| 30 এপ্রিল 2024
Categories
গীতরঙ্গ

সুমেরিয় পুরানে মহাপ্লাবন

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

সুমেরিয় ধর্ম ছিল প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার প্রথম সাক্ষর সভ্যতা সুমেরের অধিবাসীগণ কর্তৃক আচরিত ও অনুসৃত ধর্ম। সুমেরিয়রা মনে করত, প্রাকৃতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পর্কিত সকল বিষয়ের জন্য দায়ী তাদের দেবদেবীরা

সুমেরিয়-রা বিশ্বাস করত যে, মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক মহাজাগতিক জন্মের মধ্যে দিয়ে। প্রথমে আদ্যকালীন জলরাশি নাম্মু জন্ম দিয়েছিলেন আন (আকাশ) ও কি-র (পৃথিবী)। তাঁদের সংগমের ফলে এনলিল নামে এক পুত্রের জন্ম হয়। এনলিল স্বর্গকে পৃথিবীর থেকে বিচ্ছিন্ন করেন এবং পৃথিবীকে নিজ রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেন। মনে করা হয়, আন ও নাম্মুর পুত্র এনকি হলেন মানবজাতির স্রষ্টা।

আধুনিক পণ্ডিতেরা সুমেরিয় মহাপ্লাবনের পুরাণকে আখ্যা দেন এরিদু জেনেসিস নামে। ১৮৯৩ সালে নিপপুর নগরের ধ্বংসস্তূপে আবিষ্কৃত হওয়া এই ফলক এখন অব্দি উদ্ধারকৃত সবচেয়ে পুরাতন মেসোপটেমিয় নিদর্শন। কেন্দ্রীয় চরিত্র সুরুপপাক নগরের যাজক রাজা জিশুদ্র। সুরুপপাক শব্দের অর্থ ‘দীর্ঘ দিনের জীবন’।


আরো পড়ুন: প্রাচীন ভারতের সুগন্ধশিল্প । রাধা কৃষ্ণমূর্তি


১৭৯২-১৭৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বিখ্যাত রাজা হাম্মুরাবির উত্থানের যুগ অব্দি এই ধর্মবিশ্বাসই প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। দেবতা আন, এনলিল, এনকি এবং নিনহুরসাগ পৃথিবী সৃষ্টি করেন। বসবাসযোগ্য পৃথিবীতে তৈরি করেন মানুষ এবং নানা ধরনের প্রাণী। প্রতিষ্ঠা করেন নগর ও বন্দর। প্রতিষ্ঠিত প্রথম নগরী এরিদু। কিন্তু মানুষ শীঘ্রই অপরাধ, অন্যায় আর কোলাহলে নোংরা করে তুললো পৃথিবী। শান্তি আর বিশ্রামের স্বার্থেই দেবতা এনলিল দুনিয়া থেকে কিছু মানুষ কমানোর ইচ্ছা করলেন। একের পর এক পাঠালেন খরা আর মহামারী। প্রতিবার জ্ঞানের দেবতা এনকি বাঁচিয়ে দেন। এনলিল এবার মহাপ্লাবনের পরিকল্পনা করলেন। তার আগেই অন্য দেবতাদের থেকে ওয়াদা নেওয়া হয়েছিল; কেউ কারো কাজে হস্তক্ষেপ করবে না। সুতরাং ভিন্ন পথে হাঁটলেন এনকি। সরাসরি মানুষকে না সাহায্য করে দেয়ালের আড়াল থেকে উপায় বাতলে দিলেন। অন্যপাশ থেকে শুনলো যাজক রাজা জিশুদ্র।

এনকির পরামর্শ মতো জিশুদ্র নৌকা বানালেন; Image Source: penn.museum

পরিকল্পনা অনুসারে একটা লম্বা নৌকা তৈরি করলো জিশুদ্র। তাতে উঠালো মানুষ আর পশুপাখি। যথা সময়ে প্লাবন এলো। সাত দিন সাত রাত ধরে অঝোর বৃষ্টি। তামাম পৃথিবী তলিয়ে গেল পানির নিচে। আকাশ শান্ত হলে জিশুদ্র নৌকা থেকে নেমে কোরবানি করলো সূর্যদেবতা উতু শামাশের উদ্দেশ্যে। আন আর এনলিল নিজেদের হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য অনুতপ্ত হলেন। মানবজাতি রক্ষার জন্য জিশুদ্রকে দেয়া হয় দিলমুন নামের স্বর্গে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত