Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,মেশকাত

শারদ সংখ্যা গল্প: সাক্ষী ছিল পক্ষীসকল । বাদল সৈয়দ

Reading Time: 10 minutes

দুপুরে ঘুমানো আমার অনেক পুরানো অভ্যাস। যত ব্যস্তই থাকি না কেন, আধঘণ্টা আমাকে ঘুমাতেই হবে। এ সময় টেলিফোনের রিসিভার তোলা থাকে। মোবাইল ফোন সাইলেন্ট করা থাকে। পর্দা টেনে ঘর অন্ধকার করা হয়। মোটামুটি সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘ভাতঘুম’ যাকে বলে।
সেদিনও এরকম ভাত ঘুম দিয়ে উঠেছি। তারপর হাত-মুখ ধুয়ে মোবাইল চেক করে দেখি অনেকগুলো মিস্ড্ কল্। করেছে ডাক্তার মেশকাত। একটু অবাক হলাম! চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এ ডাক্তারের সাথে আমার তেমন ঘনিষ্ঠতা নেই। মাঝে মাঝে সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা হলে সামান্য কথাবার্তা হয় মাত্র। সে কী প্রয়োজনে এতবার ফোন করেছে?
ভাবতে ভাবতে কল্ ব্যাক করলাম।
ওপাশ থেকে মেশকাত সাড়া দিল।
বাদল ভাই, স্যরি বিরক্ত করলাম বোধ হয়।
না, না, বলেন কী ব্যাপার?
ভাই আপনি কি একবার আমাদের হাসপাতালে আসতে পারবেন?
এবার আমার আরও অবাক হওয়ার পালা। ওর হাসপাতালে আমার কী কাজ? ওরা মূলত কাজ করে পোস্টমর্টেম নিয়ে। এর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তারপর বুক ধক্ করে উঠল! তাহলে কি আমার পরিচিত কেউ মর্গে আছে?
আমি উদ্বেগ নিয়ে বললাম।
মেশকাত এনিথিং রং? পরিচিত কারও কোনো সমস্যা হয়েছে?
না, না, বাদল ভাই। একটা ব্যাপার একটু ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে! তাই আপনার সাথে আলাপ করতে চাইছি।
কী ব্যাপারে মেশকাত?
গত রাতে আমাদের এখানে একটা লাশ এসেছে। সেটার ব্যাপারে কথা বলতে চাই। আপনি ভয় পাবেন না। এটা পরিচিত কারও লাশ নয়। কিন্তু ব্যাপারটা কেমন যেন ইন্টারেস্টিং! মনে হচ্ছে আপনি পুরো বিষয়টা দেখলে কিছুটা ধারণা দিতে পারবেন।
আসলে ব্যাপারটা কী? ওকে, আমি আসছি। সামনা-সামনি কথা বলব।
মেশকাতের অফিসে যখন পৌঁছালাম তখন শেষ বিকেল। এ সময় তার অফিসে থাকার কথা না। দুপুরেই ওর অফিস শেষ। তারপরও সে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। মনে হচ্ছে সে যা বলতে চায়, তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
আমি ওর সামনের চেয়ারে বসতে বসতে বললাম।
এবার বলো দেখি, আসলে কী ব্যাপার?
বাদল ভাই, আগে চা খান, তারপর বলি।
সে বেল টিপল। সাথে সাথে একজন আর্দালি ট্রে হাতে চা নিয়ে ঢুকল। মনে হয় আগেই বলা ছিল। তাই বেল টিপতেই চায়ের আগমন। আমি হাসতে হাসতে বললাম।
মনে হচ্ছে তুমি বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলতে চাও। চা পর্যন্ত রেডি করে রেখেছ!
মেশকাত মৃদু হাসল, তারপর বলল-
বাদল ভাই, গত রাতে আমাদের এখানে একটি বেওয়ারিশ লাশ এসেছে। মিসকিন শাহের মাজারে মরে পড়ে ছিল। পুলিশ আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়। তাদের বেওয়ারিশ লাশের পোস্টমর্টেম করে রেকর্ড রাখতে হয়। আমরা দেখলাম লোকটি মারা গেছে নিউমোনিয়ায়। নাথিং এবনরমাল। ন্যাচারাল ডেথ।
আমি কিছুটা বিস্ময় নিয়ে বললাম।
এর সাথে আমার সম্পর্ক কী?
মেশকাত জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল, সেখানে নরম সন্ধ্যার আলো। কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে সে মৃদু গলায় বলল-
লাশের ঊরুতে একটি গুলি পাওয়া গেছে। সম্ভবত অপারেশন করা হয়েছিল, কিন্তু গুলিটি বের করা যায়নি…
আমি তাকে থামিয়ে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললাম-
কিছু মনে করো না মেশকাত, ক্যান ইউ কাম টু দ্য বিজনেস? আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাকে কেন ডেকেছ তাও বুঝছি না।
মেশকাত কিছুটা ঝুঁকে এসে বলল, বাদল ভাই, আমাদের রিপোর্ট বলছে গুলিটির বয়স প্রায় আটচল্লিশ বছর।
তো? আমি প্রশ্ন করলাম।
এবার মেশকাতই কিছুটা অসহিষ্ণু গলায় বলল-
ভাই, আটচল্লিশ বছরের পুরানো গুলির মানে বুঝতে পারছেন?
স্যরি, মেশকাত, পারছি না।
আট চল্লিশ বছর আগে মানে উনিশ শ’ একাত্তর সাল, বাদল ভাই।
এবার আমি নড়েচড়ে বসলাম।
তুমি কী বলতে চাইছ মেশকাত?
ভদ্রলোক মনে হয় একাত্তরে গুলি খেয়েছিলেন। সম্ভবত আজ সকালে মিসকিন শাহের মাজারে যে অসহায় মানুষটি নিঃসঙ্গ এবং অতি দরিদ্র অবস্থায় মারা গেছেন তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা… বলতে বলতে সে সামনে ঝুঁকে আসে, তারপর দৃঢ়কণ্ঠে বলে, বাদল ভাই, আপনি হয়তো জানেন না, একাত্তরের ২৭ আগস্ট আমার বাবাকে আমাদের রেলওয়ে কলোনির বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর আর তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। হয়তো তিনিও এরকম বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে কোথাও পড়ে ছিলেন। কিন্তু এঁর ক্ষেত্রে আমি তা হতে দিব না। আমি তাঁর ফ্যামিলিকে খুঁজে বের করে তাদের হাতে লাশ তুলে দিব, যাতে অন্তত তিনি প্রিয়জনদের হাতে সমাহিত হন।
আমি আমতা আমতা করে বলি-
ঘটনা তো অন্যরকমও হতে পারে মেশকাত।
কী রকম?
একাত্তরে শুধু মুক্তিযোদ্ধারা গুলি খেয়েছেন তা কিন্তু নয়, অন্যপক্ষও…
আমার কথা হাতের ঝাঁপটায় থামিয়ে দিয়ে মেশকাত বলল-
বুঝেছি, আপনি বলতে চাইছেন, লোকটি রাজাকারও হতে পারে তাই না?
হ্যাঁ, আমি তাই বলতে চাইছি।
না, ভাই, তাঁর রাজাকার হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আমরা তাঁর শরীরে পাওয়া বুলেটটি পুলিশের ফরেনসিক বিভাগে পাঠিয়েছি। জানেনই তো পেশাগত কারণে ওদের সাথে আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো। তাঁরা জানিয়েছেন বুলেটটি ‘ড্রাগোনোভ’ স্নাইপার রাইফেলের। পাকবাহিনীর খুব হাই প্রোফাইল সৈনিকেরাই কেবল এ রাইফেলগুলো ব্যবহার করত। যেমন ধরুন খুব উচ্চপদস্থ কারও দেহরক্ষীদের এ রাইফেল মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাই আমি নিশ্চিত ভদ্রলোক মুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার নন।
আমি তার যুক্তি মেনে নিয়ে বলি-
কিন্তু এখানে আমার কাজ কী?
ভাই, আমি তো বলেছি লাশটিকে ফ্যামিলির কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই।
সেটা কীভাবে সম্ভব?
সে জন্যই তো আপনাকে ডাকা। ড্রাগোনোভ রাইফেলের গুলি ব্যবহৃত হয়েছে মানে ভদ্রলোক কোনো ব্যতিক্রমধর্মী লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। মাঠেঘাটে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকবাহিনীর যে অসংখ্য সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে, সম্ভবত এটা সে রকম নয়। এটা খুব সম্ভব কোনো উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে আক্রমণ করার জন্য পরিচালিত অভিযান। যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহরক্ষীরা স্নাইপার রাইফেলের গুলি ছুড়েছিল। আপনার তো অনেক ‘একাত্তর’ বিশেষজ্ঞের সাথে পরিচয় আছে, আপনি কি তাঁদের জিজ্ঞেস করতে পারেন, সে রকম কোনো ঘটনা ঘটেছিল কিনা? যদি ঘটে সে অভিযানের কেউ বেঁচে আছেন কিনা? যদি থাকেন, তাহলে হয়তো তিনি এ ভদ্রলোককে চিনতেও পারেন। তাঁরা হয়তো সহযোদ্ধা ছিলেন।
এটা কি সম্ভব? আমি অনিশ্চিত গলায় বললাম।
বাদল ভাই, চেষ্টা করতে সমস্যা কী? একটা সূত্র যেহেতু আছে, আমরা ট্রাই করে দেখতে পারি। আমরা তো অন্তত এটা জানি যে, ড্রাগোনোভ রাইফেল শুধু হাই প্রোফাইল দায়িত্বে থাকা সৈনিকরা ব্যবহার করত। তাদের সাথে তো খন্ডযুদ্ধ খুব বেশি হওয়ার কথা না। আপনি চেষ্টা করুন। আমার মনে হয় সিরিয়াসলি খুঁজলে এরকম মুখোমুখি যুদ্ধের খবর বের করা যাবে। তবে সময় বেশি নেই। আমি হাসপাতাল থেকে পাঁচ দিন সময় নিতে পেরেছি। এরপর লাশটি আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে দিয়ে দেওয়া হবে। ভদ্রলোকের ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। মাজারে অনেকেই তাঁকে নামাজ পড়তে দেখেছেন। ইনফ্যাক্ট তাঁরাই পুলিশকে তাঁর মৃত্যুর খবর দেন।
আমি কোনো ধরনের সাহায্য করতে পারব বলে মেশকাতকে আশ্বস্ত করতে পারলাম না। তবে চেষ্টা করার কথা দিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। প্রথমেই ফোন করলাম ইসমাইল মজুমদারকে। তিনি বয়সে আমার বছর পাঁচেকের বড়। ভদ্রলোককে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চলন্ত এনসাইক্লোপেডিয়া বলা যায়। গত প্রায় ত্রিশ বছর ধরে তিনি সারা দেশ ঘুরে ঘুরে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। এ বিষয়ে তাঁর লেখা বইকে মোস্ট অথেনটিক বিবেচনা করা হয়। চট্টগ্রামের বধ্যভূমি নিয়ে কাজ করার সময় তাঁর সাথে আমার পরিচয়। তারপর ঘনিষ্ঠতা। আমরা পরে একসাথে কিছু কাজও করেছি।
তিনি আমার প্রশ্নের সাথে সাথে উত্তর দিলেন- বাদল, তোমার ডাক্তার বন্ধু ঠিকই বলেছেন। এ রাশিয়ান রাইফেল পাকিস্তানিদের হাতে আসে একাত্তরের অক্টোবরের পর। যদিও কীভাবে এটা তারা পেল তা পরিষ্কার নয়। তখনকার পরিস্থতিতে রাশিয়ার তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করার কথা নয়। সম্ভবত তারা এটি সংগ্রহ করেছিল থার্ড পার্টির মাধ্যমে। এ রকম থার্ড পার্টির অস্ত্র বিক্রি খুব কমন একটি ব্যাপার। যাই হোক, অক্টোবরে ঢাকায় রাইফেলগুলো আনা হয় উচ্চপদস্থ পাকি বদমাশ আর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডোদের ব্যবহারের জন্য। ঢাকার বাইরে এগুলোর ব্যবহার তেমন হয়নি। তবে আমি ঠিক জানি না কোনো খন্ডযুদ্ধে এটা ব্যবহৃত হয়েছিল কিনা? আমাকে একদিন সময় দাও। খোঁজ নিয়ে দেখি।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙে ইসমাইল মজুমদারের ফোনে। তাঁকে বেশ উত্তেজিত মনে হয়!
বাদল, শোনো, একটা পাত্তা মনে হয় পাওয়া গেছে…
তাঁর উত্তেজনা আমাকেও টানটান করে তোলে! -কী পাত্তা ভাইজান?
তুমি তো ক্রাক প্লাটুনের কথা জানো তাই না? একাত্তরে খালেদ মোশাররফের উদ্যোগে ১৭ জনের একটি ছোট্ট গেরিলা ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছিল…
আমি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাঁকে থামিয়ে দিই, -আমি এ ব্যাপারে ভালোভাবে জানি ভাইজান। ওই সময় জুন মাসে গঠিত দলটা কর্নেল হায়দারের নেতৃত্বে ঢাকায় ঢুকে গেরিলা অপারেশন শুরু করে। কিন্তু এর সাথে আমাদের মৃত ভদ্রলোকের সম্পর্ক কী? তিনি কি এ প্লাটুনের সদস্য ছিলেন? তাও তো সম্ভব না। কারণ ক্রাক প্লাটুনের কার্যক্রম আগস্ট মাসে এর উল্লেখযোগ্য সদস্যরা ধরা পড়ার পর বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় পাকবাহিনীর হাতে শহিদ হন রুমী, বদিউল আলমসহ আরও অনেকে। আর আমাদের ভদ্রলোক সম্ভত গুলি খেয়েছিলেন অক্টোবরের পর। কারণ ড্রাগোনোভ রাইফেল এর আগে পাকবাহিনীর হাতে ছিল না…
আরে থামো তো মিয়া! এবার ইসমাইল ভাই-ই আমাকে প্রায় ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললেন, এইখানেই তুমি ভুল করছ।
কোথায় ভুল করছি ভাইজান?
এই যে বললে আগস্টে ক্রাক প্লাটুনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আসলে এটা ঠিক না। সেপ্টেম্বরেই ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে ওঠা ফিনিক্স পাখির মতো ক্রাক প্লাটুন আবার আবির্ভূত হয়। এবার প্রথমে তাঁরা সংখ্যায় ছিলেন ত্রিশজন। তারপর আরও অনেকেই তাঁদের সাথে যোগ দেন।
আমি কিছুটা অসহিষ্ণু কণ্ঠে বলি,
ভাইজান, এর সাথে আমাদের ইস্যুর সম্পর্ক কী যদি পরিষ্কার করতেন ভালো হতো।
একাত্তর সালের ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ক্রাক প্লাটুন ঢাকা রেডিও অফিস আক্রমণ করে। সেখানে সম্ভবত ড্রাগোনোভ রাইফেল ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ তাঁদের সে অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল এবং সাতজন গেরিলা সদস্য নিহত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আর্কাইভ বলছে, তাঁরা সবাই নিহত হয়েছিলেন অনেক দূর থেকে ছোড়া গুলিতে। সম্ভবত পাক স্নাইপাররা রেডিও অফিসের ছাদ থেকে গুলি ছুড়েছিল। সে ক্ষেত্রে ড্রাগোনোভ রাইফেলই ছিল বদমাশদের একমাত্র ভরসা। তাদের কাছে আর কোনো দূরপাল্লার রাইফেলের সাপ্লাই ছিল না। তাই আমার মনে হচ্ছে আমাদের ভদ্রলোক হয়তো রেডিও অফিস আক্রমণে ছিলেন। সম্ভবত তিনি ক্রাক প্লাটুনের দ্বিতীয় পর্বে তাদের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। পসিবলি হি ওয়াজ আ ইয়াং ফিনিক্স হু মেইড কামব্যাক ফর রিভেঞ্জ!
কিন্তু আমরা তা নিশ্চিত হবো কীভাবে ভাইজান?
উপায় আছে।
কী উপায়?
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আর্কাইভ থেকে জেনেছি, রেডিও অফিস হামলায় গেরিলাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন ক্যাপ্টেন তৌফিক। পরে তিনি কর্নেল হিসেবে আর্মি থেকে অবসর নেন। সৌভাগ্যবশত অসুস্থ হলেও তিনি বেঁচে আছেন। তুমি এক কাজ করো, মৃত ভদ্রলোকের কয়েকটি ছবি তুলে নিয়ে ঢাকায় চলে আসো। খুব ক্লোজ অ্যাঙ্গেল থেকে চেহারার ছবি তুলবে। তারপর তাতে বিশেষ সফটওয়ার ব্যবহার করে আরও কিছু ইমেজ তৈরি করবে। যেমন দাড়ি না থাকলে তাঁর চেহারা কেমন হতো, গোঁফ থাকলে কেমন হতো, একদম ক্লিন শেভড হলে কেমন হতো, খোঁচা খোঁচা দাড়িতে কেমন হতো, চুল ঘাড় অব্দি লম্বা হলে কেমন হতো, তাঁর আনুমানিক বয়স ধরে নিয়ে তা থেকে প্রায় আটচল্লিশ বছর কম হলে তাঁর চেহারা কেমন দাঁড়াতো- এ রকম বিভিন্ন ইমেজ। তুমি পুলিশে কাজ করেন এমন কাউকে অনুরোধ করলেই তাঁরা কাজটি করে দিতে পারবেন। অপরাধী শনাক্তের জন্য এ কাজটি তাঁরা প্রায়ই করেন। তুমি এলে আমরা একসাথে কর্নেল তৌফিকের বাসায় যাব। এর মধ্যে আমি তাঁর সাথে কথা বলে রাখছি। অনেক আগে থেকেই আমরা পূর্বপরিচিত।
ইসমাইল ভাইয়ের কথা মতো একগুচ্ছ ছবি নিয়ে সেদিন সন্ধ্যায় ঢাকা পৌঁছালাম। তিনি এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছিলেন। আমাকে দেখেই বললেন, আগে চলো কর্নেল সাহেবের বাসায় যাই। তিনি ঠিক রাত দশটায় ঘুমাতে যান। এরপর তাঁকে পাওয়া যাবে না।
ইস্কাটনে আমরা যখন কর্নেল তৌফিকের কাছে পৌঁছলাম, তখন প্রায় রাত ন’টা বেজে গেছে। রাস্তায় জ্যামের কারণে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়েছে। কর্নেল সাহেব বয়সের কারণে বেশ অসুস্থ। হাঁটাচলা করতে পারেন না। হুইল চেয়ার ব্যবহার করেন। তবে চেহারায় রাগী ভাব আর তাকানোর ভঙ্গি দেখে আঁচ করা যায় এক সময় দুঁদে আর্মি অফিসার ছিলেন।
আমাদের দেখেই বললেন-
জেন্টেলম্যান, ইউ আর অলরেডি লেট। জাস্ট কাম টু দ্য বিজনেস। ঘটনায় যাওয়ার দরকার নেই। ওটা আমি ইসমাইল সাহেবের কাছ থেকে আগেই শুনেছি। শুধু ছবিগুলো দেখান। তবে জানি না আমি আপনাদের কোনো সাহায্য করতে পারব কিনা?
আমরা কথা না বাড়িয়ে ছবিগুলো তাঁর হাতে দিলাম। তিনি খুব যত্ন করে সেগুলো সামনে রাখা একটি নিচু টেবিলে একে একে সাজালেন। প্রথমে মৃত ব্যক্তির বর্তমান ছবি, তারপর সফটওয়্যারের কারুকাজে একই ব্যক্তির বিভিন্ন রকম ছবি। দাড়িসহ, দাড়ি ছাড়া, গোঁফওয়ালা, গোঁফবিহীন, ক্লিন শেভড, খোঁচা খোঁচা দাড়ি, তারুণ্য, বয়স্ক সব ধরনের পরিবর্তিত ছবি আছে সেখানে। বৃদ্ধ কর্নেল ম্যাগনিফায়িং গ্লাস দিয়ে সবগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন। তারপর এক সময় ম্যাগনিফায়িং গ্লাসটি লাশটির বর্তমান চেহারায় গিয়ে থমকে দাঁড়াল! তিনি ঝুঁকে কী যেন দেখলেন। তারপর গ্লাসটি নিয়ে গেলেন মৃত মানুষটির তরুণ কালের সম্ভাব্য ছবির ওপর। কিছুক্ষণ সে ছবির দিকে গভীর মনোযোগের সাথে তাকিয়ে রইলেন। তারপর তিনি থর থর করে কেঁপে উঠলেন। তাঁর হাত থেকে ম্যাগনিফায়িং গ্লাসটি পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো! তিনি কোনোরকমে আমাদের দিকে চোখ তুলে অনেকটা নিজেকেই যেন বললেন, আনোয়ার, আনোয়ার…!!!
আমরা তাঁর দিকে ঝুঁকে এলাম। বললাম-
স্যার, আপনি কি চিনতে পারছেন উনি কে?
আমাদের কথার উত্তর না দিয়ে তিনি আবার লাশের ছবির ওপর গ্লাসটি ধরে রইলেন। তারপর আমাদের ইশারা করে বললেন, দেখুন দাড়ি-গোঁফের আড়ালে ঠোঁটের ওপরে ডান দিকে কাটা দাগ। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। গোঁফে ঢেকে আছে। কিন্তু আছে। বলতে বলতে তিনি ক্লিন শেভড ইমেজটি তুলে নিলেন, এখানে দেখুন গ্লাস ছাড়াই দাগটি পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।
আমরা দুটো ছবি ভালোভাবে খেয়াল করে বুঝলাম উনি ঠিকই বলছেন। মৃত মানুষটির ঠোঁটের ওপরে ডান দিকে কাটা দাগ আছে। তীব্র উত্তেজনা নিয়ে আমরা দু’জন প্রায় একসাথে আবার বললাম, স্যার আপনি কি ওনাকে চিনতে পেরেছেন?
ইয়েস জেন্টেলম্যান, ওর নাম আনোয়ার। আর্মিতে সৈনিক হিসেবে ছিল। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আমার পোস্টিং হওয়ার পর ওকে আমার ‘রানার’ বা দেহরক্ষী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। একাত্তরের এপ্রিলে আমি যখন পাকিস্তানি জান্তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি, তখন ও আমার সাথেই বিদ্রোহ করে। পরে আমরা খালেদ মোশাররফের সাথে যোগ দিই। তিনিই ক্রাক প্লাটুনে আমাদের রিক্রুট করেন। আমি ছিলাম ওই প্লাটুনের অধিনায়ক কর্নেল হায়দারের সেকেন্ড ইন কমান্ড। আনোয়ার তখনও আমার রানারের দায়িত্বে ছিল।
স্যার উনি কীভাবে গুলি খেয়েছিলেন? আপনি জানেন?
অনেক দূর থেকে যেন ‘প্রাচীন’ সৈনিকের কণ্ঠ ভেসে এলো।
হ্যাঁ জানি। ডিসেম্বরের দুই তারিখ আমরা ঢাকায় রেডিও অফিস আক্রমণ করি। ক্রাক প্লাটুনের এগারো জনের একটি দল। নেতৃত্বে ছিলাম আমি। কিন্তু আমরা জানতাম না যে, ওই অফিসের ছাদে পাকবাহিনী স্নাইপারদের পাহারা বসিয়েছিল! প্রথম গ্রেনেড চার্জের পরই আমরা সেসব স্নাইপারের দূরপাল্লার রাইফেলের মুখে পড়ি। আমাদের কিছুই করার ছিল না। ইট ওয়াজ আ টোটালি ওয়ান সাইডেড কমব্যাট! শত্রু অনেক দূরে, নিরাপদ আড়াল থেকে গুলি ছুড়ছে, আমাদের কিছুই করার নেই। আমাদের সাতজন যোদ্ধা স্পটেই মারা যান। আনোয়ারও গুলি খায় তখন। ইনফ্যাক্ট আমাকে বাঁচানোর জন্য সে নিজে গুলিটি বরণ করেছিল। শেষ মুহূর্তে ঝাঁপ দিয়ে সে আমাকে আড়াল না করলে আপনারা আজ আমাকে এখানে দেখতেন না, আমি থাকতাম কয়েক টন মাটির নিচে।
স্যার, আপনার কি ওনার ঠিকানা জানা আছে? আমরা রুদ্ধশ্বাসে জিজ্ঞেস করি।
হ্যাঁ, জানা আছে। যতদিন আমরা পাকিস্তান আর্মিতে ছিলাম ততদিন আমাদের সম্পর্ক ছিল খুব ফরমাল। রেগুলার আর্মিতে তাই থাকে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে এ সম্পর্ক অনেকটাই ইনফরমাল হয়ে যায়। জেন্টেলম্যান! যে কোনো মুক্তির লড়াইয়ে সবাই এক হয়ে যায়। সেখানে কোনো ভেদাভেদ থাকে না। অল আর ইন দ্য সেইম বোট ব্রাদার। যদিও আনোয়ার ঠিকই কিছুটা দূরত্ব রেখেই চলত। তারপরও আমরা অনেকটাই ইনফরমাল হয়ে যাই। তখন একদিন আমরা দু’জন নিজেদের ঠিকানা একজন আরেকজনকে দিই। কথা ছিল, যুদ্ধে আমাদের কেউ একজন মারা গেলে আরেকজন তাঁর বাড়িতে খবর পৌঁছে দেবে। তাই তাঁর ঠিকানা আমার জানা। একটি ডায়েরিতে আমি তা লিখে রেখেছিলাম। একাত্তরের রক্তঝরা দিনগুলোর স্মৃতি হিসেবে সেটি আমি সযত্নে রেখে দিয়েছি।
স্যার ঠিকানাটি দেবেন? আমরা তাঁকে সেখানে সমাহিত করতে চাই।
অবশ্যই জেন্টেলম্যান, আপনারা যা করছেন আমি তার জন্য সালাম জানাই। আমি নিজেই যেতাম। কিন্তু চলৎশক্তি রহিত হয়ে যাওয়ায় পারছি না।
কর্নেল তৌফিকের কাছ থেকে পাওয়া ঠিকানায় দেখা গেল মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ‘শোল্লা’ গ্রামে। সেখানে তাঁদের বাড়ি ‘মোল্লাবাড়ি’ নামে পরিচিত।
বৃদ্ধ সৈনিকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসব, এমন সময় তিনি বললেন, জেন্টেলম্যান একটু দাঁড়ান।
আমরা ঘুরে দাঁড়ালাম। তিনি বললেন, আপনাদের একজন কি আনোয়ারের লাশের ছবিটি নিয়ে আমার সামনে দাঁড়াবেন?
আমি অবাক হয়ে তাই করলাম। বুক বরাবর আনোয়ারের ছবি হাতে নিয়ে আমি দাঁড়াতেই কর্নেল তৌফিকের হাত হুইল চেয়ারে বসা অবস্থাতেই কপালে উঠে গেল!
একজন সৈনিক তাঁর প্রয়াত সহযোদ্ধাকে সামরিক কায়দায় স্যালুট জানাচ্ছেন…

চাঁদপুরের শোল্লা গ্রামে আমরা যখন পৌঁছলাম, তখন পরদিন সকাল আটটার মতো বাজে। একরাশ ক্লান্তি নিয়ে আমরা মোল্লাবাড়ির খোঁজে নামলাম। বেশি খুঁজতে হলো না। বাড়িটি বেশ পরিচিত। বংশপরম্পরায় এরা স্থানীয় জামে মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করেন।
স্থানীয় এক লোক আমাদের ওই বাড়ির মুরব্বির কাছে নিয়ে গেলেন। তিনিই এখন ইমামতি করেন। বয়স প্রায় সত্তর। তাঁকে আনোয়ারের কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি কিছুটা অবাক হয়ে বললেন, ও তো আমার চাচাতো ভাই! আমার চেয়ে কয়েক বছরের ছোট। কিন্তু সে তো অনেক দিন থেকে নিখোঁজ। আপনারা তাঁর ব্যাপারে কী জানতে চান?
পুরো ব্যাপারটি খুলে বলতেই ইমাম সাহেব ধপ করে একটি মোড়ায় বসে পড়লেন! তারপর পায়ের পাতার দিকে চোখ নামিয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। যখন আমাদের দিকে তাকালেন, তখন সে চোখগুলোয় তীব্র বিষাদ। তিনি বললেন, আহা! আমার ভাইটা কি মরার আগে পানি পেয়েছিল? আহা, আহা…
এবার তাঁর চোখ বাঁধ মানছে না। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বললেন, যুদ্ধের কয়েক মাস পর সে গ্রামে এসেছিল। খুঁড়িয়ে হাঁটত। যুদ্ধে নাকি গুলি খেয়েছিল। একাই থাকত। তার বাবা-মা আগেই মারা গিয়েছিলেন। আর কোনো ভাইবোনও ছিল না। কিছুদিন পর ওর মধ্যে মাথা খারাপের লক্ষণ দেখা দেয়। তারপর একদিন হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও আমরা তার কোনো খোঁজ পাইনি। এতদিন পর আপনারা…
বলতে বলতে তিনি দমকা কান্নার তোড়ে থেমে যান। এবারও অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে তিনি বললেন, ভাই সাহেব, আপনারা আমার ভাইয়ের লাশ নিয়ে আসুন। আমি ওর মা-বাবার পাশে তাঁকে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে লাশ নিয়ে আবার শোল্লা গ্রামে পৌঁছালাম একদিন পর। তখন প্রায় দুপুর। আমার সাথে আছেন ইসমাইল ভাই আর ডাক্তার মেশকাত। সেখানে পৌঁছে খুব মন খারাপ হয়ে গেল। জানাজায় এসেছেন খুব বেশি হলে পনেরো/বিশজন মানুষ! আহা! একজন বীর, যিনি জীবন বাজি রেখেছিলেন দেশ মাতৃকাকে মুক্ত করবেন বলে, কী নীরব প্রস্থান তাঁর!
লোক নেই, জন নেই, সরকারিভাবে স্বীকৃতি পাননি বলে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই…
খুব মন খারাপ করে আমরা ইমাম সাহেবের পেছনে জানাজায় দাঁড়ালাম। এমন সময় বেশ আওয়াজ করে ধুলা উড়িয়ে কয়েকটি গাড়ি ছুটে আসতে দেখা গেল। আমরা একটু অবাক হয়ে, জানাজা পড়া বন্ধ করে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। গাড়ির আওয়াজে ইমাম সাহেবের একামত শোনা যাবে না। আমাদের অবাক করে দিয়ে গাড়িগুলো জানাজার মাঠের সামনে এসে থামল। দেখা গেল সেগুলো আসলে ছোট্ট একটি মিলিটারি কনভয়। সবার সামনে থাকা জিপ থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার একজন অফিসার নেমে এলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি সৈনিক আনোয়ারের জানাজা?
আমরা অবাক হয়ে বললাম, হ্যাঁ, এটা তাঁর জানাজা।
অফিসার বললেন, কর্নেল তৌফিক কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের জিওসিকে পুরো ব্যাপারটি জানিয়েছেন। আনোয়ার ছিলেন রেগুলার আর্মিও সৈনিক। এরপর তিনি আনুগত্য পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তার মানে তখন তিনি বাংলাদেশ আর্মির সৈনিকে পরিণত হয়েছিলেন। তাই আমরা তাঁকে সামরিক কায়দায় সম্মান জানিয়ে বিদায় দিতে এসেছি!
তারপর আমাদের বিস্মিত চোখের সামনে আনোয়ারের লাশের খাটিয়ার সামনে একদল চৌকস সৈনিক সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ালেন।
সবার আগে লেফটেন্যান্ট কর্নেল। একটু পর শোনা গেল তাঁর বজ্রকণ্ঠ ‘গার্ড সাবধান হবে… সা আ আ ব ধা আআ ন…
তারপর উচ্চারিত হলো, গার্ড সশস্ত্র সালাম দেবে… সশস্ত্র অ অ অ সালাম…
সাথে সাথে ঠকাঠক আওয়াজের সাথে তাল মিলিয়ে এক ফুটের মতো ওপরে উঠে গেল সকল সম্মিলিত সামরিক পা এবং মুহূর্তে তাদের হাতের রাইফেলগুলো বুক বরাবর উঠে এলো।
বিউগলে বেজে উঠল করুণ সুর, তা থামতেই উচ্চারিত হলো… ফায়ার… ফায়ার…
সাথে সাথে সামনে শুয়ে থাকা বীরের সম্মানে আকাশ বিদীর্ণ করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হলো।
অকস্মাৎ সে গুলির শব্দে আশপাশের গাছ থেকে ডানা ঝাপটে উড়তে লাগল কিছু নাম না-জানা পাখি।
আমি সেই সব পাখির দিকে তাকিয়ে আছি, কিন্তু তাদের পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি না, সবকিছু কেমন যেন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।
চোখে মনে হয় কী যেন পড়েছে…

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>