| 17 এপ্রিল 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

আমার দরজায় আমি দারোয়ান

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট
সংসার সংসার করে জীবনটা শেষের দিকে। শীতের পর বসন্ত আসে মানুষের কি অপরাধ যে একমুখী চলছে ফিরে আসে না যৌবন , ফিরে আসে না শৈশব ! সংসার ঠেলতে ঠেলতে প্রায় ষাট এর দরজায় জীবনে এখন ব্যাধি ছাড়া আছে কি ! মেয়েদের বিয়ে হয়ে যে যার জীবন নিয়ে ব্যাতিব্যস্ত। স্বামীর শরীর নিয়ে সে দিনরাত উহু আহ করেই চলেছে। কে কাকে দেখে ! দিনরাত মরে গেলাম আমাকে ধর আমাকে বাঁচা ! কে কাকে বাঁচায় ! কে তুমি ? এইতো চিরকালের প্রশ্ন। আমি কে ? তুমিই বা কে ?
সেসব দিন এখন পাখির চোখে বসে দেখি জানালায়। কবিতার ক্লাসে যাবার সময় একদিন ভিড় ট্রেনে গাদাগাদি করে উঠছি , ট্রেন তো নয় যেন ট্যুর থেকে ফেরার পথে ট্রলি ব্যাগের ডালা বন্ধ করার চেষ্টা ঠুসে ঠুসে। চাপের চোটে  শূন্যে ভেসে অন্য যাত্রীর  অঙ্গবাহী হয়ে চলছি শ্রীচৈতন্য হয়ে। সবাই ভয়ে জগাই মাধাই হয়ে রয়েছে , চাপের চোটে ধাক্কা মেরে আমাকে ফেলে দিলো এক নায়কের কোলে। আহা কি সৌম্যসুন্দর চেহারা চোখে সরাতে পারি নি।( ব্যাকগ্রাউন্ড এ তখন বাজতেই পারতো এ মহফিল , কুছ কাম কা নেহি ) আমি হিরোর কোল থেকে উঠছি , হিরো আমার চুলের শ্যাম্পুর গন্ধ নিচ্ছে ভাগ্গিস উকুন ছিল না সেই সময় ( মনে ছিল না সংসারের খিটখিটে বর বা খিদে পেয়েছে মা ) মন তখন গাইছে ডুয়েট সং পেয়ার কিয়া তো ডর না কেয়া ! কিন্তু ট্রেনের ভিতর মানুষ সিদ্ধ হচ্ছে গরমে তাই কাশ্মীরের গুলমার্গ রাজস্থান এর মরুভূমির মত লাগছে। তারপর থেকে একই টাইমে একি ট্রেনে সপ্তায় সপ্তায় দেখা , কথা আহা যেন ” আমার এই ফুলবাগান তিলেক নয় বসন্ত ছাড়া “
কিন্তু মানুষে মানুষে সম্পর্ক , তার তো কোনো বাঁধন নেই একধরণের চুক্তি। রক্তের সম্পর্কই থাকে না এতো অন্য সম্পর্ক !  দশ বছরের ঘরসংসার করার পরেও যখন ঘর ভাঙে তখন এতো বন্ধনহীন সম্পর্ক। শিক্ষার চেয়ে , প্রেমের চেয়ে দেহ বড় জিনিস। আর সেই দেহের জন্যই সম্পর্ক গড়ে সম্পর্ক ভাঙে। সংসারে খাদ্য , বাসস্থান  আর নিরাপত্তা এর চেয়ে বড় কিছু থাকে না তাই এগুলো ঠিক রাখাটাই সবচে জরুরি। হয়তো এগুলো ঠিক রাখতেই দুজন দুজনার থেকে সরে যেতে থাকলাম।সরে যেতে যেতে যাবো কোথায় ? সেইতো ফিরতে হবে সংসারে।
সেই সংসারে ফিরে আবার ও তেল নুন আর বাজার  ফর্দ করে কেটে যায় বছরের পর বছর। তবু মন আজ ও সেই সৌমকান্তি প্রেমিক পুষে রাখে। মনকে বশ করতেই গেলাম শ্মশানে , সেখানে এক সাধুর সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল। সাধু বললেন ” এমন কিছু মনে ধরো যা পালায় না , এমন কিছু পাও যা চাইতে হয় না , এমনি আসে। বাতাসের মত , আলোর মত , বৃষ্টিধারার মত , নিজের বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্তি দাও ,ভোগই দুর্ভোগের কারণ। মেয়েদের মায়া বেশি তাই কষ্ট পাও বেশি , তোমাদের লালসা বেশি , তাই ঠকে যাও , তোমাদেরই কাম বেশি তাই প্রেম খুঁজে বেড়াও।
আমি বললাম তবে যে মনে অনিন্দ্যকান্তির বসবাস তার কি হবে ?
সাধু বললেন ” সীতা কি জানতেন না সোনার হরিণ হয় না ! রামচন্দ্র কি জানতেন না ? তবু ছুটেছিলেন কেন ? সবই মায়া | যে জগৎ বলে হাত ঘোরালে নাড়ু পাবি না ঘোরালে কোথায় পাবি ? সে জগতে বাস করে কতদিন আর কোতকা খাবি ? বল স্বামী কে বিশ্বাস করে কি পেয়েছিস ?
সন্তান , নিরাপত্তা
স্বামী তোকে বিশ্বাস করে কি পেয়েছে ?
সন্তান , সংসার
সন্তানকে বিশ্বাস করে কি পেয়েছিস ?
বেদনা
সুসময়কে বিশ্বাস করে কি পেয়েছিস ?
দুঃসময়
শরীরকে বিশ্বাস করে কি পেয়েছিস ?
কাম , রোগ
তবেই ভাব সংসার চিরকালই বোধশূন্য। মেয়েরা বড় হয় মা বাবার থেকে দূরে সরে যায়। যৌবন যায় কাম যায় আসে রোগ , বয়স বাড়ে মানুষ ভাবনার গোড়ায় জল দেয় স্বামী বা কার স্ত্রী বা কার ? যেতে হবে তো সেই একলা। তবে অন্য সম্পর্ক থেকে আর কি বা চাস !
আমি শ্বশান থেকে শুন্য হয়ে ফিরে এলাম। জীবনের  শেষটা সকলেরই  ভারি নিঃসঙ্গ। জীবনের সব কাজ শেষ হয়ে গেলে থাকে শুধু অপেক্ষা। এ যেন সেই গাছতলায় প্রেমিকের অপেক্ষা সময় বড় দীর্ঘ মনে হয়। হাতের মুঠো একটু একটু করে খুলে শুন্য হয়ে চলেছে। শূন্যে বসে অপেক্ষায় —–
( বাদাহ আনে কা বাফা কিজিয়ে
ইয়ে কেয়া আন্দাজ হে
তুম নে কিউঁ সৌওপি হে
মেরে ঘরকি দরমানি মুঝে — গালিব সাহেব )
.

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত