একরাম আলির গুচ্ছ কবিতা

Reading Time: 2 minutes

আজ ১ জুলাই কবি একরাম আলির জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবি কে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর  শুভকামনা।

ইরাবতীর পাঠকদের জন্য এই শুভদিনে রইলো কবি একরাম আলির কয়েকটি কবিতা।


.
কথা
.
বহু কথা মেঠো রাস্তার
উপরিতলে ঘুরে বেড়ায়
ধুলো হয়ে ওড়ে, ধুলো হয়ে হাসে
কথা পাগলিনী, তার ময়লা দেখা যায়
.
জঙ্গল বাঁক নিয়ে শেষও হয়ে এল
গোরুর চিৎকারে কাছাকাছি গ্রাম ভেসে ওঠে
কথারা অশেষ, শূন্য থেকে শুরু হয়ে
শূন্য অতিক্রম করে যেতে চায়
.
একই কথার ঘূর্ণিতে বহু মতবাদের
জন্ম ও মৃত্যুর ছায়া লেগে থাকে
.

.
মহড়া
.
ছোট্ট একটা হাওয়া
নিজেই সে প্রাণপণে তৈরি করছে গতি
উড়ে যাবে; আকাশ পেরিয়ে
লোকালয় বনস্থলী পর্বত পেরিয়ে
উড়ে যাবে নতুন আকাশে
.
অথচ সবাই তাকে উৎসে ফিরিয়ে দিতে চায়
দিকে দিকে সতর্কতা, প্রার্থনা
দেবস্থানে মন্ত্র পড়ে পুরুত সমূহ–
.
যাতে এখানেই তাকে মরতে হয়
এই মরসমুদ্রের মাঝে ঘূর্ণি তুলে তুলে
.

আকাশ

একেক বস্তুর রং একেক রকম

অথচ, তোমাকে দেখে জেনেছি–
ঠোঁট, স্তন, নাভির ঘূর্ণন থেকে বেরিয়ে গেলেই
সেসব বস্তুর রং নীল আর নীল

বহু দূরে, শূন্যে শূন্যে
আমাদের শরীরের আকাশ

পরাজয়

তীরের এ-ধার থেকে ওই দূর অবধি
ঢেউয়ের রেখার মতো আড়াআড়ি পড়ে আছে
তার বারবার ফিরে আসার দাগ

উথলে-ওঠা তরল আমিষে বুঁদ হয়ে ডুবে যাচ্ছে সূর্য

বালি থেকে পায়ের আঙুলে
এবার গুটিগুটি উঠে আসবে সেই দার্শনিক পোকাটি
অন্ধকারে ফিসফিসিয়ে বলবে—
‘দাঁড়াও, জয়ীর মতো তরঙ্গায়িত হও’

নাচ

এত-এত ফুল মাড়িয়ে হেঁটে-যে এলাম
থ্যাঁতলানো পাপড়ি, রেণু আর সৌরভে
আমাদের কত কিছুই-না লেগে রইল

সামনে সদ্য-তৈরি সাঁকো, তার
কাঁচা অন্ধকার নীচে ঘাপটি মেরে আছে
ওপরে সারি সারি মোটরবাইক, বারুদের
গন্ধ থেকে বারুদ বেরিয়ে আসতে চাইছে ছিটকে
হিংসার অন্ধতা থেকে হিংসা

যুদ্ধ আজ অনিবার্য জেনেও
হাঁটা থামানো যাচ্ছে না

ফল

ফলের দোকানে কত কত বর্ণের প্রস্ফুটন
ঝুলে-থাকা তারাগুলি সোনালি রুপোলি
সেইসব সজ্জায় কত রূপ আর রং, গন্ধে কত আশ্বাস
তবু তারা রয়েছে নরম অপেক্ষায়, ফলেরই স্বভাবে

এতটাই নরম যে তারা শুধু ফলই
আমাদের খাদ্যাখাদ্য নয়

ডানা

ভোরের ফিকে অন্ধকার ফিসফিসিয়ে বলেছিল—
জানো তো, ওর দুটো ডানা আছে!
সেই থেকে পাখিকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়

শহরতলির এই ঘরে
হাওয়া ঘুরে-ঘুরে কেবলই ভুল বকছে

রাত গড়িয়ে যায়, শেষ রাতে
মাকড়সার জালের ভেতর নিরুপায় ঢুকে পড়ি
ঘুম ভাঙে অগুনতি মরা পালকের ঘন ঘন শ্বাসে

জালের ভেতর ওড়াউড়ি, ব্যস্ততা, হাঁসফাঁস
অসংখ্য উড়ো পালকের দীর্ঘশ্বাসে
কোনো-এক ইচ্ছের ছোটো-ছোটো মৃত্যু লেগে থাকে

মাথুর

আমি আলো, হাওয়া, আমি বৃষ্টিকে ভয় পাই
পালিয়ে যেতে-যেতে রোদন-ভরা এ বসন্তের দিকে
একপলক পিছন ফিরে তাকাই

কত কথা লুটিয়ে পড়েছে এই পথে
অযত্নে শুকিয়ে গেছে শহরতলির বনপুলক
তবু পথপাশে হ্যাজাকের আলোয় কীর্তনীয়া
দু-হাত ছড়িয়ে দিয়েছে নীল মথুরার দিকে

তার উত্তর সে জানে যেমন আমার প্রশ্নও আমি ভুলিনি
তবু আমাদের দেখা হল না বলেই
পিছন ফিরে একপলক তাকাই

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>