শান্তময় গোস্বামী’র তিনটি কবিতা
ঋতুর মান অভিমান আসলে মৌনতা হল একটি গ্রীষ্মকাল। বৈশাখের সূর্য থেকে উষ্ণতা নিয়ে রঙিন হয় জারুল-পলাশ তুমি তখন ছায়া আর হিম-বাতাসের স্বপ্ন দেখো দু’পাশে ঘুমিয়ে থাকে আমার পাপ ও পরমাত্মা স্বপ্নবিভ্রমের কথা জেনে ফেলে আমার মূঢ়তা গ্রীষ্মে আমার কেবলই নিমফুল গন্ধের কথা মনে পড়ে… আসলে স্নিগ্ধতা হল একটি বর্ষাকাল। সে বর্ষাকালে তুমি মেঘ হয়ে যেতে পারো নিজের ইচ্ছেমতো, গোটা আষাঢ় শ্রাবণ ভেসে বেড়াতে পারো, মাঝে মাঝে ঝোড়ো হাওয়া আর ঘূর্ণিবাতাসের তর্জন রেখো মাঝে মাঝে ভেজাভাব ছেড়ে শরতের আগাম দূত হতে পারো কালিমাহীন নীল আকাশে মেঘেদের হাঁস বা গাভী হতে পারো… আসলে পবিত্রতা হল একটি শরৎকাল। সেই শরতে তুমি আগমনী হয়ে দেবীর বোধনে থেকো তোমার পবিত্র উচ্চারণে ছুঁয়ে যাবে উমা মায়ের আঁচলগন্ধ কাশের দোলা আর নতুন কাপড়ের উৎসব সাজে মাতন লাগবে ঝুমুরের সুর, রামকুমারের টপ্পা আর ঢাকের বোল মসজিদের সুরেলা আজানে মিশে যাবে বীরেন্দ্রবাবুর আগমনী গান… আসলে শিশিরভেজা যৌবন হল একটি হেমন্তকাল। অঘ্রাণের মাঝবিকেলে দুই পা ছড়িয়ে বসি পৃথিবীর বনে মেঘছেঁড়া বিরহে নবান্নের বাস… কার্তিকের খোলা মাঠে কুয়াশাঘেরা আমোদী সকাল… নতুন গুড়… মৌটুসি বুলবুলি স্মৃতির জটা ছাড়িয়ে আবার অন্নদাখুড়ি পিঠেপুলির গন্ধ ছড়ায় বাতাসে জেগে থাকে একতারা সুর হেমন্তের শেষ বিকেলে… আসলে আনন্দ হল একটি শীতকাল। সে শীতকালে তুমি পরিযায়ী বলাকা হয়ে যেতে পারো তোমার পালকের ওম থেকে দূর উজানের ঠিকানা লিখে নেবো ঘ্রাণে নেবো নানান বরফ সমুদ্র আর সরোবরের নুনজল মানদা মাসীর শালুক পুকুরে দেখবো তোমার গরবিনী সাঁতার এই জন্মে তোমার নানান চই চইয়ে খুঁজে পাবো পরজন্ম কথা… আসলে নির্ভেজাল প্রেম হল একটি বসন্তকাল। ফুল না ফুটলেও বসন্তের দাবী করে প্রাণ বসন্তের হাতবাক্সে গোপনে লুকিয়ে থাকে নানান গোলাপি চিঠি কুসুম পলাশের বনে আগুন জ্বলে… রূপপ্রসবিনী ভিজে যায় সদ্যফোটা জ্যোৎস্নাগন্ধে পৃথিবীর সব ভালবাসা এক হয় বসন্তের গান শুনতে শুনতে পার হয়ে যাই সব স্রোতস্বিনী।
