল।’ একা মানে?’

‘ একজন সঙ্গীকে ডেকে দিই,’ অবিনাশ খোলাখুলি বলল।

‘ কোথা থেকে?’

‘ আমি ব্যবস্থা করব, তুই কেন চিন্তা করছিস। টাকা আছে তো?’

‘ আছে।’

অবিনাশ ফোনের রিসিভার তুলল। ডায়াল ঘুরিয়ে কারও সঙ্গে অনুচ্চস্বরে কথাবার্তা বলল । তারপরে তার দিকে তাকিয়ে বলল – লাক ভালো বুঝেছিস । হোটেলেই মজুত ছিল ।থাকেই। পাঁচ মিনিটে এসে যাবে । তখন ডিনারের অর্ডার দিবি । আরেকটি কথা তোকে আগেই বলে দিই । প্রোটেকশনের ব্যবস্থা না নিয়ে কিছু করতে যাস না। ওদের হাতে থাকবে। আজকাল বিপদের কথা ।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত