শিশুতোষ গল্প: জলধি ও মৌটুসীর আরো ছুটি চাই । মাহবুব কাদেরী
আজ তোমাদের জলধি ও মৌটুসীর গল্প বলবো। জলধির বয়স ১২, পড়ে ৭ম শ্রেণীতে। জলধি গান শুনতে, গল্প করতে আর কার্টুন দেখতে পছন্দ করে, ভালোবাসে সাজতে ও বেড়াতেও। ও আঁকতেও পারে ভালো। জলধি নামের অর্থ জানো তো? জলধি অর্থ বিশাল জলধারা, সাগর যেমন। জলধির মনটাও সাগরের মতোই বড়ো। ও সবাইকে ভালোবাসে আর সবার সঙ্গে সহজেই বন্ধুত্ব করতে পারে।
মৌটুসী জলধির একমাত্র ছোটবোন। ওর বয়স ৮, পরে ৩য় শ্রেণীতে। মৌটুসীর প্রিয় কাজ সাজগোজ আর প্রিয় খাবার গরুর মাংস। খাবারে গরুর মাংস না থাকলে ওর চলেই না। মৌটুসী ভালো নাচতে পারে আর লেখাপড়ায়ও সে খুবই ভালো। আর দুস্টুমীতেও তার কোনো তুলনা নেই। মৌটুসী ঠিক পাখির মতোই চঞ্চল।
আজ শনিবার, ছুটির দিন। স্কুল যেতে হবেনা জলধি ও মৌটুসীর। দুবোন দেরি করে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে টিভির সামনে বসে কার্টুন দেখছে। বাবা–মারও কাজ নেই আজ। জলধি মৌটুসীর বড় সাধ ছুটির দিনে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার। বাবা অবশ্য অনেক জায়গায়ই নিয়ে গিয়েছে তাদের। ঘুরতে তাদের বেশ ভালো লাগে বিশেষ করে বাবার বন্ধু ও তাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ঘুরলে খুবই মজা হয়।
আজকে অবশ্য ঘুরতে যাওয়া সম্ভব নয়। বিকেলে ওদের নাচ শিখতে যাওয়ার কথা। সন্ধ্যায় অঙ্কনের আপু আসবেন। মা বলে ছুটির দিন ছাড়া এসব শেখার সময় নাই। অন্যদিন অন্য পড়া থাকে।
জলধি ও মৌটুসী বড় লক্ষী মেয়ে। ওরা বাবা–মার্ কথা শোনে, নাচের ক্লাসে যায়, আঁকতে শেখে, গণিতের স্যারের কাছে অংক করে। তবে ওদের প্রায়ই ইচ্ছে করে ঘুরতে যেতে দূরে কোথাও। হয়তো দাদুবাড়িতে। দাদুবাড়ির ছোট্ট সুইমিংপুলে ছোটচাচুর মেয়ে আয়েন্কার সঙ্গে সাঁতার কাটা কি যে মজার!
জলধির বন্ধুদের কেউ কেউ কক্সবাজার গিয়েছে, এমনকি সেন্ট মার্টিনেও। ওদের কাছ থেকে সাগরের গল্প শুনে জলধি কল্পনায় সাগরের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। ”ও মা, কি বিশাল ঢেউ সাগরের, আর পানি কি ঠান্ডা!”
জলধির খুব ইচ্ছে আরো দূরে বেড়াতে যাওয়ার। জলধির বড় চাচু থাকেন বিদেশে, সুইজারল্যান্ডে। চাচু মাঝে মাঝে স্কাইপিতে কথা বলেন, জলধির কথামতো বাইরে পড়ে থাকা বরফের ছবি দেখান।
বরফ জলধির খুবই পছন্দ। তার বড় ইচ্ছে করে বরফ দেখতে চাচুর কাছে চলে যেতে কিন্তু বাবা তো নিয়ে যায় না, বলে অনেক টাকা লাগবে। তা, সেকথা জলধিও জানে আর তাই সে তার মাটির ব্যাংকে টাকা জমায়। এপর্যন্ত প্রায় ১২০০ টাকা জমিয়ে ফেলেছে সে। সুযোগ পেলেই বাবা বা চাচুকে প্রশ্ন করে এই টাকা দিয়ে প্লেনের টিকেট হবে কিনা।
বড়চাচুর ছেলে নভেল, বিয়ে করেছে সোনালী চুলের ভিনদেশি মেয়ে সেলিয়াকে। নভেল ভাইয়ার মেয়ে জুলি ও ছেলে রিওকে স্কাইপিতে দেখেও জলধির সাধ মেটে না। জলধি ও মৌটুসীর খুব ইচ্ছে হয় কাছে গিয়ে ওদের আদর করার।
কিন্তু তা কি আর হবে ? বাবা–মা দুজনেরই যত কাজ! ছুটির দিনেও বাবার গান শেখার ক্লাস থাকে আর মারও ফোন আসে অফিসের কাজের ব্যাপারে। জলধির মনে হয় আসলে বাবা–মারও ছুটি দরকার। দূরে কোথাও, কয়েকদিনের জন্য হলেও। যেখানে কাজ নেই, ফোন নেই, শুধু জলধি, মৌটুসী আর বাবা–মা। ভেবে ভেবে তার বড় ভালো লাগে।
ভারী সুন্দর একটা জায়গায় যাবে তারা। সামনে সাগর, পাশে পাহাড়। নারকেল গাছের সারি, মাথার উপর গাংচিল উড়ছে। বাবা–মা আর ওরা দুজন হাত ধরাধরি করে সূর্যাস্ত দেখছে। বাতাসে চুল উড়ে যাচ্ছে জলধির, মৌটুসী খিলখিল করে হাসছে।
“জলধি, কি করছিলে?” মা প্রশ্ন করেন বাজার নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে। “কিছু না মা, ভাবছিলাম আমরা কি আবার কোথাও ছুটিতে যেতে পারি না”, জলধি হাসিমুখে বলে।