| 1 সেপ্টেম্বর 2024
Categories
ধারাবাহিক

ধারাবাহিক: রাণীয়ার রান্নাঘর (পর্ব-৪) । ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

উপছে ওঠে ডোনাট সুখ!

 

রাণীয়ার মুখের সামনে কুশলের ক্যামেরা অন। সে অফিস থেকে এলেই সাধারণতঃ এই কাজটা একমাত্র বউয়ের জন্য ভালোবেসে সে করে দেয়। কখনও অডিওকখনও ভিডিও।

হাসিমুখে এক প্লেট গোল্ডেন ডোনাটস হাতে নিয়ে রাণীয়া তখন কনফিডেন্টলি বলতে ব্যাস্ত

ভাগ্যিস পডকাস্টে শুধুই অডিও লাগে তাই সাজুগুজু করার ব্যাপারটা নেই। কী বলআজকের লেসন রেডি?

রাণীয়া গড়্গড় করে বলে চলেদৃপ্ত কণ্ঠে।

অক্সফোর্ড কম্পানিয়নের মতেডোনাটের এক দীর্ঘ ইউরোপিয়ান ইতিহাস রয়েছে। বিশেষতঃ ডাচ ক্রিসমাসে অবশ্যই বানানো হত এই ডিপ ফ্রায়েড কেক এবং তা চলত নিউ ইয়ার সেলিব্রেশন পর্যন্ত। আরও যদি পিছনে তাকাই তাহলে জানা যায় ডোনাট বানানোর ঐতিহ্য আরও প্রাচীন। প্রাচীন রোম বা গ্রীসে ময়দা মাখা থেকে ফিতের মত কেটে ভাজা পেস্ট্রি মধু বা চিনির রসে ডুবিয়ে খাবার কথাও আছে। মধ্য যুগে আরবরাও নাকি এমন ইস্ট দিয়ে ফোলানোফাঁপানো ময়দার ভাজা বল চিনির রসে ডুবিয়ে খেত।

তবে ডাচ অভিবাসীরাই আমেরিকার নিউইয়র্কে প্রথম এই ডোনাট আনেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

অনেকেই আধুনিক ডোনাট আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেন হ্যানসন গ্রেগরি নামে একজন ডাচ নাবিক কে। সেই ডাচ নাবিক কে তার মা ছেলের নৌযাত্রায় বেশ কিছু এই সুখাদ্য “oliekoecken” বা “oly cake” বানিয়ে দেন যাতে তাঁর ছেলে এবং তার ক্রু দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় সেই কেক দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে পারে।সেই সঙ্গে তিনি একটি রেসিপিও পাঠিয়েছিলেনযাতে তাঁর ছেলের কুক আরও কিছু তৈরি করে দিতে পারে।

ডোনাটের নামকরণের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করলে দেখা যায় একটি ময়দার ডো এবং সঙ্গে কোনও একটি বাদাম। তা সে আখরোট বা হেজেল নাট যাই হোক। উনবিংশ শতকের অভিধানে donut এবং donought এই দুই বানানের গ্রহণযোগ্যতা ছিল। কারো মতে আবার “dough knots” এই নামকরণের মূলে।

ডোনাটের মাঝখানটি যাতে কাঁচা না থাকে তাই মধ্যিখানে গর্ত রাখার আইডিয়াটি ছিল হ্যানসনের। তাও আবার নিজের সুবিধার্থে। একবার প্রবল ঝড়ে ক্যাপ্টেন গ্রেগরির জাহাজ বিধ্বস্ত । তখন তিনি তাঁর একহাত মুক্ত রাখতে স্টিয়ারিং হুইলের একটি স্পোকের উপর ডোনাট চাপিয়ে দেন। তিনি নাকি এতই ডোনাট খেতে ভালোবাসতেন।

মধ্যিখানে গর্ত যুক্ত এই ডোনাটই কালে কালে আমেরিকানদের অন্যতম প্রিয় খাবার হয়ে ওঠে।

আবার Encyclopedia of Jewish Food বলছে ইহুদি অভিবাসী উইলিয়াম রসেনবার্গ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাটারিং এর ব্যবসা করতেন। আমেরিকার হার্টল্যান্ড ম্যাসাচুসেটস এর আশেপাশে সব কারখানার কাছে সেকেন্ডহ্যান্ড ট্রাকে স্ন্যাকস বিক্রি করতে করতে তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে সেদেশে ডোনাটস এবং কফির সবচাইতে বেশী কাটতি। ১৯৪৮ সালে ওপেন কেটল” নামে একটি ডোনাটের দোকান চালু করেনযার ক্লায়েন্ট ছিল কারখানার শ্রমিক শ্রেণী। বলাই বাহুল্য তাঁকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। অবিলম্বেই বিশাল কফি চেইনে পরিণত হয় সেই দোকান। এর ঠিক দুবছর বাদে রসেনবার্গ দোকানের নাম বদল করে ডানকিন ডোনাটস নাম দেন। ১৯৬৩ সালে ১০০ টি এবং ১৯৭৯ সালে হাজার ফ্রাঞ্চাইজির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এই বিখ্যাত ডোনাট শপ।

ক্যামেরা অফ করে কুশল গিয়ে রাণীয়া কে জড়িয়ে ধরল। কুদোস বসআমেরিকানরাই ডোণাটের ঠিকুজ্জিকুলজী জানেনা। তাও আবার তুই বাংলায় বলে গেলি… ওয়ান্ডারফুল ভয়েস ওভার। এবার ফোটোগ্রাফারের টিপস চাই যে।

রাণীয়া হাসিমুখে বলল কফিমেকারে সেই কফিটা ব্রু করেছি আজ। সেই যে সেবার কিনলাম আমরা। বাচা কফি। অরেঞ্জ ফ্লেবারড। গিয়ে দেখুন মশাই।


আরো পড়ুন: রাণীয়ার রান্নাঘর (পর্ব-৩) । ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়


একদিকে উদ্বায়ী কফির সুগন্ধ আর অন্যদিকে ভ্যানিলাগন্ধী সোনালি ডোনাটস। আনন্দে আত্মহারা কুশল।

কিছুদিন ধরে নিজের একটা চ্যানেল খুলেছে রাণীয়া। আগের চাইতে পরিচিত অনেক বেড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রচুর ফলোয়ার তার। রোজ সেখানে পডকাস্টে নানারকম রান্নার ইতিহাস নিয়ে বাংলায় বকবক করে সে। এই বাঙলায় বকবক বলেই বুঝি এত কাটতি রাণীয়ার চ্যানেলের। সে দেশে নতুন কিছু খেলেই ইন্টারনেট ঘাঁটে। বই পড়ে লাইব্রেরী গিয়ে সেই খাবারের গুষ্টির তুষ্টি করে। সেই খাবারের খানাসূত্রইতিহাসভূগোলপ্রত্নতত্ত্বপুরাতত্ত্ব নিয়ে ঘাঁটতে বসে। সেই নিয়েই মেতে থাকে সে বিদেশ বিভূঁইয়ে। নয়ত এক একসময় মায়ের জন্য তার বড় কষ্ট হয়। আর হয় দিদির জন্য। যতই ভিডিও কল করুক। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখে সে বিদেশের খাটে শুয়ে। পাশে কুশল অঘোরে ঘুমিয়ে। ফোনের মধ্যে লোড করা সবার সঙ্গে ছবি দেখে আর দেখতেই থাকে। রাণীয়া বড় ইমোশানাল। মিঠি তার চাইতে বেশী প্র্যাক্টিকাল। কাঠখোট্টা। ছোটো থেকেই দুই বোন দু রকম।

কলকাতায় বসে সবাই শুনতে পছন্দ করে বাড়ির মেয়ের বকবক। ওদের দুতরফের বাবামা আর ব্যাঙ্গালোরে দিদিজামাইবাবু। আজকাল সবাই শোনে রাণীয়ার পডকাস্ট। । সবাই ভালো বলে। উৎসাহ দেয় রাণীয়া কে। বন্ধুবান্ধব হইহই করে ওঠে। ভালো ভালো কথায় বানভাসি হয় রাণীয়ার ফেসবুকইন্সটাগ্রামব্লগ। কুশল ধরিয়ে দেয় খুঁতগুলো। হোয়াটস্যাপে সব আত্মীয়বন্ধু সুখ্যাতি করে। রাণীয়ার উত্তেজনার পারদ বাড়তে থাকে। তার দ্বারা তবে কিছু একটা হতে চলেছে। সে খুব পজিটিভ এই বিষয়ে।

সেদিন সেই পডকাস্ট চ্যানেলে ডোনাটের সেই দীর্ঘ ইউরোপিয়ান ইতিহাসের কথা শুনে মা অনসূয়ার মনখারাপ।

ইশকদ্দিন হাতে করে দুই মেয়ের জন্য কিছু পিঠেকুচো গজাএলোঝেলো বানিয়ে দেওয়া হয়না। রাণীয়া এলোঝেলো বা সেই পটলের মত মিষ্টি গজা বড় খেতে ভালোবাসে। ভিডিও কলে বলতেই মেয়ে বললমা জানোপ্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর বইতে পড়ছি এলোঝেলো নামটা রবিঠাকুরের মোটেও পছন্দ হয়নি। তাই তিনি নাম দিয়েছিলেন পরিবন্ধ।

অনসূয়া বোঝেন তাঁর মেয়ে কেমন ধীরে ধীরে রন্ধন বিশেষজ্ঞা হয়ে উঠছে। মেয়েকে মাঝেমধ্যে পরীক্ষাও নিয়ে নেন তিনি সেই ফাঁকে। জানতে চান কে প্রথম ঠাকুরবাড়িতে এই এলোঝেলো বানিয়েছিলো জানিস?

রাণীয়া বলে কেনরবিঠাকুরের বউ মৃণালিনী দেবী।

বাবাতুই তো বেশ গবেষণা করছিস বিদেশের মাটিতে বসে।

জামাইবাবু শৈবাল তার একমাত্র শালীর দিন কে দিন এমন উত্তরণে খুশি হয়ে বলেছে

দিস ইজ রিয়েলি আনইউজ্যুয়াল। প্রাউড অফ ইউ আধা ঘরওয়ালিএগিয়ে চল্ রাণী!

কুশল বলেছিলদেশে ফিরে একদিন বানিয়ে খাওয়াস কিন্তু সকলকে। নয়ত চাপ আছে। গান যেমন শিখে গাইলেই হল না। লোকজন কে শোনাতে হয়। তেমনি ঘরে বসে রাঁধলেই হবে না। লোককে না খাওয়ালে তারা জানবে কেমন করে যে তুই সুরাঁধিয়ে?

এভাবেই চলতে থাকে। রাণীয়ার মন তখন কানায়কানায় ভরে ওঠে। মনে মনে গুণগুণ করে ওঠে সে… এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাব 

রান্নাঘরের এক চিলতে সুখী কোণায় একলার দুপুর রাণীয়ার। কিচেন ব্লাইন্ডস সরিয়ে দেখে নেয় পার্কিং লটে গাড়ীর সারি তে। কুশল আসার দেরী আছে। তাকে আজ সে সারপ্রাইজ দেবে ঠিক করেছে। ময়দাডিমচিনিইনস্ট্যান্ট ইস্ট আর দুধ মেখে নিয়ে নরম ডো তৈরী করে। একটু গান শোনেএকটু টিভি দেখে। ততক্ষণে ময়দার তাল ফুলে ফেঁপে গর্বে কাচের বাটি থেকে গড়িয়ে পড়ে আর কীলেচি কেটে নিয়ে এবার চ্যাপ্টা করে মধ্যিখানে ঢাকনি দিয়ে গর্ত করে ছাঁকা তেলে ভেজে নেয়। এবার গরম অবস্থাতেই চিনির গুঁড়োয় গড়িয়ে নেয় ডোনাট গুলি। কী আনন্দ করবে কুশল দেখে। অতএব সে পারবেই। এমন ডোনাট বানিয়ে সব্বাই কে তাক লাগিয়ে দিতে। পরের বার ডোনাট কাটার কিনতে হবে তাকে। সেইসঙ্গে বেকিংয়ের মেজারিং কাপচামচস্প্যাচ্যুলা আরও কতকিছু।

প্রজ্ঞা সুন্দরী দেবীরও তো বিয়ে হয়েছিল অসমের গুণী মানুষসাহিত্যরথী উপাধিতে ভূষিত লক্ষ্মীনাথ বেজবড়ুয়ার সঙ্গে। সারাটা দিন কত নতুন রেসিপি উদ্ভাবন করে তিনিও তাক লাগাতেন । স্বামী বাড়ি ফিরে এলেই নিত্য নতুন চমক থাকত তাঁর পেট ভরানোর জন্য। সে মানুষটিও ঠিক কুশলের মত। তারিফ করে কুশল। সংশোধন করে দেয় বউয়ের ভুল ত্রুটি।

মনে পড়ে কলেজের ক্যান্টিনের কথা। একদিন বন্ধুরা বলেছিলকে কে মাস্টার্সের পরেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চায় আর কেনতা বলতে হবে।

রাণীয়া প্রথমেই হাত তুলেছিল। কারণ হিসেবে যা দেখিয়েছিল তাতে বন্ধুরা তো হেসে খুন। রাণীয়া বিয়ের পর বাড়িতে থেকে বরের জন্য নিত্যনতুন খাবার বানিয়ে তাক লাগানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল সবার সামনে। অফিস থেকে ফিরে তার বর সেই অপ্রত্যাশিত সারপ্রাইজে খুশি হবে।

বন্ধুরা কেউ আওয়াজ দিয়ে বলেছিলউঃপারিনাপারিনা

কেউ বলেছিলতোর বর তার কদর করলে তো।

বিয়ের আগেই এইবিয়ের পরে না জানি কী হবেএমন সব বলেছিল বন্ধুরা।

কিন্তু ফরচ্যুনেটলি রাণীয়ার সেই সাধ মিটেছে। কুশল সবসময়ই রাণীয়ার এই ফুডি ব্যাপারটার ফরে। বরং কুশলের আস্কারাতেই রাণীয়ার রান্নাবান্নার শখের লেখচিত্রটা দিন দিন উত্ত্যুঙ্গে উঠছে ।

এসব ভেবে মন খুশ হয়ে যায়। আজকাল কুশল সময় পেলেই বউয়ের জন্য ছোটো ছোটো রান্নার ভিডিও ক্লিপ্স বানিয়ে তাকে উৎসাহ দেয় বৈকি!

সেবারেই তো প্রথম বানানো তুলতুলে হানি গ্লেইজড সোনালি ডোনাটের কয়েকটা ছবি আর রাণীয়ার বাইট দিয়ে একটা মিষ্টি ভিডিও বানিয়ে পোষ্ট করে দিয়েছিল কুশল। রাণীয়া খুব খুশি হয়েছিল তাতে। একটা চিল্ড স্ট্রবেরি ব্রিজারের গোলাপি বোতল খুলে নিজের শরীরটা কে এলিয়ে দিয়েছিল সোফায় । এদেশে নিজেকে সব কাজ একা হাতে সামলাতে হয়। মাঝেমাঝেই খুব ক্লান্ত লাগে। তবে এদেশের ওয়েদার এত ভালো যে কিছুক্ষণ খাটাখাটনির পরে আবারও বেশ চনমনে লাগে শরীর।

আমেরিকার মাটিতে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে মনে হয় ঈশ্বরের আশীর্বাদ ধন্য এই দেশ। এখানে কত সুন্দর সৌজন্যবোধ মানুষের। সুন্দরের সত্য পূজারী তারা। তারা কত রুচিশীল। সত্যিই তারা গড়তে জানে নিজেদের আর ভালবাসে তাদের দেশকেরক্ষা করতে পারে ভগবানের সৃষ্টিকেআর নিজেদের সৃজনশীলতাকে বিকশিত করেউজাড় করে দিতে পারে বিশ্বের দরবারে।

অনেকেই হয়ত দ্বিমত হবে রাণীয়ার সঙ্গে। বলবে কৃত্রিমতা এ শতাব্দীর অভিশাপ। রাণীয়া নিজের মনকে প্রবোধ দেয় একলাটি। এমন কৃত্রিমতা যদি মানুষের সার্বিক উন্নতি ঘটায় তাহলে বাধা কোথায়বিজ্ঞান যদি কাজের বন্ধু হয় তাহলে আপত্তি কিসেহোকনা জীবন মেকানাইজড। তবে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে বড় কষ্ট হয় তার নিজের দেশটার জন্য। প্রিয় দুই শহর জামশেদপুর আর কলকাতার জন্য।

আমেরিকার মাটিতে পা দিতেই শেখার শুরু। স্টুডেন্ট স্বামীর ইউনিভার্সিটির বন্ধুরা সেখানে গেলেই তৎপর হয়ে পড়ে। এহেন নবপরিণীতা বঙ্গললনাকে কিভাবে এখানকার সব ডেলিকেসি চাখিয়ে তাক লাগানো যায়। বিদেশের মাটিতে থাকতে থাকতে তারা অভিজ্ঞ। সেতাই বুঝি দেখায় প্রতি পদে পদে। এক একদিন বিকেলে রাণীয়ার এক একটি পদ পরখ করে দেখার শুরু হয়েছিল তখন থেকেই। সেখানে পথের ধারে ধারে ঝকঝকে ফুট জয়েন্ট। কোনোটা ড্রাইভ থ্রু। কোনোটা আবার ক্যাফেটেরিয়াসেলফ সার্ভিস। পকেটমানি যত খসাবে তত কেতার রেস্তোরাঁও রয়েছে প্রচুর। তবে বাঙালিরা পাতি ফুট জয়েন্টেই আপ্লুত পকেটের কথা ভেবে।

তখনি প্রথম হাতেখড়ি রাণীয়ার । ডানকিন ডোনাটস এর সঙ্গে।সেদেশের সস্তার জলখাবার। কফির সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত এই ভাজা কেকের।

সেই থেকেই সুপার মার্কেট থেকে কিনে আনা ফ্রোজেন ডোনাটসও বাড়িতে রাখা থাকত ফ্রিজের মধ্যে। গরম করে খাওয়া চলত। তবে প্রথম আমেরিকার ডানকিন ডোনাটস খেয়ে রাণীয়ার বেশ একটা বিগলিত করুণাজাহ্নবী যমুনা টাইপ অবস্থা হয়। আর তাই তো নিজের হাতে বানিয়েই এই সুখ উপছে উঠল। নিজের রান্নাঘরে।

প্রথম নিজের রান্নাঘরে মনে পড়ে যায় দিদির কথা। মা সেদিন ক্রিসমাসের আগের দিনে কেক বানাচ্ছিল। রাণীয়া সেদিন মায়ের কাছে কেক বানানো শিখতে ব্যস্ত। মিঠি কেবলই তাকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছিল।

ধুসকী সব শিখছিসতার চাইতে চল আমার সঙ্গে অঙ্ক করতে। সেই যে কোন অঙ্কটা মিলছিল না তোর?

দিদি তুই সবসময়য় পড়াশোনা নিয়ে সিরিয়াস। আমার কী আর পড়াশোনা ভালো লাগেনাতাই বলে সারাদিন পড়াশোনাঅসহ্য।

রাণীয়া আর মিঠির এই দূরত্ব আজকের নয়। জলখাবারে এ মেয়ে দুধ মুড়ি খাবে তো অন্যজন খাবে ব্রেড। লুচির সঙ্গে একজন বেগুনভাজা তো অন্যজন আলুভাজা। এই বৈপরীত্য চিরকালীন। অনসূয়া ভাবেন ,বড় হলে এই দূরত্ব একদিন ঠিক কমে আসবে। মিঠির নিজের সংসার হলে সে রান্নাঘরে ঢুকতে বাধ্য। স্বামীসন্তানসংসার পেলে সব মেয়েরাই বদলে যায়।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত