জেঠু

ইরাবতী ধারাবাহিক:ফুটবল (পর্ব-২৩) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

Reading Time: 3 minutes

অষ্টম শ্রেণির দুই বন্ধু রাজ আর নির্ঝর। রাজ আর অনাথ নির্ঝরের সাথে এইগল্প এগিয়েছে ফুটবলকে কেন্দ্র করে। রাজের স্নেহময়ী মা ক্রীড়াবিদ ইরার অদম্য চেষ্টার পরও অনাদরে বড় হতে থাকা নির্ঝর বারবার ফুটবল থেকে ছিটকে যায় আবার ফিরে আসে কিন্তু নির্ঝরের সেই ফুটবল থেকে ছিটকে যাবার পেছনে কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নির্ঝরের জেঠু বঙ্কু। কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বঙ্কু ও তার ফুটবলার বন্ধু তীর্থঙ্করের বন্ধুবিচ্ছেদ। কিন্তু কেন? সবশেষে নির্ঝর কি ফুটবলে ফিরতে পারবে? রাজ আর নির্ঝর কি একসাথে খেলতে পারবে স্কুল টিমে? এমন অনেক প্রশ্ন ও কিশোর জীবনে বড়দের উদাসীনতা ও মান অভিমানের এক অন্য রকম গল্প নিয়ে বীজমন্ত্রের জনপ্রিয়তার পরে দেবাশিস_গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন কিশোর উপন্যাস ফুটবল আজ থাকছে পর্ব-২৩।


একটু পরে রাজরা বাইরে এসেছিল। চিমটি খাবার পর রাজের  মেজাজ বিগড়ে গেছিল।। চিমটির জন্য যতটা, তার চেয়েও সে অবাক হয়েছিল নির্ঝরের আচরনে। এমন কাজ সে কখনো করে না। বাইরে বেরিয়ে সে ওর সঙ্গে কথাই বলে নি। নীরবে সাইকেল চালাচ্ছিল।শুধু  বর্নিক একাই আগডুম বাগডুম বকে গেছিল। ওর বাড়ি আগে, রাস্তা থেকে ডানদিকে ঢুকে যেতে হয়।  বর্নিক  তাদের হাতনেড়ে বিদায় নেবার পর রাজ স্বস্তি পেয়েছিল।ওর সামনে নির্ঝরকে কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছিল না। বর্নিক চলে যাবার পর সে একধারে সাইকেল থামিয়ে  বলেছিল, “ এই। দাঁড়া একটু। কি ব্যাপার রে?  তুই হঠাৎ আমাকে  চিমটি কাটলি কেন ?”

 নির্ঝর পাশে দাঁড়িয়ে নিচুস্বরে বলল, “সরি।কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না।“

“মানে?”

“আমি চাই নি তুই তীর্থজেঠুর কাছে আমার কথা বল।“

রাজ আশ্চর্য হয়ে বলল, “সে কি রে? কেন? তীর্থজেঠু কি খুশী হবে বল তো তোর পরিচয় পেয়ে।“

“জানি না।“

রাজ নির্ঝরের দিকে  অবাক হয়ে চেয়েছিল। তার মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে ওর ব্যবহার। সে ভেবে পায় নি। ও পরিচয় জানাতে চাইছে না কেন? রাজ বলল, “জানি না মানে?”

 নির্ঝর উত্তর দেয় নি  আর। সে ওর স্বভাব জানে। ওর পেট থেকে সে একটা কথাও বার করতে পারবে না।  নির্ঝর আবার সাইকেল চালাতে শুরু করেছিল। ওর দেখাদেখি রাজও। পরের মোড় পর্যন্ত তারা দুজন কেউ কথা বলে নি। মোড়ের মাথা থেকে দুজন দুদিকে যাবার কথা। অন্য সময় দুজন মোড়ের মাথায় তারা কিছুক্ষন কথা বলে। রাজের  অভিমান হয়েছিল। সে ঠিক করেছিল মোড়ের মাথায় দাঁড়াবে না। সোজা সাইকেল হাঁকিয়ে চলে যাবে।

“শোন।“

নির্ঝর সেসময়ে ডেকেছিল।  রাজ গুরুগম্ভীরচোখে চেয়েছিল। চারপাশ বেশ আবছা হয়ে গেছে। মোড়ের মাথায় বটগাছে পাখির কিচিরমিচির শুরু হয়েছে। ওরাও সব খেলাধুলা করে বাড়ি ফিরেছে। রাজ একবার মাথা উঁচু করে দেখে  ভেবেছিল। পরক্ষনে তার মনে পড়েছিল খেলা ছাড়া সে এভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে জানলে মা তাকে বকবেন। সে বলল, “ যাই। তাড়া আছে।“

“রাগ করিস না আমার উপর।“

 রাজ বলতে পারত রাগ করার হক তার আছে। কিন্তু নির্ঝর হয়ত সেকথার উত্তর দেবে না।তবু সে নিজে থেকে কিছু জিজ্ঞেস করবে না। সে বলেছিল,“রাগের কি আছে। কি বলবি বল?”

 নির্ঝর বলেছিল, “তুই কিছু মনে করবি না তো?”

রাজ ব্যাজার হয়ে গেছিল। এতক্ষন সে ঘুরছে  তখন বলে নি। এখন যাবার সময় ওর ইচ্ছে হল। সে বলেছিল,” যা বলার তাড়াতাড়ি বল।“

নির্ঝর বলেছিল, “আমি ফাইনাল ম্যাচ খেলব না রে।“

নির্ঝরের কথাটা শুনে তার মাথা খারাপের যোগাড়। আবার ও খেলবে না বলছে! রাজ অবাক হয়ে চেয়েছিল। সে বলেছিল, “ ফাইনাল খেলবি না? কেন?”

নির্ঝর মাথা নামিয়ে বলেছিল, “জেঠু খেলতে দেবে না।“

রাজ হাঁ হয়ে গেছিল।লোকটা কি পাগল! সে চেঁচিয়ে উঠে বলেছিল, “ কি বলছিস রে? এই তো বললি তোর জেঠা তোকে খেলার জন্য ডিম খাওয়াচ্ছে? আবার পালটে গেল কেন? মাথা খারাপ হয়েছে নাকি তোর জেঠার।“


আরো পড়ুন: ফুটবল (পর্ব-২২) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়


নির্ঝর বলেছিল, “জানি না। সেদিন মাঠে প্র্যাকটিস ম্যাচ  দেখে যাবার পরই জেঠু বদলে গেছে। বলল,“আর খেলতে যাবি না। যদি যাস আমার সাথে তোর কোনো সম্পর্ক থাকবে না।“

“যাহ! তা কি কারন জিজ্ঞেস করলি না!”

নির্ঝর বলেছিল,“কারণ বলে নি। তবে আমি জানি।“

“কি?”

“ তীর্থজেঠু আছে বলেই জেঠু আমাকে খেলতে দেবে না।“

“কেন?”

“কি জানি? কিছু গোলমাল আছে বোধহয়। ওইজন্যই আমি তীর্থজেঠুর কাছে আমার পরিচয় দিতে চাই নি। তাই তোকে বারন করেছিলাম।“

“সে তো বুঝলাম। কিন্তু তোকে খেলতে হবেই।“

নির্ঝর বলেছিল,” জেঠু না বললে খেলব কি করে? তুই এক কাজ করবি?”

“কি?”

“কাকিমাকে একবার বল। দ্যাখ যদি জেঠুকে রাজি করাতে পারে।“

 খেতে খেতে এ কথাটাই মনে পড়ল রাজের।তার মাকে বলা হয় নি । আচমকা মনে পড়তে সে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করেই সে বলল, “ওমা! শোনো।“

মা বললেন, “একটু পরে যাচ্ছি।“

রাজের  আর তর সয় না। সে বলে ,” আরে এসো না।“

মা একটু পরে রাজের ঘরে  এলেন। রাজ একবার চারদিক সর্তকচোখে দেখে নিল। ছোটোমামা আসছেন না তো!  তাঁর  সবব্যাপারেই কৌতুহল। তাতে আপত্তি নেই।কিন্তু  ছোটোমামা পেটে কিছু চেপে রাখতে পারেন না। বাবাকে কিছু না কিছু বলবেন। রাজ এটা এখন চাইছে না। বাবা আবার যদি মাকে বাধা দেন।তারচেয়ে সে ও মা ব্যাপারটা মেটাবে।

মা বললেন, “বল। এত তাড়া!”

রাজবলল,-  “বলছি।তোমাকে আবার  নির্ঝরের জেঠার সঙ্গে কথা বলতে হবে।“

মা জিজ্ঞাসুচোখে তার দিকে তাকালেন।

রাজ বলতে শুরু করল। একটা কিছু পথ নিশ্চয় বেরোবে। দেখা যাক।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>