গতকাল একজন গাইনোকোলজিস্টের কাছে যেতে হয়েছিল শোভার। ভার্সিটিতে যেতে পারেনি। আজ সকালে ডাক্তারের পরামর্শ মতো একটা কাজ করেছিল। তাই নিয়েই ঘন্টা দু’য়েক পরে নিচে কোলাহল শুরু হয়ে গেল-
-ছি! ছি! ছি!
-কি হলো? এত ছি ছি দেওয়ার কি আছে?
-ছি ছি দেব না, দেখ, তোমার পাঁচতলার ভাড়াটিয়ার মেয়ে কি করেছে?
-কী করেছে?
-ছাদে গিয়েই দেখ। আগেই বলেছিলাম পুরুষ মানুষ ছাড়া বাসাভাড়া দিও না। তখন তো দরদ উতলে উঠল, এখন বোঝ?
-বাজে কথা বলো না, কি করেছে সেটা আগে বলো?
-আমি বাজে কথা বলি, আর তোমার দরদের ভাড়াটিয়া ভালো কাজ করে?
-আমি সেটা বলেছি?
-তা কী বললে শুনি?
-এই সাতসকালে ঝগড়া করতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। কি হয়েছে বলো?
-আগে ছাদে চলো, গেলেই দেখতে পাবে।
-আচ্ছা চলো।
আকবর সাহেব সস্ত্রীক ছাদে গেলেন। ছাদে পৌঁছে আকবর সাহেবের মাথায় হাত। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি-তর্জনি দু’পাশে প্রসারিত করে গোঁফ চুলকাতে চুলকাতে বলে উঠলেন,
-কী আশ্চর্য!
আকবর সাহেব লেখক মানুষ। ছড়া-টরা লেখে। পেশায় একটা বেসরকারি বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের কনসালটেন্ট। বুয়েট থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ। ফেসবুকে প্রতিবাদী পোস্ট দেয়, সুশীল সমাজের পক্ষে, অন্যায়ের বিপক্ষে। তার বাড়িতে কিনা এই অনাচার?
ছাদের এ দৃশ্য দেখে নিজের ফ্ল্যাটে এসে শোভার মাকে ডেকে পাঠালেন তিনি। দশ মিনিট পর শোভার মা বাড়িওয়ালার বাসায় আসতেই,
-এ ধরণের কাজ করলে আপনাদের বাড়ি ছাড়তে হবে?
-বাড়ি ছাড়তে হবে? কী অন্যায় করেছি? শোভার মা অবাক, যেন আকাশ থেকে পড়ল।
-অন্যায় নয়? বাড়িতে ছেলেমেয়েরা আছে? অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা আছে, তারা কি বলবে?
শোভার মা এই অহেতুক মোড়লিপানা সহ্য করতে পারছে না। দাতে দাত চেপে বলে উঠল,
-কী হয়েছে? না বললে বুঝব কি করে?
-এখনো বুঝতে পারছেন না?
-না, পারছি না।
-আপনার মেয়ের ঐ সব পোষাক, নাম বলতেও রুচিতে বাধে, ছাদে অইভাবে শুকাতে দেবার কি মানে?
-কীভাবে শুকাবে?
-কেন, বাসায় গ্যাস নেই? গ্যাসের চুলাতে শুকান যায়। বারান্দায় পাতলা কাপড়ের নীচে দিয়ে শুকান যায়। তাই বলে এভাবে? আকবর সাহেবের মুখ থেকে কথাগুলো কেড়ে নিয়ে ঝড়ের মতো বলে গেল আকবর সাহেবের স্ত্রী।
-বুঝেছি! তবে আপনারা যখন এতকিছু বলছেন তখন কারণটা তো জানবেন?
-এর আবার কী কারণ থাকতে পারে? আকবর সাহেবের স্ত্রী ঝাল ঝেড়ে বলে উঠল।
-মেয়েকে নিয়ে গতকাল গাইনি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। তিনিই খোলা ছাদে রোদে ভালো করে শুকিয়ে ব্যবহার করতে বলেছেন।
-আমরাও তো যায়, আমাদেরও তো মেয়ে আছে? কই এসব বলে না তো? কি হয়েছে মেয়ের? আকবর গিন্নী মুখ ঝামটা দিয়ে কথাটা বলে উঠল।
-এখানে ভাই আছে, এত কিছু বলতে পারছি না।
-বেশ, এই তো বুঝেছেন। ভাই যখন আছে তখন ভাইয়ের সম্মান রাখতে এই শেষবার। আর কখনো দেখলে আমরা আপনাকে এ বাসায় রাখতে পারব না।
আকবর সাহেব আর কিছু বললেন না। শোভার মা, ‘আসি’ বলে, একরকম মাথা নিচু করেই ঘরে থেকে বেরিয়ে এল।
মার কাছে ঘটনাটা শুনে শোভার রাগে শরীর জ্বলতে শুরু করল। ছাদে গিয়ে ব্রা-প্যান্টি রোদে শুকানোর ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করল। দু’একটা কথা লিখল ছবির এগেনেস্টে। পোস্ট করা শেষ আর যায় কোথায়?
তাকে নিয়ে, তার পোস্ট করা ছবি নিয়ে ফেসবুকে গ্রুপ খোলা হলো। ফেসবুকে ট্রল শুরু হলো। নোংরা কথাবার্তা ভরে গেল অনেকের টাইমলাইন।নেটিজেনদের অত্যাচারে শোভার টেকা দায় হয়ে উঠল।
এরপর?
বাকিটা ইতিহাস।
![অমিত কুমার কুণ্ডু](https://irabotee.com/wp-content/uploads/2020/05/amit-k-150x150.jpg)
১৯৮৪ সালের ২৫ অক্টোবর ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরে জন্ম। বাবা অমল কুমার কুণ্ডু, মা দীপ্তি রাণী কুণ্ডু। বিদ্যুৎ প্রকৌশলী হিসাবে একটি সরকারি দপ্তরে কর্মরত আছেন। তার লেখার জগতের প্রায় সবটুকু শিশু-কিশোরদের জন্য। প্রকাশিত কিশোর প্রবন্ধ ‘বিশ্বজয়ী হও’ ও ‘উপাসনা’। ছড়া কবিতার বই ‘অয়ন্তিকা’, ‘জননী আমার স্বদেশ আমার’, ‘ছন্দে ছন্দে নৈতিকতা’ ও ‘ বঙ্গবন্ধু অবিনাশী অক্ষয়’। ছোটদের গল্পের বই ‘সততার পুরস্কার’, ‘লাস্ট বেঞ্চের ছাত্র’, ‘ গল্প কথায় বর্ণমালা’ ও ‘ফার্স্ট বেঞ্চের ছাত্র’। বড়দের গল্পের বই ‘শুধু তোমারই জন্য’। সম্পাদনা করেছেন ‘আবাহন’, ‘হাতেখড়ি’ ও ‘মহেশপুর সাহিত্য পত্রিকা’। তাঁর ‘নিতির গল্প’ নামে একটি উপন্যাস, বর্তমানে ধারাবাহিক ভাবে প্রচারিত হচ্ছে।