শিশুতোষ ভ্রমণ: গন্তব্য-স্বপ্নের দার্জিলিং । শুদ্ধসত্ত্ব ভট্টাচার্য
দার্জিলিং! এ যেন এক স্বপ্নের নাম। বিভিন্ন সিনেমা,পত্রপত্রিকা এছাড়াও সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি এবং দার্জিলিং জমজমাট পড়ে আমার দার্জিলিং দেখার সাধ জাগে।কিন্ত এটি সম্ভব করেন আমার মেসো আশীষ কুমার সান্যাল।
২০১৯ সালের ২৩ মার্চ আমরা ভারতে যাই। গন্তব্য শিলিগুড়ি। আমার মামাবাড়ি শিলিগুড়িতে। সেখানেই আমার অসুস্থ দাদু ও দিদা রয়েছেন। দাদুকে দেখতেই আমাদের ভারতে যাওয়া। ২৬ মার্চ বাবা সেখান থেকে চলে আসে।
সন্ধ্যায় মামার বৈঠকখানায় আমরা গল্প করছিলাম। হঠাৎ মেসোপাপা বলল কোথাও বেড়াতে গেলে কেমন হয়। সেখানে ছিল মেসোপাপা আশীষ কুমার সান্যাল,মাসি মৌসুমী সান্যাল (যাকে আমি সোনালী মৌসুমী বলে ডাকি),মাসতুতো দাদা অংকন সান্যাল,মা জয়শ্রী ভট্টাচার্য,মামী মৌমিতা ভট্টাচার্য,মামাতো পুচকু বোন মিত্রাক্ষী(যাকে সকলে পুটুম বলে ডাকে)আর আমি। মামা তখন অফিসে।
আমি বললাম এখন পাহাড়ে যাওয়া যাবে? মামী তখন মামাকে ফোন করে শুনল। মামা বলল অবশ্যই। আমরা বললাম তাহলে দার্জিলিংই হোক। কিছুক্ষণ পর মামা বাড়িতে এলো। সব শুনে মামা বলল যাও কিন্তু আমি যেতে পারব না। আমার অফিসে কাজ আছে। মামার গাড়ি আছে কিন্ত ছোট গাড়ি। আট জনের জায়গা হবার মতো নয়। মামা নিজেই গাড়ি চালান কিন্ত দুরে গেলে একজন ড্রাইভার ডেকে নেন। যাকে ডাকেন তিনি জয় মামা। তার একটা গাড়ির ব্যবসা আছে। তার সব গাড়ি দার্জিলিং যায়। জয়মামাকে গাড়ির কথা বলা হলো। জয়মামা গাড়ি ঠিক করল। ঠিক হলো জয় মামাও আমাদের সাথে যাবে। পুটুম আনন্দে লাফালাফি শুরু করল। আমি কী করব নিজে ভেবে পাচ্ছি না। ঠিক হলো আগামীকাল সকালে, ২৭ মার্চ,২০১৯, ৬ টায় আমরা রওনা দেবো।
আমরা ৬টায় রওনা হবার জন্যই ঘুম থেকে উঠলাম সাড়ে পাঁচটায়। কিন্তু সমস্যা হলো মামি, পুটুম ও সোনালী মৌসুমিকে নিয়ে। তারা তৈরি হতে দেরি করল। শেষপর্যন্ত আমরা ৬টা২০ এ রওনা হলাম। গাড়িটা হলো একটা টাটা সুমো। ড্রাইভারের নাম বিজয় ।সাথে জয়মামাও রয়েছে। গাড়ি হিলকার্ট রোড দিয়ে যাবে।আমি ও দাদামনি সামনে বসেছি। মাঝখানে মামি পুটুম ও সোনালী মৌসুমি। পিছনে মা মেসোপাপা ও জয়মামা। শিবমন্দির পার হবার পর সুকনা আর্মি ক্যান্টনমেন্ট পড়ে। আমরা গত বছর কার্শিয়াং গিয়েছিলাম।তখন বড়মামা বলেছিল এখান থেকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হতো। অনেক আর্মি বাংলাদেশের পক্ষে শহিদ হন। যাঁরা শহিদ হন তাঁদের ছবি সেখানে বড় বড় করে লাগিয়ে রাখা আছে। সব দেখে ভারতীয়দের জন্য খুব গর্ব হলো আমার।
সবসময় সেখানে প্রচুর বাঁদর দেখা যায়। জয় মামা কাঁচ তুলে দিতে বলল। নয়তো বাঁদর গাড়িতে ঢুকে যাবে।পাহাড়ে ওঠা শুরু হবার পর দাদামনি জোরে জোরে গান গাওয়া শুরু করল। তারপর মেসোপাপাও শুরু করল। তারপর আমরা রোহিনীর রোডিস ক্যাফেতে সকালের জলখাবার খেতে দাঁড়ালাম। রোহিনী পাহাড়ের উপরে একটি জায়গা। জয়মামা বলল এখানকার মোমো ভালো। আমরা সকলে মোমো খেলাম। জয়মামা সম্পর্কে একটা কথা বলাই হয়নি। জয়মামা খেতে খুব ভালোবাসেন। যাকে বলে ভোজনরসিক বাঙালি। মোমো আর চা খেয়ে আবার যাত্রা শুরু। এখন আবার আমরা গান গাইতে শুরু করলাম।
নিচের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে যেন হাতে আঁকা। সবকিছু কত ছোট ছোট। খাদের দিকে তাকাতে ভয়ও লাগে। সেখানে পড়ে গেলে কারও নিস্তার নেই। পুটুম এমনি সময় অনেক কথা বলে। কিন্তু এখন সব কান্ডকারখানা দেখে সে পুরো চুপ। কিছুদূর যাবার পর খাড়া ওঠা শুরু হলো। বাঁকগুলোও সাঙ্ঘাতিক। কিন্তু গাড়ি সহজেই উঠতে লাগল। সকলের মুখে চুইংগাম। নাহলে কানে ধাপা ধরে যাবে। গান গাওয়ার কারণও তাই। এই করেই আমরা কার্শিয়াং পৌঁছে গেলাম।
কার্শিয়াংয়ে আমরা কিছুক্ষণ জ্যামে আটকে রইলাম। জ্যামের আর কিছুই না,টয়ট্রেন। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং লাইনে একধরনের ট্রেন চলে। এই ট্রেনকে টয় ট্রেন বলে। রাস্তার পাশে ন্যারো গেজের লাইন। সেই লাইন দিয়েই ট্রেনগুলো যায়। আমরা পাঁচ মিনিট ধরে টয়ট্রেন দেখলাম। তারপর আবার যাত্রা শুরু। মেসোপাপা গুপি গাইন বাঘা বাইনের গান ধরল। সাথে দাদামনিও শুরু করল। এরপর পাহাড় আরও খাড়া। ঠান্ডাও শুরু হয়েছে। সকলে আমাকে ও দাদামনিকে জ্যাকেট পরতে বলছে। কিন্তু আমরা পরতে পারছি না। কারণ দাদামনির দুপায়ের ফাঁকে গাড়ির গিয়ার তাই দুজনের জ্যাকেট আমার হাতে। তাই জ্যাকেট পরতে গাড়ি থামাতে হলো। এখন খাদের দিকে তাকাতে ভয় লাগছে। এতক্ষণে পুটুম কথা বলল। পুটুম বলল আর কতক্ষণ লাগবে। কেউ তার কথার উত্তর দিল না। কারণ সকলে মেসোপাপার গান শুনতে ব্যস্ত। এইভাবে আমরা ঘুম স্টেশন পৌঁছে গেলাম। ঘুম স্টেশন পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু রেল স্টেশন। এর উচ্চতা ৭,৪০৭ ফিট এর আগে সোনাদা। তার আগে টুং। অসাধারণ সব নাম।
ঘুম একটি ছোট শহর। শহর পার হবার পর একটা গুম্ফা পরে। সেখান থেকেই সাইট সিইং শুরু। গুম্ফা আমি আগেও দেখেছি ভূটানের ফুন্ট সিলিং-এ। গুম্ফার সামনে কার পার্কিং এর জায়গা। আমাদের গাড়ি সেখানেই দাঁড়ালো। আমরা একে একে গাড়ি থেকে নামলাম। নেমে গুম্ফার দিকে এগুলাম। আমি,দাদামনি ও মেসোপাপা একসাথে। বাকিরা পিছনে। জয়মামা আমাদের গাইড। পাহাড়ের উপরে আমরা সকলের গায়ে গরম জামা দেখলাম। গুম্ফার বাইরে ফুটপাতে অনেক গরম জামাকাপড়ের দোকান রয়েছে। আমরা আগে গুম্ফা দেখতে ঢুকলাম। প্রথমে বড় দরজা দিয়ে ঢুকে তারপর একটু সিঁড়ি দিয়ে নেমে গুম্ফার মুল ভবনের কাছে যেতে হয়। সেইদিন আমরা ছাড়াও সেখানে প্রচুর টুরিস্ট ছিল। গুম্ফার সামনে যাবার পর আমরা জুতো খুলে ভেতরে ঢুকলাম। আসলে গুম্ফা কথাটির অর্থ হলো বৌদ্ধ মন্দির। ভবনের ভেতরে বারান্দার মতো একটি অংশে নেপালি জিনিসের সরকারি দোকান রয়েছে। কিন্তু সেখানে জিনিসের দাম অনেক বেশি। আমরা গুম্ফার ভেতরে ঢুকলাম। গুম্ফার ভবনটি একটি দোতলা ভবনের সমান। আর সেই ভবনের সমান গুম্ফার ভেতরের গৌতম বুদ্ধের মুর্তি। আমি ফুন্টসিলিংএও এরকম দেখেছি। সেখানে দুজন লামাকে দেখলাম। সেখানে একটি সুসজ্জিত দানবাক্স রয়েছে। আমরা সেখানে একশ টাকার মতো ফেললাম। গুম্ফার ছাদে একটি সুন্দর ঝাড়বাতি জ্বলছে। তাছাড়াও চারপাশটা খুব সুন্দর করে সাজানো। এরপর আমরা বাইরে চলে এলাম। বাইরে দাদামনি আমাদের সকলের ছবি তুলল। বাইরের জায়গাটাও খুব সুন্দর। আমরা ফিরতি রাস্তা ধরলাম। আমরা ছোট মার্কেটটা দেখলাম। সেখানে পুটুম কি যেন কিনল। তারপর আমরা আবার গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি এবার চলল বাতাসিয়া লুপের উদ্দেশ্যে।
এখন খাদের দিকে তাকিয়ে আমার গা ছমছম করতে লাগল। দাদামনি বলল ‘খাদের দিকে তাকাস না, ভয় পাবি।’ পাহাড়ের ঢালের বাড়িগুলো দেখে আমার মনে হলো যেন হাতে আঁকা। অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য। মেসোপাপা আবার গান গাওয়া শুরু করল। মামি ও সোনালী মৌসুমি দুজনই ভালো গান গায়। কিন্তু মেসোপাপা তাদের কাউকেই সুযোগ দিচ্ছে না। জয়মামা বলল ‘সকলের গান শুনে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম এ গাড়িতে সাউন্ড সিস্টেম নেই।’
আমরা এরপর জালাপাহাড় রোডে এসে পড়লাম। আমি সত্যজিৎ রায়ের ‘দার্জিলিং জমজমাট’-এ পড়েছিলাম এই জালাপাহাড় রোডে বিরুপাক্ষ মজুমদারের বাড়ি। রাস্তায় অনেক টুরিস্টদের গাড়ি। এখানে আমরা কিছুক্ষণ জ্যামে পড়ে রইলাম। সকাল থেকে আকাশে মেঘ ছিল। কিন্তু এখন মেঘ সরিয়ে দিয়ে সুর্য মুখ দেখিয়েছেন। কিন্তু কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সম্ভবনা কম। রাস্তায় স্থানীয় বাঙালির তুলনায় বাঙালি ট্যুরিস্ট বেশি। এছাড়াও নেপালি গিজগিজ করছে। সব নেপলিই এক রকম দেখতে। অবশেষে আমরা জ্যামের হাত থেকে মুক্তি পেলাম। এবার গাড়ি আরও জোরে চলল। জয়মামা বলল আমরা এই সময় বাতাসিয়া লুপে পৌঁছোতে পারলে আমরা স্টিম ট্রেন দেখতে পাব। আমরা একটা স্কুলের সামনে দিয়ে যেতে যেতে দেখলাম স্কুল ছুটির পর বাচ্চারা বাসে উঠছে। আমরা গাড়ির কাঁচ তুলে দিয়েছিলাম। এখন আবার নামিয়ে দিতে হলো। দার্জিলিঙে যেকোনো জায়গায় গাড়ি দাঁড়াতে দেয় না। এখানকার ট্রাফিক আইনও খুব কড়া। আমি ভাবছিলাম কি করে ট্রাফিক আইন এতো নিয়ন্ত্রণে থাকে? তখনই আমাদের গাড়ি আটকে দিল পুলিশ। গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চাইল তারা। সব দেখে বলল ঠিক আছে। জয়মামা বলল কাগজপত্র ঠিক না থাকলে রক্ষে ছিল না।
আমরা বাতাসিয়া লুপের কার পার্কিংএ পৌঁছে গেলাম। পার্কিং থেকে হেঁটে বাতাসিয়া লুপের সিংহ দরজার কাছে পৌঁছে গেলাম। মেসোপাপা আমাকে ১০০০ টাকা দিয়ে বললেন আটটা টিকিট কাট। ১০০ টাকা করে টিকিট। ২০০ টাকা বেঁচে গেল। বাতাসিয়া লুপে নেপালিদের পোষাক পরে ছবি তোলা যায়। আমি, দাদামনি, মা, সোনালী মৌসুমি, মামী ও পুটুম সেইসব জামাকাপড় পরে ছবি তুললাম। ছেলেদের পোশাকগুলো হলো একধরনের জামা যেগুলোতে বোতাম বলে কিছু নেই। দুপাশে দড়ি দিয়ে বাঁধতে হয়। তার সাথে একধরনের কোমরের বেল্ট, কিছু মালার মতো অলংকার, একটি নেপালি টুপি ও কোমরে কাঠের কুকরি। কুকরি হলো একপ্রকার ছুরি যা নেপালের জাতীয় অস্ত্র। মেয়েদের হলো বড় জামা। সাথে ওরকম অলঙ্কার ও মাথায় টুপির মতো একটা জিনিস ও তার সাথে লাগানো চা পাতা তোলা ঝুড়ি। সেখানে কিছু ছবি তোলার লোক ভাড়া পাওয়া যায়। তাদের বললে তারা সেখানকার পোশাক পড়া লোকজনদের ছবি তুলে দেন। সেই ছবিগুলো তারা প্রিন্ট করে দেন। যদিও দাদামনির কাছে ক্যামেরা ছিল তারপরও আমরা একজনকে ডাকলাম। ছবি তোলা হবার পর সেই লোকটি বলল এখনই স্টিম ট্রেনটি আসবে। একটু পরেই কালো ধোঁয়া দেখা গেল সেইসাথে পুঁ-উ-উ ঝিকঝিক শব্দ। তারপরই দেখা গেল পাহাড়ের গা বেয়ে উঠছে কালো ফিতের মতো স্টিম টয়ট্রেন সাথে কালো ধোঁয়া। শনিবার তাই ট্যুরিস্টদের সংখ্যা কম। ট্রেনটি বাতাসিয়া লুপেরশেষ মাথায় গিয়ে থামল। আমি দাদামনির সাথে গিয়ে ছবি তুলে নিয়ে এলাম। তারপর আমরা বাতাসিয়া লুপ থেকে বের হয়ে পাহাড়ি রাস্তায় এলাম।
জয় মামার খুব লটারির নেশা। সে লটারির দোকানের দিকে যাচ্ছিল কিন্তু মেসোপাপা তাকে থামিয়ে দিলেন। আমরা আবার পার্কিং-এর দিকে চললাম। এবার গন্তব্য চিড়িয়াখানা ও Derjeeling Himalayan Mountainering Institute-এর সংগ্রহশালা। দুটো একসাথে হওয়াতে সুবিধা। ছুটল গাড়ি চিড়িয়াখানার দিকে। কিন্তু রাস্তায় জ্যাম। কারণ এখন স্কুল ছুটির সময়। এখানে দুই লেনের রাস্তা তাই দুটো গাড়ি এক লেনে একসাথে চলতে পারে না। এটাও জ্যামের বড় কারণ। দার্জিলিঙের মানুষদের বেশিরভাগ মানুষই নেপালি। তাই তাদের চেহারার পার্থক্যবোঝা খুবই শক্ত। সকলে যেন একে অপরেরভাই। গাড়ি এসে থামল একটা মোড়ে যেখানে সোজা রাস্তা চলে গেছে ম্যালের দিকে এবং ডান দিকে খাড়া উঠে গেছে পাহাড়ি রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে উঠে চিড়িয়াখানায় যেতে হয়। কিন্তু মুশকিল একটাই। সরকারি গাড়িছাড়া অন্য গাড়ি উঠতে পারবে না। তাই আমরা হেঁটে উঠতে শুরু করলাম। ঠিক হলো ফোন করলে গাড়ি এসে আমাদের নিয়ে যাবে।
আরো পড়ুন: গন্তব্য । শুদ্ধসত্ত্ব ভট্টাচার্য
আমরা চিড়িয়াখানার সামনে গিয়ে টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকলাম। এখানে একটা ব্যাপার আমি প্রথম দেখলাম। খাঁচার বাইরে ভালুক। জয়মামা বলল এরা এদের গন্ডির বাইরে আসার চেষ্টা করলেই বৈদ্যুতিক শক খাবে। ভাল্লুক দর্শন শেষ করে আমরা চললাম চিতাবাঘের খাঁচার দিকে। দেখলাম বাবাজি ভাতঘুম দিচ্ছেন। কিছু মানুষ ঢিল ছুঁড়ে ঘুমভাঙানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ফল হলো না। ঢিল গিয়ে লাগলো পাথরের ঢিবিতে। এরপর আমরা চললাম বাঘের খাঁচার দিকে। আসলে এখানকার অনেক খাঁচাই ফাঁকা। চিড়িয়াখানাটি আসলে নতুন করে তৈরি হচ্ছে। বাঘ বাছাধন দেখলাম খুব মেজাজ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং মাঝে মাঝেই হুংকার ছাড়ছে। বুঝলাম তার এখনো খাবার জোটেনি। বাঘ দর্শন শেষ করে আমরা হাঁটা দিলাম কালোচিতার খাঁচার উদ্দেশ্যে। খাঁচার সামনে গিয়ে দেখলাম চিতামশাই মধ্যাহ্নভোজন করছেন। এরপর গন্তব্য নীলগাইয়ের খাঁচা। আগে আমি ভাবতাম নীলগাই নীল রঙের হয়। কিন্তুআমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। নীলগাইটি দেখলাম বাদামি রঙের। এবার আমাদের পায়ে হেঁটে যাত্রাI Derjeeling Himalayan Mountainering Institute-এর সংগ্রহশালার উদ্দেশ্যে।
চিড়িয়াখানার পর থেকে পাহাড় আরো খাড়াই। আমরা হাঁটতে হাঁটতে একটা ক্যাফের সামনে পৌঁছলাম। এত ঠান্ডার মধ্যেও আমরা ঘর্মাক্ত। তাই আমরা এক বোতল করে কোল্ডড্রিংক খেলাম। আবার আমরা হাঁটা ধরলাম।
দার্জিলিঙের আরেকটা ভালো ব্যাপার হলো দর্শনীয় স্থানে ধুমপান নিষেধ। আমরা এবার একটা গাছের ফাঁকের রাস্তা দিয়ে Derjeeling Himalayan Mountainering Institute-এর সংগ্রহশালার মুল ভবনের সামনে এসে পৌঁছালাম। সবাই ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত। আমরা সংগ্রহশালার ভেতরে ঢুকলাম। প্রথমেই দেখলাম সব এভারেস্ট জয়ীদের তালিকা। আমি সেখানে বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহিমের নামও দেখলাম। দেশের জন্যে গর্বে আমার বুকটা ভরে উঠলো। এরপর উঠলাম দোতলায়। সেখানে দেখলাম তেনজিং নোরগের ব্যবহৃত জ্যাকেটসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। সেখানে আমি মুসা ইব্রাহিমের জ্যাকেটও দেখলাম। তারপর আমরা বাইরে এসে দেখলাম তেনজিং নোরগের সমাধি এবং তেনজিং নোরগের বিশাল মূর্তি। এখানে ছবি তুললাম। আবার চিড়িয়াখানার ভেতর দিয়ে বাইরে এলাম। দেখলাম গাড়িটা আমাদের অপেক্ষায় সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।
এবার আমাদের গন্তব্য দার্জিলিং-এর দর্শনীয় স্থান ম্যাল। ম্যাল হলো উঁচুপাহাড়ের উপর কিছুটা সমতল জায়গা। ম্যাল এলাকায় যখন আসলাম তখন বিকেল ৫টা বাজে। আমরা খেতে ঢুকলাম হোটেল মহাকালে। হাত ধুতে গিয়ে দেখি জল বরফের মতো ঠান্ডা। আমরা সবাই মধ্যাহ্ন ভোজনের বদলে অপরাহ্ণ ভোজন শেষ করে বাইরে এলাম। এবার আমরা চললাম ম্যালের দিকে। এখন অনেক লোকের ভিড়। ম্যালে পৌঁছে আমার মনে হলো দার্জিলিং আসা সার্থক। আমরা টুকটুাক একটু শপিং করলাম। ম্যালে ঘোড়া দেখলাম। কিন্তু বাবা সাথে না থাকায় চড়লাম না। মা আমাকে একটা কুকরি কিনে দিল।
এবার দার্জিলিং থেকে ফেরার পালা। গাড়ি র্যামাটা হোটেলের সামনে ছিল। আমরা আবার চিড়িয়াখানার রাস্তার পাশ দিয়ে বাতাসিয়া লুপের সামনে দিয়ে ঘুম চলে এলাম। এরপর সোনাদা,টুং ছাড়ালাম। রাত হয়ে গেছে। দেখতে দেখতে আমরা কার্শিয়াং চলে এলাম। পাহাড়ে উঠতে সময় লাগে কিন্তু নামা যায় তাড়াতাড়ি। রাত ৮টায় আমরা আবার রোডিস ক্যাফেতে চা খেতে থামলাম। চায়ের বিরতির পর আবার গাড়ি চলতে লাগল ইতোমধ্যেই আমরা জ্যাকেট খুলে ফেলেছি।
জন্ম ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ মে রংপুরে। লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ রংপুরের দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। বইপড়া, তবলা বাজানো, কবিতা আবৃত্তি, ভিডিও এডিটিং ও ভ্রমন শখ। প্রিয় চরিত্র সত্যজিৎ রায়ের প্রদোষচন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা ও সত্যজিৎ রায়ের আরেক চরিত্র প্রফেসর শঙ্কু। প্রিয় মানুষ বাবা ও মা। লক্ষ অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। প্রকাশিত বই আইডিয়া প্রকাশন থেকে একুশে বইমেলা ২০১৯-এ প্রকাশিত পাহাড়ে জঙ্গলে।