| 7 মে 2024
Categories
ধারাবাহিক

ধারাবাহিক: রাণীয়ার রান্নাঘর (পর্ব-৭) । ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট


ওয়াশিংটনের গুজরাটি পাওভাজি
  

এদেশে আসা অবধি ছোটোখাটো বেড়ানোর প্ল্যান লেগেই থাকে। কুশলের অফিসের কাজে নিউইয়র্ক যেতে হবে। এক বন্ধুর বাড়িতে কয়েকটা দিনের জন্য আস্তানা গেঁড়ে বসা। এদেশে এসব নিয়েই সবাই মেতে থাকে। আত্মীয়পরিজন ছেড়ে দিনের পর দিন বিদেশের মাটিতে এসব নিত্যনতুন প্ল্যানিং আছে বলেই যেন বারেবারে রেজুভিনেটেড হয়ে ওঠে যাপন। কাজের পাশাপাশি খোরাক। এবার কুশল প্ল্যান করল রথ দেখে ও কলা বেচে ফিরবে। সারাটাদিনের জন্য প্ল্যান হল ওয়াশিংটন ডিসি যাওয়ার। চোখ চিকচিক করে উঠল রাণীয়ার। সেখান থেকে প্লেনে করে নিউইয়র্ক পৌঁছে বন্ধুর গাড়ী করে ডিসি যাবার ঝটিতি প্ল্যান। এবার সেখানে নেমে রাজধানী শহর ওয়াশিংটন ডিসির রাজপথে ঘুরে বেড়ানো। সেদেশের রাষ্ট্রপতির অফিস। হোয়াইট হাউস বা প্রেসিডেন্টের অফিসকে এখানে ক্যাপিটল বলে (capitol)। মন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে ওদের। ডিসির রাজপথে হোয়াইট হাউসের রাজকীয় শুভ্রতায় কী অসাধারণ শান্তিময়তা, বাইরের সবুজ লনে কি সুন্দর সজীবতা আর সঙ্গে গেরুয়া মরশুমি ফুলের একরাশ উচ্ছ্বাস দেখে বিহ্বল হয়ে একর পর্ব এক ছবি তুলতেই থাকে রাণীয়া। ছবি তুলেই ফোটো উড়ে চলে আসে কলকাতা, জামশেদপুর আর ব্যাঙ্গালোরে। কিন্তু এই সুদূরে এসে সবুজ লন, গেরুয়া ফুল আর সাদা অট্টালিকা… এই তিন রঙ তাকে মনে করিয়ে দেয় ধন্যধান্যপুষ্প ভরা নিজের দেশের কথা। মনে মনে প্রণাম জানাতে ভোলেনা তার দেশের ত্রিরঙা জাতীয় পতাকাকে। কতদিনে যে বাড়ি যাবে ওরা…হাত পা ছড়িয়ে বসে কত গল্প করবে মায়ের সঙ্গে, দিদির সঙ্গে। ক্যাপিটল হিলের কাছে লিংকন মেমোরিয়াল চির শুভ্রতায় জ্বাজ্জল্যমান এব্রাহাম লিংকনের স্মৃতি নিয়ে। সেখান থেকে ন্যাশানাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে। সেই বহু বিতর্কিত এবং অভিশপ্ত হোপ ডায়মন্ড দেখে অবাক হয়। ঘন নীল হীরে। কোনোদিনো দেখেনি এমনটি এর আগে।

ন্যাশানাল গ্যালারি অফ আর্ট থেকে এয়ার এন্ড স্পেস মিউজিয়ামে ঝুলন্ত ছোট বড় কত কত উড়োজাহাজের মডেল, আর তার বিবর্তন । তার মধ্যে থেকেই উঠে আসে স্মৃতির মণিকোঠা থেকে রাইট ব্রাদার্সের হাতে তৈরী প্রথম প্লেনের মডেল। ক্লাস নাইনের ফিজিক্স বইয়ের পাতার সেই ছবি আজ ত্রিমাত্রিক মডেল হয়ে ঝুলছে ওদের দুজনের চোখের সামনে। কুশল রাণীয়া কে জিগেস করে রাইট ব্রাদার্সের নাম। জানি মশাই। অরিভিল এবং উইলবার রাইট । রাণীয়া বলে,  এই দুই ভাই সর্বপ্রথম আকাশের বুকে হাওয়া কাটিয়ে এরোপ্লেনের থ্রি ডি মডেল তৈরী করেছিল। এঁদের নাম ভোলা যায়? মনে মনে ওরা ভাবে সার্থক হয়েছে তাদের ওয়াশিংটন আসা। সাময়িক বাকরূদ্ধতা দুজনের! কুশল বৌ’কে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে, ইহারে কয় হানিমুন। বুঝলি? ভালোবাসার ওম নিতে নিতে রাণীয়া আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে বলে, এবার আমরা কী দেখতে যাবো? কুশল বলে পিকচার তো আভি বাকী হ্যায়। ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশানাল গ্যালারী অফ আর্ট এ এসে পৌঁছয় ওরা। বহু প্রতিক্ষীত ভাবনালোকের রূপসাগর যেন। ডুব দেয় সেই রূপসাগরে। ওদের দুজনের ছবি দেখা আর ছবি কেনার বড় শখ। সেখানে ইম্প্রেশানিস্ট, স্যুরিয়ালিস্টিক সবরকমের পেন্টিংয়ের সঙ্গে রাণীয়ার হাতেখড়ি হল! বিদেশের নামী সব শিল্পীর দামী সব তৈলচিত্র। মাতিস, রেনোয়াঁ, ক্লদ মোনে, ভ্যান গঘ, পল গগ্যাঁ-র গল্পে মাত হয়ে গেছিল আর্ট গ্যালারির প্রতিটি করিডোর! তুই কত জানিস? প্রতি মুহূর্তে কুশল কে আবিষ্কার করতে থাকে রাণীয়া। মোনালিসার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে রাণীয়ার মনে হয় কুশলের কৃপায় তার আজ জীবন সার্থক। কুশলের চাকরীসূত্রে তার এদেশে আসা। তার দিদি অবিশ্যি বলবে, তুই কুশলের ঘাড়ে চেপে ওদেশে গেছিস স্পাউস ভিসায়। বুঝতুম নিজের এলেমে গেছিস তাহলেও কথা ছিল… মিঠি চিরকাল বড় ঠোঁট কাঁটা স্বভাবের। তবুও একমাত্র দিদিকে মানিয়ে গুছিয়ে নেয় রাণীয়া তার নিজের গুণে।
ছবির গ্যালারি ঘুরতে ঘুরতে বড় ভালো লাগে। মানে আজ সে ফুল টু দ্যা ব্রিম।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল দ্য ভিঞ্চির আর এক বিরল সৃষ্টি দেখিয়ে কুশল বলে, দেখ, এটা কিন্তু মোনালিসার থেকে কোন অংশে কম নয়। সত্যিই তাই। সারা বিশ্ব তোলপাড় মোনালিসার হাসি তে কিন্তু মোনালিসার চেয়ে কোনও অংশে কম নয় সেই ছবি। সেই ছবির ভয় মিশ্রিত গাম্ভীর্য্য দেখে রাণীয়া অবাক হয়। মনে হয় মোনালিসা ওভাররেটেড। এভাবেও ভাবেনি সে কোনোদিন।  
অনবদ্য লাগে সেই আর্ট গ্যালারী পরিদর্শন। সবচাইতে চোখ জুড়িয়ে যায়  ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা দেখে । বিদায় নিতে কষ্ট হয় ওয়াশিংটনের কাছ থেকে। ছবির সঙ্গে টেক্সট করে মা’কে। কবিতায় পায় মাঝেমাঝে তাকে। “ডিসি তুমি দিগবসনা, সবুজ আঁচল শুভ্র রাজবেশে ছড়িয়ে দিয়েছো নীলের দিগন্তে , সৌন্দর্য তোমার অলংকার, রাজকীয়তা তোমার মজ্জাগত, নিয়ম শৃঙ্খলা তোমার সহজাত, বেঁচে থাকো ডিসি তোমার অমলিন স্বর্গীয় রাজকীয়তা নিয়ে, আর সর্বকালের অহংকার নিয়ে। রাজধানী হবার যোগ্যতা তোমার মধ্যে পূর্ণমাত্রায়” কুশল বলে চল, এবার তো আসল জিনিষ বাকী। খেতে হবে তো কিছু। সেদিন দুই ফুডি পা বাড়িয়েছিল দিশী রেস্তোরাঁর খোঁজে। রাণীয়ার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও মাঝেমাঝে কুশলের ইচ্ছেটাকেও প্রশ্রয় দেয় সে। সবজায়গায় গিয়ে সেখানকার ডেলিকেসি পরখ করার ঝোঁক যে রাণীয়ার। কিন্তু এক একদিন কুশলের কথাও রাখতে হয় বৈকি। সাদামাটা পাওভাজি। তবুও কী দাম সেখানে। বিহারে মানুষ হওয়ায় পাওভাজি তার কাছে অচেনা নয় কিন্তু বাইরে পাওভাজির সঙ্গে রাণীয়ার প্রথম পরিচয় হয়েছিল বেনারস গিয়ে। সেবার বাবা মায়ের সঙ্গে ওরা দুই বোন বারাণসী পৌঁছে ঘন্টাখানেক গঙ্গার বুকে নৌকোবিহার করে হাজির হয়েছিল নদীর ওপারে রামনগরে। রাজকীয় প্যালেস আর ফোর্ট দেখে ফেরার পথে রামনগরের স্পেশ্যাল পাওভাজি আর রাবড়ি দেওয়া লস্যি খেয়েছিল। সেই পাওভাজি আর ওয়াশিংটন ডিসির পাওভাজি তে বিস্তর ফারাক।মনে উঁকি দেয় রাণীয়ার। আচ্ছা ডালাসে ফিরে গিয়ে এই পাওভাজি নিয়ে একটা পডকাস্ট করলে কেমন হয়? পাও অর্থাৎ ব্রেড আর ভাজি মানে মশলাদার সবজী দেওয়া ঘুগনির পেস্ট। মাথায় অমনি ভাবনাগুলো কিলবিল করে ওঠে তার।


