আমার পুজো
তপতী চ্যাটার্জী
রোদ বৃষ্টির খেলা নিয়ে আবার হাসিমুখে শরৎ এসে হাজির। আর শরৎ এলেই আকাশে বাতাসে পুজো পুজো গন্ধে মাখামাখি হয়ে যায়। এমন দিনগুলোতে আনন্দের সঙ্গে কেমন একটা মন কেমন করা থাকে। আমাদের ছোটবেলায় কিন্তু পুজোর সময় বৃষ্টি হত না। তখন ছটা ঋতুর ই আলাদা প্রকাশ ছিল। আর এখন তো গরম আর বর্ষা ছাড়া তেমন কিছু ই দেখিনা। ছোটবেলায় পূজো নিয়ে একটা আনন্দ ছিল খুশি ছিল। নতুন জামা জুতো পড়া নতুনভাবে সাজাতে। আসলে ঐ চারদিন সাজবার অনুমতি পেতাম। খুব ঘুরতাম, ঠাকুর দেখে বেড়াতাম। আমাদের বাটানগরে অনেক গুলো পুজো হত। বাইরে কোথাও যেতেই হতনা।
দুঃখ সুখের দোলায় দুলতে দুলতে কৈশোর যৌবন পার হয়ে প্রৌঢ়ত্বে এসে পৌঁছেছি। মনে হয় এই সেদিনের কথা। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দিন বদলেছে মন ও বদলেছে। এখন আর পুজোর দিন গুলো আলাদা করে টানেনা। হ্যাঁ, এখনও পাড়ার পুজো প্যান্ডেলে অনুষ্ঠান হলে যোগ দিতে হয়। বইয়ের স্টল দেওয়া হয়। কিন্তু ঐ পর্যন্ত ই। আনন্দটা নেই। কি করে থাকবে বলুন তো? চারপাশের অবস্থাটা দেখছেন? আমাজন জঙ্গলে র দাবানল নিয়ে ( জানিনা দাবানল না সরকার আর কর্পোরেটের কোপ) পুজোয় থিম হবে হয়তো। কিন্তু অক্সিজেনের কথা কেউ ভাববে না। আদিবাসীদের নিয়ে থিম হবে। অথচ কেউ খবর রাখবে না যে হাজার হাজার আদিবাসীদের বাস্তুচ্যুত, করে জমি হারা দেশ ছাড়া করে দেওয়া হচ্ছে। আসিফা বা উন্নাও নিয়ে থিম হবে, আলোর রোশনাই হবে। অন্ধকারটা যাবে না। যুদ্ধের
থিমে দেশপ্রেম এর বন্যা বইয়ে দেওয়া হবে, যুদ্ধ বন্ধ হবে না। দাদা দিদি দের ক্ষমতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আলো ও বৈভবের মাত্রা ছাড়া দেখনদারিতে বোঝাই যাবে না এই আলোর একটু দূরেই খানা খন্দ ভরা রাস্তায় কতজন হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছেন। কিসের পুজো কার জন্য পুজো? এখন ছোট ছোট বাচ্চারাও পড়ার চাপে পরিস্থিতির চাপে হয়রান। এমন পুজো নিয়ে কী করবেন বলুন তো? এখন যে কোন অনুষ্ঠানেই মদ, মাংস, মাৎসর্যের ছড়াছড়ি। বন্ধুত্ব নেই, ভালোবাসা নেই, আত্মীয়তা নেই, ফেসবুক সর্বস্ব সম্পর্ক। ভালো লাগে না, ভালো লাগছে না। এই কৃত্রিম ব্যাপার গুলো আর টানছে না। ক্ষমতার অপব্যবহার আমাদের ক্রমশই পিছনে টানছে। খুব চাপে আছি। আমাদের তো দিন শেষের মুখে। আগামী প্রজন্মের জন্য একটা ফাঁপা, ঝুরঝুরে, অন্তঃসারশূন্য সমাজ স্বার্থপর সময় রেখে যাচ্ছি একথা ভাবলে কষ্ট হয়। যদি পুজোর জন্য লাখ লাখ টাকা বিনোদনে খরচ না করে স্থায়ী কিছু করা যেত হয়তো অনেকের উপকার হত। কিন্তু কে করবে?
এর পরেও আমি আশা করি, ভালো দিন আসবে, সবার মুখে হাসি ফুটবে। আবার ও অসুরনাশিনী দুর্গা আমাদের সুখে দুখে আনন্দে মিলেমিশে যাবে। সবাই হাতে হাত মিলিয়ে সঠিক কাজ করবে। আবার ও পুজোর আনন্দে মাতবে সবাই। আশা করা তো অন্যায় নয়। আমি আশাই করব।
