| 26 এপ্রিল 2024
Categories
পুনঃপাঠ প্রবন্ধ সাহিত্য

পুনঃপাঠ প্রবন্ধ: সঙ্গী । কবিতা সিংহ

আনুমানিক পঠনকাল: 11 মিনিট

‘কেয়াদির সঙ্গে আপনার কোথায় যেন একটা সাদৃশ্য আছে।’ কথাটা সর্বপ্রথম জগন্নাথ, জগন্নাথ বসু, আমাকে বলেছিল। তারপর আরো কেউ কেউ বলে। কেয়ার প্রাণশক্তির কথা, কেয়ার অসম্ভব স্বাতন্ত্রের গল্প, জগন্নাথ প্রায়ই আমায় বলত। বুঝতে পারতাম স্কটিশ চার্চ কলেজের ইংরেজী সাহিত্যের এই তরুণী অধ্যাপিকা তার পড়ানো আর আন্তরিকতার গুণে ছাত্র-ছাত্রীদের কি অসম্ভব মুগ্ধ করে ফেলেছে। নাটক-পাগল জগন্নাথের কাছে নান্দীকার আর কেয়ার অক্লান্ত শ্রমের কথা শুনতে শুনতে আমার মনে আলোর রেখায় রেখায় কেয়া-র একটি ছবি আঁকা হয়ে গিয়েছিল। জগন্নাথ আরও বলত, কেয়া নাকি আমার লেখাটেথা মাঝে মধ্যে পড়ে। আসলে জগন্নাথই কেয়ার কাছে, ঐ একইভাবে আমার কথা বলে বলে কেয়াকেও আমার সম্বন্ধে কিছুটা কৌতূহলী করে থাকবে হয়ত। একদিন, সময়টা মাৰ্চই হবে, জগন্নাথ আমাকে নীচের স্টুডিওতে ডেকে নিয়ে গেল। এয়ারকণ্ডিশন করা ঠাণ্ডা করিডোর দিয়ে যেতে যেতে জগন্নাথ বলল, — ‘আমি মনে করি কেয়া-দির সঙ্গে আপনার আলাপ হওয়াটা ভয়ঙ্কর রকমের জরুরী।

আমি নিয়মিত নাটক দেখে থাকি। তৃপ্তি মিত্রর পর নতুন জেনারেশনে আশা করার মত আর কাউকে পাচ্ছিলাম না। তাই কেয়াকে পেয়ে খানিকটা স্বস্তি হয়েছিল। তাকে হারিয়ে সেই স্বস্তিকেও অনেক কিছুর সঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে হারিয়ে ফেলেছে বাংলা থিয়েটার।

সম্ভবত কেয়া আমার পরবর্তী দশকের মেয়ে। কিন্তু যে সমস্যা, যে প্রশ্ন, যে পরিস্থিতি আমাদের দশকে ছিল তা থেকে তার সময়ে কিছু এমন অদলবদল ঘটে নি। মেয়েরা আজও বাইরে বেরোলেই নানা রকম রটনা হয়, কেয়া তো রটনার রাণী হয়ে উঠেছিল এক সঙ্গে অধ্যাপনা আর অভিনয় করে।

কেয়া ও ব্যাপারগুলো শুনত। শুনত যে তাকে কোনভাবেই প্রশংসা করতে অনেকেরই জিভ জড়িয়ে যায়। সে হেসে বলত, সেই চোরের গল্প জানো না? এক সন্নেসীকে দেখে বলেছিল, “ধ্যেৎ ওটা আবার সাধু হল কবে থেকে, ওটা তো আমার বন্ধু ছিল! যে জীবনে কিছু হতে পারেনি সে তার চেনা লোককে সাধারণের গণ্ডী ছাড়িয়ে যেতে দেথলে সহ্য করতে পারে না। তবে কেয়াকে তার সমস্ত মতামত বিশ্বাস এবং বোধ সমেত মেনে নেওয়া খুব কম লোকের পক্ষেই সম্ভব ছিল। আমার সঙ্গেও তার এ নিয়ে তর্ক হয়েছে। শরীর, যৌনতা, সতীত্ব এসব ব্যাপারে তার বোধ অভ্যস্ত সংজ্ঞার সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল। খুব সহজেই — সাবলীলতার সঙ্গে পুরুষদের সামনে, এমন কি নিজের ছাত্রদের উপস্থিতিতেও, সে শরীর বা ঋতু সংক্রান্ত এমন কথা বলতে পারত যা কোনো বাঙ্গালী মেয়েই উচ্চারণ করতে পারে না।

কেয়া-র সঙ্গে আলাপ মার্চে। মনে আছে তার পরের মার্চে আমি তাকে ডেকেছিলাম এসেম্বলির মাদার গাছে লাল ফুলের দমকা আগুন দেখাতে। লাল ফুলের উপর ছোট ছোট সবুজ টিয়ের ঠোট নামিয়ে নামিয়ে সে কি অপূর্ব খেলা । সেদিন এসেম্বলির ভিতর ঢুকে পড়ে গাছের পর গাছ দেখতে দেখতে ওলট-পালট … কালবৈশাখীর ঝড় উঠেছিল। হাসছিল শাদা কাঠ-গোলাপ, ঘূর্ণিপাক খাচ্ছিল স্থালিত কৃষ্ণচূড়া। ঘুরতে ঘুরতে একটা টকটকে লাল, শুকনো বাদাম পাতা — অভিজ্ঞতা শীত আর সৌন্দর্যের বিনোনো শিল্পের মত উড়ে এসেছিল। কেয়ার বুকে ঘুড়ির মত আটকে গিয়েছিল। কেয়া বলেছিল, ‘এটা তুমি রাখো। তোমার টেবিলে কাচের তলায়। এটা দেখলে তোমার মৃত্যুকে মনে পড়বে, নশ্বরতাকে মনে পড়বে।’

বহুদিন, যতদিন না গুড়ো গুড়ো হয়ে গিয়েছিল ততদিন, কেয়ার দেওয়া পাতাটা অবিশ্বাস্য লাল, শুকনো পালিশ করা একটা তুলোট কাগজের মত আমার টেবিলের কাচের তলায় ছিল । এখনো অফিস যাবার পথে চৈত্রের মাঝামাঝি ইডেন গার্ডেনস-এর বাদাম গাছ গুলো নানান রঙ্গের রঙ্গিন পাকা পাতায় ভরে ওঠে, — গা ঝাড়া দেয়, অফিস যাবার পথে পাতার মোজেক আর রাধাচূড়ার হলুদ ফুলের ক্রেপের স্থূপ ছড়িয়ে রাখে। আমি মনে মনে সবচেয়ে সুন্দর একটি পাতাকে নির্বাচন করি। কিন্তু লজ্জাবশত তুলে নিতে পারিনে। তখন কেয়ার অভাব বোধ করি।

কেয়া-র লো-প্রেশার তাকে মাঝেমাঝেই বিছানায় ফেলে দিচ্ছে। সে থিয়েটারে ডুবে যাচ্ছে, সে লিখছে, অনুবাদ করছে, অসম্ভব রকম বিদেশী নাটক পড়ছে। কেয়াকে সেই অসুস্থ অবস্থাতেও বাধ্য হয়ে বড় বড় বেতার-নাটক অনুবাদের জন্য দিয়েছে জগন্নাথ। জগন্নাথের প্রথম পুরস্কার পাওয়া নাটকেরও অনুবাদ কেয়াই করেছিল। তার সেই সাবলীল ইংরেজি সংলাপ গঠনের মাধুর্য সচরাচর চোখে পড়েনি কারো। এমনি সময়ে তার ‘ভালোমানুষ’ দেখি আমি। একবার। দুবার। তিনবার। হঠাৎ একদিন একটি পুরুষ কণ্ঠের ফোন। বেশ অধিকারের দাবী নিয়েই কথাবার্তা। সত্যি কথা বলতে কি আমি যখন বেশ খানিকটা নার্ভাস, হঠাৎ শান্তাপ্রসাদের গলা খিল খিল করে হেসে ওঠে শান্তা হয়ে। কেয়া বলে, ‘কী, একদম চিনতে পারোনি তো?’ মারি ফরার অনুবাদের কদিন পরই আমার সঙ্গে দেখা। অজিতেশের আগ্রহে শেষ পর্যন্ত কেয়া আবৃত্তি শুরু করল । শ্রোতা একলা। আমি। অজিতেশ ধরিয়ে ধরিয়ে দিচ্ছেন কেয়া বলে যাচ্ছে। বসে ছিল কেয়া। রেস্তোরাঁর চাকরাণী মারি ফাররের গর্ভসঞ্চার, শিশুর জন্ম, তার কুমারী মায়ের — ভয়ে আতংকে সেই শিশুকে গলা টিপে মেরে ফেলা ।….. নিজের অজ্ঞাতেই উত্তেজনায় দাড়িয়ে উঠেছিল কেয়া — হঠাৎ খেয়াল হয়েছিল দর্শক ও শ্রোতা কেবল আমি একলাই নই। আরো অনেকেই ঘিরে দাড়িয়েছেন।

আশ্চর্য দিন। এমন দিন প্রতিদিন আসে না। এমনি কবিতাপাগল মেয়ের সঙ্গে প্রতিদিন দেখাও হয় না। মনে পড়ে ১৯৭৩-এ স্কটিশ চার্চে আমন্ত্রিত কবি-সম্মেলনে গেছি। সামনের চেয়ারে অনেক জ্ঞানী-গুণী অধ্যাপক অধ্যাপিকার সঙ্গে কেয়া। এখনো মনে পড়ে তার পরনে ছিল আকাশ-নীল জরিপাড় একটি পাটভাঙা শাড়ি। আমি যে কবিতাটি পড়েছিলাম, —

মা হাতের উল্টো পিঠে মুছে নিয়েছি শেষবারের মত

দু চোখ ছাপিয়ে নামা চোখের জলের বৃথা দাগ

বেণীর সাটিন খুলে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে গেছি আমি

অশ্ব ক্ষুরে ঝনঝন নারীদের দর্পণ ফাটায়ে

খরকরবালে একা পিতার রক্ষিতার মুণ্ড এনে দিতে।

কবিতাটি সদ্য লেখা। আমার ডায়েরীতেই ছিল। আমি নেমে আসতেই কেয়া বলল, ‘তোমার কবিতাটা দেখতে দেবে? এটা তোমার হাতের লেখা?’

কোন কথা না বলে ফর ফর করে ছিড়ে নিল ডায়েরীর পাতাটা।

‘কবিতাটা আমার। তোমার হাতের একটা লেখা আমার কাছে থাক।‘

আমি বললাম,

‘কবিতাটা দেশে পাঠিয়েছি, কপি নেই আর।‘

কেয়া. বলল,

‘না থাক। আমি এটা দেব না।

এমনি মনে হয়েছিল যে যেখানে দাঁড়িয়ে দেখে। কেয়ার অভিনয়ের কোনো খুঁত বের করতে পারিনি, কিন্তু তাকে বলতেও পারিনি, — ‘কেন সিনেমায় নামো? তুমি নায়িকা। তোমাকে নায়িকা ছাড়া আর কিছু ভাবতে যে বড় কষ্ট হয়।‘

এই বোধটা হয়ত আমার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত পরিচয়ের বোধ থেকে সজাত। একটি নতুন পরীক্ষামূলক সাহিত্য অনুষ্ঠানের কথা ভাবছিলাম। রিডিং ড্রামা। অর্থাৎ একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রী একটি নাটক একাই পড়ে যাবেন। দৃশ্য-নির্দেশ পড়ে যাবেন নির্লিপ্ত গলায়, চরিত্রগুলোর অভিনয়ের সময়ে অভিনয় করবেন। এমনি একটি কাব্য-নাটক কৃষ্ণ ধরের ‘বনজ্যোৎস্না’।

বনজ্যোৎস্নার জন্য এক প্রসিদ্ধ নটের কথা ভাবা গিয়েছিল। কিন্তু প্রচারের মাত্র দুদিন আগে তিনি অক্ষমতা জানালেন। ভাবতে ভাবতে মনে হল, অভিনয়ে কেনই বা একটি মেয়ে নয়? এবং কেনই বা কেয়া নয়?? কিন্তু হাতে রিহার্সালের সময় এত কম। এতৎসত্ত্বেও কেয়াকে টেলিফোন করলাম। লো প্রেশারে সে তখন প্রায় শয্যাশায়ী। আমি বোধহয় পাণ্ডুলিপি পাঠানোর। কথা কিছু বলবার চেষ্টা করে থাকব। সে বলল, — ‘বাঃ নতুন ধরনের ব্যাপার তো! আমি নিজেই যাব তোমার সঙ্গে আলোচনা করে নেব।’

কেয়া আধঘণ্টার মধ্যে ট্যাক্সিতে চলে এল। যথারীতি ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে রেখে গল্প করতে করতে একঘণ্টা কাটিয়ে দিল। এবং পরদিন এসে একটানে রেকর্ড করে গেল ‘বন-জ্যোৎস্না চারটি চরিত্রের কাব্য-নাটক। দুটি পুরুষ। দুটি নারী- একজন নাগরিকা, একজন আদিবাসী। সে রেকর্ড এখনও অক্ষত।

ইতিমধ্যে অধ্যাপকদের বহু-আন্দোলিত, বহু-প্রার্থিত ভালো টাকার গ্রেডটি যথন করায়ত্ত তখন কেয়া দুম করে হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দিল।

কিছু দুম করে নয়। সে ধনী ছিল না। তার মায়ের কথা — মায়ের হার্টের অসুখের কথা সে আমায় বারবার বলত। তার সিনেমায় যেমন তেমন রোল করার পিছনেও ছিল ওই প্রয়োজনের তাগিদ। কেয়া তার মায়ের হার্টে পেস মেকার বসাবার জন্যও হয়ত একটু বেশি রকম অর্থকরী — পরিশ্রম করে থাকবে। “রঙ্গনার মালিকদের সঙ্গেও দীর্ঘকাল কেয়াদের মনোমালিন্য হয়েছিল। এবং কেয়াকে ও সেজন্য যথেষ্ট মানসিক ও শারীরিক কষ্ট পেতে হয়েছিল। অর্থনৈতিক সমস্যা চার পাশ দিয়ে তাকে ঘিরে থাকলেও, কেয়া চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্তটা পাকা করে নেয়। সে বলেছিল, —

‘দ্যাখো, কোনো মানে হয় না এভাবে অনেকগুলো নৌকোয় পা দিয়ে চলার। অসুখের সময় আমি একা একা শুয়ে অনেক ভেবেছি। শেষ পর্যন্ত বুঝতে পেরেছি থিয়েটারই আমার সব। আমাকে, এরই জন্যে বাঁচতে হবে। থিয়েটারের জন্যে আমি — কী বলব তোমায় — বলিপ্রদত্ত। দ্যাখো, আমি তো শুধু অভিনয়ই করি না। আমার দলের প্রতিটি মানুষের সুখ-দুঃখ, টাকা-পয়সা, সেট-সেটিং, পোষাক-আশাক, এমন কি বিজ্ঞাপন, টিকিট ছাপানো — এসব সাংগঠনিক দিকের কথাও আমাকে ভাবতে হয়। আবার কী নাটক হবে, কী ভাবে হবে, তার জন্যেও যে আলোচনা, যে তর্কযুদ্ধ, তাতেও সামিল হতে হয়। এত কিছু করার পর, “আমি আমার কলেজের পড়ানোর জন্যে যে বাড়তি পড়াশুনো তা করব কখন বলো? চাকরি আমি না-ও ছাড়তে পারি। কিন্তু আমি তো ছাত্র-ছাত্রীদের যতটা সময় দেওয়া দরকার তা দিতে পারব না। আর এতে তাদের ফাঁকি দেওয়া হয় না? তুমিই বলো!’

কলেজের অন্যতম প্রিয় অধ্যাপিকা হওয়া সত্ত্বেও কেয়া কলেজ ছেড়ে দিল। সে দুপুরে বিজ্ঞাপনের কপি লিখত। কাগজপত্রে লিখতেও শুরু করেছিল। অনুবাদের কাজও করত। এবং থিয়েটারে নিজেকে সম্পূর্ণ ঢেলে দিয়েছিল। কলেজে কেয়ার অনেক গল্প। একটি গ্রাম্য ছেলে। শান্ত, সলজ্জ আর অতি সাধারণ। সে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখত ক্লাশের উজ্জ্বলতম, স্মার্ট, ইংরেজি মিডিয়ম স্কুল থেকে আসা একটি মেয়েকে। কেয়া এসব লুকোছাপা পছন্দ করত না। সে এই দুটি সম্পূর্ণ দুই-পৃথিবীর ছেলে-মেয়ের মধ্যে সুস্থ বন্ধুত্ব গড়ে দিয়েছিল। একটি ছেলে ছিল তোৎলা। কেয়া বুঝেছিল তার তোৎলামি, ভয় থেকে সংকোচ থেকে। সহানুভূতির সঙ্গে কেয়া তাকেই বেশি করে পড়া জিজ্ঞেস করত। এইভাবেই তার তোৎলামি সারিয়ে দিয়েছিল। কেয়ার কাছে কত ব্যাপারেই যে তার ছাত্রছাত্রীরা কৃতজ্ঞ তার ঠিক নেই।

আন্তিগোনের রিহার্সালে কেয়া আসতে বলেছিল। আমি যেতে পারিনি। একেবারে এ্যাকাডেমি মঞ্চে আন্তিগোনে দেখি। ভুলতে পারব না সেই নাটক দেখার স্মৃতি।

পর্দা উঠে গেল। চরিত্রওলি স্টেজে ফ্রিজ হয়ে দাড়িয়ে। একজন সূত্রধর তাদের পরিচয় দিচ্ছেন। একটি কোণে কেয়া। তার এক হাতে খনিত্ৰ। অদ্ভুত ভঙ্গিতে বসে আছে। চোখের দৃষ্টি স্থির। কিন্তু স্থিরতার মধ্যে কতখানি সংহত ঝড় লুকিয়ে থাকতে পারে আন্তিগোনে-রুপিণী কেয়ার সেই স্থির ভঙ্গিমা তা বলে দেয়। সূত্রধর তার দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন, এই মেয়েটি, রাজা ইডিপাসের কন্য। এর বয়স সতের। এই নাটকের শেষে এ মারা যাবে। অর্থাৎ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এ মারা যাবে।


আরো পড়ুন: প্রবন্ধ: মার্ক্সবাদ ও অভিনয়কলা । উৎপল দত্ত


আন্তিগোনে অবশ্যই কেয়া-সর্বস্ব নাটক কিন্তু তাতে কেয়ার সঙ্গে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্রেয়নও অসাধারণ। অসাধারণ প্রতিটি চরিত্রের অভিনয়। সব মিলিয়ে, যেমন চিত্তরঞ্জন ঘোষের লেখা, তেমনি রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের নির্দেশনা। গ্রীক ট্রাজেডির সঙ্গে তদানীন্তন রাজনৈতিক পরিস্থিতির যে নির্ভয় মিশ্রণ তা এই নাটক দেখতে দেখতে মানুষের ভিতরের ঘুমন্ত সমাজ-সচেতনতাকে জাগ্রত করে দেয়।

আন্তিগোনে দেখার স্মৃতি আমার জীবনে একটি শ্রেষ্ঠ থিয়েটার দেখার স্মৃতি হিসেবে গভীর ছাপ কেটে বসে গিয়ে থাকবে। এর কারণ আন্তিগোনে চরিত্রটি। এ চরিত্রের যন্ত্রণা বেদনা কষ্ট, পুরুষশাসিত সমাজে নারীমনের বিকাশের বাধা, পুরুষ ও নারীর সমাজ ও সংসার দেখার দৃষ্টিভঙ্গির আকুলতায় কেয়ার অভিনীত আন্তিগোনেকে আমার প্রেরণা করে তুলেছিল। সেদিন অভ্যন্তরে গিয়ে বিমল কেবলই অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়েরই প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে। আমি কিন্তু তখনই কোন কথা বলতে পারিনি। সঙ্গে সঙ্গে কিছু বলে ফেলা আমার প্রকৃতিবিরুদ্ধ। কেয়াকে বোধ হয় কিছু সাধারণ কথাবার্তাই জিজ্ঞেস করেছিলাম। যেমন, তোমার এই পোষাকটি কার ডিজাইন? ফিকে সবুজ একটু ভারি কাপড়ের আন্তিগোনের সেই বিখ্যাত পোষাক। কেয়া বলেছিল — ‘কেন পোষাকের ডিজাইন তো আমি করি। আর অভিনয়ে পর এ পোষাক আমি নিজে হাতে কেচে আয়রন করে তুলে রাখি।

আন্তিগোনে দেখে আসার পর সাত আট দিন আমি তার ঘোর কাটাতে পারিনি। এবং কেয়ার এই অভিনয় আমার দেখা দরকার ছিল। আন্তিগোনে দেখার পর কেয়াকে আমি দীর্ঘ একটি কবিতা লিখে পাঠাই। দৈনিক কবিতায় পরে সেটি ছাপা হয়। নাম আন্তিগোনে। তলায় লেখা, কেয়া চক্রবর্তীকে। তাতে আন্তিগোনের স্বাধীনতার চেতনার কথা বলতে গিয়ে আমি অপ্রিয় হলেও “তাদের কথা বলতে বাধ্য হয়েছি যাদের বাইরের শরীরটা স্ত্রীলোকের মত, অন্তর বৃহন্নলার। আজ সমাজে এই ধরনের নারীরা আছে বলেই সমস্ত সমাজটা ক্রমে বৃহন্নলা হয়ে যাচ্ছে। আজ যে আমরা প্রকৃত পুরুষ প্রকৃত নারী দেখি না, দেখি না প্রতিবাদ, সত্য — অপ্রিয় সত্য বলার সাহস, সে এই সব শরীরের জন্য । আন্তিগোনে রাজবধু, রাজমাতা হবার লোভ ছেড়ে চলে গিয়েছিল তার মৃত ভাই-এর মৃত শরীরের সম্মানিত শেষকৃত্যের জন্য — পুরুষ-শাসিত জগৎ তা সহ্য করেনি। মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল তাকে। তাই চেয়েছিলাম সেই সব শূকরীপালের মত মুখাবয়বহীন নারীদের ঘাড়ে ধরে এনে, —

একবার শুধু একবার

চুম্বন করতে চাই আন্তিগোনে

তোমার ওই কলাপাতা রং পোষাকের পুণ্য প্রান্তদেশ।

আন্তিগোনে, তুমি কেন সতেরো বছরে সব জেনে গেলে?

ওই সব শূকরীরা মনোমত রান্নাঘর সমর্থ পুরুষ আর শিশু পেলে

থামাবেই সমস্ত চিৎকার শুধু রেখে দিয়ে আদি খুনসুটি।

আন্তিগোনে, তুমি কেন সতেরো বছরে বুঝতে পেরেছিলে সব?

লোভ এক ছুরি -লোভী হতে নেই -লোভ কুটি কুটি কাটে সব দাঁতে

জন্মদিনের নিটোল চাঁদের মত কেক!

তুমি বুকে রেখেছিলে মৃত্যুবীজ তীব্র সহজাত।

যেভাবে স্বভাবে, বুকের ভিতরে বয় মিথ্যায় যন্ত্রণা কিন্তু —

স্বতন্ত্র পুরুষ……

তার মেয়ে-বন্ধু ছিল কিনা জানি না, তবে তার মেয়ে-শত্রু যে কিছু ছিল তা বিলক্ষণ জানি। এবং সে জন্য কেয়ার নিজের দিক থেকেও আয়োজনের ত্রুটি ছিল না। যেমন সে ইচ্ছে করেই ইরিটেট করবার জন্যই হয়ত বলে বসল, ‘বিয়ে ফিয়ে আমি মানি না। চেষ্টিটি ফেষ্টিটি আবার কী জিনিষ? সতীত্ব? তুমি লক্ষ্য করেছে, সতীত্ব শুধু মেয়েদের থাকে। পুরুষদের জন্যে শব্দটার কোন টার্মই নেই!’

হঠাৎ হয়ত বলে বসল, ‘‘আই কনসিভড, বিফোর মাই মারেজ ‘ভালোমানুষ করতে অসুবিধে হবে বলে!’

আমি অনেক সময়ে বলেছি, ‘বাজে কথাগুলো বলো কেন? লোকে সত্যি মনে করে তো?’

কেয়া ঘাড় বাঁকিয়ে বলত, — ‘কদিনের দেখা? বড়জোর পাঁচ বছর, দশ বছর। পনের বছর! তারপর ত সব পুড়ে ঝুড়ে শেষ হয়ে যাবে। তবে অত কিসের কম্প্রোমাইজ — অত কিসের মিথ্যে বাজে ফালতুদের মাথায় তুলে চলা? আমার বেশ লাগে, এক একটা কথা ছুড়ে দিই আর মুখগুলো দেখি…’

কেয়া বলত — ‘আহা মানুষ কত মুখরোচক চায় বলে। একট। মেয়ে রঙ টঙ মেখে ষ্টেজে অভিনয় করে। সে কি আর ব্যক্তিজীবনে ধোয়া তুলসীটি? নিশ্চয়ই ষ্টেজের বাইরে — অর্থাৎ গ্রীণরুমের ভিতরে সে দারুণ সব অসামাজিক কাজ করছে, তাই না?’

আমি বলতাম, — ‘লরেনস যেমন বলেছেন অব দি সেন্স লাতিন অবসিন — থেকে যেমন ‘অবসিনিটি’ কথাটা এসেছে’।

কেয়া বলত, — ‘যা বলেছ।’

কিন্তু একটা শেষ দ্রুত চলে আসছিল। সে-শেযটা আমায় ভাবনায় ছিল অন্যরকম। কেয়ার সঙ্গে শেষ যেদিন কফিহাউসে সকালে বৈঠক বসেছিল সেদিনই বুঝেছিলাম তাকে যা ভাবে সবাই সে সেসব থেকে কত অন্য রকম। সে সব কোমল করুণ অশ্রু ফোটা জড়ানো ব্যক্তিগত উপলব্ধি — এখানে বলবার নয় — কেবল এইটুকু বলি, সে ক্রমশ একলা হয়ে যাচ্ছিল। একেবারে একলা। ‘এই একাকীত্ব যে কোন শিল্পী সংসারে সবার মধ্য থেকেও বরণ করে নেয়। একদিন যে মতামত যে আদর্শবোধ নিয়ে একটা মিলিত মননের মধ্যে কেয়া চলে গিয়েছিল, তাই থেকে কেয়া স্বতন্ত্র হয়ে উঠছিল! কেয়া আলাদাভাবে ভাবতে শিখেছিল। সে বুঝতে পারছিল তারও মধ্যে যে ভাবনার নতুন ভুবনের ভ্রুণ শরীর জেগে জেগে উঠেছে, তা তার নিজস্ব। যে থিয়েটারকে বিশ্বাস করে, তার উৎকর্ষ সাধনের জন্য কেয়া তার সর্বস্ব দিয়েছিল, আসলে সে থিয়েটারের মৌল কানেকশনের গলদ তাকে একা করে দিচ্ছিল। সে ভাবতে আরম্ভ করেছিল অন্য থিয়েটারের কথা। শহরের মঞ্চ ছেড়ে সে থিয়েটারকে ছড়িয়ে দিতে চাইছিল গ্রামে গ্রামে।

কেয়ার ব্যক্তিজীবন নিয়ে যখন অনেক গল্প, অনেক ধারণা, অনেক কুৎসা এসে লোকে শুনিয়ে যেত, তখন আমি ভাবতাম একটি স্বাধীনতাকামী স্বতন্ত্র মেয়ের যন্ত্রণা কত বেশি। কেয়া হাসত। চিবুক উচু করে অগ্রহ্যের ভঙ্গিতে। কিন্তু ভিতরটা তার ছিঁড়ে যেত বেদনায়। সে বলত, —

‘স্টেজের ওপর উঠে যখন অভিনয় করি, তখন লোকে আমায় মেনে নেয়, কিন্তু থিয়েটার সেরে মধ্যরাতে যখন বাড়ি ফিরি, তখন লোকে আমায় মেনে নিতে পারে না। নেহাতই একটা মেয়েমানুষ ভেবে নিয়ে আমার স্বাধীনতাকে বাড়াবাড়ি বলে মনে করে। আর তারা মানতে পারে না বলেই, পরিচিত লোকজন দেখলে আমার পৌছে দেবার জন্য যে পুরুষটি থাকে, ইচ্ছে করেই তার কাঁধে হাত রাখি। জনগণ যাতে খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে দেখে আনন্দ পায়।’

কেয়া শকিং কথা বলার জন্য বিখ্যাত ছিল, বলত, —

‘ছারপোকা কামড়ালেও লাগে, ছোট হলেও সে একচুমুক রক্ত খায়। কিন্তু এত ছারপোকা! কিন্তু পোকাটি মর্মান্তিক। নেহাতই ছার নয়।’

সত্যি কেয়াকে ভেবেছিলাম সে অভিনেত্রী থেকে আরো অনেক সম্পূর্ণ, বড় আর মস্ত হয়ে উঠবে। এত উচু হয়ে উঠবে যে, বাংলা থিয়েটার তার হাতে পড়ে আমুল পাল্টে যাবে। সেই কেয়া…

তখন বিমল হার্ট এ্যাটাক হয়ে পি জি-র ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। এমন সময়ে কেয়ার, এ্যাকসিডেন্টের খবর এল। ১৩ মার্চ অকুস্থল সাঁকরাইল থেকে পাঁচ মাইল দূরে হীরাপুরে গঙ্গার কাদা কচুরিপানা জড়ানো কেয়ার দেহ চড়ায় এসে ঠেকল।

কেয়ার শরীর ঢেকে দেওয়া হয় নতুন কাপড়ে। তার তখনো আশ্চর্য সুগঠন পা দুটির উপর মুখ রেখে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ে রুদ্রপ্রসাদ। রুদ্রর ‘ফুটবল’ কেয়ার আশ্চর্য ভালো লেগেছিল। আবার নতুন চরিত্রে, মাসির চরিত্রে জমিয়ে অভিনয় করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে তুলছিল কেয়া। আবার নাটকের আলোচনা, দৃশ্যপট, নির্দেশনা আর মহলার অন্তর্গত হয়ে স্বামীকেই যেন নতুন করে ভালবাসতে শুরু করেছিল কেয়া —

ঠিকই সেই সময় কেয়ার দেহ মর্গ থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি আসছে শুনতে পেয়ে বিমলকে হাসপাতালে গিয়ে খবর দিলাম। বিমল তখন প্রায় বিপন্মুক্ত। সে বলল, ‘তাকে শেষবারের মত দেখতে যাবে না?

আমি বললাম, — ‘যাওয়া তো উচিত, কিন্তু’ — বিমল বলল, ‘যাও, তোমার যাওয়া উচিত। মানুষের সুখের দিনে তাদের পাশে গিয়ে না দাঁড়াও, দুঃখের দিনে তো দাঁড়াবে। ভাবতে হবে না। না হয় একদিন বিকেলে তুমি নাই-ই আসতে পারলে। ছেলেমেয়েরা তো আসবে!’

বাইরে বেরিয়ে এলাম। মার্চ। রমরমে মার্চ। গাছে গাছে নতুন পাতা, রোদ, কোকিলের ডাক। অফিসের রাস্তায় নানা রঙের বাদাম পাতার মোজেক। হলুদ স্তূপাকার রাধাচূড়ার ক্রেপ — কেয়া নেই। ধূলোর ঘূণি। একটা মস্ত শাদা পদ্ম গোলাপের মৃত্যু মালা নিয়ে চলেছি আমরা। আমি উষাদি আর শুক্লা। বড় রাস্তা থেকে গলা চাপা ভিড়। ভিতরে ঢোকা যায় না। চাপ চাপ লোক। অনেক চেনা মুখ। কেবল নাটকের নয়, সাহিত্যের, কলেজের, রাজনীতির। কেয়ার ছড়ানো জগতের বিপুল অংশের প্রতিনিধি সব। তিন তলায় উঠলাম। কেয়ার মা। লম্বা — গ্রীকদেবীর মত। কে যেন বলল, কাঁদতে পারছেন না। কেবলই বলছেন ‘আমার, মেয়েটাকে সবাই বডড খাটায়, মেয়েটাকে সবাই, এখনো আসছে না কেন?’

আমি যেতেই তৃপ্তি মিত্র আলাপ করিয়ে দিলেন।

‘— ও, আপনি? আপনার কথা খুব বলে। কতদিন দেখতে ইচ্ছে হতো। তাই দেখা হলো। এই যে নিন, ‘অস্তিগোনে আপনার জন্য এনে রেখেছিল কেয়া। স্তূপাকার ইংরেজী সাহিত্যের বই-এর তলা থেকে টেনে বের করলেন দৈনিক কবিতা, যাতে — ‘আন্তিগোনে’ কবিতাটি মুদ্রিত হয়েছিল। তার ভিতর আামার হাতে লেখা সেই কবিতা — আজীবন পাথর-প্রতিমা’ — ভাজ করা কাগজটা মাটিতে পড়ল।

কথা বলতে বলতে হঠাৎ অবলা পশুর মত অদ্ভুত ঘষা একটা আওয়াজ করে ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি। আবার হেসে বললেন, ‘ যাই বারান্দায়। যাই। হয়তো মেয়েটা আমার এক্ষুণি এসে হাজির হবে।’

বলতে বলতে ‘এসেছে এসেছে’ রব উঠলো । ঘরে জায়গা হয় নি। বারান্দা ভর্তি শাদা শাদা মৃত্যুমালা। কত প্রতিষ্ঠান কত ব্যক্তি যে দিয়েছেন। — কেয়ার মা দীর্ঘাঙ্গী, ফর্সা, সাধারণভাবে একটি পেড়ে শাড়ি পরা। মেয়েদের ভিড় উপচে পড়ছে। শাওলি এবং অন্যান্য মেয়েরা বারান্দায় সার দিয়ে। অতি পুরানো ঝরঝরে বাড়ি। ভিড়ের চাপে বারান্দা না ভেঙে পড়ে। রুদ্রকে একবার দেখলাম। দু-জনে দু-পাশে ধরে ধরে নিয়ে আসছে। মানুষ যে একদিনে এমন শক্তিহীন বিবর্ণ ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে… ভাবা যায় না। জগন্নাথের স্ত্রী উর্মি এবং আরো কয়েকজন এল। মর্গ থেকে তারাই পোস্টমর্টেমের পর কেয়ার নশ্বর শরীরটাকে সাজিয়ে এনেছে।

কঁচের গাড়িটা এসে দাড়াতেই কেয়ার মা বললেন, “ওই যে এসে গেছে।’ আবার সেই অদ্ভুত অবলা কান্না।

—‘ওকে নামাবে না? নামাক! কখন বেরিয়েছিল, ক’দিন বাড়ি ফেরে নি।’

কেয়ার মায়ের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। দেয়ালে কেয়ার বারো বছরের ছবি। কেয়ার বই, কেয়ার জিনিস, জামাকাপড়, প্রাচীন পালঙ্ক — সব সব সব —।

আমার হাতে তার দিতে চাওয়া শেষ উপহার ‘আন্তিগোনে’ — মলাটে দু-হাত তুলে দাড়িয়ে আছে কেয়া। মার্চ মাস। প্রচণ্ড গরম ফাটছে। কেয়ার দেহ পচতে আরম্ভ করেছে। অনেকক্ষণ জলে ছিল, এখন রোদে। আমি তার ঈষৎ নীলবর্ণ মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম। মুখের বাঁ পাশ সুন্দর। ডান পাশ ফুলে ঝুলে পড়েছে। সেখানে একটি গভীর দাগ।

কেয়ার মৃত্যুর পর সৌমিত্র এলো। তার হাতে একরাশ প্রুফ। নান্দীকারের বিজ্ঞাপনের প্রুফ।

‘কেয়াদির মৃত্যুর পর এই প্রথম আমরা নান্দীকারের বিজ্ঞাপন লিখছি। কেয়াদির মৃত্যুতে নাটক স্থগিত থাকার বিজ্ঞাপন। এর আগে নান্দীকারের কোনো বিজ্ঞাপন লিখিনি। সব কেয়াদি নিজে লিখে দিতেন। এই প্রথম আমাদের নিজে হাতে বিজ্ঞাপন লিখতে হল।’

কেয়ার স্থাবরের মধ্যে ব্যাংকের পাশ-বইটা সৌমিত্রের কাছে ছিল। তার শেষ সম্বল ছিল মাত্র ১৭২৬ টাকা। কেয়াকে জীবনের প্রথম দিকের দিনগুলি থেকেই সংগ্রাম করতে হয়েছে। তার মা-ও চাকরি করতেন। কাউকে সাহায্য করতে হলে কেয়া কোনো হিসেব করে টাকা বের করেনি। জীবনের একটা চুড়ান্ত মুহূর্তে যে-মেয়ে সব ছেড়ে একটা আশ্চর্য টেক-অফ করতে চেয়েছিল, তার সেই ডানা মেলার মুহূর্তেই মৃত্যু ছিনিয়ে নিয়ে গেল তাকে।

 

 

 

অমৃত, নববর্ষ সংখ্যা, ১৩৮৬

অভিনয় এবং লেখালেখি ছাড়াও কেয়া চক্রবর্তী ১৯৬৪ সালে দমদম ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে ইংরাজী শিক্ষিকা ছিলেন এবং ১৯৬৫ -১৯৭৪ সাল অবধি স্কটিশ চার্চ কলেজে ইংরাজী বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন।

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত