উত্তর ভারতীয়দের চোখে বাঙালি
বাংলার মানুষ মনে করে, বাংলার অভিমান-অহঙ্কার, দুঃখ-সুখ, চলা-বলা – সবই একটু আলাদা। কথাটা বলেই অবশ্য ভয় করছে। এই সেদিন, যখন জাতীয় সংহতি কথাটা একটু একটু কানে আসছে, তখন শব্দ দুটি ছিল উদারতায় আর বৈরাগ্যে বৃহত্তরের স্বপ্নমাখা। কিন্তু আজ যদি বলি “বাংলার বায়ু বাংলার জল,” কিংবা আরও প্রবলতর উচ্ছ্বাসে “বঙ্গ আমার জননী আমার” – তখন ভয় করে – কথাটা জাতীয় সংহতির পরিপন্থী নয় তো? বাংলার অভিমান, সে মুগ্ধা জননীর মতো সন্তানকে অসীম ক্ষমায় শুধুই বাঙালি করে রেখেছে। বাংলার দুঃখ, তার সন্তানদের তাদের মতো করে, তাদের অনুকূলে, বোঝাবার চেষ্টা করে নি, অন্যতর প্রদেশের লোকেরা। “প্রদেশ” বললাম এই কারণে যে আজকাল ভারতবর্ষ বলতে দিল্লি বোঝায়; কিন্তু ইতিহাস জানে ভারতবর্ষ কিংবা দিল্লি কোনোকালে বাংলাদেশের মাতাও নয়, বিমাতাও নয়। বর্তমান লেখকের ক্ষুদ্র দৃষ্টিতে ভারতবর্ষের অবস্থা প্রায় আলেকজান্ডারের আক্রমণের সমসাময়িক অবস্থার মতোই লাগে, কাজেই “প্রদেশ” কথাটির ব্যবহার করা এমন কিছু দুঃসাহসী নয় নিশ্চয়ই, যেমন দুঃসাহসী নয় “বিকেন্দ্রিক” কথাটির ব্যবহারও।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক আকৃতিটাই এমন যে, সে চিরকালই ভারতবর্ষের এক কোণে আপন সুখের নীড় বেঁধে নিয়েছিল। যাঁরা দূরে ছিলেন এবং যাঁরা দয়া করে এদেশে এসে আমাদের মাথার ওপর ইতিহাস তৈরি করেছেন, তাঁদের কেউই প্রায় আমাদের ভালবাসেন নি, এমনকি যাঁদের আমরা একান্ত আপন বলে মনে করি, তাঁরাও নন। ভাবুন তো সেই কোনকালে, যখন পূর্ব ভারতে আর্যরা মোটেই ছড়িয়ে পড়েন নি, তখনই আর্যরা ‘ঐতরেয় আরণ্যকে’ লিখে ফেলেছিলেন, বাংলাদেশের লোকেরা নাকি পাখির মতো, খেচর মাত্র।
কথাটা একেবারে মিথ্যে নয়, জৈন-বৌদ্ধ আর চিরকালের অনার্য সভ্যতার খড়-কুটো দিয়ে যে বাসাখানি আমরা নিভৃতে তৈরি করছিলাম, সেখানে লাগল উত্তুরে হাওয়া। আর্যরা বিধান দিলেন – তীর্থযাত্রার উদ্দেশ্য ছাড়া, অন্য যে কোনও কারণে বঙ্গদেশের মাটিতে পা দিলেই প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। অনার্যের স্পর্শকাতর আর্যরা প্রায়শ্চিত্তের পরিধি বাড়িয়ে দিলেন অঙ্গ, কলিঙ্গ এবং মগধ পর্যন্ত। সৌভাগ্যক্রমে নদী-নায়িকা জাহ্নবী সমুদ্রকে স্বয়ংই আলিঙ্গন করেছেন সাগর সঙ্গমে: কাজেই সেই তীর্থবারির স্পর্শলোভে যাও বা পরদেশী এসেছিল, তাকে হয়তো আবার শুদ্ধ হতে হয়েছে জাহ্নবীর অপর প্রান্তে স্নান করে। বঙ্গের বিড়ম্বনা এমনই।
লোকমুখে শুনি, বাঙালি নাকি বাঙালির ক্ষতি করে। তা সত্যি, দুশো বছর ইংরেজ শাসনের ফলে, কী তারও আগে কয়েকশো বছর মুসলমান শাসনের ফলে বাঙালির যা ক্ষতি হয়েছে, তার থেকেও বেশি ক্ষতি হয়েছে স্বয়ং হিন্দুদের দ্বারাই। নাহলে মহারাজ লক্ষ্মণ সেনের মহামন্ত্রী, সেকালের বিখ্যাত পণ্ডিত হলায়ুধ মিশ্র দ্বাদশ শতাব্দীতে বাংলার বুকে বসে বাঙালির আদ্যশ্রাদ্ধ করেছেন। বাঙালিরা নাকি চতুর্বেদ অধ্যয়নের যোগ্য নয় একেবারেই। ব্রাহ্মণদের কেউ কেউ নাকি শুধু দুলে দুলে বেদ মুখস্থ করে। কেউ কেউ আবার বেদপাঠের এতটুকু তোয়াক্কা না করে যজ্ঞকর্মে যতটুকু প্রয়োজন, ঠিক ততটুকু জ্ঞান নিয়েই বৈদিক ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন।
হলায়ুধের কথাগুলি হয়তো মিথ্যে নয়, কিন্তু বাঙালির প্রাণের সঙ্গে তাঁর যে কোনও যোগ ছিল না – তা বোঝা যাবে তাঁর আপন পক্ষপাতেই। তাঁর মতে উৎকল আর পাশ্চাত্য প্রদেশগুলিই হলো বেদ-জ্ঞানের পীঠস্থান। পাশ্চাত্য বলতে হলায়ুধ অবশ্যই উত্তর ভারতের দিকে অঙ্গুলি সঙ্কেত করেছেন; কিন্তু আমাদের কথা হলো, হলায়ুধের এই পাশ্চাত্য প্রীতিতে বোঝা যায় – বহুকাল ধরে বাংলাদেশের জলহাওয়ায় বৃদ্ধ, বাঙালি কায়দায় বেদ রপ্ত করা ব্রাহ্মণদের হলায়ুধ পছন্দ করেন নি। তার কারণও আছে। লক্ষ্মণ সেন, কী তাঁর পিতা বল্লাল সেন, যাঁরা নাকি এপার বাংলার সমাজের প্রধান প্রতিভূ, তাঁদের বংশমূল কিন্তু দক্ষিণে। আবার ওপার বাংলার হরিবর্মা, শ্যামলবর্মা, যাঁরা বেদ আর ব্রাহ্মণ্য ছড়িয়ে দিয়েছিলেন পূর্ববঙ্গে, তাঁরাও এসেছিলেন কলিঙ্গ থেকে।
লিপিসাক্ষ্যে নিঃসংশয়ে প্রমাণ করা যায় যে উত্তর ভারত এবং মধ্য প্রদেশের অসংখ্য ব্রাহ্মণ বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় এসে বসতি করেছেন পঞ্চম-ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যেই, এবং অতি অল্প সময়েই তাঁদের প্রভাব এত বেড়ে গিয়েছিল যে বৌদ্ধ পাল রাজারাও ব্রাহ্মণ-মন্ত্রী ছাড়া রাজ্য চালাতে পারেন নি। এককালে যাঁরা “ম্লেচ্ছ” “দস্যু” বলে আমাদের তিরস্কার করেছেন, তাঁদেরই সুযোগ্য প্রতিনিধি অনিরুদ্ধ ভট্ট, ভবদেব ভট্ট আর হলায়ুধ মিশ্রদের মাথায় করে নিলেন বাংলাদেশের শিকড়হীন সেনবর্মণ রাজারা। স্বাভাবিক কারণেই অনিরুদ্ধ ভট্ট তাঁর ‘পিতৃদয়িতা’ গ্রন্থে বাংলার বেদ-জ্ঞানে আহত, আর হলায়ুধ তো পরিষ্কার বলেই দিলেন যে, এ বিষয়ে উত্তর ভারতের দিকে চেয়ে থাকাই ভালো। বাংলার বুকে বসে বাঙালির নিন্দা যেদিন এইভাবে শুরু হয়েছিল, সেদিনই জানি, উত্তর ভারতের সংস্কৃতি আমাদের ওপর চেপে বসেছে।
যাঁরা এককালে বাংলায় এলে প্রায়শ্চিত্ত করে শুদ্ধ হতেন, তাঁরাই যখন আর্যায়নের বা অন্নের তাগিদে ভিড় করে এলেন এদেশে, আমরা কিন্তু বাধা দিইনি। নিন্দা না প্রশংসা কে জানে, আকবর-পিতামহ বাবর বলেছিলেন – বাংলাদেশের লোকেরা নাকি কাউকে বাধা দেয় না, যে কোনও পরিবর্তিত সুলতানের রাজত্বই তারা নাকি হাসিমুখে মেনে নেয়। একই কারণে আর্যদেরও আমরা বাধা দিইনি। শ্রদ্ধায়, অবনতিতে তাঁদের শাসন বঙ্গসন্তানেরা প্রসাদী পুষ্পের মতো মস্তকে ধারণ করেছে। পরিবর্তে, তাঁরা আমাদের বেদপাঠ শেখান নি, শেখান নি সামগানের আরোহণ-অবরোহণ। বাংলার আদিবাসী যাঁরা, যাঁরা ব্রাহ্মণদের সঙ্গে মেলামেশা না করায় মনুর কলমের খোঁচা খেয়ে “শূদ্র” বনে গিয়েছিলেন, বৌদ্ধ এবং সম্ভবত বাঙালি পাল রাজারা যে চন্ডাল, কৃষক, ক্ষেত্রকরদের সামাজিক অস্তিত্ব স্বীকার করে নিচ্ছিলেন – তারা সবাই হারিয়ে গেল উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির চাপে। ভট্ট আর মিশ্র মহাশয়রা সামাজিক বর্ণবিন্যাস করলেন একান্তই কাশী-কাঞ্চী আর কোশল-অবন্তীর অনুকরণে। নইলে আমাদের দেশে, হয় বাইরে থেকে আসা ব্রাহ্মণ, নয়তো শূদ্র – এই তো বিভাগ। যাদের দিয়ে সুবিধে হবে তাদের কখনও ক্ষত্রিয়, কখনও বৈশ্য, কখনও বা সৎশূদ্র, সদগোপ, এইসব জাতিবিভাগ তৈরি করে নিলেন। আর কতকাল আগে যে উত্তর ভারতীয় “শূদ্র” নামটি আমাদের দিয়েছিলেন, কারণে অকারণে অনাদরে অবহেলায় সেই উপাধি আমরা আজও বহন করে চলেছি: কাজেই কেন্দ্রের চক্রান্ত শুধু আজকের নয়, চক্রান্ত ছিল সেদিনও।
বলতে পারেন, বেদের অজ্ঞতা নিয়ে এত কথা কেন? আমরা বলি, বেদই হলো বিকেন্দ্রিক আর্য সভ্যতার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি। বেদ-জ্ঞানের ওপরেই নির্ভর করত সভ্যতা কিংবা অসভ্যতা। এই যে আমাদের পাশের দেশ মিথিলা, সেখান থেকেও কটাক্ষ করা হয়েছে আমাদের বেদ-জ্ঞানের বহর নিয়ে। একাদশ শতাব্দীর উদয়নাচার্য বলেছেন – বাংলাদেশের পণ্ডিতেরা বেদের বচনে আর মনুর বচনে তফাৎ বোঝে না, ভবতি হী বেদানুকারেষু পঠ্যমানেষু মন্বাদিবাক্যেষু পৌরুষেয়ত্বাভিমানিন গৌড়-মীমাংসকস্য অর্থনিশ্চয়ঃ। বরদরাজ আবার টীকা করে বুঝিয়ে দিয়ে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিলেন – বাঙালি নাকি বেদ পড়ে না, তাই কোনটা বেদ নয় তাও বুঝতে পারে না। উদয়নের পঙক্তিতে যে গৌড়-মীমাংসকের কথা বলা হয়েছে, তিনি নাকি শালিকনাথ, যিনি বাঙালির ভাগ্যে ‘প্রকরণ পঞ্চিকা’ লিখেছিলেন। হায় বাঙালি শালিকনাথ, এত লিখেও শেষ রক্ষা হলো না। ভাগ্যিস উদয়ন জানতেন না, যে আমরা ঘরের চৌকাঠে বসলে পর্যন্ত আমাদের ঠাকুমা-দিদিমারা “বেদে আছে” বলে মাটিতে বসিয়ে দিতেন। ভাগ্যিস উদয়ন জানতেন না আমাদের পূজাচার থেকে স্ত্রী-আচার, সবই বেদ মার্গ অনুসরণ করে। দুঃখ বা লজ্জার কোনও কারণই নেই, কেননা বাঙালি জনসাধারণের কাছে বেদও যা, মনুও তাই – সবই সমান ভারী। এটিও উত্তর ভারতের, ওটিও উত্তর ভারতের – কোনওটারই চাপ কম নয়।
কুলজি গ্রন্থগুলিতে উত্তর ভারত থেকে ব্রাহ্মণ আমদানির গল্প বারবার শুনতে পাই। কখনও আদিশূরের যজ্ঞাগ্নি সমিন্ধনের জন্য কাম্বকুব্জ কিংবা বারাণসী থেকে ব্রাহ্মণ এসেছে, কখনও শশাঙ্কের ব্যাধিমুক্তির জন্য সরযূ নদীর তীর থেকে ব্রাহ্মণ আনতে হয়েছে, আবার কখনও বা শ্যামলবর্ণ ব্রাহ্মণ নিয়ে এসেছেন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে – কারণ একটাই, বাংলাদেশে ভালো দরের ব্রাহ্মণ ছিল না। ঐতিহাসিকেরা এই গল্পগুলিকে কাজে লাগান স্বমত প্রতিষ্ঠায় সুবিধে হলে। আমরা বলি এগুলি গল্প হওয়াই ভালো, নাহলে অশ্বত্থামার পিটুলিগোলা সেবনের কাহিনীটি বারবার স্মরণে আসে। কেননা, কুলজি গ্রন্থগুলিতে ব্রাহ্মণ আমদানির কথা আছে বটে, কিন্তু তাঁদের সঙ্গে ব্রাহ্মণীরাও এসেছিলেন কিনা, সেটা ততটা পরিষ্কার নয়। যদিবা এসেও থাকেন, তাতেই বা কদিন? বংশরক্ষার জন্য অগত্যা তাঁদের কী করতে হয়েছে, তা আমাদের অজানা থাকার কথা নয়, কেননা ‘ভগবত গীতা’ বলেছেন, সমাজে পুরুষমানুষ কমে গেলে যুবতী নারীরা নাকি বড় দুষ্টু হয়ে ওঠে এবং “স্ত্রীষু দুষ্টাসু, বারষ্ণেয় জায়তে বর্ণসঙ্করঃ।” কাজেই প্রচুর ব্রাহ্মণ্য আচার সহযোগে কে যে কত অশ্বত্থামা-মার্কা পিটুলিগোলা খাচ্ছেন, কে জানে!
কাশী কাঞ্চীর সংস্কৃতি বাংলাদেশে চালানোর জন্য রাজা মহারাজারা পয়সাও ছড়িয়েছেন অনেক। উত্তর ভারত থেকে কষ্ট করে আসা আর্যদের প্রবাস বিনোদনের জন্য রাজারা দান-ধ্যান করেছেন নিরন্তর। ব্রাহ্মণ সমাজের চূড়ামণি বল্লাল সেনের বাবা বিজয় সেন বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণদের এত ধন দিয়েছিলেন যে তাঁদের স্ত্রীদের সোনা আর কুমড়ো ফুলে, মুক্তো আর কার্পাস বীজে তফাৎ বুঝিয়ে দিতে হতো। কিন্তু বিজয়-মহিষী বিলাস দেবী যখন চন্দ্রগ্রহণের সময় কনকতুলা পুরুষ অনুষ্ঠানের দক্ষিণা দিচ্ছিলেন, তখন সেই দক্ষিণাদানের যোগ্য পাত্রটি কিন্তু এই ভাগ্যহত বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁর ভূমিদানের দাক্ষিণ্য বর্ষিত হয়েছে মধ্যদেশাগত উদয়কর দেবশর্মার উপর। এইভাবেই, অন্তত অনেক ক্ষেত্রে এইভাবে কাশী কাঞ্চীর সংস্কৃতি চালানোর চেষ্টা হয়েছে বাংলাদেশের ঘাড়ে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “এসো ব্রাহ্মণ শুচি করি মন ধরো হাত সবাকার।” সবটা সবাই না হলেও, মন শুচি করে কেউ কেউ এসেছিলেন বৈকি। অর্থ সংগ্রহের জন্যই হোক কিংবা সামাজিক চেতনা, কেউ কেউ তো আমাদের হাত ধরে আমাদের দেবকার্য সম্পাদন করছিলেন। কিন্তু হায়, ভট্ট-মিশ্র রঘুনন্দনেরা গর্জে উঠেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণ সমাজে তাঁরা পতিত হয়ে গেছেন “শূদ্র-যাজী” বলে, “অগ্রদানী” বলে।
তবু বাংলাদেশী ভদ্রতায় কিংবা অন্যদেশী সঙ্কীর্ণতায়, আমরা একবারও বলতে পারিনি – দেখো বাপু, বেদ-ব্রাহ্মণ্য আমাদের জল-হাওয়ার জিনিস নয়, ও আমাদের সইছে না। আমরা কেবলই চেষ্টা করেছি মানিয়ে নিতে। অন্য কোথাও শক-হূন-পাঠান-মোগল এক দেহে লীন হয়েছে কিনা জানি না, কিন্তু বাংলাদেশে আর্য-অনার্য, শক- হূন, পাঠান-মোগল সবাই মিলে যে উদার আকাশ তৈরি করেছে তাতেই আমরা ভেসে বেড়াই, কেননা আর্যরা আমাদের চিনেছিলেন ঠিকই, আমরা যে পাখির জাত।
অভিযোগ কি শুধু বেদ আর ব্রাহ্মণ্য নিয়েই, অভিযোগ ভাষা নিয়েও। ‘মঞ্জুশ্রী মূলকল্পের’ লেখক আমাদের আঞ্চলিক ভাষাকে বলেছে আসুর ভাষা। তা বেশ, কিন্তু যে ভাষায় মেয়েরা আর সাধারণ লোকেরা কথা বলত, যে অর্ধ মাগধী প্রাকৃত, “আ মরি বাংলা ভাষার” জননী, সে ভাষাও নাকি আমরা ভালো করে বলতে পারি না। সখীর গলা ধরে, বেণী দুলিয়ে যারা “হলা পিয়সহি” বলত যে প্রাকৃত কিন্তু আমাদের নয়, সেও উত্তর ভারতের। বাংলা-জননীর মুখের ভাষাকে কালিদাস বিখ্যাত করে দিয়েছেন জেলের মুখে বসিয়ে, কিন্তু সে জেলের উচ্চারণটিও নাকি আমাদের ভালো করে রপ্ত হয়নি। দশম শতাব্দীতে মধ্যপ্রদেশের রাজশেখর বলেছেন, সংস্কৃত নাকি আমরা ভালোই বলি (বলব না কেন, ততদিন আর্যে-আর্যে বাংলাদেশ হয়ে গেছে) কিন্তু প্রাকৃত বলতে নাকি থতমত খাই। প্রাকৃত নাকি আমরা এতই খারাপ বলি যে, সরস্বতী আমাদের উচ্চারণে অতিষ্ঠ হয়ে পিতা ব্রহ্মার কাছে নিবেদন করলেন, “ব্রহ্মণ, আমি আমার সারস্বত অধিকার ছেড়ে দিতে রাজি আছি। হয় গৌড়বাসীরা প্রাকৃত কথা ছাড়ুক, নয়তো আপনি নতুন এবং আলাদা এক সরস্বতী তৈরি করুন শুধু বাংলাদেশের জন্যই: গৌড়স্তজতু বা গাথাম অন্যবাস্তু সরস্বতী।” ব্রহ্মা সরস্বতীর প্রার্থনায় সাড়া দিয়েছেন কিনা জানি না, তবে বাংলা ভাষার পৃথক এই সরস্বতীকে নিয়ে যে গর্ব করার কিছু আছে, তা বোধ করি আজ উত্তরবাসীরাও বুঝতে পারছেন। হয়তো বা এই পৃথক সরস্বতীর জন্যই বাংলার সামাজিক, রাজনৈতিক চিন্তাধারা, দুঃখ-সুখ, বুদ্ধি-ভাবনা – সবই একটু আলাদা যা আমি মুখবন্ধেই বলেছি।
ভাবা যায় কি যখন উত্তরবাসীরা তাঁদের রাজাদের কপালে শিবের তৃতীয় নয়ন দেখতে পেতেন, তাঁর আজ্ঞাকে বর-প্রদান বলে মনে করতেন, সেই সময়, মানে সেই অষ্টম শতাব্দীতে আমরা ইলেকশন করে পালবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালকে সিংহাসনে বসিয়েছি। ঐতিহাসিকেরা অবাক হয়ে ভেবেছেন, ভারতবর্ষের তদানীন্তন রাজনৈতিক পটভূমিকায় এও কি সম্ভব? হয়তো বা সমাজের চূড়ামণিরা গোপালকে মনোনীত করেছেন, আর জনগণ তা মেনে নিয়েছেন কিন্তু খলিমপুর তাম্রশাসনে ধর্মপাল যে গর্ব করে বলেছেন – আমি হলাম ক্ষিতিপতি চূড়ামণি সেই গোপালের ছেলে, যে গোপাল রাজলক্ষ্মীর পাণিগ্রহণ করেছিলেন জনগণের রায়ে – প্রকৃতিভিঃ লক্ষ্ম্যাঃ কবঃ গ্রাহিতঃ শ্রীগোপালঃ। প্রজা-রাজার এমন গণতান্ত্রিক চেতনা বাংলাদেশেই সম্ভব। একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে উত্তরাপথের সংস্কৃতি যখন পাকাপাকিভাবে বাংলার ঘাড়ে চেপে বসে, তখন এই গোপালের কথা ব্রাহ্মণদের মনে ছিল, মনে ছিল কৈবর্তরাজ দিব্যর কথা, যিনি ব্রাহ্মণপোষ্টা বর্মণ রাজাদের কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। ফল, চূড়ান্ত ব্যবস্থা। জীমূতবাহন ‘ব্যবহার মাতৃকায়’ বললেন, রাজকার্যে “শূদ্রং যত্নেন বর্জয়েৎ”। আর রঘুনন্দন আরও কড়া করে বললেন – দুশ্চরিত্র হলেও ব্রাহ্মণকে রাজকার্যে নিযুক্ত করবেন। কিন্তু হাজার জিতেন্দ্রিয় হলেও – দুঃশীলহপি দ্বিজঃ কার্যো না শূদ্রো বিজিতেন্দ্রিয়ঃ।
এইভাবে তাঁরাও আমাদের আলাদা করে দিয়েছেন, আমরাও আলাদা হয়ে গেছি, আর এই পার্থক্যই আমাদের দিয়েছে আরও স্পষ্ট এক অহঙ্কার যা আমরা সযত্নে মনে মনে লালন করি। সেই যখন মহাভারতের সূত্রধার সমস্ত উত্তর ভারতের মুকুটহীন রাজা, তখনও মগধরাজ জরাসন্ধ, প্রাগজ্যোতিষপুরের নরকাসুর (এঁকে অসুর ভাবার কারণ নেই; আর্যরা যেমন আমাদের “পাখি” “ম্লেচ্ছ” “দস্যু” এইসব বলেছেন তেমনি প্রাগজ্যোতিষপুরের লোকদের বলেছেন “অসুর”)। এঁরা কেউই কৃষ্ণের বশ্যতা স্বীকার করেননি। বলে, কৌশলে জরাসন্ধ এবং নরকাসুর নিহত হলে বন্ধুকৃত্য করার জন্য পুন্ড্রবর্ধনের রাজা লাখো সৈন্য নিয়ে সুদূর দ্বারকাপুরী অভিযান করলেন। রাজার নাম কী বলব, নাম তিনি নিজেই বলেছেন – তাঁর নামও নাকি বাসুদেব। এগারো অধ্যায় জুড়ে হরিবংশের বর্ণনা পড়ে বারবার মনে হয়েছে ‘বাসুদেব’ নামটি ছিল সেকালের এক অতি সম্মানীয় উপাধি। বহুযুদ্ধ এবং বহুবুদ্ধির নায়ক কৃষ্ণ যেমন এই উপাধি গ্রহণ করেছিলেন, তেমনি তিনি বেঁচে থাকতে নগণ্য বাংলার পুন্ড্ররাজা এই ‘বাসুদেব’ উপাধিতেই ভূষিত হবেন, এ তাঁর সহ্য হয়নি।
অন্যদিকে দ্বারকার সেই মদমত্তগোপাল ‘বাসুদেব’ নাম ধারণ ধরায় কৃষ্ণের সমতুল্য শঙ্খ-চক্র-গদা-ধনু সবই তিনি তৈরি করেছিলেন। প্রতিশোধ স্পৃহায় রাতের অন্ধকারে যখন তিনি দ্বারকা আক্রমণ করলেন কৃষ্ণ তখহন সেখানে ছিলেন না। দিশেহারা দ্বারকাবাসীদের সঙ্গে যদুকুল চূড়ামণি সাত্যকি যখন প্রায় মরতে বসেছেন, তখন কৃষ্ণ এসে পৌঁছলেন পেছন থেকে। হরিবংশ যতই বলুন কৃষ্ণ গরুড় বাহনে ‘এয়ার ড্রপড’ হয়েছিলেন, আমরা জানি আক্রমণ হয়েছিল সাঁড়াশির মতো। হরিবংশে কৃষ্ণই যেহেতু শেষ কথা, অতএব পৌন্ড্রক বধ। কিন্তু এই পৌন্ড্রক বাসুদেবই বোধহয় একমাত্র ব্যক্তি, যাঁকে কৃষ্ণ মনে মনে পুজো করেছেন – মনসা সম্পূজ্য যদুনন্দনঃ। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যাঁকে কৃষ্ণ সামনাসামনি প্রশংসা করে বলেছেন – “অহো বীর্যম অহো ধৈর্যমস্য পৌন্ড্রস্য দুঃসহম।” পৌন্ড্রের মৃত্যুর পর পৃথিবীতে বাসুদেব থাকলেন একজনই – তিনি উত্তর ভারতের সেই কৃষ্ণ বাসুদেব, চৈতন্যদেবের কৃপায় যাঁকে আমরা নতুন করে পেয়েছি।
বাঙালির স্বভাবের কথা বলতে গিয়ে কৃষ্ণকথা এসে গেল। বন্ধুর জন্যই হোক বা সাময়িক ক্রোধে, বাঙালির এই স্বভাব চিরকালের। রাজতরঙ্গিনীতে কলহনের ভাষা মনে আছে তো? কলহন স্বদেশের রাজা ললিতাদিত্য মুক্তাপীড়ের দোষ স্বীকার করে নিতে একটুও লজ্জিত হননি, কেননা তিনি অন্যায়ভাবে আততায়ীদের দিয়ে গৌড়ের রাজাকে হত্যা করিয়েছিলেন। প্রিয় প্রভুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে সেই সুদূর কাশ্মীরে গিয়েছিলেন জনাকতক গৌড়বাসী শারদার মন্দির দর্শনের ছল করে। তাঁরা যখন একযোগে কাশ্মীর বিষ্ণু পরিহাসকেশবের মন্দিরে ঢুকতে যাবেন তখন মন্দিরের দ্বার রুদ্ধ হলো। চরম আক্রোশে যে মূর্তিটি তাঁরা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলেন ভ্রমক্রমে, সেটি পরিহাসকেশবের নয়, রামস্বামীর। বিগ্রহের ভগ্নাংশগুলি যখন তাঁরা নির্ভয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন পথে পথে তখনই তাঁদের মৃত্যুবরণ করতে হলো। কলহন কতবার করে যে এই কৃষ্ণকায় গৌড়বাসীদের প্রশংসা করেছেন তা ভাষায় প্রকাশ্য নয়। স্বয়ং বিধাতাও নাকি সাহস, পরাক্রম আর প্রভুভক্তির এই নজির সৃষ্টি করতে পারবেন না, যা গৌড়জনেরা করেছেন।
তবে এই সাহস, এই অহঙ্কার সবার ভালো লাগে না, ফলে আবার সেই নিন্দা। কাশ্মীরের আরেক কবি ক্ষেমেন্দ্র তাঁর ‘দেশোপদেশের’ নিবেদনে বাঙালি ছাত্রদের কী গালাগালই না দিয়েছেন। কালো-কঙ্কালের মতো চেহারা, ব্রাহ্মণ্য আচারের বিন্দুবিসর্গ জানে না। কোঁচার খুঁটিটি বগলে দিয়ে বাঙালি ছাত্ররা নাকি একপাশে একটু হেলে হেলে হাঁটে। বাড়ির চাকরটির ওপর সব সময়ই চটা, শুধু সেই চাকরটিকেই সহ্য করে, যার বাড়িতে নাকি তরুণী স্ত্রী আছে। ক্ষীণকটিতে লাল কটিবন্ধ, ময়ূরপঙ্খী জুতোয় শব্দ তুলে বেড়াতে যায় বেশ্যা, বিধবা, কিংবা পরবধূর গৃহে। দোকানে মাল নিয়ে, দাম দেয় অল্প। কালোমুখে সাদা দাঁত বের করে হাসে – ঠিক বাঁদরের মতো। রাগ হলেই আবাসিক ছাত্রের পেটে মারে ছুরি আর “স্নানে দানে ব্রতে শ্রাদ্ধে” যে গালাগালটি গৌড়দেশীয় ছাত্রেরা ব্যবহার করে তা অনুবাদের যোগ্য নয়, তবে সেটি এখনও চলে।
এক অধ্যায় ধরে ক্ষেমেন্দ্র যা বলেছেন, তাও অনুবাদের যোগ্য নয়। ভাবে বুঝি পরিহাসকেশবের অবমাননা তাঁর মনে ছিল, কিংবা বিদেশে গিয়ে বাঙালি ছাত্ররা ভালো ফল করত। অন্তত অন্যান্য প্রমাণ তাই বলে। আর বিদেশে গেলে বাবুগিরি একটু আধটু সবাই করে। সেটা বাঙালির স্বভাব, যেমন এটাও বাঙালির স্বভাব – ভিনদেশী ভারতীয়রা এলে একটু আধটু পেছনে লাগা। কিন্তু ছেলেছোকরার সেই দৌরাত্ম্যের জন্য কি কম কটূক্তি শুনতে হয়েছে। মনে পড়ে খ্রিস্ট জন্মাবার আগে মহাবীর জৈন সশিষ্য এসেছিলেন আমাদের দেশে। তাঁর মতে রাঢ়দেশের লোকেরা তো আচার-বিচার কিছুই জানে না, আর বঙ্গদেশের মানুষ অখাদ্য-কুখাদ্য যা তা খেত (নিশ্চয় মাছের কথা)। এখানকার লোকেরাও নাকি ভীষণ নিষ্ঠুর, তারা মহাবীর আর তাঁর শিষ্যদের পেছনে ছু-ছু করে কুকুর লেলিয়ে দিয়েছিল।
এই বর্ণনায় হয়তো কিছু বাড়াবাড়ি আছে, আবার অন্যদিকে আছে বাঙালির মাত্রাছাড়া কৌতুকপ্রিয়তা। কুকুর লেলিয়ে দেওয়ার পর অতগুলি জৈন সাধুর ত্রিভঙ্গিম নৃত্য যদি বা আমাদের পূর্বপুরুষদের কৌতুক দিয়ে থাকে, তবু তাঁরা জানতেন না যে সেগুলি এতদিন ছাপার অক্ষরে লেখা থাকবে। এত কটূক্তি, এত অজ্ঞানতা, “অসুর”, “দস্যু”, “পাপ”, “ম্লেচ্ছ” কিংবা “সংকীর্ণযোনয়ঃ” এই সব ভিন্ন প্রদেশের সাধু শব্দ আমরা ভাগ করে নিয়েছিলাম রাঢ়, বঙ্গ, সুহ্ম, গৌড়, হরিকেল আর পুন্ড্রবর্ধনের লোকেরা।
কিন্তু এত দস্যু এত পাপ হওয়া সত্ত্বেও যা আমাদের উত্তর ভারতীয় প্রভুদের ভালো লেগেছিল, তা হলো বাংলাদেশের রমণী। আমাদের প্রাকৃতভাষা রাজশেখরের এত খারাপ লেগেছিল কেন জানি না, তবে তাঁর কিন্তু হরিকেল মানে ময়মনসিংহী কিংবা সিলেট্যা রমণী ভারী পছন্দ। ‘কর্পূরমঞ্জরীতে’ নায়কের অনেক সম্বোধনের মধ্যে অন্যতম হলো “হরিকেল কেলি কারক”। সবাই যত নিন্দে করুন, বাংলার রমণীভাগ্যে কাশী কোশল থেকেও নায়কেরা এসেছেন খোদ রামায়ণের মধ্যেই। আর বাংলাদেশে যে হাজারো সংকরবর্ণের উদ্ভব ঘটেছে তার কারণও কি রমণীরাই নয়। কারণ নিশ্চয় বলে দিতে হবে না, কেননা বাংলার মেয়েরা কীরকম, তা গোধূলি আলোকে দেখিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং বাৎস্যায়ন। কোমল অঙ্গে, মৃদু ভাষে, অনুরাগে আর মৃদু হাসে, যে বঙ্গরমণীর চিত্র বাৎস্যায়ন এঁকেছেন, তাতে বহিরঙ্গে যদি বা তাকে দেখায় নায়িকার মতো, অন্তরঙ্গে কিন্তু দেখায় একেবারেই বঙ্গজননীর মতো। তবে বঙ্গজননীর মৃদুতা আর শ্যমলিমা মাখা সেই অভাগা রমণী কিন্তু তার প্রাপ্য মর্যাদাটুকু পায়নি কোনোদিন, কেননা আর্যরা ধর্মবশত একটি ব্রাহ্মণী সংগ্রহ করে তবেই না শূদ্রকন্যার পাণিপীড়ন করতেন কামবশত। এই কামনার ধন কিন্তু কেবলই কামনাপূর্তির উপায়মাত্র, সম্মানের বিস্তীর্ণক্ষেত্রে তার ডাক পড়ে না। কিংবা তার সন্তানেরা পায় না পিতার সম্পত্তির লভ্যাংশটুকু। এই বঞ্চনা, এই বিড়ম্বনা বাংলাদেশ আর বাংলার মানুষ চিরকালই পেয়েছে। বিভিন্ন আকারে, আর বিচিত্র প্রকারে। কিন্তু তবুও উত্তর ভারতের আর্যসভ্যতা আমাদের দেশে ম্লান হয়নি: সে চক্রান্তের মতো আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে, আমরা বাধা দিতে পারিনি – সে কি ঋজুতার অভাব, না ভদ্রতা!
কবি ও কথাসাহিত্যিক। জন্ম ৭ আগস্ট, উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে। স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখির সূত্রপাত। সম্পাদনা করেছেন বেশ কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকা এবং ওয়েবজিন। বর্তমানে ইরাবতী ডেইলি ওয়েবজিনের সাথে যুক্ত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : জল ভাঙে জলের ভেতর [২০১১], ঠোঁটে দাও জ্যোৎস্নার বিষ [২০১২], ডুব সাঁতার [২০১৭], নিরুদ্দেশ গাছে সন্ন্যাসীর মুখ [২০১৭]। গল্পগ্রন্থ : কারুময় খামে অচেনা প্রেম [২০১২]। উপন্যাস: ইতি খন্ডিত জীবন [২০২২]। প্রবন্ধ সংকলন: মাটির গন্ধ [২০২২]। সম্পাদনা গ্রন্থ: দুই বাংলার সাম্প্রতিক গল্প [২০২২] ।
শখ বইপড়া, লেখালেখি, ছবিতোলা, গান শোনা ও ভ্রমণ। বেশ কিছু গানও লিখেছেন তিনি।