| 26 এপ্রিল 2024
Categories
অনুবাদ গল্প সাহিত্য

ডিরেক্টর’স কাট্‌

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

এটগার কেরেট ইজরায়েলি লেখক। ১৯৬৭ সালে ২০ আগস্টে জন্ম। হিব্রু ভাষাতেই লেখালিখি করেন। মূলতঃ গল্প, উপন্যাসআর চিত্রনাট্য লেখেন। পশ্চিমা দুনিয়ার সাহিত্য জগতে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি এরই মধ্যে। তাঁর কয়েকটি গল্পসমগ্র ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। ২০১৯ এ প্রকাশিত ‘ফ্লাই অলরেডি’ গ্রন্থটিও ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছে। নিজের দেশের বেশ কয়েকটি সাহিত্য পুস্কার তিনি পেয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৯ এর ‘ন্যাশনাল জুউইশ সাহিত্য পুরস্কার’ অন্যতম। লেখালিখিতে ফ্রানৎজ কাফকা, উইলিয়াম ফকনার তাঁর অনুপ্রেরণা। সহজ এবং  প্রাত্যহিক কথ্যভাষাতেই তিনি লেখেন। যাদুবাস্তব নয়, তবে বাস্তবজীবনে ঘটার সম্ভাবনা নেই, এধরণের কাহিনি তার গল্পেখুঁজে পান পাঠকেরা। ১৯৯০ এর পরে ইজরাইলের কথাসাহিত্যকে তিনি বিশ্বের দরবারে জনপ্রিয়তার সাথে হাজির করতে পেরেছেন।

 কেরেট-এর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘দ্য সেভেন গুড ইয়ারস’, ‘সাডেনলি আ নক অন দ্য ডোর’, ‘মিসিং কিসিন্‌জার’ অন্যতম। ‘ডিরেক্‌টর’স কাট’ নামেরএই অণুগল্পটি দ্য নিউ ইয়র্কার-এ ফ্ল্যাশ ফিকশন বিভাগে গত জুলাই মাসে ছাপা হয়েছে।


সিনেমা নির্মাতা, উদ্যোক্তা আর দার্শনিক পরিচয়ের বাইরে মাসেক স্মোলান্‌সকি’র আরো একটা খুব বড় পরিচয় আছে। তিনি ছিলেন তার কাজের বিষয়ে বেশি রকম খুঁতখুঁতে স্বভাবের, ‘পারফেকশনিস্ট’ নামেই সকলে তাকে জানতো। তো, তিনি যখন ‘লাইফ’ নামে তার নতুন সিনেমার নামটা ঘোষণা করলেন, কেউই খুব একটা অবাক হয়নি। অনেকেই মোটামুটি নিশ্চিত ছিল, তার কাজের গুণমান আর অভিনবত্ব নিয়ে। তিনি এটা জানিয়েও দিলেন, তিন ক্যামেরায় এর শুটিং হবে। পুরো একটা মানবজীবনের প্রতিটা ধাপ চিত্রায়িত হবে এখানে। স্বভাবে অন্তরমুখি একজন মানুষ, ম্যাতুজ ক্রোটজোয়াস্কি, ওর জন্ম দিয়েই সিনেমাটার শুরু। তার তেয়াত্তর বছরের জীবনপর্বের চিত্রায়নে এই সিনেমা। ম্যাতুজ যখন জীবনের অন্তিম প্রান্তে পৌঁছুল, প্রোস্টেট-ক্যান্সারের শেষ ধা্পে সে তখন। সিনেমার শেষ দৃশ্যে সে বেজমেন্টের একটি ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করল। ফ্লোরের একজন কর্মীও সেই দৃশ্যের শুটিং-এর সময়ে না কেঁদে থাকতে পারেনি। শব্দগ্রাহকের কোনো বারণই ওদের কান্না থামাতে পারেনি সেদিন।

একশো চৌদ্দ বছর লেগেছিল এই সিনেমার শুটিং-পরবর্তী সম্পাদনা শেষ করতে! সম্পাদনার কাজ  শুরু হওয়ার কয়েক মাস পরেই মাসেক মারা গেল। বয়স হয়ে গিয়েছিল অনেক। এরপর শব্দ সম্পাদনার কাজ চলল আরো ছিয়ানব্বই বছর ধরে। অবশেষে, সিনেমাটা মুক্তি পেল!দেখা গেল, তখন সামাজিক মাধ্যমগুলো এর সমালোচনা করতেও ছাড়লো না! সম্পাদনায় বড্ড তাড়াহুড়ো করা হয়েছে, শব্দ স্পষ্ট নয়… এরকম নানারকম অভিযোগ তুলল তারা।

প্রিমিয়ার শো’তে শহরের সকল চলচ্চিত্র-সমালোচককে আমন্ত্রণ জানানো হল। সকলেই এল। অল্প কিছু টিকেট চড়া মূল্যে সাধারণের জন্য ছাড়া হল। সেই টিকেটগুলোর সবকটা বিক্রি হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যেই। পরিচালক নির্মাণের শুরুতে ঠিক যেমনটা বলেছিলেন, সিনেমাটা ঠিক সেরকমই হল। এর সময়ের দৈর্ঘ্য ছিল তেয়াত্তর বছর! সিনেমার প্রথম প্রদর্শন শেষ হল। কৃতজ্ঞতার নামগুলো ভেসে আসছিল পর্দায়। আলোগুলোও জ্বলে উঠল সব। যে কর্মীরা মিলনায়তনের দরজায় দাঁড়িয়ে দর্শকদেরকে আসনে বসতে সাহায্য করেছিল, তারা এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পেল। একজন মাত্র দর্শক ছাড়া বাকি সকলেই মৃত। যার যার আসনে, তার তার মৃতদেহ পড়ে আছে! কেমন একটা উৎকট গন্ধ বের হচ্ছিল সকলের গা থেকে। সমস্ত মৃতদেহের মধ্যে কেবল একটিই জীবন্ত মানুষ! সদ্যোজাত শিশুর মত নগ্ন, চুলহীন মাথা আর তার কান্নাটাও শিশুর মতো। এক সময় থামল তার কান্না। সে উঠে দাঁড়াল সোজা হয়ে। চোখ মুছে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল। এরপর আসন-সারির মাঝখানের সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে আসতে থাকল। ধীর পায়ে। বাইরে বেরনোর দরজার দিকে।

পূর্ণবয়স্ক মানুষটা ছিল একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র-সমালোচকের সন্তান। সেই সমালোচক আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে সিনেমাটার প্রিমিয়ার শো দেখতে এসেছিলেন। তিনি যে সবে গর্ভধারণ করেছেন; ভদ্রমহিলা নিজেও তা জানতেন না তখন। সিনেমা চলাকালীন, শুরুর আট মাস পরে মিলনায়তনেই তিনি তার সন্তানটি প্রসব করলেন। শিশুটি সেই অন্ধকারের মধ্যেই বড় হতে থাকল। পর্দায় সিনেমার দৃশ্য দেখতে দেখতেই বেড়ে উঠেছিল সে।

ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সে দরজার মুখে পৌঁছুল। দরজা খুলে বাইরে এল, রাস্তায় দাঁড়াল। সূর্যের  আলোয় তার চোখ ঝলসে যাওয়ার মত অবস্থা! কিছুই সে দেখতে পাচ্ছিল না। অন্ধ যেন! দশ বারোজন সাংবাদিক ছুটে এল তাকে দেখে। কী এক হইচই চারপাশে! ওরা মাইক্রোফোন এগিয়ে দিল তার দিকে। সিনেমাটা কেমন ছিল? বলুন, বলুন। এদিক ওদিক থেকে এসব প্রশ্ন ভেসে আসতে থাকলো।

“সিনেমা”? সে তোতলাতে শুরু করল। 

খুব অস্বস্তি লাগছিল তার আলোতে। চোখ মিটমিট করে তাকাল ওদের দিকে।

সিনেমা কোথায় পেল? সে ভাবতে থাকল, পুরোটাই তো একটা জীবন। তার জীবন।

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত