আনুমানিক পঠনকাল: < 1 মিনিটআমাকে টেনেছিল মধ্যাকর্ষণ। আমাকে ডেকেছিল সঙ্গদোষ। নামতে নামতেও আত্মীয়স্বজনের হাতে আমি শুঁয়োপোকা ডলে দিয়েছি।
নামতে নামতে আমি ষড়রিপু খরচা করেছি
প্রেমের কবিতা লিখছি অতি চমৎকার–
মৃতদের প্রেমরসে উডপেন্সিল ডুবিয়ে…
এখানে যে সবুজ চোখের শয়তান, মনে রেখো,আমি ওকে ভালোবাসা বলে ডেকে থাকি
আমি মফস্বলকে দেখি তোমার চোখ দিয়ে।
যেমন,ট্রামের জানলা দিয়ে,মোড় ঘুরলেই,
পুরনো বইয়ের দোকান।হুইটম্যানের ওপর ধুলো বসে রয়েছে।
সূর্যাস্তে খেলার মাঠ দেখি। গাছের কোটরে সাপ থাকলেও থাকতে পারে। দেখি।
শাঁখ আর হারমোনিয়াম একসঙ্গে বেজে উঠল।
ঘরের বউরা ফরশা শাড়ি পরে পাড়া বেড়াতে যাচ্ছে।
অসুস্থ বাবাকে নিয়ে সদর হাসপাতালের দিকে প্রাণপণ ছুটছে যুবক।
দেখি, রেলগেটের স্টেশনারি দোকানে কুচো মেয়ের হাতে শুড়শুড়ি দিল বুড়ো দোকানি।
সাইকেল রেখে ট্রেন ধরতে দৌড়োল কেউ, শহরের আলো নেবে বলে।
সমাজব্যবস্থাকে গালি দিতে দিতে কাঁচা নর্দমার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সাড়ে পাঁচফুটের এক জমাট অন্ধকার।
বাচ্চারা হাতমুখ ধুয়ে টিভি খুলে বসল এই অসময়ে।
একা বসে আছি আলো এসে বসে পাশে
আমরা দুজন ও ক্যাপুচিনো,মাঘমাসে ।
অন্ধকার তো প্রেমিকের মতো ডাকে
আমার পাপোশে মালাখানি তার রাখে
আগুন জ্বেলে সে পুড়িয়েছে শৈশব,
কফিশপে,যাই। চিনে রেস্তরাঁ যাই,
ওরই সঙ্গে। হাত ছাড়ি,ফিরে চাই।
মিলন,বিরহ, ঘটনাবহুল লাগে!
ভয়ে, খুব ভয়ে ফাঁপা গোধূলিরা জাগে!
একা বসে থাকি।আলোও বসে না পাশে।
ফাল্গুন আসে।বিষ মিশে যায় শ্বাসে।
রাগরাগিণীর ঘরে জন্ম চৈতালী চট্টোপাধ্যায়ের। মা শচীনকর্তার ভাগ্নি বিভাস কুমারী দেববর্মণ। ত্রিপুরা রাজপরিবারের মেয়ে। বাবা তীব্রভাবে সৎ, কল্পনাপ্রবণ হরিপদ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। চৈতালী বর্ণপরিচয়ের দ্বিতীয়ভাগ না পড়ে, নিজেই যুক্তাক্ষর শিখে নিয়েছিলেন। বইয়ের সরবরাহ যোগাতে যোগাতে ক্লান্ত বাবা-মাকে ক্ষান্ত করতে ছোট মেয়েটি উল্টোভাবে ধরে বই পড়ত, সময় বেশি লাগবে বলে। যাপনে ছিল, আজও আছে কবিতা আর তীব্র অনিশ্চয়। উত্তর কলকাতার সরু গলি, উঠোন, ময়ূরের খাঁচা, রুপোলি মাছ ছিটকে-আসা গঙ্গাজলের কল, রোমান ক্যাথলিক স্কুলের চ্যাপেল ও অর্গানের অনুষঙ্গ, এসবই ভাসতে ভাসতে তাঁর কবিতার অভিমুখী হয়। বিষয় পদার্থবিদ্যা হলেও বিষয়ান্তর, সাহিত্য। আর, পেশা ছিল প্রখ্যাত বিজ্ঞাপন সংস্থায় কপিরাইটিং। বহুল প্রচারিত সব সংবাদপত্রে একের পর এক লিখে চলেছেন নানাকিছু। কবিতা,গল্প ও প্রবন্ধবই প্রকাশ পেয়েছে অভিজাত প্রকাশনা থেকে। পেয়েছেন সরকারি (কেন্দ্রীয় ও পশ্চিমবঙ্গের), বেসরকারি বিভিন্ন সম্মাননা। ২০২০ সালে ১১ জানুয়ারি চৈতালী চট্টোপাধ্যায়কে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রবর্তিত বিভা চট্টোপাধ্যায় স্মারক সম্মান অর্পণ করা হয়েছিল বাংলা কবিতায় তাঁর সামগ্রিক অবদান স্মরণে রেখে।
Related