| 27 এপ্রিল 2024
Categories
ধারাবাহিক

ইরাবতী ধারাবাহিক:ফুটবল (পর্ব-১৭) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

অষ্টম শ্রেণির দুই বন্ধু রাজ আর নির্ঝর। রাজ আর অনাথ নির্ঝরের সাথে এইগল্প এগিয়েছে ফুটবলকে কেন্দ্র করে। রাজের স্নেহময়ী মা ক্রীড়াবিদ ইরার অদম্য চেষ্টার পরও অনাদরে বড় হতে থাকা নির্ঝর বারবার ফুটবল থেকে ছিটকে যায় আবার ফিরে আসে কিন্তু নির্ঝরের সেই ফুটবল থেকে ছিটকে যাবার পেছনে কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নির্ঝরের জেঠু বঙ্কু। কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বঙ্কু ও তার ফুটবলার বন্ধু তীর্থঙ্করের বন্ধুবিচ্ছেদ। কিন্তু কেন? সবশেষে নির্ঝর কি ফুটবলে ফিরতে পারবে? রাজ আর নির্ঝর কি একসাথে খেলতে পারবে স্কুল টিমে? এমন অনেক প্রশ্ন ও কিশোর জীবনে বড়দের উদাসীনতা ও মান অভিমানের এক অন্য রকম গল্প নিয়ে বীজমন্ত্রের জনপ্রিয়তার পরে দেবাশিস_গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন কিশোর উপন্যাস ফুটবল আজ থাকছে পর্ব-১৭।


 

 

আজ স্কুলে স্যার কম  এসেছেন।  কোথায় নাকি ট্রেন  অবরোধ হয়েছে সেইজন্য। ছাত্রও কম। রাজ এসে দেখল প্রান্তিক,বর্নিকরাএসে গেছে।  ও তিন নম্বর  জায়গাটায় ব্যাগ রাখল। এ বেঞ্চে পাঁচজন বসে। কোনো নিয়ম নেই। তবু একটা নিয়ম হয়ে যায়।তিন নম্বর জায়গাটা রাজ চেষ্টা করে নির্ঝরের জন্য ফাঁকা রাখার।কিন্তু দেখতে দেখতে প্রায় পনের দিন হয়ে গেল। নির্ঝর আসে নি।

এরমধ্যে দ্বিতীয় খেলাটা হয়ে গেছে। রামলাল স্কুলের সাথে। কেন জানে না যা আশংকা ছিল তাই ঘটল। রাজরা হেরে গেল। স্যার বিরাট গম্ভীর হয়ে গেলেন।রাজ নিশ্চিত নির্ঝর থাকলে তারা হারত না। স্যার  এবার তাদের তাকে ও ইমনকে অল্প সময়ের জন্য চান্স দিয়েছিলেন। রাজ যাও বা খেলেছে, ইমন খেলতেই পারে নি।

হেরে যাওয়ার পরে মৈনাক স্যার আরো গুম হয়ে গেছেন। দুটো খেলায় একটা জিত, একটা হার। আর একটা খেলায় না জিততে পারলে রাজরা সেকেন্ড রাউন্ডে যেতে পারবে না।তাছাড়া স্যারের চাপের আর একটা কারণ আছে। রামলাল স্কুলের গেমটিচার সুদীপ স্যারও মৈনাক স্যারের  পাড়ার লোক। খেলা নিয়ে মাঝেমধ্যেই দুজনের তর্কবিতর্ক হয়।তার ফলে পাড়ার কেউ কেউ  মৈনাক স্যারের দিকে,কেউ সুদীপবাবুর দিকে। হারজিত হওয়া নিয়ে  চ্যালেঞ্জও হয়। স্যার এবার বলে ছিলেন, “জিতবেন।“ কিন্তু তাঁর আশায় জল ঢেলে দিয়েছে রাজরা। স্যারের কিছু টাকাও খসেছে। সুদীপবাবুদের খাওয়ানোর জন্য।

 বেঞ্চে বসবার পর সুজয় বলল,“এই  সরোজ স্যারের এইচ ডাব্লু করেছিস?”

 মুখ শুকিয়ে গেল রাজের। ভুগোলের  টাস্ক সরোজ স্যার দিয়েছিলেন।  সে একদম ভুলে গেছে। এ কদিন সে শুধু নির্ঝরের কথা ভেবেছে। মা যাবার পর সে অল্প করেও আশা  করেছিল নির্ঝর ফিরবে।  সেদিন মা বঙ্কুজেঠুকে অনেকবার বোঝালেন। তিনি হা-হু করেছিলেন।পজিটিভ  কোনো উত্তর দেন নি। মা  হতাশ হয়ে ফিরে এসেছিলেন।

সে এখন  বলল, “না রে? স্যার কি এসেছেন?”

“এখনো আসেন নি।“

“তুই করেছিস?”

“হ্যাঁ।“

রাজ বলল, “দে না রে। করে রাখি?”

সুজয় একটু ইতস্তত করল। সে বলল, “কি খাওয়াবি?”

  নির্ঝর হলে  এসব কথা জিজ্ঞেস করত না। সে নির্বিবাদে দিয়ে দিত।রাজ একটু মুখ গোমড়া করে বলল,“টিফিনে বলিস। খাইয়ে দেব।“


আরো পড়ুন: ফুটবল (পর্ব-১৬) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়


স্যারের পিরিয়ড তিনে। তার আগেই লিখে নিতে পারবে রাজ। কিন্তু মনে মনে নিজের উপরও সে রেগে যাচ্ছিল।  গত কদিন সময় ছিল, সে অনায়াসে কাজটা করে নিতে পারত।কিন্তু নির্ঝরেরর জন্য চিন্তায় সে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। এখনো তার মনে  হচ্ছে বংকুজেঠা  সুবিধার না। সেদিন মাকে   ফেরার সময় রাজ   জিজ্ঞেস করেছিল, “লোকটাকে কি করে চিনলে গো?”

মা বলেছিলেন, “ওমা। চিনব না কেন? আমি এখানকারই  লোক। কিন্তু  ও যে নির্ঝরের  জেঠু তা এখন জানলাম।“

“ছোটবেলা থেকে চেন?”

“হ্যাঁ।“

রাজ মাথা নাড়িয়ে বলেছিল,”ও।“

 মা বলেছিলেন, “খুব ভাল  ফুটবল খেলত বঙ্কুদা।“

“তুমি তো দৌড়াতে?”

“হ্যাঁ।একই মাঠে।তোরা যে মাঠে খেলিস সে মাঠেই। বংকুদা, আর তীর্থদাও খেলত। দারুন খেলত। আমাকে খুব হেল্প করত ওরা। টাইম মাপত। টিপস দিত।“

রাজের কি যেন মনে পড়েছিল। সে বলেছিল “জানো মা। মাঠে একটা লোক আসে তার নামও তীর্থদা। মাঝেমাঝে  বঙ্কুর কথা বলে। জানি না এই বঙ্কুর কথাই সে বলে কিনা?”

মা ভ্রু-কুঁচকে বলেছিলেন,“ঐ যে  লোকটা মিলের ধারে থাকে। যার কথা বলছিলিস? ওর  নাম তীর্থ?”

“হ্যাঁ।“

“কিরকম দেখতে?”

রাজ বিবরণ দিয়েছিল।

মা অবাক হয়ে  গেছিলেন। তাঁর মুখের দিকে চেয়ে বলেছিলেন, “হ্যাঁ। হ্যাঁ। ওই তীর্থদাই। ওমা! তাই! এখানে থাকে নাকি তীর্থদা?”

রাজ বলেছিল, “হ্যাঁ। থাকে তো? তুমি ওকেও চেনো?”

মা তার গাল টিপে বলেছিলেন, “হু।চিনি। এরা সব এখানকার লোক। উফ! ফুটবল যা খেলত না তীর্থদা, বঙ্কুদা।“

রাজ বলেছিল, “আমি জানি। স্যার বলেছেন।“

মা  একটা শ্বাস ছেড়ে বলেছিলেন, “বঙ্কুদা আর তীর্থদা দুজনেই খুব বন্ধু ছিল।“

“তাই!”

“কিন্তু কি যে হয়ে গেল ওদের মধ্যে।“

  ইমনও এমন কথা  বলেছিল। সেদিন তার বিশ্বাস হয় নি!  সে তাই জিজ্ঞেস করেছিল, “ কি হয়েছিল মা?

“সে অনেক কথা।“

“কি?

“এখন নয়। পরে বলব”

 মা আর বলেন নি সেকথা। রাজও মাথা ঘামায় নি।

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত