চাঁদ উঠেছে, ফুল ফুটেছে । সংগ্রামী লাহিড়ী
“উঁহু, ওই গানটা আমি মোটেই গাইব না।”
ববকাট চুল আর টেপফ্রক মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
‘হাসিখুশি’, ‘খুকুমণির ছড়া’ -এসব বই সে কবেই পড়ে শেষ করে ফেলেছে!’অ’য় অজগর আসছে তেড়ে’ ছড়ার গানটাও শুনে শুনেই গলায় উঠে গেছে।যিনি গেয়েছেন, কী সুন্দর দেখতে তাঁকে। জপমালা ঘোষ, নামটিও খুব পছন্দের। শারদ অর্ঘ্য বইতে তাঁর ছবিটা বারবার দেখতে সাধ হয়। কিন্তু তা বলে ওই গানটা সে অন্যদের সামনে কখনোই গাইবে না।
“কেন রে?” অমলকাকু আর কাকিমা বেশ অবাক হয়েছেন।এইমাত্র তাঁরা গুনগুনানি শুনেছেন, সে আপন মনেই গাইছিল জানলার সবুজ রঙের গরাদটা ধরে।
“বাঃ, খুকু তো বেশ গায়!” বলাবলি করেছেন।
তাই শুনে মা তাকে ধরে নিয়ে এসেছে। গান গাইবে, ছড়ার গান।
কিন্তু এখন সে কাকু আর কাকিমার প্রশ্নে সতেজে উত্তর দেয়, “আমি কি বাচ্চা?”
এ গানটা গাইলেই পাজি দাদাটা কোথ থেকে এসে হাজির হবে আর বলবে,”এহ, খুকুমণির নাক টিপলে দুধ বেরোয়, সে কিনা আবার গান গাইবে! ওই ‘অ’য় অজগর গানই ওর ভালো!”
শুনলে হাড়পিত্তি জ্বলে যায়!
ওহ, এই কথা? হাসছে সবাই।
না না, খুকু আমাদের বড় হয়ে গেছে। তাহলে কি খুকু ছড়ার গান গাইবে না?”আমি ছড়ার গানই গাইব। অন্য গান। অনেকগুলো গান জানি।” দৃপ্ত প্রত্যয়ে উত্তর।
এ অহংকার সে করতে পারে। রেডিওতে ছড়ার গান নিয়মিত বাজে। মায়ের সঙ্গে বসে বসে সে রেডিও শোনে।জপমালা ঘোষ, আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়রা কী মজার যে গান শোনান! ছেলেদের মধ্যে সনৎ সিংহ, অমল মুখোপাধ্যায়। মা তাকে সবার নাম বলে বলে দেন। রেকর্ড কোম্পানি থেকে পুজোর সময় গানের বই বেরোয় -শারদ অর্ঘ্য। সে বইতে তাঁদের ছবি থাকে। গানের কথা লেখা থাকে বইটি নিয়ে রেডিওর সামনে বসে গান তুলে নিতে আর কতক্ষণ? তাই খুকু বেশ আত্মবিশ্বাসী। ভাঁড়ারে অনেক গান। ভেবেচিন্তে একটা গান বেছেছে, খুব পছন্দের। রেডিওতে প্রায়ই বাজে।ঘোষক ঘোষণা করেন,”এখন আপনারা শুনবেন ছড়ার গান, শিল্পী আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়। লিখেছেন আনন্দ মুখোপাধ্যায়, সুর দিয়েছেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।”
বুঝুক না বুঝুক, এ সবই তার মুখস্থ!
কী মজার একটা বাজনা দিয়ে শুরু হয়, চিঁচাঁও, চিঁচাঁও, চিঁচাঁও, চিঁচাঁও! তালে তালে আসে সানাইয়ের সুর। রিনরিনে মিষ্টি গলায় আলপনা গান ধরেন:
“দোল দোল দুলুনি, রাঙা মাথায় চিরুনি
বর আসবে এখুনি, নিয়ে যাবে তখুনি।
বর আসবে সেজেগুজে চতুর্দোলায় চড়ে,
ফুলের মালা গলায় দিয়ে রাঙা টোপর পরে –
কনেবৌটি সাজবে মেয়ে পরে পান্না চুনি।
উলু দেবে বৌ ঝিয়েরা উঠবে সানাই বেজে
মেয়ের মুখে ফুটবে হাসি বিয়ের সাজে সেজে
নতুন জামাই বরণ হবে সাজিয়ে বরণডালা
ছাদনাতলায় বরকেনেতে বদল হবে মালা
কাঁদবে সবাই মেয়ে জামাই চলে যাবে যখুনি।“
গানটা তার কণ্ঠস্থ। অবলীলায় গেয়ে যায় পুরোটা। গানের শেষে দুলিয়ে দেওয়া সুর, “দোল দোল দুলুনি ই ই ই ই ই….”
সবাই হাততালি দিয়ে ওঠে। কাকু বলে, “নাঃ, রাঙা মাথার চিরুনিটা কিনেই আনি তাহলে! সানাই বাজতে তো দেরি নেই দেখছি!”
মা হাসে। সে ভুরু কোঁচকায়, “ধ্যাৎ!”
তারপর অবশ্য আরো গান গাইতে হয়। তাতে কোনোই আপত্তি নেই, গান গাইতে সে সবসময় একপায়ে খাড়া।তোতাপাখির মত সবাইকে ছড়া শোনায়, ছড়ার গান গেয়ে যায়, মিষ্টি গলা শুনে সবাই মুগ্ধ হয়।দাদাটাই শুধু পাজি, চুল টেনে চলে যায়।আর সে কী গা জ্বালানো কথা! যাকগে, দাদার কথা সে এখন ভাববে না। গান ধরে,
“আতা গাছে তোতা পাখি ডালিম গাছে মৌ
এত ডাকি তবু কথা কও না কেন বৌ?”
কাকিমা হাসতে হাসতে বলে ওঠে, “কথা কইবে কী করে? নতুন কনে বৌ কি কখনো কথা কইতে পারে? লজ্জা করবে যে!”
এবার মা-ই বলে, “হাট্টিমাটিমটিম গানটা কর না খুকু, এই তো সেদিন নিজের মনেই গাইছিলি।”
ও মা, দেখেছ, মনেই ছিল না! ভাগ্যিস মা মনে করিয়ে দিল।আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই গানটায় অনেকগুলো ছড়া একের পর এক আসে। শুনে শুনে তুলে নিয়েছে। দেরি না করে চটপট ধরে দেয়,
“হাট্টিমাটিমটিম তারা মাঠে পাড়ে ডিম,
তাদের খাড়া দুটো শিং তারা হাট্টিমাটিমটিম…”
সহজ সরল ছন্দ আর সুর। ছড়া বদলে গেল, এবার নতুন ছড়া, তাই গানেও নতুন সুর এল।
“তাঁতীর বাড়ি ব্যাঙের বাসা, কোলাব্যাঙের ছা,
খায় দায় গান গায় তাইরে নাইরে না!”
ইস, কী মজা, ব্যাঙের কোনো কাজ নেই, শুধু গান গাওয়া ছাড়া!
আবার ছন্দ বদলায়, সুর বদলায়, আরেকটা ছড়ার শুরু।
“চাঁদ উঠেছে, ফুল ফুটেছে কদমতলায় কে?
হাতি নাচছে, ঘোড়া নাচছে, সোনামণির বে!”
এটাও শেষ হল, এরপর আবার অন্য ছড়া! একের পর এক গেয়ে যাচ্ছে সে।
“খোকা গেছে মাছ ধরতে ক্ষীর নদীর কূলে,
ছিপ নিয়ে গেল কোলা ব্যাঙ, মাছ নিয়ে গেল চিলে!”
“খোকন খোকন করে মায়, খোকন গেছে কাদের নায়
সাতটা কাকে দাঁড় বায়, খোকন রে তুই ঘরে আয়!”
হঠাৎ সে গান থামিয়ে দেয়।
মা অবাক, “থেমে গেলি যে? শেষে আবার হাট্টিমাটিমটিম গাইতে হয় তো? ওটা দিয়েই শুরু, ওটা দিয়েই শেষ।”
“নাঃ, আর গাইতে ভালো লাগছে না।” উল্টোদিকে মুখ করে বসেছে।
কাকু-কাকিমা শশব্যস্ত, সত্যিই তো, কতক্ষণ ধরে একটানা গেয়েই যাচ্ছে মেয়েটা!
আসলে কিন্তু তার মনে পড়ে গেছে সেদিনের কথা। নিজের মনে এই গানটাই গাইছিল সে। পাজি দাদাটা এসে খানিক শুনে হাততালি দিল, “আমরা সব খোকারা কেমন নৌকা চড়ে মাছ ধরতে যাব, কী মজা!”
সেও হারবে নাকি? সতেজে উত্তর দেয়, “আমিও যাব, মাছ ধরতে।”
দুষ্টু হেসে দাদা বলে, “তুই যাবি শ্বশুরবাড়ি, পালকি চড়ে। হুলোবেড়াল পাহারা দিয়ে নিয়ে যাবে। নিজেই তো গান করিস, ‘খুকু যাবে শ্বশুরবাড়ি, সঙ্গে যাবে কে, বাড়িতে আছে হুলোবেড়াল, কোমর বেঁধেছে!’, গাস না? তাহলে?”
সে উত্তর দিতে পারেনি। এই গানটাই তো সে গায়, দাদা তো মিথ্যে বলেনি? কেমন এক আশঙ্কার ছায়া ঘনিয়ে আসছে। ছোট্টো বুকটা উথালপাথাল। দাদা যা বলছে, সত্যিই কি তাই হবে? বিয়ে হয়ে সে চলে যাবে সে কোন অচিনদেশে?
মনে পড়ে যাচ্ছে, হি হি করে হাসছে দাদা, “তুই তো আর এ বাড়িতে থাকবি না, আমরাই থাকব, আমরাই মাছ খাব।”
ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলেছিল সেদিন।
কাকু-কাকিমা এখন মা-বাবার সঙ্গে গল্পে মত্ত। তার দিকে আর কেউ খুব একটা নজর করছে না। সে গুটিগুটি পায়ে নিজের ঘরে চলে আসে। তার ছোট্ট বুকে তুফান উঠছে। তার হদিশ কেই বা রাখে?
এভাবেই আস্তে আস্তে বড় হয় সে। নিজেই এখন অনেক কিছু বুঝতে পারে।দেখে, ছড়ার গানে খুকুদের বিয়ে হচ্ছে, রাঙা মাথায় চিরুনি দিয়ে তারা লজ্জায় চুপটি করে বসে অপেক্ষায় আছে, কখন বর এসে তাকে নিয়ে যাবে! ‘ওরে ভোঁদড় ফিরে চা, খোকার নাচন দেখে যা’ – এখানে খোকাই আনন্দে নাচে, খুকু নয়। ‘ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি’ এসে শুধু খোকার চোখেই ঘুম দিয়ে যায়। খুকুকে তাহলে কে ঘুম পাড়াবে ? নাকি তার ঘুমের দরকার নেই? খুকুর জন্যে রাখা আছে শুধুই কাজ আর কাজ! মনের মধ্যে ভিড় করে আসছে ছোটোবেলায় পড়া নিজের ছড়ার বইগুলো, সঙ্গে কী সুন্দর সব ছবি।
“আকাশ ঘিরে মেঘ করেছে
সূয্যি গেছে পাটে।
খুকু গেল জল আনতে
পদ্মদীঘির ঘাটে।
পদ্মদীঘির কালো জলে
হরেকরকম ফুল।
হাঁটুর নিচে দুলছে খুকুর
গোছা ভরা চুল।
বৃষ্টি এলে ভিজবে খুকু
চুল শুকানো ভার
জল আনতে খুকুমণি
যায় না যেন আর!”
বইয়ের ছবিটা জলরঙে। আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে আছে। পদ্ম-ফোটা দীঘির জলে নেমেছে একটা ছোট্ট, মিষ্টি মেয়ে, হাতে জল ভরার কলসি।মেঘেরই মত কালো চুল তার পিঠ ছাপিয়ে মাটি ছুঁয়েছে। বড্ড প্রিয় ছবি ছিল এটা। বইটা খুলে দেখছে একমনে। ভালোলাগাটা ঠিক যেন আর আগের মত নেই। গলার কাছে কী একটা কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে! খুকুর কালো চুল হাঁটুর নিচে না নামলেই বা কী এসে যেত? বরং তার মত ববকাট চুল থাকলে তো বৃষ্টিতে নিশ্চিন্তে ভিজতে পারত? তারপর ধরো, খুকু দীঘিতে যায় শুধুই জল আনতে। কেন সে মাছ ধরতে যায় না? কে তাকে বারণ করল? খোকারাই শুধু মাছ ধরতে যাবে? আর মায়েরা খোকাদের ফেরার পথ চেয়ে থাকবে? তাহলে খুকুর জন্যে কে অপেক্ষা করে? কেউ কি আদৌ করে?
মা ঘরে এসেছে, রাতের খাবার খেতে ডাকছে। সে মুখ তোলে, চুপচাপ টেবিলে এসে বসে।
কিছু একটা ছন্দপতন, কেউ না বুঝলেও মায়ের চোখ এড়ায় না।
বেশ কিছুদিন কাটে। রেডিওতে অনুরোধের আসরে আজ জপমালা ঘোষের রেকর্ড বাজছে।
“আয়রে আয় ছেলের পাল, মাছ ধরতে যাই আয়রে আয়
মাছের কাঁটা পায়ে পায়ে ফুটেছে, দোলায় চেপে যাই
দোলায় আছে ছ’পণ কড়ি, গুনতে গুনতে যাই
আয়রে আয় ছেলের পাল …”
নিজের অজান্তেই তার হাত মুঠো হয়ে আসে। ছড়া ডাক পাঠাচ্ছে ছেলের দলকে, বাইরের পৃথিবীর ডাক। বাধা তুচ্ছ করে এগিয়ে যাবার ডাক।
পরক্ষণেই গানের কথা বদলে গেছে,
“বড় শাখাটি ছোট শাখাটি ঝামর ঝমর করে,
তিন কড়ার খয়ের কিনে দুগ্গা কেন জ্বলে?”
ও মা, সানাই বেজে উঠল গানের মধ্যে!
“আজ দুগ্গার অধিবাস, কাল দুগ্গার বিয়ে
তিন মিনসে ন্যাড়া ফকির কোমর বেঁধেছে”
এই প্রথম সে আবছা আবছা বুঝতে পারে, গানের ছড়াগুলো খুব সচেতন ভাবে খোকা আর খুকুর দুটো আলাদা ছবি এঁকে দিচ্ছে। সেটা তার পছন্দ হচ্ছে না। অতিপ্রিয় ছড়ার গান আকর্ষণ হারাচ্ছে। ‘লিঙ্গনির্মাণ’ কথাটা জানতে তখনো তার ঢের দেরি।
মায়ের কাছে গিয়ে কেঁদে পড়ে, “আমি আর ছড়ার গান গাইব না।”
“কী হল রে?” মা শুধোন।
“সব গানে শুধু খুকুমণির বিয়ে আর বিয়ে! বিয়ে করতে চাই না আমি!”
পাশ থেকে দাদা ফুট কাটে, “ইঃ, বিয়ে করবে না, ছিঁচকাঁদুনির চোখে একেবারে ‘বিষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর, নদেয় এল বান’! তাহলে তো আর কথাই নেই, ‘শিবঠাকুরের বিয়ে হবে তিনকন্যে দান। এক কন্যে রাঁধেন বাড়েন এক কন্যে খান, এক কন্যে রাগ করে বাপের বাড়ি যান’। তা তুই কোন কন্যে, বল দেখি?”
মা এবার কড়া চোখে দাদার দিকে তাকিয়েছে। দাদা পগার পার।
“আচ্ছা, ও গানগুলো তোর গেয়ে কাজ নেই। চল, আমরা বরং ‘ছোট্ট পাখি চন্দনা’ গানটা শুনি।
রেকর্ড প্লেয়ারে বাজে আলপনার গলা, “একটি শিসে জাগিয়ে গেল, লাগছে তাও মন্দ না।”
সনৎ সিংহ শোনান, “সরস্বতী বিদ্যেবতী, তোমায় দিলাম খোলা চিঠি…”
রানু মুখোপাধ্যায় কচি গলায় গেয়ে ওঠে, “শোন শোন শোন মজার কথা ভাই…”
অমল মুখোপাধ্যায়ের গানে রাজপুত্তুর যায় “টগবগ টগবগ টগবগ টগবগ ঘোড়া ছুটিয়ে, ঝিলমিল ঝিলমিল ঝিলমিল ঝিলমিল নিশান উড়িয়ে।” রাজকন্যা পথ চেয়ে থাকে কবে আসবে রাজপুত্তুর, দৈত্য দানব মেরে ফেলে তাকে উদ্ধার করবে! এ গান শুনে সে বিরক্ত হয়ে রেডিও বন্ধ করে দেয়।
এমনভাবেই কান্না হাসির দোল দোলানো সময় বয়ে যায় । শিশু থেকে বালিকা, বালিকা থেকে কিশোরী হয় মেয়ে। বড় হয়ে গেছে সে, কিন্তু ছড়ার গান শোনায় এতটুকু কমতি পড়েনি। হঠাৎ একদিন কান খাড়া, শুনছে –
“বুলবুল পাখি ময়না টিয়ে,
আয় না যা না গান শুনিয়ে
দূর দূর বনের গান,
নীল নীল নদীর গান
দুধভাত দেব সন্দেশ মাখিয়ে।”
ও মা, এ যে একদম অন্যরকমের কথা, অন্যগ্রহের সুর! তার কান খাড়া, শরীর রোমাঞ্চিত, রূপকথার গান চেতনাকে অধিকার করে নিচ্ছে!
“ঝিলমিল ঝিলমিল ঝর্ণা যেথায়
কুলকুল কুলকুল রোজ বয়ে যায়
ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী গল্প শোনায়
রাজার কুমার পক্ষীরাজ চড়ে যায়।
ভোরবেলা পাখনা মেলে দিয়ে তোরা,
এলি কি বল না সেই দেশ বেড়িয়ে?”
সেই প্রথম সলিল চৌধুরীর গান জাদু করল তাকে।
সলিলই দেখিয়ে দিলেন, ছোট্ট খুকুরা কত্ত কিছু পারে! গান শেখাতে পারে, পড়া ধরতে পারে!
“ও সোনা ব্যাঙ, ও কোলা ব্যাঙ
সারারাত হেঁড়ে গলায় ডাকিস গ্যাঙর গ্যাঙ।
তোরা কি গলা সাধিসনি
তোরা কি নাড়া বাঁধিসনি
আয় চলে আয় আমার কাছে
শিখিয়ে দেব গান।”
গানের দিদিমণি সরগম শেখাচ্ছে,
“বলো তো বল না
পাপা পাপা মাপা ধাপা রেগা মামামা গা”
সোনা ব্যাঙ বাধ্য ছাত্রের মতোই হেঁড়ে গলায় তা গেয়ে শুনিয়ে দিল। দিদিমণি কী খুশি!
“ভেরি গুড!”
খুশিতে, আনন্দে হাততালি দিতে ইচ্ছে করছে। “মা, মা, মা…” এক্ষুনি, এক্ষুনি মাকে বলতে হবে, পছন্দের গানগুলি সে পেয়ে গেছে। আর কোনো দুঃখ নেই, হতাশা নেই। সোনার কাঠি ছুঁইয়ে দিয়েছেন তিনি দুনিয়ার সব খুকুদের প্রাণে। যমুনাবতীকে আর কেউ বলতে পারবে না, “যমুনা খেলাধূলা সারা এবার মাথায় সিঁদুর দাও!” সলিলের গানে খুকুরা শিখছে, শেখাচ্ছে। অন্তরা চৌধুরীর কচি গলায় ঝরে পড়ছে বাঁধনভাঙা আনন্দ, আর একটু একটু দুষ্টুমি –
“খুকুমণি গো সোনা
বলো না বলো না
এ দুনিয়ায় কিসে
সবার চেয়ে তেতো?”
“উচ্ছে আর নিম তেতো
চিরতা আর কুইনিন
তার চেয়ে তেতো মা
ভূগোল পরীক্ষার দিন…”
মা আর মেয়ে একসঙ্গে হেসে ওঠে। মেঘ কেটে গিয়ে আকাশ ভরে আলোয়, গানে।
ইঞ্জিনিয়ার, পেশায় কনসালট্যান্ট। শাস্ত্রীয় সংগীত নিয়ে বহুদিনের চর্চা। অল ইন্ডিয়া রেডিওর ‘এ’ গ্রেড শিল্পী। লেখালেখির অভ্যাসও ছোট্টবেলা থেকে, বাবা-মা’র উৎসাহে। বর্তমানে কর্মসূত্রে নিউ জার্সির পারসিপেনি শহরে বসবাস। তবে বিদেশে বসেও সাহিত্যচর্চা চলে জোর কদমে। নিউ জার্সি থেকে প্রকাশিত ‘অভিব্যক্তি’ ও ‘অবসর’ পত্রিকার সম্পাদক।
‘ও কলকাতা’ ই-ম্যাগাজিনে ধারাবাহিক ‘সুরের গুরু’ প্রকাশিত হচ্ছে রাগসংগীতের শিল্পীদের নিয়ে। এছাড়া ‘বাংলালাইভ ডট কম’, ‘বাতায়ন’, ‘পরবাস’, ‘উদ্ভাস’, ‘প্রবাসবন্ধু’, টেকটাচটক’, ‘গুরুচণ্ডা৯’, ‘ইত্যাদি ই-ম্যাগাজিনের নিয়মিত লেখিকা।