অদিতি বসুরায়ের একগুচ্ছ কবিতা
আজ ২৯ সেপ্টেম্বর কবি, চলচ্চিত্র সমালোচক অদিতি বসুরায়ের জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
গোপন, তোমাকে
কী লিখবো, গোপন?
নাকি অভিমান করে পুরনো পুকুরে
রোজ রোজ মরে যাব?
কী দেবে বলো তুমি?
-ধনুকে নিশানা নেই, রাজপথে জোকার নেই
শুনশান বইমেলা।
কী আছে তোমাদের?
আমি বরাবর দেবতার প্রিয় বন্ধু।
আমাকে প্রতিদিন ফসল ফলানোর কাজে
ব্যর্থ হতে হয়।
কী আছে গোপন?
যে সানাই বেজেছিল- পুড়ে গেছে
বেনারসী নষ্ট সেও বহুকাল।
দেবই বা কী?
দেবতার ঘর থেকে সামান্য শরীর
আনতে পেরেছিলাম।
নেবে?
ফিরবো
আমি ভালবাসতে ফিরবো
আবার
দুপুরে পুড়বো
পথের ধুলোয় অনন্ত লাট খেতে খেতে
তাচ্ছিল্ল্য ছুঁড়ে মারব সপাটে
এদিক-ওদিক ভাসাবো অনায়াস
উঠোনে শুয়ে পড়বে আয়েসী রোদ্দুর
ফিরবো আবার…মনে রেখো ।
সম্মতিনামা
১
বহুদূরের কিছু গাছের কাছে নিয়ে যাবে?
অনামা স্টেশনে নেমে যাবো
ধুলোপায়ে।
বরণ করে নেবে টিকিটঘর আর
দিগন্তরেখা জুড়ে থাকা পাহাড়সমূহ।
২
খুব সচেতনে সমস্ত সম্মতি
তুলে নিতে হয় আমাকে।
৩
আমি শুধু মরে যাবার আগে শীতকাল চাই।
সোয়েটার থেকে উঠে আসা
ইস্কুল-ইস্কুলের মাঠ-সাইকেল
— এই সবের জন্য বড় মনকেমন করে ইদানীং।
৪
আরো দুরূহ এক বিষণ্ণতা নিয়ে
ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি
বিকেলের মুখে ঝুঁকে আছে বিষাদ বালক
লোকে তাকে ডাকনামে ‘সর্বনাশ’ ডাকে।
একলা
যে সব অসুখের কথা বলি নি,
সে সব অসুখ আঙুলে চেপে ধরে গলা।
একলা ঘরের সব কোণ ভিজে যায় –
লেখার টেবিলে কেউ বসে না
বারবার ফোন দেখি- কে ? কে?
অসুখ ছাড়া আসে না কেউ।
মেঘদূত আরো দূরে ফিরে যায় বর্ষায়;
সে জানে আমার অসুখ…সে জানে আমি একলা আছি।
আসন্ন অসুখ
এবার একটা বিচ্ছিরি অসুখ করবে আমার
তবু কেউ মাথায় হাত রাখবে না
দেখবে না কত জ্বর!
রক্ত, হাড়, মজ্জা ফুটে ফুটে রান্না হবে উনুনে
যেখানে রোজ তোমার চা হয়,আপেল কাটা হয় ;
আমাকে জানলা ছাড়া ডাকে না কেউ
একা একা বড় বেহালা শুনতে ইচ্ছে করে
এবার অসুখ হবে ক’দিন পরেই।
ভয়ের ওপারে
আসলে আমার জল ভয় করে
সে নিয়ে নেয় সব।
লাটিম থেকে খুলে আসে ঘূর্ণি
নদী থেকে উড়ে যায় স্রোত
দূর থেকে চিঠি আসে
স্নানে স্নান হয় ঝর্ণা আর চাঁদের রূপো
আগুনে আগুন লেগে পুড়ে যায় ভয়
তারপর,
মন্ত্র, হোম,স্তব অন্তরা – সব ফুল হয়ে ওঠে
সব ভয় পেরিয়ে, আমিও স্নান শিখি পুনরায়।
রাজকাহিনি
কলিংবেল বাজিয়ে একটা পাখি ঢোকে ঘরে।
তার পালকে পালকে খাতার পাতা
চোখের তারায় অক্ষররেণু
পাখিটি গ্রীন টি চায় মিনিটে মিনিটে
মাথা উঁচু করে ডাকে, ‘পারিজাত এদিকে এস’
ওমনি আমি ওড়া ভুলে যাই
ওমনি আমি বুঝতে পারি গত সাড়ে সতেরো বছরের পাপ
পাখিটা কলিংবেল বাজায়…
আমাকে ঘুম শেখায় সুন্দর এক সকাল চেনাবে বলে।
