| 27 এপ্রিল 2024
Categories
কবিতা সাহিত্য

আলফ্রেড খোকনের কবিতাগুচ্ছ

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

পাঁজরে উত্তাল হাড়

সমুদ্রের পাড়ে যাও- তীরে এসে দাঁড়াও
দক্ষিণে, ডানে কিংবা বামে যতদূর যাবে
একটা লাল কাঁকড়া ছট্ ফট্ করছে তীরে
একটা ফড়িং ঝাফ দিচ্ছে বালুর ভিতরে।

এইসব ফড়িঙের পাখনায় উষ্ণতার হিম
জেগেছি, ঘুমুতেও চাই- বালির জাজিম;
বালুতে মুখ গুঁজে পড়ে আছে একটা ঝিনুক
এই মাত্র ডুবে গেল- শ্যামল বিক্ষত মুখ,
অনেক মুখ আমি খুঁজেছি শামুক গ্রীবায়-
অনেক বিবৃতি সূর্যাস্তের ঢেউয়ে ঢেউয়ে
পড়েছি, সাদা মলাটের পাঠ্য তালিকায়
ফেনা হয়ে মিশে গেছি মৎস্যনারীদের
তলপেটে, তরঙ্গে নাভির নিরুদ্দেশে-

ডুবে যেতে যেতে কত তল অজ্ঞানতায়
এক চিমটি বালি নিয়ে ঢিবি গড়ে তুলি
মিছিলে অসংখ্য মুখ- একটা বুলবুলি
এসেছিল সমুদ্রপাড়ায়, মেনিফেস্টো হাতে
জ্যোৎস্নার জোব্বা পড়ে নিষিদ্ধ জ্যোৎস্নায়
অতিরিক্ত পোশাকের তাপে- ঘামে ও
ফেনায় পাঁজরে উত্তাল হাড়, লোলজিভে
লালা বিজড়িত- একশত ছাপান্ন বার,
দগ্ধ এবং দ্রবীভূত- ফোসকা নিঃশ্বাস
দেখে দেখে এই আমি শেষ অবিশ্রাম;
ঢেউয়ে ডুবে গেল প্রথমদিনের সূর্য।

শেয়ারবাজার

আজ কিনলাম সিল্কি এক রূপসীকে, তুই কি কিনলি?আমি? না বন্ধু, আজ খুব আপ-ডাউন করছে, রিস্কি!

ওর কততে লট, দুইশো বিষ!

আগামীকাল দর পরলে আমি কিনব, তুই কিন্তু আমার

কথা মাথায় রাখিস।

মুখের কথা মাথায় রাখতে রাখতে দর যদি পরে যায়;

‘আমার রূপসী কোম্পানি কি তার হয়ে যাবে?’ বাজার

শেষে ফিরতে ফিরতে ভাবে সে সভ্যতার কোণার রাস্তায়

সভ্যতার ফুটনোট

যেভাবে তোমার স্তন আমার মুখের দিকে চায়-
যেভাবে তোমাকে আমি পেছন থেকে চেপে ধরি
যেভাবে জীবন দু’দিক থেকে চাপ দেয় উপর্যপুরি
যেভাবে একটা দিন ও পাড়ায় রাত্রি হতে যায়-

যেভাবে তোমার চোখ আমাকে উপুর করে দেখে-
যেভাবে আমরা দু’জন চেপে ধরে রক্তমাংশ গড়ি

যেভাবে তোমার স্তন আমার মুখের দিকে চায়-
যেভাবে তোমাকে আমি পেছন থেকে চেপে ধরি
যেভাবে জীবন দু’দিক থেকে চাপ দেয় উপর্যপুরি
যেভাবে একটা দিন ও পাড়ায় রাত্রি হতে যায়-

যেভাবে আমাকে ফেলে
গোপনে তুমি ওপাড়ার সভ্যতা হয়ে ওঠো।

অ্যাশট্রে

তারপর, ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেব
অসতর্ক অবস্থায় ঘরে ঢুকলে
ছিটকিনির সঙ্গে আঙুলের সাময়িক বেদনা

তারপর, তোমার কাছ থেকে চুলের ঘ্রাণ নেব
ঘরের ভিতর সবকিছু চোখ খুলে চেয়ে থাকবে
ওরা জানে এ সবই আমার কেনা

তারপর, ঘরের ভিতর কোনো অনুমতির
প্রয়োজন নেই
জানলা দিয়ে একটা ফড়িং উড়ে গেলে
মনে হবে অপরিচিত, তাকে না-ধরতে
পারলেই;
তোমার ঘুম আসবে না ক্ষোভে
তুমিও আসবে না তখন জানালার বাইরে
গলির বাতাসের লোভে

তারপর তুমি ঘুমিয়ে পড়বে- অ্যাশট্রেতে ছাই,
এই কথা মনে রেখে ঘুমিয়ে যাবে পার্শ্ববর্তীনি রাত
আবার সকাল, তুমি জাগবে তো, তাই…

কাঁধের বর্ষা, ১৯৯৯ সাল
(বর্ষা বিভাবরী-কে)

বর্ষা আমার কাঁধে ছিল
তাই পাইনি টের
বর্ষা যেদিন চোখের পাতায়
ভেজা ক্লাস অষ্টম শ্রেণি
তাকিয়ে দেখি ফের;
বর্ষা তখন কাদাজল মাখামাখি
কী যে!
কাঁধের বর্ষা বৃষ্টি নিয়ে
নিজইে যাচ্ছে ভিজে

বর্ষা যদিও শহরে যাচ্ছে একা
তার সঙ্গে হঠাৎ একদিন
মেঘের হবে দেখা!

দালালঘর

তোমার বাড়িতে উঠোন নেই বারান্দায় সোফাসেট
উঠোন থাকলে আমরা অনেকেই যেতে পারতাম;
যদিও যাবার ইচ্ছে সকলের আছে কিছু কমবেশি
এতদিন তুমি কেন অপরিচিত ছিলে, ওগো দেশি

আমরা প্রত্যেকে তোমার বাড়িমুখে চেয়ে উন্মুখ
একান্ত জরুরি প্রয়োজনে তোমার মাধ্যম ছাড়া
তার কাছে এখন আর পৌঁছানো যাবে না সহজ
প্রথমে তোমার কাছে পৌঁছুতে পারলেই নিবেদন
কিন্তু তোমার বাড়ি পর্যন্ত যেতে আমার মূলধন
অনেকটাই ফুরিয়ে যায়- মনোবল থামে মোটেও

উঠোন না থাকার পড়েও যারা যায় তারা সাহসী
সরাসরি বারান্দায় ঢুকে গিয়েই সোফাসেটে বসা
লিটন নিঃশব্দে এগিয়ে আসবে গাদাগাদি ভিড়ে
তার চোখে দ্যুতি নতুনের, যত্নে রচিত লাল চা;

প্রথমে অবাক হলে মূলকর্তা কিছুটা দেরিতে আসে
যারা জানে তোমাকে নিবেদনের যথাযোগ্য হিস্ট্রি
অপেক্ষায় থাকে কখন সে এসে খুলে দেবে সিঁড়ি
তোমার হস্তক্ষেপ ছাড়া যেহেতু পৌঁছানো অসহজ
প্রথমে কয়েকদিন এমনি এমনি আসা হবে রোজ;
তারপর অদৃশ্য হাতখান হাতছানি দেবে নিয়মিত-

হঠাৎ একদিন তোমার নামে খোলা হবে নীল বিও
এবার একাউন্টে জমা দেয়া শুরু হল, দিও তুমিও

লট

তোমার কততে লট এক না একশত পঞ্চাশ কিংবা বিশ
ফেসভেল্যু দশ, একশ না হাজার? ক্যাটাগরি এ না জেট
এন হলে আরও বেশি চিন্তার বিষয় আছে, কি বলিস ?
খবর শুনতে শুনতে আমাদের কিন্তু বরাবরই হয় লেট।
যেমন লেট হয় আমাদের বুঝতে বুঝতে এবং পেতেও
সে এসে চলে গেলে বেশ টের পাই, খুশি আমরা তাতেও
আজ তার দর পতন এই খবর আজই পেলে কি করে হবে
আসল ক্রেতারা ঠিকই জেনে যায় গতদিনের বিত্ত-বৈভবে

মাধুরীর সঙ্গে বিকেল অব্দি বসে থাকার পর

১.
আচ্ছা আমার যে মাঝে মাঝে এত জ্বর হয়

কম্যুনিটি হাসপাতালের ডাক্তারগণ বলে
ঘন ঘন জ্বর হওয়া ভালো নয়;
তোমারও কি তাই মনে হয়?
অধিক বৃষ্টি আকাশকে
মেঘমুক্ত করে
অধিক জ্বরও তো দেহকে ভারমুক্ত করতে পারে
জ্বর হলেও ওরা তো শুক্রবারের জন্য
কবিতা চায়
ডাক্তার বলছেন জ্বর মানে তিনবেলা প্যারাসিট্যামল
বিছানায় রেস্ট,
শরীরের ভিতর থেকে জ্বর তিন দিনে না গেলে
এন্টিবায়টিক—তারপর ব্লাড টেস্ট;
যদি কিছু ধরা পড়ে চিকিৎসা সেই মতো
ওহে ডাক্তার, ধরতে চেয়েছি যাকে
রক্তের ভিতরে সে এখনো নৃত্যরত।

২.
চলো সমুদ্রের কিনারে যেয়ে শুই
চলো জলের গভীরে যেয়ে
তুমি কাতলা আমি রুই;
সমুদ্র সংক্রান্ত একটা অবুঝ ঢেউ ধরি
তুমি আমার পিঠের ওপর ওঠো
দুজনেই ডুবে মরি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত