Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,আলঝাইমার

ধারাবাহিক: চিন্তামণির দরবার (পর্ব-৯) । জয়তী রায় মুনিয়া

Reading Time: 3 minutes

মস্তিষ্কের ভুলভুলাইয়া, মানব জীবনের অভিশাপ

প্রথম ভাগ

:নামটা কিছুতেই মনে করতে পারছি না!
: কাল যেন কোথায় যেতে হবে? ফোনে সেভ করা আছে। দেখে নিচ্ছি।
: ফোন নম্বর। দূর। ওতো সব সেভ করা।
: বারবার জিনিস হারিয়ে ফেলা।
হাল্কা সুরে বলা কথাগুলি ইঙ্গিত দিচ্ছে একটা ভয়ংকর অসুখের। আলঝাইমার। মধ্য বয়স নিয়ে লেখা এই পর্বে এসে বলব, নিজেকে অবহেলা করার চূড়ান্ত ফল কি হতে পারে! আজকাল সবাই সব জানে। একটা বোতাম টিপলে হাজির হচ্ছে তথ্য। আলাদিনের দৈত্য কাহিনীর আধুনিক রূপ হল স্মার্টফোন। শুধু জানে না, ২৪ ঘণ্টা সময় ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন, তার মধ্যে লুকিয়ে আছে সুখে থাকা অথবা অসুখে থাকার উপায়।কিছু অসুখ ঘটে যায়। আমাদের হাতে থাকে না। আবার কিছু অসুখ আমাদের ভুল জীবন শৈলীর ফল হতে সৃষ্টি। যার মধ্যে একটি হল আয়ালজাইমার। অথবা ভুলে যাওয়ার অসুখ। সম্প্রতি Alzheimer’s Association International conference 2020 এর একটি গবেষণায় উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

পড়াশুনো এবং খারাপ জীবন যাপনের ধরণের জন্যই মানুষ পরবর্তী জীবনে মানুষ অ্যালজাইমারের মত রোগের শিকার হতে পারে। মধ্য বয়স বলছি বটে, তবে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা অল্প বয়স থেকেও শুরু হতে পারে। যে যে রোগের ক্ষেত্রে জিন ঘটিত কারণ উল্লেখ করা হয়, ভুলে যাওয়া তার মধ্যে একটি। এছাড়া, স্ট্রোক হলে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস হলে মস্তিষ্ক দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আমি সেটার মধ্যে যাচ্ছি না। আজকের আলোচনায় থাকবে, পরিবেশ ও জীবন শৈলীর ভুল পদক্ষেপ কিভাবে মানুষকে ধীরে ধীরে অন্ধকারে ঠেলে দিতে থাকে।

একদিনে ২৪ ঘণ্টা। কম নয়। ঘুমিয়ে থাকার সময়েও আমাদের মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তি সচল থাকে। চিন্তার প্রয়োগ মানুষের জীবনের একটা বড় অস্ত্র। এর অপপ্রয়োগ বহু সময় ডেকে আনতে পারে বিপর্যয়। চিন্তা অশ্বের লাগাম ছোট থেকে কষে ধরে রাখতে হবে। মন এবং মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে তাকে শান্ত ভাবে বুঝিয়ে ফেলা প্রয়োজন। মন আশকারা পেলে মাথায় চড়ে বসে। তুচ্ছ কারণেও বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারে বারবার। তখন সে পারিপার্শিক সব ভুলে যেতে চায়। বা , ইচ্ছে করে মনে রাখতে চায় না। ক্রমাগত করতে করতে এটা অভ্যাসে পরিণত হয়। সুতরাং, দিনের উল্টোপাল্টা চিন্তায় লাগাম পরিয়ে দিতে হবে।


আরো পড়ুন: চিন্তামণির দরবার (পর্ব-৮) । জয়তী রায় মুনিয়া


সময়ের সঠিক ব্যবহার না করতে পারলে মেজাজ খারাপ হয়। স্কুলে পড়াকালীন অভ্যাস তৈরি করে দিতে হয়। বহু সময়, স্কুলে খাতা বই ফেলে রেখে আসা অথবা বাড়িতে টিফিন ভুলে যাওয়ার প্রবণতাকে কেউ তেমন গুরুত্ব দেয় না। ধীরে ধীরে এই অভ্যাস পরিণত হয় স্বভাবে। বড় হয়েও ভুল হতে থাকে রোজ। চাবির গোছা, অফিসের ফাইল আরো নানান কিছু। রোজ ঠিক মত সময় জিনিস পত্র গুছিয়ে রাখতে পারলে, আপনা হতেই মস্তিষ্ক ইঙ্গিত দেবে।

নিজের চিন্তা শক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে মানুষ রাগী স্বভাবের হয়ে ওঠে। বিশেষ করে যদি হতাশা আসে। চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে থাকে যদি অনেক ব্যবধান , মনো সামাজিক জগতে তখন প্রবল আলোড়ন ওঠে। সমস্ত কিছুতেই অবসাদ। প্রাপ্য ছিল অথচ পাওয়া হল না… নিরন্তর এই চিন্তা, মস্তিষ্কের বায়োলজিক্যাল ক্লকের কাজ ব্যাহত করে। এই সময় লম্বা শ্বাস খুব কাজে লাগে। লম্বা করে শ্বাস নিয়ে ধরে রাখতে হয়। সেই সঙ্গে নিরন্তর নিজেকে বোঝাতে হবে। জীবনের চাইতে মূল্যবান আর কিছুই নেই।

অসম্ভব প্রতিশ্রুতি কাউকে দেওয়া যাবে না। সকলকে খুশি রাখতে গিয়ে নিজের দিকে সবথেকে কম সময় দেয় মানুষ। দিনের শেষে বাড়তে থাকে উদ্বেগ। সব কিছু তালগোল পাকিয়ে যায়। রোজকার অত্যধিক ভাবনা চিন্তা থেকে ভুলে যাওয়ার সিনড্রোম তৈরি হয়। সুতরাং, সকালে উঠেই নিজেকে শুনিয়ে দিন, বাঁচতে হবে নিজের জন্য।

ইনফরমেশন ওভার লোড স্মৃতি ভ্রংশের একটা কারণ।

অনেক কিছু একসঙ্গে মনে রাখতে গিয়ে কিছুই মনে থাকছে না। এ ক্ষেত্রে ফোনে নয়, কাগজে টুকে রাখুন কাজগুলি। আঙুল আর পেন্সিলের যুগল বন্দী মস্তিষ্কের কোষ উজ্জীবিত করে। অ্যালঝাইমার বিপদ ঘণ্টা বেজে উঠতে পারে যে কোনো বয়স থেকে। অযথা হোয়াটসঅ্যাপ দেখা বন্ধ করতে হবে। গ্রুপ চ্যাট দরকারি না হলে একেবারেই না। মনসংযোগ নষ্ট করে, এমন কাজ না করায় মঙ্গল। যে কোনো একটা বাদ্য যন্ত্র বাজান। না হলে, হারমোনিয়ামের রিড চেপে রাখুন। স্মার্ট ফোন দিনের অনেকগুলি ঘণ্টা কেড়ে নিয়ে এলোমেলো করে দেয় রুটিন। প্রয়োজন না হলে দরকার নেই। তার চেয়ে গান চালিয়ে নেচে নিতে পারেন একটু।

কালবৈশাখী হঠাৎ আসে না। সংকেত আগে থেকে দিতে থাকে। নিজের দিকে তাকান। সকলের দিকে দৃষ্টি দিতে গিয়ে নিজেকে ভুলে যাচ্ছি না তো!

পরিশেষে বলি, ২৪ ঘণ্টা কাজে লাগাতে হবে। রাতে শুতে যাবার আগেও, এমন একটা বই পড়ে শুয়ে পড়ুন, যা চিন্তা সুন্দর করতে সাহায্য করবে। ভুলে যাওয়া রোগ মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। একে অপরকে সাহায্য করুন। দেখা হলে প্রশ্ন করুন, দুদিন আগে কি কি রান্না হয়েছিল? নানা রকম খেলা চলত আগে। সেই খেলা গুলো নিয়ে আসুন। এই খেলা একটা থেরাপি। আড্ডা য় গসিপ না করে এই সমস্ত খেলা খেলুন। ভুলে যাওয়া নয়,মনে রেখে এগিয়ে চলি। হাতে হাত রেখে,এক সাথে পথ চলি।

 

দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

পরিবারে অ্যালঝাইমার থাকলে এখন থেকেই সাবধান হতে হবে।
ব্রেন অ্যাকটিভ রাখুন। মস্তিষ্ক কে সবসময় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি রাখুন। মাইন্ড কুলনেস থেরাপি অথবা টক থেরাপি কাজ দেয় খুব বেশি।

সতর্ক থাকতে হবে, নিজেকে রক্ষা করতে হবে।

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>