শারদ অর্ঘ্য কবিতা: লাভ লাফাঙ্গা । শামীম আজাদ
শোনো, আর যদি
কোন ভালবাসা–বাসি দেখি
ট্রেনে-টয়লেটে, বাসে-বার্বাকিউ’তে
সুইনডোনে অথবা সিলেটে
আমি কিন্তু একদম থেমে যাবো
যদি দেখিদুই জোড়া উদগ্র উদ্গ্রীব
জল ছিঁড়ে উঠে আসছে
উষ্টা খেয়ে পড়ে যাচ্ছে
পরস্পরের জানুর উপর
আমি ভাইরাস হয়ে যাবো
দেখা পাবো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ঢুলছে
নর ও নারী, মহুয়া ও মদ ছাড়াই
দেহত্বক লেগে যাচ্ছে আঠাহীন আঠায়
যদি কদাচিৎ এমন এক প্রেম
প্রণয় হয়ে যায়
আমি কিমট্ এর ছবির মতন
অলীক হয়ে যাবো
ঐ ঘটমান বর্তমান দেখলে
যে কোন কবিই কিন্তু
লাজ লজ্জাহীন দৌড়ে
খবরটা ছড়িয়ে দেবে
ব্রিকলেইন থেকে বরিশাল।
যেদিন আমি সত্যি ভালোবাসা দেখবো
হিম ও হাঙরের ভয় অগ্রায্য করে
এ্যামব্যাঙ্কমেন্ট ব্রীজের উপর
পা ঝুলিয়ে বসে থাকবো সারা রাত।
চলন্ত গাড়ির জানালা থেকে
তেমন যুক্ততা দেখি যদি কোনদিন-
ফ্ল্যাটে ফিরে এ চোখ আর ধোব না কিছুতেই
কাঠি-ঠেকা দিয়ে জাগা রবো
আর মনে পেতে দেবো
শুশ্রুষার সবগুলো ঠোঁট।
রাস্তায় ঘোরাফেরা করা লাভ-লাফাঙ্গাদের
ফুঁ দিয়ে দিয়ে দোয়া করে করে
পৌঁছে দেবো পর্তুগীজ ক্যাফের
ঐ পাগলা গায়কের নিকটে,
যে আজ সাতাশ বছর ধরে পড়ে আছে
একই প্রেমহীন গানের ভেতর।
সকালেই সে ছবি নিয়ে ছুটে যাবো
বেথনাল্গ্রীন বাংলা পাঠাগারে
তাঁর কাব্যগ্রন্থ খুলে দেখাবো সবারে
ঐ কচ আর এ দেবযানীরে।
উচ্চস্বরে জিজ্ঞাসিবো
– একবার চোখ বন্ধ রেখে
এই চঞ্চল সিকামোরের নিচে চুমু রেখে ভাবো
ভিন্ন কোন রঙ তুমি দেখতে পাও কিনা
মনে হয় কিনা তাহাদের আজ হয়েছে বয়স?
সত্তুর ও আশির দশকে বাংলাদেশে পেশাজীবি সময় কেটেছে তাঁর – সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’য় সাংবাদিকতা, বাংলাভাষা ও সাহিত্যে শিক্ষকতা, রেডিও ও টেলিভিশনে উপস্হাপনা এবং সেই সঙ্গে কবি ও লেখক হিসেবে নিরন্তর সাহিত সাধনায়। প্রায় তিন দশক বিলেতে আছেন। কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, নাটক, অনুবাদ, শিশুগ্রন্থ মিলিয়ে বিলেত ও বাংলাদেশে তাঁর বইয়ের সংখ্যা ত্রিশের বেশী।
২০১১ সালে বিশ্বখ্যাত এডিনবরা ফ্রিঞ্জ ফেস্টিভ্যালে প্রথম বাংলাদেশী কবি হিসেবে পরিবেশন করেছেন কবিতা ও গল্প। ১৯৯৭ সালে আমেরিকার বিখ্যাত সাময়িকী ‘দি নিউইয়র্কার’ এর বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কবিতার অনুবাদ। এদিকে তাঁর স্বপ্নলালিত ও উদ্ভাবিত ‘বিজয়ফুল’ এখন সারাবিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অমর করে রাখার জন্যে উঠেছে এক অনন্য কর্মসূচী।
উল্লখযোগ্য গ্রন্হ: হে যুবক তোমার ভবিষ্যত, মধ্যবিত্ত বদলে যাচ্ছে, দুই রমনীর মধ্য সময়, ওম, স্মৃতিকাব্য, বিলেতের স্ন্যাপশট, পকেট ভরা পাঁপড়ি, ১০০ প্রেম অপ্রেমের কবিতা, বুগ্লী দ্যা বার্গেন্ডী চিতা, এ্যা ভক্সাল কোরাস ও ব্রিটিশ বাংলাদেশী পোয়েট্রি।
বাংলাদেশের সম্মাননা: ১৯৯৫ দেশী ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইলে অন্যতম অবদানের জন্য বিচিত্রা এ্যাওয়ার্ড ফর ফ্যাশন জার্নালিজম, ২০১৬ বিদেশে বসবাস করে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সামগ্রিক অবদানের বাংলা একাডেমীর সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার।
বিলেতের সম্মাননা: ২০০৯ বাংলাদেশী হুজ হু এ্যাওয়ার্ড, ২০০১ সিভিক এওয়ার্ড সম্মাননা।