বৃক্ষ হ্রদ ও পাহাড়
বালুকা ও নুড়িপাথরের সয়লাবে নিমগ্ন হ্রদের পাড়ে
কটনউডের দীঘল বৃক্ষ এক— প্রেক্ষাপটে তার বাসন্তী পাহাড়,
সনোরা ডেজার্টের প্রান্তিক গুহাতে আদিবাসীদের হাড়ে
বিভ্রান্ত পর্যটক খুঁজে জীবাষ্ম— নাবাহো চিত্রকরের আঁকা ষাড়।
পত্রালিতে হাওয়ার কম্পন ছুঁয়ে নওল হয়েছে তরুবর
আমি তার অটাম সিগ্ধ সোনালি সহবতে বসি ছায়াতলে,
উড়ে যাওয়ার অভিলাস— উত্তর মেরুতে বাঁধতে চায় ঘর
পরিযায়ী হতে চায় বৃক্ষপুত্র হাওয়াই মেঘের বিবাগি ছলে।
হ্রদটিও পরিকল্পনা করছে— বিমুখ মাছের অনুরাগীরা
জলতলে গড়ে তুলবে সম্পূর্ণ সাবমার্জ এক নগর,
স্কুবা ডাইভিংয়ের গিয়ার পরে ডুবুরিরা
তালাশ করবে নাবাহো রাজকুমারের রৌপ্যবাসর।
প্রেক্ষাপটে সটান দাঁড়িয়ে মাউন্ট সান হোয়ান
টিলা বেয়ে উঠে পড়ি তার শিলাদন্ত মিনারে,
জগদ্দল পাথরে ছড়ানো ক্যকটাস অফুরান
বলে—আঁকো আমাকে তুমি
তুলির নিশিডাকে নিয়ে যাও রঙের অভিসারে।
আরো পড়ুন: আফ্রিকার তরুণ প্রজন্মের তিনটি নির্বাচিত কবিতা । ভাষান্তর: মঈনুস সুলতান
মরম জোসনা
কাঠের সিঁড়িতে শুনি তোমার পায়ের মৃদু আওয়াজ
আমার ভদ্রাসনে নেই কোন বাদ্যযন্ত্র
কিন্তু কে যেন বাজায় আমার মরম প্রপাতে অলীক এস্রাজ,
স্টাডিতে আসো তুমি— সন্ধ্যা হলে খানিক আনমনা
আছো পরবাসে বহুদূরে তুষার ঝরা বনানীর শহরে
মূর্ত হয়ে পরম শিশিরে বহুকালের বিমূর্ত আরাধনা।
বই ঘাঁটো,বসে বসে তুমি পৃষ্টা উল্টাও নিরিবিলি
নিবিড় চোখে দেখো ভ্যানঘগের সূর্যমায়াময় তসবির,
মোমদানে বাতি জ্বালো, নিমিষে ম্রিয়মান হয় আমার অন্তর্গত তিমির।
উঠে দাড়াও,ধ্বনি হয় রেশমে নিক্কনে
স্টিরিওতে বাজাও হংসধ্বনি রাগে ব্যাকুল বন্দিশ,
এসেছো, ভালোই হয়েছে, তোমার কথাই তো ভাবছি অহর্নিশ।
অশরীরি উপস্থিতির অবাস্তব মীড়ে বাজছে যে মূর্চ্চনা
জানি আমি আদতে তা ইল্যুশন,
কত জনম সূর্যদুপুর.. নিশিরাতের রজনীগন্ধায় করি সহজিয়া তর্পণ।
তোমাকে পাবো স্পর্শ শিহরে এতোটা করি না প্রত্যাশা আর,
তুমি যে আছো মরম জোছনায় —এইতো যথেষ্ট আমার।
আরো পড়ুন: মঈনুস সুলতানের কবিতা
জোহানেসবার্গে ফেরা
শুকতারার শিশির ছোঁয়া হাওয়ায় ঝরে আজ
ম্যাপোল বিরিক্ষের রঙীন পত্রালী,
দেখি— দাঁড়িয়ে আছি কিলিমানজারোর পাদদেশে
ছিলে না তুমি শৈশবে—ছুঁইনি শিষ তোমার তারুণ্যে
ভাটি বেলায় এসে—
গোলাভরে তুলি যে শস্য রূপশালী;
শীতলপাটিতে ছড়ানো তোমার তন্দুলে একঝাঁক
পর্যটকের খোয়াব হয়ে বসে বালুচরের চক্রবাক,
ফুটে মানচিত্র— কাঁপে কাঁটা উত্তরে দক্ষিণে
রূপালি ডায়েলের কম্পাস—
সাভানার ঘাসের ভেতর ধাবমান ওয়াইল্ডাবিস্ট
ছুটে বর্শা হাতে মাসাই শিকারী,
দিগন্তে ডিগবাজি খায় ফিরোজা বর্ণের বুনোহাঁস;
তারি রেখা ধরে ত্রস্তে চলে আসি আরো দক্ষিণে
মেঘের কাঁথা সেলাই করে উড়ে যায় মরাল,
জোহানেসবার্গের লাল ইট আর রঙজ্বলা তৃণে
পালকের সুচে আসমানে নকশা হয় সকাল,
মেঘে লেগে থাকা চিমনির ধোয়াময় রুমালে
মর্গে চোখ খুলে ঘুমায় যে যুবতী,
তার দেহ বাঙময় শুধু হয় গোয়েন্দার সুরতহালে!
নীড় নেই উড়াল ব্রীজের নিচে, নেই জোড়া ডিম
ট্রেনের ভেঁপুতে বাজে না ঘরে ফেরার আমন্ত্রণ
ছনের বাংলোর আঙিনায় ঘোড়ানিম,
বিরিক্ষের তলায় পেসেন্স খেলে এপ্রোন পরা নারী
এখানে আছে ক্লান্তি, স্কাইলাইটে সুরুজের তর্পণ,
ইস্পাতের উঁচু সিঁড়িতে
জুঁয়ের ঝরা বিষন্নতায় কারা করে অহেতুক রমণ?

জন্ম সিলেট জেলার ফুলবাড়ি গ্রামে। সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে কবিতা ও গল্প লিখছেন। হালফিল লিখেছেন কিছু ভ্রমণ-ভিত্তিক আলেখ্য। প্রাচীন মুদ্রা, সূচীশিল্প, পান্ডুলিপি, ফসিল ও পুরানো দিনের মানচিত্র সংগ্রহের নেশা আছে।