দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১০ বিশ্বকাপ জয়ী স্পেন ২০১৪’র ব্রাজিল বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে বিদায় নেয়। রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রত্যাশার ধারে কাছে যেতে পারেনি। শেষ ষোলোয় থামে যাত্রা। ওই স্পেন তরুণ এক দল নিয়ে কাতার বিশ্বকাপের ফেবারিট তমকা পেয়ে গেছে।
মাস্টার মাইন্ড মিডফিল্ডার সের্গিও বুসকেটস দলটির অধিনায়ক। যিনি ফুটবলের সব গোপন রহস্য জানেন! যিনি বুদ্ধিতে, কৌশলে অনন্য। ওই বুসকেটস কাতার বিশ্বকাপে স্পেনের দল, কোচ, বিশ্বকাপের সম্ভাবনাসহ নানা বিষয় নিয়ে ফিফাকে একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। যার মূল অংশ তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: জাতীয় দলে অনেকদিন খেলছেন। এই দল নিয়ে কী বলবেন?
বুসকেটস: আমার চোখে, দলটা খুবই ভালো। একটু তরুণ তবে আমার মতো কিছু অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ও আছে। তরুণ-অভিজ্ঞের ভালো মিশেল মনে করি। যারা নিজ নিজ দায়িত্ব খুব ভালো করে জানে, সেটা পালন করতে চায় এবং দলে কিছু মাত্রা যোগ করতে চায়। এটাই দলটাকে লড়াকু বানিয়েছে। ওরা তরুণ, ওরা খেলতে চায়, ওদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে, অভিজ্ঞদের থেকে শিখতে চায়। ওদের পরামর্শ দেওয়া যায়। ওরা দলের এবং কোচের কাজটা সহজ করতে সব করতে প্রস্তুত।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপের মতো আসরে যখন খেলেন প্রত্যাশা কী থাকে?
বুসকেটস: আমাদের প্রত্যাশা সবসময়ই বড় থাকে। কারণ স্পেনের ভক্তরা আমাদের থেকে সেরাটা প্রত্যাশা করে। আমাদের ভালো একটা অধ্যায় আছে। পরপর দুটো ইউরো, একটি বিশ্বকাপ জিতেছি। আবার অনেকবার হতাশও হয়েছি। তবে আমার মনে হয় আবার স্পেনের ভক্তদের আশা দিতে পেরেছি এবং তারা আমাদের নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আমি নিশ্চিত প্রতিপক্ষ আমাদের সম্মান করবে, ভক্তরা আমাদের সমর্থন করবে এবং সবকিছু অসাধারণভাবে এগোবে। আশা করছি, আমাদের নিজস্ব স্টাইলে খেলতে পারবো এবং সকলের প্রত্যাশা মেটাতে পারবো।
প্রশ্ন: ২০১০ বিশ্বকাপ জয়ী দলের কেবল আপনিই টিকে আছেন।
বুসকেটস: এটাই ফুটবল এবং এটাই জীবন, তাই না? অনেক বছরই তো পেরিয়ে গেছে। বিশ্বকাপ জয়ী ওই দলটার সবচেয়ে তরুণ কিংবা অন্যতম তরুণ সদস্য ছিলাম আমি। এখন দলটার সবচেয়ে অভিজ্ঞ। ওই টুর্নামেন্টের পর এখন পর্যন্ত খেলতে পেরে এবং অনেকগুলো টুর্নামেন্টের অভিজ্ঞতা অর্জন পেরে আমি গর্বিত। চেষ্টা করবো এই দলটাকে সহায়তা করতে এবং আরেকটি শিরোপা জিততে। ওই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই কারণ আমরা জানি যে, আমরা শক্তিশালী দল এবং সাম্প্রতিক টুর্নামেন্টে আমরা সেটাই দেখিয়েছি।
প্রশ্ন: এই দলে আপনার ভূমিকা কেমন? ওদের কি পরামর্শ দেন?
বুসকেটস: অবশ্যই, শুধু তো বিশ্বকাপের ফাইনাল জেতা নয়, এর বাইরে জাতীয় দলের হয়ে আমার তিক্ত-মধুর বহু অভিজ্ঞতা আছে। শুধু অধিনায়ক হিসেবে নয় খেলোয়াড় হিসেবে এবং অনেকগুলো ম্যাচ ও টুর্নামেন্ট খেলার আলোকে আমি চেষ্টা করি দলটাকে সহায়তা করতে।
প্রশ্ন: আপনাকে নিয়ে একটা কথা প্রচলিত আছে। জানি না আপনি জানেন কিনা, ‘পুরো ম্যাচ দেখে হয়তো বুসকেটসকে খুঁজে পাবেন না। কিন্তু বুসকেটসকে দেখলে পুরো ম্যাচ বুঝতে পারবেন।’ এটা নিয়ে কী বলবেন?
বুসকেটস: জাতীয় দল এবং ক্লাবের হয়ে আমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পজিশনে খেলি। এমন একটা জায়গা ধরে খেলি, যেখান থেকে ম্যাচের বড় একটা অংশ পরিচালিত হয়। দলটাকে আমার গোছাতে হয়, ওদের খেলাতে হয়, দিক নির্দেশনা দিতে হয়। আমি জানি না, গোল কিংবা ফলাফলের বিবেচনায় আমার জায়গাটাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয় কিনা। তবে আমি মনে করি, গোছালো এবং শক্ত দল হিসেবে আমার জায়গাটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বলসহ কিংবা বল ছাড়া ম্যাচটা মাঝমাঠ থেকে পরিচালিত হয়।
আরো পড়ুন: বিশ্বকাপ সাক্ষাৎকার: বিশ্বকাপ মানেই অনুপ্রেরণা: রুবেন দিয়াজ
প্রশ্ন: আপনি জাভি-ইনিয়েস্তোর মতো ফুটবলারের সঙ্গে খেলেছেন। আপনার এমন উন্নতির পেছনে নিশ্চয় তাদের ভূমিকা আছে।
বুসকেটস: অবশ্যই। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেললে আপনি তৈরি হবেন, শিখবেন, ভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাবেন। তাদের সঙ্গে খেলতে পেরে এবং সাফল্য পেয়ে আমি ভাগ্যবান। আমরা শিরোপা জিতেছি, একসঙ্গে শিরোপার জন্য লড়েছি। খুব কম ফুটবলারের বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ মিটেছে। আমি আমার সতীর্থদের কাছে সেজন্য কৃতজ্ঞ। এই দল নিয়েও আমি খুব খুশি। ওরা তরুণ সত্যি কিন্তু অসাধারণ ফুটবলার, বিশ্বের সেরা। তাদের স্পেনের ওই অভিজ্ঞদের মতো ক্যারিয়ার হবে আশা করছি।’
প্রশ্ন: দলের অধিনায়ক করা হয়েছে, বিশ্বকাপে কি এটা চাপ হয়ে দাঁড়াবে?
বুসকেটস: ক্যারিয়ার জুড়েই তো চাপ ছিল। আপনি যখন স্পেনের মতো দেশে কিংবা বার্সার মতো এলিট ক্লাবে খেলবেন প্রতিদিন নতুন পরীক্ষা দিতে হবে, প্রতিদিন সর্বোচ্চ পর্যায়ের পারফরম্যান্স দিতে হবে, প্রতিদিন চাপ নিতে হবে। আমি মনে করি ওই চাপ আমি নিতে পারি। সেজন্যই আমি এখানে, সেজন্যই আমার এতো অভিজ্ঞতা, সেজন্যই আমার ভালো একটা ক্যারিয়ার হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ হলো দলের ভালোর জন্য খেলা। সেজন্য আপনাকে দলগত ও ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তুত হতে হবে। দলীয়ভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। আমি মনে করি, আমরা প্রস্তুত।
প্রশ্ন: কোচ লুইস এনরিকে কিছু নতুন খেলোয়াড় ডেকেছেন। তাদের থেকে কেমন প্রত্যাশা করা যায় একটু বলবেন?
বুসকেটস: তারা দলে ঢুকেছে মানে ক্লাবের হয়ে দারুণ খেলেছে। কোচের এবং দলের পরিকল্পনার সঙ্গে যায় এমন দক্ষতা তাদের আছে এবং তারা তা দেখিয়েছে। লুইস অনেক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, বয়স তার কাছে একটা সংখ্যা মাত্র। সেজন্যই দলে গাভির মতো ১৭ বছরের একজন খেলছে। সেজন্যই আনুস ফাতি, পেদ্রির মতো অনেক ফুটবলার আমাদের দলে। তাদের সবার কিছু না কিছু দক্ষতা আছে, যেটা তারা মাঠে দেখাচ্ছে এবং দল হিসেবে আমাদের শক্তিশালী করে তুলেছে। দলে এমন অনেক খেলোয়াড় আছে যারা ভিন্ন ভিন্ন পজিশনে খেলতে পারে।
প্রশ্ন: আপনি ক’জন বার্সার খেলোয়াড়ের নাম বললেন। জাতীয় দলে রিয়াল মাদ্রিদেরও উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় থাকে। এই আলাপের বাইরে গিয়ে বার্সার তরুণদের ফুটবল শিক্ষা নিয়ে কিছু বলবেন?
বুসকেটস: আমাদের খেলার নিজস্ব ধরন আছে। তা হলো পায়ে বল রাখা এবং যথা সম্ভব গোলের সুযোগ তৈরি করা। এর মানে এই নয় যে, বল পায়ে না থাকলে দ্রুত তা উদ্ধারের চেষ্টা করবো না। তখন আরও আগ্রাসী হতে হবে এবং জায়গা ছাড়া যাবে না। ভিসেন্তে দেল বক্সের সময়ও বার্সার বেশি খেলোয়াড় জাতীয় দলে ছিল। কারণ বার্সায় বেশি স্পেনের ফুটবলার ছিল। আমাদের বর্তমান কোচও আগে বার্সার কোচ ছিলেন। এটা দলকে সহায়তা করে। কারণ ক্লাবে এবং জাতীয় দলে আমরা একই ছকে খেলি।
প্রশ্ন: এমন একজনের নাম বুলন, যে এখনও অতো বড় ফুটবলার নন। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপের পর ওই খ্যাতি পেয়ে যাবেন।
বুসকেটস: কাতার বিশ্বকাপে আমরা যাকে পেতে যাচ্ছি সে হলো পেদ্রি। কারণ সে খুবই তরুণ এবং সামর্থ্যের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পথে আছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গেনে কেমন খেলোয়াড় এটাই সে দেখাবে।
কৃতজ্ঞতা: সমকাল