আরো পড়ুন: রাণীয়ার রান্নাঘর (পর্ব-৬) । ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়


সেদিন হঠাত মাঝরাতে ব্যাঙ্গালোর থেকে দিদির ফোন। মিঠি তো সচারচর ফোন করেনা তাকে। সপ্তাহে একদিন বাড়ির সবাই মিলে ভিডিও কলে খলখল করে আড্ডা দেয়। তাহলে? মিঠির দরকার বোন কে। তাই জরুরী তলব। মানে এক্কেবারে অর্ডার।
– শিগগীর আমাকে লিখে পাঠিয়ে দে দিদার ফিশক্রোকের রেসিপি।

রাণীয়া এক্কেবারে বোল্ট ফ্রম দ্যা ব্লু। তুই? মানে আমার দিদি রান্না করবে? তাও আবার সাদামাটা মাছের ঝোল ভাত নয়। এক্কেবারে গঙ্গা না দেখেই মিসিসিপি দেখার সাধ!
ব্যাপারটা কী বলত?

মিঠি বলে কিছুই না চ্যালেঞ্জ। এখানে ভালো মাছ পাওয়া যাচ্ছেনা। আমার ক্যানড টুনা পড়ে আছে অনেকটা। শৈবাল টুনা স্যান্ডুইচ বানাবে বলে এনে রেখেছিল। তাই আমি ভাবলাম নতুন কিছু একটা বানিয়ে সারপ্রাইজ দেব । এই উইকেন্ডে কিছু গেস্ট আসবে বাড়িতে। তুই তো জানিস আমার খুব বদনাম রান্নাঘরের চৌকাঠ মাড়াইনা বলে। দেখিই না ট্রাই করে কিছু যদি একটা দাঁড়ায়। আমাদের দিদা বানাতো না?

রাণীয়া তো হেসেই খুন। বলেই ফেলল সে… বাট যাই বলিস না কেন ক্যানড টুনা দিয়ে ফিশ ক্রোকের আইডিয়াটা এক্কেবারে ইঞ্জিনিয়ারস চয়েস বস্! কাঁটা বাছতে হবেনা। অথচ গেস্ট কে তাক লাগানোর পক্ষে আইডিয়াল। ভালো হবে। আইডিয়াল ফর ককটেল স্ন্যাক্স। কিন্তু তুই… হাসতে হাসতে মরে রাণীয়া।
মিঠি বলে, এবার না হেসে আমায় বলবি? আমি কোথাও খুঁজে পেলাম না ।
ও তাই বুঝি আমাকে মনে পড়ল? রাণীয়া ইয়ার্কি করে।

দিদি কে চপ আর ক্রোকের ফান্ডাটাও দিয়ে দিল সেই ফাঁকে। মানে চপ আর ক্রোকে যে দুটো আলাদা জিনিষ তা বানানোর আগে জানা উচিত। মস্ত পন্ডিত দিদি কে জ্ঞান দিতে বেশ লাগে ছ’ বছরের ছোটো বোনের।
– আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, কাঁচালংকা, গরমমশলা সব লাগবে কিন্তু। এসব রেডি থাকে তো তোর বাড়িতে?
মিঠি বলল, সব আনিয়ে নেব। তুই বল শুধু। আমি ভয়েস রেকর্ড করে রাখছি। তোকে কষ্ট করে টেক্সট করতে হবেনা আর।
রাণীয়া বলল,
শোন, বাইন্ডার হিসেবে ডিমের গোলা আর ব্রেডক্রাম্ব মাস্ট। শুনেছি ব্রেডক্রাম্ব না থাকলে আমাদের দিদা মুড়ির গুঁড়োতেও গড়িয়ে নিতেন ক্রোকে। কর্ণফ্লেক্সেও মুচমুচে হয়। প্যাঙ্কোও কিনে আনতে পারিস। ভালো হয়।
মিঠি বলল তারপর?
প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর রান্নার বই পড়ছিলাম বুঝলি দিদি? সেখানেও রয়েছে ক্রোকের কথা। তিনি প্রচুর ঘুরেছেন। প্রচুর রেঁধেছেন। তিনখানি বিখ্যাত রান্নার বই আছে। রবীন্দ্রনাথের সুন্দরী, শিক্ষিতা ভাইঝি। তিনি বলেছেন ফরাসী রেসিপি এই ক্রোকে বা croquette বনেদী বাঙালীর অন্যতম পার্টি স্ন্যাক্স হয়ে ঢুকে পড়েছিল এককালে। আর শুরুতে যা ছিল ফরাসীদের আলুর ক্রোকে তা ক্রমশ উন্নত হতে থাকল সবজী এবং আলুর মিশেলে। তাই বুঝি ঠাকুরবাড়ির রান্নায় রাঙালুর ক্রোকে আর প্রজ্ঞাসুন্দরীর নিরামিষ আহারে ডুমুরের কূর্কিট এর রেসিপি পেলাম।এরপর এই ক্রোকের উত্তরণ হল মাংসের কিমা এবং আলু সেদ্ধর অদ্ভুত মাখামাখিতে। বাঙালীর মাছে নাড়ী কাটা। তাই একদিন মতস্যপ্রেমী বাঙালী নিজেই আবিষ্কার করে নিল সেদ্ধ মাছের সঙ্গে আলুর মিশ্রণে ক্রোকে বানাতে।

মিঠি বলল, উফ! তোর সব ভালো। বড় হ্যাজাস। কাম টু দ্যা পয়েন্ট ডিয়ার। দু ক্যান টুনার জন্য ক’টা আলু, পেঁয়াজ লাগবে বল?
রাণীয়া বলল কখনো কখনো ধান ভানতে শিবের গীত গাইতে হয় মশাই।
উফ! মিঠির ভ্রূ তুলে সে কত অস্বস্তি!
রাণীয়া বলে,
– ডিপেন্ড করে কতটা সেদ্ধ মাছ তার ওপর। হাফ কেজি মাছ সেদ্ধ হলে
বাইন্ডার হিসেবে দুটো মিডিয়াম সাইজের আলু মাস্ট। আর পেঁয়াজ চারটে, রসুন কুড়ি বাইশ কোয়া, গ্রেট করা আদ দু চামচ আর কাচালংকা কুচি দু চামচ। নুন, হলুদ, সামান্য চিনি। আলু সেদ্ধ করে ম্যাস করে নিয়ে একটু মাখন আর গোলমরিচ, গরমমশলা ছড়িয়ে মেখে নিবি। দু চামচ তেলে পেঁয়াজ, রসুন ফ্রাই করে আদা দিয়েই জল ঝরানো মাছ দিবি। অনেকক্ষণ ফ্রাই করবি। তারপরেই কাচালংকা কুচি আর আলু সেদ্ধ টা দিয়ে আরও ফ্রাই করবি। একদিম শুকিয়ে যাওয়া অবধি। তারপর একটু ধনেপাতা কুচিয়ে দিতে পারিস। গাজর গ্রেট করে দিতে পারিস। ক্যাপ্সিকাম কুচি ইজ টু গুড ফর ক্রোকে। এগুলো সব আমার ইম্প্রোভাইজেশন। তারপর ঠাণ্ডা হলে ইচ্ছেমত শেপে গড়ে নিয়ে ডিমের গোলায় ডুবিয়ে ব্রেডক্রাম্বে গড়িয়ে নেওয়া। ফ্রিজে রেখে দে। গেস্ট এলে গরম গরম ভেজে দিবি। ব্যাস। আর লাস্ট বাট নট লিস্ট হল আলু সেদ্ধ করে মনে করে জল টা ফেলে দিস কিন্তু। মা কী বলেছিল? আলুর ফ্যাটের মূলে ওই স্টার্চ।

মিঠি বলল ঠিক কেমন হবে শেপ টা? দিদার মত ওইসব আমি পারব না। আর শোন এখুনি মা’কে ফোন করে যেন বলিস নি কিছু। তারপর যদি আমি ফেল করি?
আরে না না। রাণীয়া বলে। তুই ঠিক পারবি।  
বলেই রাণীয়া পড়ে নেয়। ক্রোকের শেপের ঠিকুজী কুলুজী ঘাটে। বলে…শেপ টা যা খুশি হতে পারে।  
অক্সফোর্ড কম্পানিয়ন টু ফুড জানাচ্ছে অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই ফরাসী croquetteর বানান ছিল croquet। শব্দটির উৎপত্তি croquer যার অর্থ ‘to crunch’।
জ্ঞান ভাণ্ডারের অগতির গতি উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে “A croquette is a small cylinder of food consisting of a thick binder combined with a filling, which is breaded and deep-fried, and served as a side dish, a snack, or fast food worldwide. Croquettes may also be formed in other shapes: disks, ovals, balls.”
শোন্, তোকে এখনই ক্রোকের গুষ্টি উদ্ধার করতে হবেনা। ওটা তোলা থাক তোর পডকাস্ট  চ্যানেলের জন্য।
রাণীয়া বলল, ওকে ডিয়ার। অল দ্যা বেস্ট! হ্যাপি কুকিং দিদি! ক্রোকে নিয়ে চাপ নিস না একদম । মাছের চপে খাটনি আরও বেশী। আলুর বাটির মধ্যে পুর ভরতে হয়। ক্রোকে আমাদের বাংলার আদি অকৃত্রিম আলুর চপ, অবাঙালীর আলু টিকি আর বিদেশের হ্যাশ ব্রাউনের মত। খুব ইজি বানানো। ফোন রেখে রাণীয়া ভাবে, দিদি তার মানে বোনের পডকাস্ট চ্যানেল সম্পর্কে বেশ অবহিত। কিন্তু ঘূণাক্ষরে সেসব বলেও না। প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়। টুঁ শব্দটি করে ফিডব্যাক জানায় না। বলাই বাহুল্য সেদিন উইকেন্ড পার্টিতে ককটেল স্ন্যাক্স হিসেবে জমে গেছিল মিঠির হাতের টুনা ক্রোকে। বাঙ্গালোর থেকে ফলাও করে তা আবার জানিয়েওছে সে তামাম দুনিয়াকে।

কিন্তু মিঠির সেরাতে ঘুম এল না। জীবনে প্রথম সে সফল হয়েছে তার একলার রান্নাঘরে । তার টুনা ক্রোকে খেয়ে সেদিন পার্টির সবাই তাজ্জব। এতদিন এ শহরে বাঙালি সহ আরও অনেক প্রদেশের মানুষজন আছে কিন্তু কারোর মাথায় আসেনি এভাবে মাছের চপ বানানোর কথা। বৌ প্রথম রান্নাঘরে ঢুকে স্বেচ্ছায় রান্না করেছে। শুধু তাই নয় গাছে না উঠেই এক কাঁদি । মানে হেলাফেলা রান্না নয় একেবারে ব্যুটিক রান্না করে শৈবালের অফিস কলিগদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে একেবারে। সে রাতে শৈবাল তার মিঠি কে নিজের কাছে একটু যেন বেশী করে টেনে নিল। আর ওদিকে মানে ডালাস থেকে কলকাতা সহ জামশেদপুরে যেই না হোয়াটস্যাপে মিঠির বানানো ক্রোকের ছবি পৌঁছতেই হাসির হররা একেবারে। তবে সেই মুহূর্তে রাণীয়ার মতই সবচাইতে বেশী আনন্দিত হলেন অনসূয়া। নিজের কর্তার ঘনিষ্ঠ হয়ে সে রাতে তিনিও বললেন, আমিই তবে রত্নপ্রসবা! আমার রূপোর ঘটি, আমার মিঠি আন্না করেছে… আমার মায়ের রেসিপিতে ক্রোকে রেঁধেছে। দিদার কাছেও পৌঁছে গেল সেই খবর। মা, তোমার আদরের বড় নাতনী রান্না করেছে, তাও আবার প্রথম দিনেই তোমার ঝামেলার রেসিপি ফিশক্রোকে। দিদা অবিশ্যি শুনেই বলেছিলেন, সব তো ভালো কিন্তু কবে যে নাতনীর ঘরে পুতি বা পুতনির মুখটা দেখব আমি! মিঠির বিয়ে হল প্রায় বছর ছয়েক। মেয়েটা কে বলিস আর দেরী না করতে। সোশ্যালমিডিয়ায় মিঠির বন্ধুমহল ফিশক্রোকের ছবিছাবা দেখে সুখ্যাতি করছে। রাণীয়ার মনে পড়ে গেল ঠাম্মার মুখে শোনা সেই প্রবাদ “এই মানুষ বনে গেলে বনমানুষ হয়”। 

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত