আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট
আজ ৩০ জুলাই কবি, সম্পাদক আলী আফজাল খানের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
টোপাপানা
হয়তো কাছেই ডাঙ্গা
এই আশায় অনন্ত জল সাঁতার
হয়তো ঝরে যাবে এই সবুজ শরীর
–মেশার আগে মোহনায় অথবা সীমানার ওপার
জানি না কতদূর জন্ম
সেই মাহেন্দ্র ক্ষণের
কত দূর এই নদীপথ
ঢেউয়ের সাথে ভেসে ভেসে
ঢেউয়ের কোণায় সাঁতার কাটা ছোট্ট জীবন
উ্চ্চবাচ্চহীন – নিভৃত সাধনায় বয়ে চলা
জলের মুসাফির ঘাটে ঘাটে
লেবার রুমে রাধা
০১.
সবচেয়ে সুন্দর পদ্যটি লিখেছো তুমি
মৃত্যুর মুখে ছায়া রেখে
সবচেয়ে সুন্দর পদ্যটি লিখেছো তুমি
তোমার আগামীকে সামনে রেখে
ওটির লোহার বিছানায়
ক্লোরোফর্মের নেশায়
কোন গহীন পথে
ভেসে উঠলাম তোমার চোখে
— গভীরে ডুবে থাকা জলজীব
ঝড়ে পুড়া আলোর আয়নায় ?
মৃত্যু দোলনায় আপন সাথী
চেয়েছিলে ঠিক
মৃত্যুর মুখে ছায়ারেখে
সবচেয়ে সুন্দর পদ্যটি
০২.
এত রাতে কোন ভরে
জেগে উঠলে অপারেশন ঘরে
যে সড়ক দিগন্তে মিশে আছে
তার সীমানা ছায়ায়
দানে ভরা তোমার আমি
তুলেছি মাটি সিঁদুর করে
লিখেছো যে অপার কবিতা মৃদঙ্গ
বাতাসের সুর সুড়ঙ্গে
ঘুরাতে ঘুরাতে ডেকেছো
যখন আমারে তুমি
সৃষ্টি ধ্বনির মাংস কামড়ে
লুটায়ে নেমেছি
আমার স্বর্গে
বনবীথির মাটির জলের
একটি শান্তির নীড়
০৩.
কী আর বাক্য খুলি
অপার দরজা খুলেছো তোমার
মনের কারখানার
যে ঘর ভুলে থাকি ভুলের ছলে
আর কারও কথা পড়েনি মনে
মৃত্যুর কোণে নি:সঙ্গ তোমার
উঠানের এক চিলতে জায়গায়
যেন ফুটে থাকা শেষ ফুল
০৪.
খুঁজে আলোর কাপড়
জালের সীমানায় নৃত্য আগুন
কোলে তুলে অপার হেসে
ছিঁড়েছো লোহার দড়ি
শুয়ে শুয়ে অপারেশন ঘরে
মিথের উপদ্বীপ রাতের নেশায়
ডেকেছিলে কাল রাতে
ভুলিনি যে আপন
একান্ত ধ্যানে মিশে ছিলো
হূদয় মাংসে কালি জমা চোখ খুলে দেখলে কি
— আমি আছি ?
কৃষ্ণা
আড়বাঁশি হাতে অমৃত ভেলায়
ফের কে এলো কল্পনাকুমারী জরায়ুর নির্ঝরে?
অফুরান আঁচলে ভাঁটফুল, রামধনু আর গ্লেসিয়ার
বিভোর মাতাল চুলের আলপনায়
পূর্ণ শঁপে নাড়ায় অস্তিত্ব ভূগোল
আবেশে মোচড়ায় শরীর, অন্তর বাহির
সহস্র আলোর রশ্মি যখন এ পথে কোয়াসার
খরস্রোতা নদী, লাভারস্রোতে জলবিভ্রম
আদরে স্পর্শে শিহরণ, নাভিকেন্দ্রে বনফুল ঘ্রাণ
অন্তর্জালের অনুভবের বুনন
পাঁকে বোনা শব্দের সংসার আনন্দসঙ্গম
ঘনশ্বাসের ফরমাস হিমোষ্ণ জলধারায়
উষ্ণ নিঃশ্বাসে সাপের গতি
যেন তর তর বৃষ্টির কণা
উছলায় মহা উৎসবে মীনের কেলি
রতির ইলিশ পোনা
জলকেলি মগ্ন জড়ানো লতা
নক্ষত্র তুমি শক্তির প্ররোচনা আকাশগঙ্গার
মননে, গর্ভে ফ্লোরোসেন্ট সহচর
মহাকাশ-মরু-সমুদ্র-বন
হৃদপিন্ডে প্রাণের পতাকা
অগ্নি জলে জ্বলি, জ্বালাই
আনন্দ বিষ্ফোরণ
দ্রৌপদী
জলের রশ্মি পেচিয়ে
দিয়াশলাইয়ের নির্বাক শব্দে
দ্রৌপদী জ্বালাও কি আগুন
রক্তের ঘন চলাচলে উষ্ণ দৌড়
চেতনার বৃত্ত পরিক্রমায়
সেই দ্রৌপদী
কলসী ফুলে খলবলায়
ভরা গাঙ্গের পানি
পূর্ণিমার নরম ছোঁয়ায়
কৃষ্ণগহ্বরের অনন্ত সুখস্রোত
শ্যামল মাটির ভূমি
মাধবী প্রতিসরনে বীণার বিন্দু
অন্তর্বৃত্তের কেন্দ্রে কালো গোলাপ অপূর্ব শিশির
শ্বেতাঙ্গ নয়, শ্যামাঙ্গ বলি উচু শির
তুমি দ্রৌপদী
ঝর্ণার প্রবাহে মন্দিরার সুর
আঁধারের বিরুদ্ধে অক্লান্ত আলোক দ্বীপ
চোখের কণিনীকা হয়ে
চুলের ঢেউ পিঠের নকশায় আঁকে আলপনা সিঁদুর
মায়াবতী
দিগন্তের মরিচীকায় ঝাপসা মনে হয়
তবু দেখা যায় সবুজ শ্যামল ঘাঘড়া পরনে
লাউ ডগার গড়ন
সোনালী ধানের রাঙা বসনে অবগুন্ঠন
দৃষ্টিতে আসে শুধু চাঁদ বদনের জোছনা ঝরা রূপ
বটতলার ম্রিয়মান আলোয়
একজন মায়াবতী
লালিত স্বপ্নিল ফুল
বার বার উঁকি দেয়া
মধ্যাহ্নে ভ্রম দৃষ্টির ছায়াঘেরা
বহুদিন টেনে নেয়া – জীবন চাকা
প্রশান্তির সোনালী ইশারায়