একাকী ভ্রমণ করা হয়তো কারো কারো কাছে ভয়ের ব্যাপার হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু এটা নির্ভর করে আপনি কীভাবে এবং কোথায় ভ্রমণে যাচ্ছেন। তবে একা ভ্রমণ বা সোলো ট্রাভেল হলো পৃথিবী দেখার সবচেয়ে মুক্ত এবং ফলপ্রসূ পথ। এবং অবশ্যই সত্যিকার এ্যাডভেঞ্চার করতে একাকী ভ্রমণের জুড়ি নেই। তাই কিছু টিপস জেনে নিন, বলা তো যায় না হয়তো কোনো একদিন আপনিও একা ভ্রমণে বের হয়ে যেতে পারেন।
নিজের আত্মার পরিবর্তনকে উদ্ভাবন করা

একাকী ভ্রমণে বের হওয়া মানে এটা একটি দারুণ সুযোগ নিজেকে, নিজের সত্ত্বাকে নতুনভাবে আবিষ্কার করা। নিজের কাছেই নিজেকে অন্য এক রূপে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। যদি না আপনি ঝোঁকের বশে এমন স্থানে চলে যান যেখানে ভ্রমণকারীরা সচরাচর যায় না। একা ভ্রমণে নিজের সাথে নিজের সঙ্গ উপভোগ করতে পারবেন।
২) নতুন জায়গায় অপরিচিতদের সাথে কথা বলুন

ভ্রমণের প্রকৃত অনুভূতি পেতে যে স্থানে যাবেন সেস্থানের স্থানীয়দের সাথে কথা বলবেন, এতে করে আপনি অনেক নতুন তথ্য পাবেন যা আপনার অজানা। এর সত্যতা যাচাই করে দেখতে আপনি আপনার ভ্রমণ স্থানের লোকাল জনগণকে সাধারণ একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন যে তারা অবসর সন্ধ্যায় কী করে কাটায়, আর দেখুন তাদের দেওয়া তথ্য আপনাকে কোথায় নিয়ে যায়!
গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, এটা আপনাকে আকর্ষণীয় তথ্য এবং জায়গা চিনিয়ে দেবে যা আপনার গাইডবুক বা ট্যুরিস্ট অফিস দিতে পারবে না। কোনো জায়গায় ভ্রমণে গেলে আপনার ভ্রমণের পরিপূর্ণতাই আসবে না যদি না আপনি সে জায়গার মানুষের সাথে কথাই না বলেন। হয়তো বা এটাই হতে পারে আপনার ভ্রমণের শুরু আর তৈরি হতে পারে দারুণ বন্ধুত্ব।
৩) হারিয়ে যান

ডিরেকশনে উল্টোপাল্টা চিন্তাই একা ভ্রমণের মন্ত্র। যখন আপনার সম্পূর্ণভাবেই কোনো ধারণা থাকবে না আপনি কোথায় আছেন এবং কোথায় যাবেন বা যাচ্ছেন, কী করেই বা ফেরার পথ খুঁজে পাবেন এবং কোনো বন্ধু নেই সাহায্য করার মতো, আর তখন যদি ট্যুরটাও ভালোভাবেই ঘটে তো দারুণ এক অভিজ্ঞতা হবে। একা ভ্রমণ মানেই নিজের মনকে সায় দেওয়া। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই নিজের ভালোর জন্যে হলেও নিজেকে একটু ভেবে পদক্ষেপ নিতে হবে যেকোনো সোলো ভ্রমণে। প্রকৃতির কাছে নিজেকে সঁপে দিন, হারিয়ে যান নতুন এক অনুভূতিতে আর আবিষ্কার করুন নতুন এক সত্ত্বা।
৪) একা মায়ামিতে না যাওয়া ভালো

একা ভ্রমণের জন্য আপনাকে খুব সাবধানে গন্তব্যস্থান ঠিক করতে হবে। কিছু শহর একা ভ্রমণের উপযুক্তই নয়, যেমন মায়ামি। ভাষাগত সমস্যায় পড়তে পারেন খুব। মায়ামির সাউথ বিচে আমি ওয়েটারকে “একজনের জন্য টেবিল” এই কথাটি পাঁচবার পাঁচরকমভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে সফল হতে পেরেছিলাম। আর তারপর সে বুঝতে পারে আমি একাই ডিনারের জন্য এসেছি, আর কেউ আমার সাথে অংশগ্রহণ করবে না।
সে আমাকে রেস্টুরেন্টের মাঝখানে নিয়ে বসায় এবং খুব বেশি শব্দ করে কাটলারি আর টেবিল পরিষ্কার করে। এবং আমি যেখানে মেইন কোর্সের খাবার চেয়েছি সে আমাকে অন্য স্ন্যাক জাতীয় খাবার এনে দিয়েছিল। তবে একটি ব্যাপার ভালো যে, মায়ামির রেস্টুরেন্টে একা বসে খাওয়াদাওয়া খুব আরামদায়ক।
৫) একা ভ্রমণে নিউইয়র্ক চলে যান

নিউইয়র্কে প্রায় সবাই সিঙ্গেল বা একা, আর তাই এ ব্যাপারটি আপনাকে একা ঘোরার জন্য প্রচুর সাহায্য করবে। আর একা ভ্রমণের জন্য নিউইয়র্ক সঠিক গন্তব্যস্থল। আপনি যেকোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে বা বারে গিয়ে খেতে পারবেন, ইচ্ছামতো মুভি দেখতে পারবেন অথবা নিজের পছন্দমতো ড্রিঙ্কসের ককটেল খেতে পারবেন, যেখানে কেউই আপনাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করতে আসবে না।
আপনি যদি কারো সঙ্গ চান সেক্ষেত্রেও আপনি ভাগ্যবান হবেন। কারণ নিউইয়র্কারদের অভ্যাস সম্পূর্ণ অচেনা মানুষের সাথেও কথা বলা যেখানেই তারা যাক না কেন! এজন্য আপনার কাছের হিপ্সকে শুধুমাত্র বলুন আপনি তাঁর ট্রাউজারটি পছন্দ করেছেন (প্যান্ট বলার চেয়ে ট্রাউজার বলাই ভালো) অথবা আপনার কিউট ব্রিটিশ উচ্চারণে বলুন ‘বিটস এন্ড ববস’ (এটা আমেরিকানদের একটি প্রবাদ বাক্য যা তাদের কাছে অসাধারণ)। তারপর দেখুন, আপনার ভ্রমণটি কত বেশি দারুণ হয়ে ওঠে!
৬) খুঁজে দেখুন

একা ভ্রমণে আপনার সাথে কোনো সঙ্গী থাকবে না। তাই আপনাকে তাঁর সাথে আই কন্টাক্ট করার ঝামেলা পোহাতে হবে না বা তাঁর দিকে মনোযোগ দিতে হবে না। সুতরাং আপনি আপনার চোখকে যেকোনো দিকে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনুমতি দিতে পারেন। খেয়াল করে দেখবেন, ভ্রমণে বের না হলেও আপনি একা যখন আপনার বাড়ীর কাছে অতি পরিচিত রাস্তায় হাঁটেন, তখন আপনি সেই রাস্তা বা রাস্তার আশেপাশে যতটুকু খেয়াল করতে পারেন, পাশে কেউ থাকলে ততটুকু খেয়াল আপনি করতে পারেন না। একা ভ্রমণে গেলেও এর ব্যতিক্রম হয় না। সুতরাং প্রকৃতিতে হারিয়ে যাবার জন্য মনোযোগ সবটুকুই প্রকৃতিকে দিন।
৭) ভ্রমণের সবটুকু উপভোগ করুন

যেহেতু আপনি নিজের সাহস ও যোগ্যতায় একা ভ্রমণে গিয়েছেন, সেহেতু আপনার উচিত পুরো ভ্রমণটা মন থেকেই উপভোগ করা। খারাপ কোনো অভিজ্ঞতা হয়ে থাকলে সমাধান করার চেষ্টা করবেন এবং ভালো অভিজ্ঞতাগুলো সারাজীবনের জন্য স্মৃতিপটে বাক্সবন্দী করে নিতে পারেন।
তবে মনে রাখবেন, যে স্থানে আপনি ভ্রমণের জন্য গেছেন সেখানে আপনার সাথে যেকোনো কিছুই হতে পারে। সেটার জন্য মানসিকভাবে সবসময় প্রস্তুত থাকবেন। এবং খারাপ কিছু হলে সেই সময়টা সারাজীবন বয়ে বেড়ানোর কোনো মানে নেই এটাও মনে রাখবেন।
