অবিভক্ত ভারতের প্রথম নারী ডাক্তার

Reading Time: 2 minutes

।।কেকা মজুমদার।।

কেকা মজুমদার রাও জোশি। ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন আমেরিকায়। তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন রানি ভিক্টোরিয়া।

কেশরী’ পত্রিকার সম্পাদক বাল গঙ্গাধর তিলক এক তরুণীকে চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘আমি জানি, নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে কেমন করে আপনি বিদেশে গিয়েছেন এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে জ্ঞানার্জন করছেন। আমাদের দেশে আধুনিক যুগে আপনি এক মহান নারী। জানতে পারলাম, আপনার এখন aঅর্থের প্রয়োজন। আমি এক পত্রিকার সম্পাদক। আয় বেশি নয়। তবু আপনাকে ১০০ টাকা পাঠাতে চাই।’

পত্রপ্রাপকের নাম আনন্দীবাই গোপাল রাও জোশি। বিয়ের আগে তাঁর নাম ছিল যমুনা। মহারাষ্ট্রের ঠানে জেলার কল্যাণে ১৮৬৫ সালে তাঁর জন্ম। ন’বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় ডাক বিভাগের কর্মী, বছর ত্রিশের গোপাল রাওয়ের সঙ্গে। তিনি যমুনার নাম দিলেন ‘আনন্দী’। আনন্দী অল্পস্বল্প মরাঠি পড়তে পারতেন। গোপাল তাঁকে বিয়ের পর সংস্কৃত ও ইংরেজি শেখাতে শুরু করলেন। শোনা যায়, স্ত্রী পড়াশোনা ফেলে বরং রান্নাঘরে গেলে তিনি তাঁকে মারধর করতেন। এই উলটপুরাণ দেখে পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা অবাক তো হতেনই, সমালোচনা করতেও ছাড়তেন না। গোপাল এতে বদলালেন না, বরং বদলে ফেললেন তাঁদের বাসস্থান।

চোদ্দো বছরে মা হলেন আনন্দী। চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হল নবজাতকের। সন্তানের অকালমৃত্যুতে আনন্দী সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি ডাক্তারি পড়বেন। স্বামী এক কথায় রাজি। মার্কিন মিশনারি ওয়াইল্ডারকে চিঠি লিখলেন স্ত্রীর পড়াশোনা ও আর্থিক সাহায্যের জন্য। জানালেন, তিনিও স্ত্রীর সঙ্গে যেতে চান। চিঠিটা ‘প্রিন্সটন’স মিশনারি রিভিউ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে নিউ জার্সির থিয়োডিসিয়া কার্পেন্টার নামে এক মহিলা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। চিঠিপত্রে তাঁর সঙ্গে আনন্দীর নারী স্বাধীনতা, বাল্যবিবাহের কুফল ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হত।

এরই মধ্যে গোপাল বদলি হয়ে এলেন শ্রীরামপুরে। তাঁর আর আমেরিকা যাওয়া হল না। উনিশ বছরের আনন্দী একা কলকাতা থেকে জাহাজে পাড়ি দিলেন আমেরিকায়।

রাস্তাঘাট চেনানো থেকে শুরু করে সে দেশের আদব-কায়দা আনন্দীকে শেখালেন মিসেস কার্পেন্টার। ভর্তি করে দিলেন পেনসিলভেনিয়া মেডিক্যাল কলেজেও। আশা পূরণ হওয়ায় দারুণ খুশি আনন্দী, কিন্তু বাদ সাধল স্বাস্থ্য। যক্ষ্মায় আক্রান্ত হলেন তিনি। কিন্তু তা উপেক্ষা করে রাত-দিন পড়াশোনা চালিয়ে গেলেন। হলেন ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তার। সেটা ১৮৮৬ সাল। অভিনন্দন জানালেন ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়া।

ওই বছরেই দেশে ফিরে কোল্‌হাপুরের অ্যালবার্ট এডওয়ার্ড হাসপাতালে চাকরি পেলেন আনন্দী। কিন্তু মাত্র এক বছর পরেই ওই যক্ষ্মাই ছিনিয়ে নিল তাঁর জীবন।

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>